রাশিয়ায় পশ্চিমাদের ‘আসল’ ভুল আর বর্তমান বাংলাদেশ

রাশিয়ার আগ্রাসনের শিকার হয়ে ইউক্রেন নিশ্চয়ই আফসোস করছে, তাদের কাছে থাকা পারমাণবিক বোমা ত্যাগ না করলে এই বিপদে তারা পড়ত না।ছবি : রয়টার্স

ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক আগ্রাসন শুরুর পর অধ্যাপক মার্শেইমারের ৬ বছরের পুরোনো একটা লেকচার আমাদের অনেকেই সংকটটিতে রাশিয়ার পক্ষে নিজেদের অবস্থানের সমর্থনে ‘যৌক্তিক ভিত্তি’ দিয়েছে। ‘ইউক্রেন পরিস্থিতি যে কারণে পশ্চিমাদের দোষে ঘটছে’ (হোয়াই ইজ ইউক্রেন দ্য ওয়েস্টস ফল্ট) শিরোনামের এই লেকচারের মূল বিষয় হচ্ছে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার চেষ্টাটাই যাবতীয় সংকটের মূল। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধেও তিনি ঠিক এই কথাগুলোই লিখছেন, যা প্রথম আলো প্রকাশ করেছে। মার্শেইমারের এই অবস্থানকে দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করাই আমার এই লেখার উদ্দেশ্য।

মার্শেইমার নিজেই ‘বাস্তববাদী’ নন

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে আলাপের ক্ষেত্রে মার্শেইমার ‘রিয়ালিস্ট স্কুল অব থট’ অর্থাৎ পরিস্থিতি বাস্তববাদীভাবে বিশ্লেষণের পক্ষপাতী। তিনি মনে করেন, নৈতিকতা নয়, বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিয়েই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, তাঁর দেওয়া ইউক্রেনকে একটি নিরপেক্ষ ‘বাফার’ রাষ্ট্র হিসেবে থাকার প্রস্তাবটি আদৌ বাস্তবানুগ নয়। কারণ, রাশিয়ার নিজের নেতৃত্বাধীন মুক্ত বাণিজ্য জোট, ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন (ইএইইউ) এবং সামরিক জোট, কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (সিএসটিও) আছে।

নিজের প্রভাবাধীন রাখতে চাওয়া দেশে নানা পন্থায় নিজের পছন্দের শাসক বসিয়ে, সমর্থন দিয়ে প্রয়োজনে তার পক্ষে সৈন্য পাঠিয়ে আন্দোলনকারী জনগণকে ‘ঠান্ডা করে’ সেই শাসককে ক্ষমতায় রাখা আর তার বিনিময়ে নিজ স্বার্থ উদ্ধার করার একটা পরীক্ষিত ‘তরিকা’ পুতিনের আছে। ‘বাস্তববাদী’ মার্শেইমার এই বাস্তবতা দেখেন না। তিনি দেখেন না আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতাও।

ইউক্রেনের সঙ্গে পুতিনের বিশ্বাসঘাতকতা

আজ রাশিয়ার বর্বর আগ্রাসনের শিকার হয়ে ইউক্রেন নিশ্চয়ই আফসোস করছে, তাদের কাছে থাকা পারমাণবিক বোমা থাকলে এই বিপদে তারা পড়ত না। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী দেশগুলো চেয়েছিল রাশিয়া ছাড়া আর কেউ সেই অস্ত্রের বৈধ উত্তরাধিকারী হবে না। উত্তরাধিকার সূত্রে সোভিয়েত পারমাণবিক অস্ত্র পাওয়া অপর তিনটি দেশ, ইউক্রেন, কাজাখস্তান আর বেলারুশ পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত হতে রাজি হয় এবং স্বাক্ষরিত হয় চুক্তি, যেটি বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম নামে পরিচিত। এই দেশগুলোর সঙ্গে পরাশক্তি রাশিয়া, আমেরিকা এবং ব্রিটেন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

সেই চুক্তির পাঁচটি ধারায় পরমাণু অস্ত্র মুক্ত হওয়া দেশ তিনটিকে পরাশক্তিগুলো এই নিশ্চয়তাগুলো দিয়েছিল ১) ইউক্রেন, বেলারুশ ও কাজাখস্তানের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং বিদ্যমান সীমান্তকে পূর্ণাঙ্গভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো ২) দেশগুলোকে বলপ্রয়োগ করা এবং যেকোনো প্রকার হুমকি প্রদান করা থেকে বিরত থাকা হবে ৩) ইউক্রেন, বেলারুশ ও কাজাখস্তানকে কোনো ধরনের অর্থনৈতিক চাপ দিয়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হবে না ৪) দেশগুলোর ওপর যদি পারমাণবিকসহ যেকোনো ধরনের আগ্রাসনের হুমকি তৈরি হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সাহায্য করতে হবে ৫) স্বাক্ষরকারী কোনো দেশ ইউক্রেন, বেলারুশ ও কাজাখস্তানের ওপর পারমাণবিক হামলা করবে না। ও হ্যাঁ, এই চুক্তির কোথাও বলা ছিল না ওই তিনটি দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা ন্যাটোর মতো জোটে যোগ দিতে পারবে না।

অথচ পুতিন এই ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করেছেন, ডনবাস অঞ্চলে প্রক্সি যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিলেন আট বছর আগেই। আর এখন তো সর্বাত্মক আগ্রাসন। কী ভয়ংকর বিশ্বাসঘাতকতা!

পুতিনের কথায় আস্থা রাখার প্রশ্ন আসে কীভাবে?

ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডামের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই ব্যাপারে পুতিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তাঁর জবাব ছিল, ‘ইউক্রেনে বিপ্লব হয়েছে (রুশপন্থী ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ এর পতনের আন্দোলন) এবং বিপ্লবের মাধ্যমে একটা নতুন রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। আমরা এই ইউক্রেনের সঙ্গে কোনো চুক্তি করিনি, করেছি আগের ইউক্রেনের সঙ্গে।’

একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক চুক্তি যাচ্ছেতাইভাবে লঙ্ঘন করার পর পুতিনের এই ব্যাখ্যা নিয়ে তাঁর সমর্থকদের বক্তব্য কী? এই পুতিনের ওপর আস্থা আনতে হবে যে তিনি ইউক্রেনের নিরপেক্ষ থাকা মেনে নেবেন? আমরা ইউক্রেনীয়দের আস্থা রাখতে বলছি সেই পুতিনের প্রতি, যিনি দীর্ঘদিন থেকে মুখে বলেন, এমনকি গত বছরই ‘রুশ এবং ইউক্রেনীয়দের ঐতিহাসিক ঐক্যের বিষয়ে’ শীর্ষক বিরাট নিবন্ধ লিখে ইউক্রেনকে স্বাধীন দেশ হিসেবে অস্বীকার করেন!

ইউক্রেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কিংবা ন্যাটোর জোটে গ্রহণ করার কথা বিবেচনা করে পশ্চিমারা কোনো ভুল করেনি। রাশিয়ায় পশ্চিমাদের ভুল হয়েছিল ভিন্ন জায়গায় এবং সেটা অনেক আগেই।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর রাশিয়ার সর্বোচ্চ আদালত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনকে ডিক্রির মাধ্যমে মাত্র ১৩ মাস সময়ের মধ্যে রাশিয়ার অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংস্কার করার একচ্ছত্র অধিকার দিয়ে দেয়। দীর্ঘকাল একটা কমিউনিস্ট ব্যবস্থাধীন সরকার কীভাবে পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেটা নিয়ে নাগরিকদের মতামত নেওয়া দূরেই থাকুক, ন্যূনতম আলাপ–আলোচনাও করা হয়নি।

ক্যাথেরিনা পিস্টর যা বলছেন

ক্যাথেরিনা পিস্টর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ল স্কুলের তুলনামূলক আইনের অধ্যাপক। তিন বছর আগে তিনি তাঁর বই ‘দ্য কোড অব ক্যাপিটাল: হাউ দ্য ল ক্রিয়েটস ওয়ালথ অ্যান্ড ইনইকুয়ালিটি’ বইতে তিনি প্রমাণ করেন কীভাবে অতি ক্ষমতাশালীদের সুবিধামতো আইন তৈরি করা এবং সেটা ব্যবহারের মাধ্যমে পুঁজি এবং সম্পদ তৈরি হয়। শুধু তৈরি হওয়া না, পুঁজি এবং সম্পদ অল্প কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত করে ফেলার জন্য আইনকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা শেষ পর্যন্ত মানুষের মধ্যে চরম অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে।

সম্প্রতি ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে ‘প্রজেক্ট সিন্ডিকেট’–এ ক্যাথেরিনা পিস্টর একটি কলাম লিখেছেন, যেখানে তিনি শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই না, রাশিয়ার কারণে তৈরি হওয়া অনেক সংকটের পেছনে পশ্চিমাদের একটি বড় ভুলের কথা বলেছেন।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর রাশিয়ার সর্বোচ্চ আদালত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনকে ডিক্রির মাধ্যমে মাত্র ১৩ মাস সময়ের মধ্যে রাশিয়ার অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংস্কার করার একচ্ছত্র অধিকার দিয়ে দেয়। দীর্ঘকাল একটা কমিউনিস্ট ব্যবস্থাধীন সরকার কীভাবে পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেটা নিয়ে নাগরিকদের মতামত নেওয়া দূরেই থাকুক, ন্যূনতম আলাপ–আলোচনাও করা হয়নি।

আরও পড়ুন

৭০ বছর স্থায়ী একটি দীর্ঘ অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার জায়গায় একেবারে উল্টো ব্যবস্থায় উত্তরণটি একটা দীর্ঘ সময় ধরে ধাপে ধাপে না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় একেবারে হঠাৎ করে রাতারাতি সব ব্যবস্থা পাল্টে ফেলার। পদ্ধতিটার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘শক থেরাপি’। তাদের চিন্তা ছিল শুরুতে ভয়ংকর সংকট হলেও এই পথেই খুব দ্রুত সবকিছু পাল্টে যাবে।

ধারণা করা হয়েছিল পরিবর্তনের গতি ধীর হলে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে তখনো যাঁরা ছিলেন, তাঁরা এই পরিবর্তন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবেন। এই শক থেরাপির ফলে রাশিয়ার কোটি কোটি মানুষকে যে অবর্ণনীয় কষ্ট এবং সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে সেটার তুলনা মারাত্মক কোনো যুদ্ধ ছাড়া পাওয়া যাবে না।

রাতারাতি সবকিছু ব্যক্তিমালিকানায় দিয়ে দেওয়ার চেষ্টার ফলে রাশিয়ায় সোভিয়েত আমলের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প, খনি, যোগাযোগের মতো প্রায় ৪৫ হাজার প্রতিষ্ঠান অল্প কিছু মানুষের মালিকানায় চলে যায় একেবারে নামমাত্র মূল্যে। এভাবেই রাশিয়া তার জন্মের সময় থেকে গোষ্ঠীতন্ত্রের (অলিগার্কি) মধ্যে ঢুকে পড়ে। আর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন এই গোষ্ঠীর নেতা, প্রধান অলিগার্ক।

গোষ্ঠীতন্ত্র সব ক্ষেত্রেই দেশের মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী। কিন্তু দেশটি যদি হয় সামরিক দিক থেকে রাশিয়ার মতো ভয়ংকর শক্তিশালী, তখন সে তার পাশের তুলনামূলকভাবে দুর্বল দেশগুলোর প্রতি হুমকি হয়ে উঠতেই পারে। স্বাধীন আইন এবং বিচার বিভাগ, কার্যকর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, স্বাধীন মিডিয়া না থাকায় হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ, এমনকি স্রেফ একজনের সিদ্ধান্তে যেকোনো দেশে আগ্রাসন চালিয়ে সেটিকে ধ্বংস করে দিতে পারে; করেও সেটা। ফলে তার কাছাকাছি থাকা দেশগুলো ক্রমাগত ভীত হতে থাকে এবং তখনই সে অন্য কারও কাছ থেকে নিরাপত্তা খুঁজতে যায়।

সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র কিংবা সাবেক ওয়ারশ জোটের সদস্যদের কথা বাদই দিই, স্নায়ুযুদ্ধের মতো ভয়ংকর সময়ে নিরপেক্ষ থাকা সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের মতো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ন্যাটোতে যোগ দিতে চাইছে। বলা বাহুল্য তাদেরও আগাম হুমকি দিয়ে রেখেছেন পুতিন।

আরও পড়ুন

বর্তমান পরিস্থিতির পেছনে পশ্চিমাদের দায়

রাশিয়ায় কমিউনিস্ট আমলে তৈরি হওয়া পুরো ব্যবস্থাটি রাতারাতি পাল্টে দেওয়ার পেছনে সিদ্ধান্ত শুধু রাশিয়ানদের ছিল না। তখন এই পথ বাতলে দেওয়া এবং সেটা কার্যকর করায় রাশিয়ানদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছিলেন আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা কিছু দেশের বিশেষজ্ঞরা। পিষ্টর বলছেন, এই সময়ে পশ্চিমারা রাতারাতি রাশিয়ার অর্থনৈতিক খোলনলচে পাল্টে ফেলার জন্য কাজ করলেও রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কারের দিকে ন্যূনতম মনোযোগী ছিলেন না।

পশ্চিমারা সম্ভবত ভেবেছিলেন নব্য উদারবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করে দিলে সেটা রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেও তার সঙ্গে মানিয়ে নেবে। এই ধারণাটা ভুল এবং তাতেই রাষ্ট্রটির গণতান্ত্রিক রূপান্তর আর হয়ে ওঠেনি। রাষ্ট্রটিতে কোনো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ইতিহাসে কোনো দিন উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ছিটেফোঁটাও না দেখা দেশটির রাজনীতিবিদ এবং মানুষদের গণতন্ত্রের সঙ্গে পরিচয় করানো এবং গণতান্ত্রিক পথচলায় সাহায্য করায় পশ্চিমাদের গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক দায়িত্ব ছিল।

উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার এক উল্লেখযোগ্য প্রবক্তা, বিখ্যাত বই ‘এন্ড অব হিস্টরি অ্যান্ড দ্য লাস্ট ম্যান’–এর লেখক ফ্রান্সিস ফুকুয়ামাও রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট নিয়ে একই ধরনের মতামত দিয়েছেন।

পিস্টর এবং ফুকুয়ামা বলছেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর সময় আন্তরিকভাবে রাশিয়াকে যদি একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা পশ্চিমারা করত তাহলে পরিস্থিতি আজ সম্ভবত একেবারেই ভিন্ন হতো। গণতান্ত্রিক দেশগুলোও অন্য দেশের ওপরে আগ্রাসন চালিয়েছে, এই সত্য মাথায় রেখেও বলা যায় রাশিয়ার গণতান্ত্রিক রূপান্তর ঘটলে তার আশপাশের দেশগুলোর নিরাপত্তাহীনতার বোধ এত প্রকট হয়ে উঠত না।

আরও পড়ুন

রাষ্ট্রের ভেতরে গোষ্ঠীতন্ত্রের প্রভাব আর আমাদের জন্য বার্তা

অলিগার্কি বা গোষ্ঠীতন্ত্রের অনিবার্য নিয়তি হচ্ছে ক্লিপটোক্র্যাসি অর্থাৎ রাষ্ট্র তস্করের শাসনের কবলে পড়া। এমনকি কোনো দেশ একটি মাফিয়া রাষ্ট্রেও পরিণত হতে পারে। জনগণের সম্পদ লুট করে রাশিয়ান অলিগার্করা কী অকল্পনীয় সম্পদের মালিক হয়েছে, আমরা যারা সেটা আগে জানতাম না, ইউক্রেন যুদ্ধের সূত্রে এখন তা জেনে গেছি।

গোষ্ঠীতন্ত্রে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীটি ভয়ংকর সব দুর্নীতি অনিয়ম এবং অপরাধের মাধ্যমে তাদের সম্পদ তৈরি করে বলে তারা ক্ষমতা থেকে নেমে যাওয়ার কথা ভাবলে চরমভাবে আতঙ্কিত হয়। তারা জানে ক্ষমতা থেকে নামলে অকল্পনীয় আয়ের পথ বন্ধ তো হবেই, সঙ্গে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সেই সম্পদ হারানো এবং বিচারের মুখোমুখি হতে হবে তাদের। তাই যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য রাষ্ট্রের জনগণের ওপরে যেকোনো রকম অত্যাচার-নিপীড়ন চালায় তারা। অর্থাৎ কোনো রাষ্ট্র একবার গোষ্ঠীতন্ত্রে ঢুকে পড়লে এবং সেটা দীর্ঘায়িত হলে সেটার মূলোৎপাটন করে তাকে আবার গণতান্ত্রিক ও জনগণের রাষ্ট্রে পরিণত করা ভয়ংকর কঠিন হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই এই গোষ্ঠীতন্ত্রের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু এটার বিপদ যে কতটা গভীর, সে ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি বলে মনে হচ্ছে না।

ডা. জাহেদ উর রহমান ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক