তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত স্বাক্ষরিত হওয়া উচিত

বীণা সিক্রি (২০০৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন)

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘সবার আগে প্রতিবেশী’ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি বন্ধুত্ব, আস্থা ও পারস্পরিক স্বার্থ সংরক্ষণের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাকে ভারত নানা কারণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আমাদের অভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থান ও নিবিড় সম্পর্কযুক্ত সভ্যতাভিত্তিক ঐতিহ্য উভয় দেশের মূল্যবোধেরও মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। এমনকি ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বন্ধন ছিন্ন হলেও পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে সেই ঐতিহ্যগত বন্ধন অটুট ছিল।

সর্বোপরি, যাঁর প্রবাদপ্রতিম, ক্যারিশমাটিক ও দুঃসাহসী নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশকে স্বাধীন করেছিল, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বন্ধুত্ব ও আস্থার সম্পর্কটি সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকার হিসেবে আজও বিদ্যমান আছে। ভারত সরকার সব সময়ই বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেছে এবং সে কারণেই স্বাধীনতাযুদ্ধে তাদের বিজয় নিশ্চিত করতে ভারত তার সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে। ১৯৭১ সালে আমাদের দুই জাতির সমন্বিত সহযোগিতা ভোলার নয়।

১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি আবার জাতির সামনে তুলে ধরা এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে অবদান রাখা ভারতীয় সেনাদের ও অন্য ব্যক্তিদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শনের জন্য ভারত সরকার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানায়।

গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র—বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানে গৃহীত এই চার নীতি বঙ্গবন্ধুর মহান অবদান। এই নীতি ও আদর্শ সমুন্নত রাখার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর প্রতিশ্রুতিশীল অবস্থানে রয়েছেন। এর মাধ্যমেই তিনি তাঁর পিতার আদর্শ বাঁচিয়ে রাখছেন এবং তা বেগবান করছেন।

আমাদের সংবিধান অনুযায়ী ভারতও গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের আদর্শ ধারণ করে। এই অভিন্ন মূল্যবোধের বিষয়টিও এই দুই দেশের সম্পর্ককে জোরালো করেছে। আজ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিস্তৃতি ও গভীরতার দিক থেকে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে প্রগাঢ় এবং অভূতপূর্ব মাত্রায় সফল। এক অনির্বচনীয় হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিটি সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়ন ঘটিয়ে সহযোগিতামূলক সম্পর্কে নতুন নতুন মাত্রা যোগ করছেন। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে স্থাপিত সংযোগ প্রকল্প এবং বিমসটেকের (বঙ্গোপসাগরীয় বহুক্ষেত্রীয় প্রযুক্তিগত ও আর্থনীতিক সহযোগিতা উদ্যোগ) মাধ্যমে তাঁরা আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও নতুন নতুন মাত্রা যোগ করছেন।লেখা

দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা দুই দেশের সীমানা জটিলতাগুলোর সুরাহা হচ্ছে। ২০১৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী স্থলসীমানা বাস্তবায়িত হয়েছে। ওই একই বছর আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় নৌ সীমানা নির্ধারিত হয়েছে। ভারতের দেওয়া আর্থিক অনুদান ও ঋণ বাংলাদেশের উন্নয়নে অভূতপূর্ব ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। ভারত বাংলাদেশকে ঋণ ও অনুদান বাবদ মোট ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার দিয়েছে, যা বিশ্বের যেকোনো দেশকে ভারতের দেওয়া ঋণের চেয়ে বেশি। এই ঋণসহায়তার আওতাধীন প্রকল্পগুলো আমলে নিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ খাতে দুই দেশের সহযোগিতার কার্যক্রম বিশেষভাবে সফল হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। জ্বালানি খাতেও ভারতের সহযোগিতা অব্যাহত আছে। ভারত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে বর্তমানে সড়কপথে ডিজেল সরবরাহ করছে। এ ছাড়া জ্বালানি সরবরাহের জন্য শিলিগুড়ি থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ভারত পাইপলাইন নির্মাণ করছে।

২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল প্রায় ১০০ কোটি ডলার। তামাক, অ্যালকোহলসহ ২৫টি পণ্য বাদে সব পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশকে শতভাগ রপ্তানি শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠছে, যেখানে বাংলাদেশি বিভিন্ন কোম্পানি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। এসব পরিকাঠামোর কাজ শেষ হলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্রুত বেড়ে যাবে। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বাণিজ্যঘাটতি আরও কমিয়ে আনবে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ভারত থেকে বাংলাদেশে যেসব পণ্য রপ্তানি করা হয়, তার অনেকগুলোই উৎপাদনমুখী শিল্পের মধ্যবর্তী পর্যায়ের পণ্য (যেমন তুলা, সুতা ও কাপড় এবং বস্ত্র উৎপাদনের সরঞ্জাম) বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপুল সাফল্যের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

সর্বসম্প্রতি ২০২০ সালের জুলাই মাসে ভারত বাংলাদেশকে ১০টি ব্রডগেজ রেলগাড়ির ইঞ্জিন দিয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও যোগাযোগ স্থাপনার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে বাংলাদেশ ও ভারত বড় বড় উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।

গত ১৮ মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সফরের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দিল্লি সফর (মে, ২০১৯), প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর (অক্টোবর, ২০১৯ দিল্লিতে এবং নভেম্বর, ২০১৯ কলকাতায়) এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর (ফেব্রুয়ারি, ২০১৯) অন্যতম। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০১৯ সালের আগস্টে ঢাকা সফর করেছেন এবং পররাষ্ট্রসচিব ২০২০ সালের আগস্টে ঢাকা সফর করেছেন। ২০২০ সালের মার্চে মুজিব বর্ষ উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের কথা ছিল, কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ২০১৯ সালে দুই দেশের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দুই দেশ সফর করেছেন। এসব সফরের সময় পরমাণুবিজ্ঞান, মহাকাশ গবেষণা এবং তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে ১০টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

বাংলাদেশের পাঁচটি জেলায় ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১১টি পানি শোধনাগার স্থাপন, বাংলাদেশকে ৫০০টি ট্রাক, ৩০০টি দ্বিতল বাস ও ২০০টি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস প্রদানসহ ভারতের ঋণসহায়তায় শেষ হওয়া বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প ২০১৯ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যৌথভাবে উদ্বোধন করেন। সর্বসম্প্রতি ২০২০ সালের জুলাই মাসে ভারত বাংলাদেশকে ১০টি ব্রডগেজ রেলগাড়ির ইঞ্জিন দিয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও যোগাযোগ স্থাপনার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে বাংলাদেশ ও ভারত বড় বড় উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। গত ছয় মাসে বাংলাদেশের মধ্যে রেল ও পার্সেল ট্রেন সার্ভিসের অধীনে কনটেইনার কার্গোর মাধ্যমে রপ্তানিকাজ শুরু হয়েছে। গত জুলাইয়ে নৌপথ দিয়ে ভারতের পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ গিয়ে ঢাকার পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালে পণ্য খালাস করেছে। ওই একই মাসে ২০১৫ সালের চুক্তির অধীন স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসপিও) অনুযায়ী বাংলাদেশের চট্টগ্রাম নৌবন্দরের মাধ্যমে কলকাতা থেকে পণ্যবাহী জাহাজযোগে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পণ্য পরিবহন শুরু হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী কলকাতা থেকে জাহাজে আসা পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয় এবং সেখান থেকে তা বাংলাদেশি ট্রাকের মাধ্যমে সড়কপথে ভারত-বাংলাদেশের আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর হয়ে আগরতলা পৌঁছায়।

বিদ্যমান পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণে ভারত তার প্রথম মহামারি-উত্তর উচ্চপর্যায়ের সফরের জন্য বাংলাদেশকেই বেছে নিয়েছে। পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা গত ১৯-২০ আগস্ট ঢাকা সফরে এসেছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছা ও সহযোগিতার বার্তা পৌঁছে দেন।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় ভারত বাংলাদেশকে সব দিক থেকে সহযোগিতা দিয়ে এসেছে। টেস্টিং কিট, ইড্রোস্কিক্লোরোকিন ট্যাবলেট, সার্জিক্যাল মাস্ক, গ্লাভস, হেড কভারসহ করোনা মোকাবিলার সব ধরনের চিকিৎসাসামগ্রী বাংলাদেশকে সরবরাহ করেছে ভারত। পাশাপাশি বাংলাদেশের চিকিৎসকদের কোভিড চিকিৎসায় প্রশিক্ষিত করতে বিশেষ কোর্স করানো হয়েছে। মানবদেহে পরীক্ষামূলক টিকা প্রয়োগের বিষয়টি শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশের মানুষ যাতে পর্যাপ্ত টিকা পেতে পারে, সে জন্য ভারতের একটি শীর্ষস্থানীয় ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হয়েছে।

আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মূল শক্তিই হলো এক দেশের জনগণের সঙ্গে অপর দেশের জনগণের হৃদ্যতা ও বন্ধুত্ব। এটি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশিদের ভারত বছরে ১৮ লাখ ভিসা দিয়ে থাকে।

সম্ভবত বিশ্বে দুই দেশের মধ্যে এতসংখ্যক ভিসা দেওয়ার ঘটনা আর কোথাও নেই। ব্যবসার কাজে, চিকিৎসা নিতে, ধর্মীয় তীর্থযাত্রা বা মাজার জিয়ারত করতে এবং পর্যটনের উদ্দেশ্যে সাধারণত এতসংখ্যক বাংলাদেশি ভারত ভ্রমণ করে থাকেন। মহামারির কারণে বাংলাদেশিদের ভারত ভ্রমণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সেটি আগের অবস্থায় নেওয়ার জন্য এখন আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশের কাছে যেসব ইস্যু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তার সব কটির বিষয়ে ভারতের পূর্ণ সংবেদনশীলতা রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সম্পন্ন করার পক্ষে। এর পাশাপাশি নদী ব্যবস্থাপনা, শুকনো মৌসুমে তিস্তার পানিপ্রবাহ বাড়ানো, শুকনো মৌসুমে তিস্তার পানি সাশ্রয়ে আবাদ ব্যবস্থাপনাসহ ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের আলোচনা ও যৌথ উদ্যোগ বাড়ানো দরকার বলে মনে করি। এ বিষয়গুলো একেবারেই দ্বিপক্ষীয় এবং ভবিষ্যতেও এসব ইস্যুকে দ্বিপক্ষীয় হিসেবেই রাখা উচিত।

বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে স্থির সংকল্পবদ্ধ। গত ১৯ ও ২০ আগস্ট আমাদের পররাষ্ট্রসচিবেরা আলোচনা করার পর বিজিবি ও বিএসএফ সীমান্তে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে আন্তরিক প্রচেষ্টা জোরদার করবে। এ ধরনের ঘটনা যদি ফের ঘটেও যায়, তাহলে বিজিবি ও বিএসএফের উচিত হবে দ্রুত যৌথ বিবৃতি দেওয়া, যাতে গণমাধ্যমে কোনো ভুল খবর প্রচারিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি না হয়।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব শ্রিংলার ঢাকা সফরের সময় ওই সফর নিয়ে বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যমের করা কিছু নেতিবাচক খবর ও মন্তব্য আমাকে বিস্মিত করেছে। এসব প্রচারণার মাধ্যমে শ্রিংলার সফর তথা বাংলাদেশ-ভারত সুসম্পর্কের ওপর নেতিবাচকভাবে আলোকপাত করা হয়েছে এবং ভারতের বদলে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে জোরদার বন্ধনের পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়েছে।

এটি ঠিক, বৈদেশিক সম্পর্ক কোনো নিঃস্বার্থ বিষয় নয়। প্রতিটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। অন্য দেশের প্রতি আর্থিকভাবে অতি নির্ভরশীল হওয়া ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জালে আটকা পড়ার বিষয়ে সতর্ক থেকে এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে এসবের ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা বিবেচনায় নিয়ে সে অনুযায়ী প্রতিটি দেশের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

বাংলাদেশের মনে রাখা উচিত, জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের বিষয়ে চীন ১৯৭২ সালের আগস্ট মাসে ভেটো দিয়েছিল। ঢাকার সংবাদপত্রগুলো শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছিল, ‘চীন উপমহাদেশকে ক্ষমতার রাজনীতির দাবার কোর্ট বানিয়ে রাখতে চায়’ (ডেইলি স্টার, ২৬ আগস্ট ২০২০, শেষ পাতা)।

তবে এত কিছুর মধ্যেও বাংলাদেশ-ভারতের সুসম্পর্ক যার ওপর ভিত্তি করে টিকে আছে, সেটি হলো দেশজুড়ে জনগণের জাতীয় স্বার্থভিত্তিক চেতনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও তাঁদের একজন। তিনি একজন একনিষ্ঠ জাতীয়তাবাদী নেতা, যিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে সব সময়ই বাংলাদেশের স্বার্থকে হৃদয়ে ধারণ করে থাকেন।

ইংরেজি থেকে অনূদিত

বীণা সিক্রি সাউথ এশিয়ান উইমেন্স নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক।

আগামীকাল পড়ুন: বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেনের