সংবাদ: পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যা করার দায়ে এই দম্পতির মেয়ে ঐশী রহমানকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মো. আবদুর রহমান
মা-বাবাকে খুন করেছে এমন একজনের পক্ষে কথা বলার কোনো কারণ নেই, সুযোগও নেই। ঐশীর মৃত্যুদণ্ড হয়েছে ‘ডাবল মার্ডার’ মামলার আসামি হওয়ার জন্য। একবার ফাঁসি হয়তো সাজা হিসেবে কম। তারপরও ঐশীর ফাঁসি নিয়ে কিছু কথা হচ্ছে। আইন অন্ধ, এটাই সম্ভবত প্রমাণ করতে চেয়েছেন বিচারক। কিন্তু বিচারকেরা কিন্তু এটাও বলেন ‘পারিপার্শ্বিকতা’...। বয়সের কারণে ফাঁসি দেওয়া হয়নি এমন নজির গত দুই-তিন বছরে বাংলাদেশেই স্থাপিত হয়েছে। ঐশীর ফাঁসি নিয়ে মানুষের মধ্যে যে একধরনের উষ্মা, এটাও কিন্তু ওই বয়সের কারণেই। সদ্য কৈেশার উত্তীর্ণ একটি মেয়ের ফাঁসি! এই ঐশীর কিন্তু একটা ভাই আছে—খুবই ছোট। সে শিশুটা তার মা-বাবাকে হারিয়েছে, ওই শিশুভাইকে নিয়ে পালিয়েছিল ঐশী। কিন্তু ভাইকে সে কিছু বলেনি। ওই শিশুর মা নেই, বাবা নেই। ফাঁসি কার্যকর হলে থাকবে না তার বোনও। মা-বাবাকে হত্যার জন্য ঐশীর ফাঁসি হতে পারে, ন্যায়বিচারের জন্য এটা হয়তো জরুরিও, কিন্তু সেই শিশুটির জন্য ঐশীর বেঁচে থাকা আরও অনেক অনেক বেশি জরুরি। হে অন্ধ আইন, তুমি চোখ খোলো, ছোট ঐশীর ‘ছোট্ট’ ভাইটাকে দেখো, তারপর ভাবো ওর বাবা-মায়ের মৃত আত্মার শান্তির জন্য কোনটা বেশি প্রয়োজন। ঐশীর ফাঁসি না জীবন?
রাজিব চৌধুরী
আদালতের এই রায়ের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করছি। এ জন্যই যে রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, হত্যাকাণ্ডটি ছিল পরিকল্পিত ও নৃশংস। ঐশীর একার পক্ষে কি এই পরিকল্পিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো সম্ভব? আদালত বলেছেন, ঘটনার সময় আসামি ঐশী প্রাপ্তবয়স্ক ছিল। তখন ঐশীর বয়স কত ছিল? যদি ধরে নিই ঐশী প্রাপ্তবয়স্ক ছিল, তারপরও কি একটি ১৭ থেকে ১৮ বছরের মেয়ের পক্ষে এই ধরনের নৃশংস (ক্ষতবিক্ষত) হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব? ঐশীর দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে আদালত যে রায় দিয়েছেন, এটা কি আদৌ সঠিক রায় হয়েছে?
রেজাউল
নেশাগ্রস্ত একটি মেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ অবস্থাতেই অনাকাঙ্ক্ষিত বিকৃত কাজটি সংঘটিত করেছে, এটা নেশার লক্ষণ। নেশার এ জগতে তিনি এমনি এমনি জড়াননি, এর পেছনে কাজ করেছে বাবার কাছ থেকে অতি প্রাপ্তি আর অতি নিয়ন্ত্রণ। ফাঁসি দিয়ে এ বিষয়গুলোর সুরাহা সম্ভব নয় বরং অনেক নিষ্ঠুর সত্যকেই ধামাচাপা দেওয়া হবে।
মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান
ঐশী একজন পেশাদার খুনি নয়, সে অন্যের ক্ষতিও করেনি। সে তার বাবা-মাকে খুন করেছিল বিপথগামী হয়ে। এক দিনে কেউ বিপথে যায় না। এ ক্ষেত্রে তার বাবা-মায়ের দায় এড়ানো যায় না। খুনের চেয়ে খুন করার কারণ এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা উচিত ছিল। ঐশীর নিজেকে শোধরানোর সুযোগ প্রাপ্য এবং তা অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড নয়।
মন্টু
এ তো পেশাদারি খুনি নয়। তা ছাড়া, সে তার বাবা-মাকে খুন করছে নিশ্চয় নেশাগ্রস্ত অবস্থায়। এ ক্ষেত্রে তাকে ফাঁসি না দিয়ে অন্য কোনো সাজা দেওয়াই ভালো হতো মনে হয়। তা ছাড়া, মাদক ব্যবসায়ীরাই তো এসব খুনের জন্য আসল দায়ী। তাঁদেরও এভাবে বিচারের আওতায় না আনতে পারলে এমন ঘটনা আরও ঘটবে।