যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কূটনৈতিক চাপ বাড়াবে

যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক র‍্যাব এবং তার সাবেক ও বর্তমান সাতজন কর্মকর্তার ওপর গত শুক্রবার নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে বাংলাদেশে এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এ নিষেধাজ্ঞা এবং তার প্রতিক্রিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা দাবি করে। এগুলো হচ্ছে কেন এ নিষেধাজ্ঞা এবং যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে এর কী প্রতিক্রিয়া হবে।

এ নিষেধাজ্ঞা কি অপ্রত্যাশিত ছিল

এ নিষেধাজ্ঞার কারণ যুক্তরাষ্ট্র বলেছে মানবাধিকার লঙ্ঘন। যাঁরা এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেন এবং যাঁরা একমত পোষণ করেন না, উভয়ই গত কয়েক দিনের আলোচনায় কমবেশি এটা মেনে নিয়েছেন যে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো নয়। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি কখনোই যে খুব ভালো ছিল তা নয়, কিন্তু প্রায় সাত-আট বছর ধরে মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হয়েছে এবং তা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গেই ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্র র‍্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ হিসেবে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং গুমের অভিযোগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রই এ ধরনের অভিযোগ করেছে বা এই প্রথম অভিযোগ করেছে তা নয়।

বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং গুমের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে প্রতিবছরই উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রই এককভাবে এমন করেছে তা নয়, গত এক দশকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বহুবার বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। এ বছরের জুলাই মাসে ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনেও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি বলেই বলা হয়েছে। ব্রিটেন বা যুক্তরাষ্ট্রের এসব অভিযোগের ভিত্তি হচ্ছে আন্তর্জাতিক এবং দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নিয়মিত প্রতিবেদন। আসলে প্রতিদিনের খবরেই তা দেখা যায়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল অন্তত এক দশক ধরেই বলে আসছে এবং বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যথেষ্ট উদাহরণ হাজির করেছে।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দেশে এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন ফোরামে সরকারের অস্বীকৃতি তাঁদের সমর্থকদের আশ্বস্ত করেছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে সন্তোষজনক প্রতীয়মান হয়নি। উপরন্তু দেশে নাগরিকদের অধিকার আরও সংকুচিত হয়েছে, ক্রমাগতভাবে কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকেই বাংলাদেশ অগ্রসর হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সিদ্ধান্তের পেছনে এটি অন্যতম কারণ। প্রাসঙ্গিকভাবে স্মরণ করা যেতে পারে যে গত বছর সিনেটের ১০ জন সদস্য র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলেন। কংগ্রেসের টম ল্যান্টোস মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে এ বছর আগস্ট মাসে আয়োজিত শুনানিতেও এ বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের পদক্ষেপ আশা করা হয়।

দক্ষিণ এশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ সত্ত্বেও অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের পদক্ষেপ বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে এটা ঠিক, কিন্তু তাতে করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বৈধতা তৈরি হয় না এবং এ ধরনের পদক্ষেপের প্রতীকী মূল্য ও বাস্তব কার্যকারিতা দুর্বল হয় না।

বাইডেন প্রশাসনের নীতিগত অবস্থান

প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই জো বাইডেন বলে আসছিলেন যে মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের প্রশ্নকে তাঁর সরকার গুরুত্ব দেবে। তাঁর পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যেভাবে কর্তৃত্ববাদী শাসকদের প্রতি পক্ষপাত দেখিয়েছে, বাইডেন তা থেকে আলাদা অবস্থান নিচ্ছেন সেটা সুস্পষ্ট করার জন্যই এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ অনুভব করেছে প্রশাসন। বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পরেই বোঝা যাচ্ছিল যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার ও শ্রমিক অধিকারের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।

লক্ষণীয় যে সম্প্রতি এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা কেবল বাংলাদেশের ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের ওপরে আরোপ করা হয়নি, অন্যান্য দেশের ওপরেও আরোপ করা হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসন যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ, নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতিকে বিবেচনায় রেখেছে, সেটা সহজেই চোখে পড়ে। দক্ষিণ এশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ সত্ত্বেও অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের পদক্ষেপ বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে এটা ঠিক, কিন্তু তাতে করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বৈধতা তৈরি হয় না এবং এ ধরনের পদক্ষেপের প্রতীকী মূল্য ও বাস্তব কার্যকারিতা দুর্বল হয় না।

বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব

বিশ্বের অর্থনীতির ভরকেন্দ্র এশিয়ায় সরে আসা, চীনের উত্থান, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বৃদ্ধি করার চেষ্টা, এ অঞ্চলে ভারতের আবেদন হ্রাস, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি—সবই বাংলাদেশকে মার্কিন প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এটা বেশ কয়েক বছর ধরেই ঘটেছে। এ বিবেচনায়ই ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বাংলাদেশকে এশিয়ায় তার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পেতে চেয়েছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপারের ফোন এবং অক্টোবরে উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগানের সফরে তা স্পষ্ট ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আশানুরূপ সাড়া পায়নি বলেই মনে হয়েছে। তদুপরি গত কয়েক বছরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্বস্তিকর বলে বিবেচিত হয়নি। জর্জ ডব্লিউ বুশের আমল থেকে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়া নীতিতে ভারতকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। পাকিস্তান ছাড়া অন্য দেশগুলোর ওপরে ভারতের আধিপত্য যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করেছে। ২০১৩-১৪ সালে বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য তৈরি হলে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত এ অঞ্চল থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। আফগানিস্তান যুদ্ধও তার একটি কারণ। কিন্তু এখন চীনের সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তাগিদ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে প্রত্যক্ষ ভূমিকার বিবেচনা করছে বলে প্রতীয়মান হয়।

র‍্যাবের ব্যাপারে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর বিষয়ে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা অন্যান্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে হলেও প্রভাব ফেলবে। এসব প্রভাব আশু না হলেও ভবিষ্যতে তার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। মানবাধিকার বিষয়ে ইউরোপের দেশগুলো অনেক দিন ধরেই তাদের অস্বস্তি এবং ক্ষোভের কথা জানিয়ে এসেছে। এ দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের সঙ্গে এখনো যোগ দেয়নি। কিন্তু ভবিষ্যতে তারা বাংলাদেশকে কী বার্তা পাঠায়, সেটা দেখার বিষয়।

বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কে কী প্রভাব ফেলবে

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে টানাপোড়েন হলেও গত এক দশকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদবিরোধী কার্যক্রমে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সহযোগিতা ২০১৬ সালের পরে আরও বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যের একটি বড় বাজার। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বাংলাদেশের অনুকূলে এবং একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

কোভিডের টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের সাহায্য করেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে প্রশংসা করেই যুক্তরাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালন করেনি, সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। এ ধরনের সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ অনেককেই বিস্মিত করেছে।

এ পটভূমি বিবেচনা করলে মনে হতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ একধরনের প্রতীকী এবং তা অচিরেই একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হবে। ইতিমধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে ফোন করার কারণে এ ধারণা আরও জোরদার হওয়ার অবকাশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে প্রতিষ্ঠান হিসেবে র‍্যাবকে তালিকাভুক্ত করার সময় যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয় বিবেচনা করেছে যে একে বাংলাদেশ সরকার কতটা গুরুত্ব দেয়। যুক্তরাষ্ট্র একে একটি মাত্র পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে, নাকি এরপরে আরও পদক্ষেপ নেবে, তার ওপরে নির্ভর করবে সম্পর্কের গতিপথ কী হবে। এ নিষেধাজ্ঞার কিছু খুঁটিনাটি দিক এখনো অস্পষ্ট। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠান র‍্যাব কিংবা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন করবে, তাঁদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ ও লেনদেনের বিষয় কীভাবে বিবেচিত হবে।

র‍্যাবের ব্যাপারে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর বিষয়ে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা অন্যান্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে হলেও প্রভাব ফেলবে। এসব প্রভাব আশু না হলেও ভবিষ্যতে তার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। মানবাধিকার বিষয়ে ইউরোপের দেশগুলো অনেক দিন ধরেই তাদের অস্বস্তি এবং ক্ষোভের কথা জানিয়ে এসেছে। এ দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের সঙ্গে এখনো যোগ দেয়নি। কিন্তু ভবিষ্যতে তারা বাংলাদেশকে কী বার্তা পাঠায়, সেটা দেখার বিষয়।

এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক নীতিতে যে ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত আছে তা যতই স্পষ্ট রূপ নেবে, ততই বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বাড়বে। আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার এবং যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তানের ওপরে চীনের প্রভাব বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে এ অঞ্চল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভারত কী ভূমিকা নিচ্ছে, সেটাও একটি বিবেচনার বিষয়। বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের পদক্ষেপ ভারতের জন্য একদিকে যেমন তার প্রতি অনাস্থার লক্ষণ, অন্যদিকে তা ভারতের ওপরে বাংলাদেশের আরও বেশি নির্ভরতা তৈরির সুযোগ হয়ে উঠতে পারে। সর্বোপরি বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের মাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। সব মিলিয়ে এটা বললে অতিরঞ্জন হবে না যে বাংলাদেশের ওপরে কূটনৈতিক চাপ বাড়বে। ফলে এখন যাঁরা এ উপসংহারে পৌঁছাচ্ছেন যে সম্পর্কে কোনো ধরনের প্রভাবই ফেলবে না এবং সবকিছু আগের মতোই চলতে থাকবে, তাঁরা সম্ভবত সময়ের আগেই এ ধরনের উপসংহার টানছেন। আরেকটু অপেক্ষা করাই বিবেচকের কাজ হবে।

  • ড. আলী রীয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর এবং আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো