সোনার হরিণ চাকরি ও ‘ঘোড়দৌড়ে’ ক্লান্ত যখন তারুণ্য

আ ওয়াইল্ড গুস চেজ—ইংরেজি এই বাগ্‌ধারার সোজা বাংলায় অর্থ, বুনো হাঁসের পিছে ছোটা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেটির সঙ্গে আবার জড়িয়ে আছে ‘ঘোড়দৌড়’। মানে ঘোড়া নিয়ে বুনো হাঁসের পেছনে ছোটা, তবুও সেই হাঁসকে ধরা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই হাঁস-ঘোড়ার দৌড়কে প্রথম বাগ্‌ধারায় নিয়ে এলেন শেক্‌সপিয়ার, পনেরো শতকে রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট নাটকে। মানে, অসম্ভবের পেছনে ছোটা। কিন্তু শেক্‌সপিয়ারের সেই বুনো হাঁস বাংলায় হয়ে গেল ‘সোনার হরিণ’। রবীন্দ্রনাথের এক গানেও আমরা পেলাম এ সোনার হরিণকে—‘তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই।’ কীভাবে সেই বুনো হাঁস বা সোনার হরিণের সমার্থক শব্দ ‘চাকরি’ হয়ে উঠল জানি না। কিন্তু সেটির সঙ্গে যে এক অদ্ভুত ঘোড়দৌড়ে ক্লান্ত আমাদের তরুণেরা এবং করোনা মহামারি তাঁদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে উঠল, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।

১.
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় আর্থসামাজিক বাস্তবতায় কোনো মানুষের জন্য একটি চাকরি হয়ে ওঠে অলীক বস্তুতে, সোনার হরিণের সঙ্গে এর চেয়ে যথার্থ তুলনা বোধ হয় আর হয় না। সোনার হরিণ নামের সেই চাকরির পেছনে ছুটতে ছুটতে মানুষ বুঝতেও পারে না কখন সে নিলামে উঠে গেছে। যেখানে সর্বনিম্ন দামেই তার মূল্য নির্ধারণ হয়। কিন্তু একটি যুদ্ধ বা দুর্ভিক্ষ কিংবা মহামারি সেই মূল্যকে আরও বেশি নিম্নতর করে তোলে। করোনা মহামারিতে বেকার হয়ে যাওয়া অসংখ্য মানুষের ক্ষেত্রে সেটিই কি ঘটছে না?

তবে এ লেখা সদ্য চাকরির বাজারে প্রবেশ করা ‘হতভাগ্য’ তরুণদের নিয়ে। সোনার হরিণের পেছনে যে ছোটাছুটির কথা আমরা বলি, সেটি মূলত তাঁদেরই উদ্দেশ করে। যাঁদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে আছে একেকটি পরিবার। কিন্তু করোনা এসে তাঁদের জীবন থেকে দেড়টি বছর কেড়ে নিল। মহামারির ধাক্কা সামলাতে পরিবারগুলোর প্রত্যাশার পারদ আরও বেশি চড়ে বসে তাঁদের ওপর। চাকরির বাজারের স্থবিরতায় হতাশা ও মানসিক যন্ত্রণায় জর্জরিত হয়ে কত তরুণের আত্মহত্যার খবরও আমাদের কাছে এখন গা–সওয়া হয়ে গেছে।

যাক, অবশেষে নিয়োগ জট খুলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন বেকার বা চাকরিপ্রার্থী তরুণেরা। কিন্তু প্রতি শুক্রবার এলে সেই নিশ্বাসই আবার ভারী হয়ে আসে তাঁদের। ঢাকায় যে বাসায় থাকি, সেখানে কয়েকজন তরুণও আমার প্রতিবেশী, সবাই চাকরিপ্রার্থী। প্রায় সময়ই তাঁদের সঙ্গে আলাপ করতে গেলে বেরিয়ে আসে একটিই হতাশা—‘টিউশনির টাকা জমিয়ে এতগুলো জায়গায় আবেদন করলাম, এখন এক দিনে একই সময়ে আট-দশটা পরীক্ষা, কী করব আমরা? কোন পরীক্ষাটা দেব সেই চিন্তায় ঘুমই তো আসে না!’ নিয়োগ পরীক্ষার খবরাখবর দেওয়ার বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ থেকেই জানতে পারলাম, গত ১৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পরীক্ষা ছিল ২১টি। ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, তিতাস গ্যাস, জালালাবাদ গ্যাস, সাধারণ বীমা করপোরেশন, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ, বিআরটিসি, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড—পরীক্ষা ছিল না কোন প্রতিষ্ঠানের! ১ অক্টোবরও ছিল নিয়োগ পরীক্ষার তেমন বন্যা, এদিন ১৯টি জায়গায় পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপর তো প্রথম আলো প্রতিবেদনই করল, ৮ অক্টোবর একই দিনে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষা নিয়ে।

পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় আর্থসামাজিক বাস্তবতায় কোনো মানুষের জন্য একটি চাকরি হয়ে ওঠে অলীক বস্তুতে, সোনার হরিণের সঙ্গে এর চেয়ে যথার্থ তুলনা বোধ হয় আর হয় না। সোনার হরিণ নামের সেই চাকরির পেছনে ছুটতে ছুটতে মানুষ বুঝতেও পারে না কখন সে নিলামে উঠে গেছে। যেখানে সর্বনিম্ন দামেই তার মূল্য নির্ধারণ হয়। কিন্তু একটি যুদ্ধ বা দুর্ভিক্ষ কিংবা মহামারি সেই মূল্যকে আরও বেশি নিম্নতর করে তোলে।

এক দিনে ১০ থেকে ২১টি চাকরির পরীক্ষা নেওয়া হ‌লে কয়‌টিতে অংশগ্রহণ সম্ভব? একজন চাকরি প্রার্থী দিনে এক বা দুটি পরীক্ষা দিতে পারেন। কিন্তু বাকি আরও পরীক্ষাগুলোর প্রতিটার জন্য যে ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা খরচ করে আবেদন করলেন, সেগুলোর কী হবে? টিউশনি করে, মায়ের গয়না বন্ধক রেখে, গবাদিপশু বিক্রি করে, সুদে ঋণ নিয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ হয়ে যায় সেসব আবেদন ফি জোগাড় করতে। টানা দেড়, দুই এমনকি তিন বছর ধরে পরীক্ষা দিয়ে তাঁরা ‘সোনার হরিণ’ ধরতে পারেন না। সেটি আরও কঠিন হয়ে পড়ে যখন একই দিনে এতগুলো পরীক্ষা হয়।

চাকরিপ্রার্থীদের এ যাতনাটি কিছুটা হলেও শেষ পর্যন্ত বুঝেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। তারা শুক্র ও শনিবার অন্যান্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুবিধার্থে নিজেদের পরীক্ষাগুলো সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রস্তাব দিলেন, একাধিক পরীক্ষা এক দিনে যাতে না হয়, সে জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কার্যক্রম তদারক বা সমন্বয়ের জন্য ক্যাবিনেট ডিভিশন একটি শাখা খুলতে পারে। সেখানে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োগের ব্যাপারে চিঠি দিতে পারে। সেই চিঠি থেকে ক্যাবিনেট ডিভিশন চাকরির তারিখ নির্ধারণ করতে পারে। এতে এক দিনে বা একই সময়ে একাধিক পরীক্ষার বিষয়টি এড়ানো যেতে পারে।

২.

স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকাকেন্দ্রিক চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় যে সনাতন ব্যবস্থা ছিল, তা-ই রয়ে গেছে এখনো। তবে বিসিএস ও বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ধাপে ধাপে জেলা শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়। বাদ বাকি সব নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। ফলে দেখা যাচ্ছে, যাঁর বাড়ি তেঁতুলিয়া কিংবা টেকনাফে শুধু পরীক্ষার জন্য তাঁকে ঢাকায় আসতে হচ্ছে। কেউ হোটেলে, বোর্ডিংয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বা পরিচিত বন্ধুবান্ধব বা স্বজনের বাসায় ওঠেন। নারীদের ক্ষেত্রে ঘটে আরও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, তার একটি উদাহরণ দেওয়া যাক।

কয়েক বছর আগের ঘটনা। ঢাকায় একটি সংবাদমাধ্যমে রাতের শিফটে ভোরবেলা পর্যন্ত কাজ করি তখন। রাত দুইটার সময় জানতে পারলাম, আমার এক নারী সহপাঠী নিয়োগ পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে গিয়ে তীব্র যানজটে আটকে পড়েছেন, এক জায়গায় ওঠার কথা ছিল, রাত হয়ে যাওয়ায় সেটিও সম্ভব হচ্ছিল না। অনেককে ফোনে চেষ্টা করেও পাচ্ছিলেন না। আরও ভয়ের ব্যাপার ছিল, সেসময় বাসে একমাত্র যাত্রী ছিলেন তিনিই, বাকি সবাই আগেই নেমে গেছেন। সে সময় বাসে ধর্ষণের বেশ কয়েকটি ঘটনায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। এত রাতে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে একলা একজন মেয়ে নামবেন, আমিও একটু ভীত হয়ে গেলাম। একজন মেয়েকে নিয়ে এত রাতে খালি অফিসে ঢোকাও কতটা ঝক্কির ব্যাপার, সেটিও নিশ্চয় বোঝানো লাগবে না। যদিও অফিস স্টাফকে বুঝিয়ে বিষয়টি সামাল দেওয়া গিয়েছিল।

সে সময়ের আরেকটি ঘটনা মনে পড়ছে, প্রতি সপ্তাহে আরেক নারী সহপাঠী তাঁর অবসরপ্রাপ্ত মধ্যবিত্ত বাবাকে নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসতেন ঢাকায়। একবার একটি ব্যাংকের পরীক্ষা শেষে ট্রেনে ফেরার সময় কথা হচ্ছিল, প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেছে, মন খারাপ, সে কথা বাবাকেও বলতে পারছিলেন না তিনি, প্রতিবারই অনেক বলেকয়ে নিয়ে আসেন।

এমন সব বেকারদের কাছ থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা আয় করে নিয়োগকারী প্রতিটা প্রতিষ্ঠান। মাত্র দুই-তিনটি পদের জন্য কেন কয়েক হাজার জনের কাছে আবেদন ফি নেওয়া হবে? সম্প্রতি একটি ব্যাংকের ৮০টি পদের জন্য পরীক্ষার্থী ছিলেন ৬০ হাজার। বেকারদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে এটা কি একরকম ব্যবসা ফাঁদা নয়? অনেক সময় অনেক পদ খালি থাকলেও সার্কুলেশন দেওয়া হয় কয়েকটি পদের জন্য, পরবর্তীতে বাকি পদের জন্য আবার সার্কুলেশন দেওয়া হয়। আবেদনপত্র বিক্রি করেই কোটিপতি বনে যান তারা।

প্রতি সপ্তাহে লাখ লাখ তরুণের রাজধানীতে আসা–যাওয়া ও থাকা–খাওয়ার খরচ, সময় ও শক্তির কী বিপুল অপচয়! চাকরিপ্রার্থীদের এমন সব দুর্ভোগ, বিড়ম্বনা ও মানসিক যন্ত্রণার ‘ঘোড়দৌড়’ দেখে ভাবি, যে তরুণেরা একদিন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন, তাঁরাই কি না এমন অবহেলিত এ রাষ্ট্রে!

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর হয়ে গেল। এখনো কেন পুরো দেশ থেকে বেকার তরুণদের ঢাকা শহরে নিয়ে আসতে হবে নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য, তা–ও প্রতি সপ্তাহে। মহাকাশে আমাদের স্যাটেলাইট চলে গেল, পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল হয়ে যায়, পরীক্ষার গাইডে সেসবের তথ্য মুখস্থও করেন চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু নিজ জেলায় বসে পরীক্ষা দেওয়ার একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনা এত দিনেও গড়ে উঠল না। এমনও ঘটনা ঘটেছে, প্রশ্নফাঁসের কারণে একই পরীক্ষা দুইবার দিতে ঢাকায় আসতে হয়েছে দেশের আরেক প্রান্ত থেকে। এসব কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে বিপুলসংখ্যক বেকার যুবক ঢাকা উঠে আসেন, গলি-ঘুপচিতে মেস ভাড়া নিয়ে খেয়ে না–খেয়ে জব গাইডে মুখ গুঁজে থাকেন। প্রচণ্ড যানজটে স্থবির হয়ে আসা শহর ঢাকারও কি বাড়তি এ জনসংখ্যার ভার বইতে হয় না?

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর হয়ে গেল। এখনো কেন পুরো দেশ থেকে বেকার তরুণদের ঢাকা শহরে নিয়ে আসতে হবে নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য, তা–ও প্রতি সপ্তাহে। মহাকাশে আমাদের স্যাটেলাইট চলে গেল, পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল হয়ে যায়, পরীক্ষার গাইডে সেসবের তথ্য মুখস্থও করেন চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু নিজ জেলায় বসে পরীক্ষা দেওয়ার একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনা এত দিনেও গড়ে উঠল না।

৩.

এক ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষাগুলো নেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে থাকে। যার মধ্যে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগ, আহ্‌ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আইবিএ, বুয়েট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টর মতো প্রতিষ্ঠান। প্রশ্ন প্রণয়ন থেকে শুরু করে পরীক্ষা নেওয়া, খাতা কাটা, ভাইভা নেওয়া ও ফল প্রকাশ করা, সব কাজই তারা সমাধা করে। এতে কয়েক কোটি টাকা আয় হয় তাদের, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দায়িত্ব অনুসারে এ টাকার ভাগ পান।

কিন্তু দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে—এ প্রশ্ন কেউ করে না। কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের রুম নিয়োগ পরীক্ষার খাতায় ভর্তি হয়ে থাকবে? সেসব খাতা দেখতে গিয়ে নিজ বিভাগের পরীক্ষার ফলাফল দিতে পর্যন্ত দেরি হয়ে যায় তাদের অনেকের। তাদের এমন বক্তব্যও শোনা যায়, এর মাধ্যমে নাকি জাতীয় দায়িত্ব পালন করেন তারা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যে জাতীয় দায়িত্ব তাদের পালন করার কথা, সেটি কি তারা ঠিকঠাক মতো করে? চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার বোঝা কেন একটি বিশ্ববিদ্যালয় বহন করে? এখানে কোটি কোটি টাকার লাভ আছে বলে? তারা কেন সরকারকে বলে না, এটা আমাদের কাজ নয়, আপনারা এর জন্য পৃথক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলুন।

সরকারি সব নিয়োগ পরীক্ষা বিভাগীয় শহরগুলোতে হবে—এমন একটি কমিশন গঠন করা কি খুব কঠিন? পিএসসির পরিসর আরও বাড়িয়ে সেটি করা যেতে পারে। পরীক্ষা জট থেকে কিছুটা পরিত্রাণ দিয়েছে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকে নিয়োগের সমন্বিত পরীক্ষা, কিন্তু সেটিও হয় রাজধানীতে। এটিও তো চাইলে বিভাগীয় শহরগুলোতে নেওয়া যায়। ভারতের ক্ষেত্রে আমরা দেখি, গেজেটেড নন গেজেটেড পদগুলোকে এ, বি, সি, ডি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে কয়েকটি কমিশনের মাধ্যমে পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। তাদের মতো এখানেও আলাদা আলাদা কয়েকটি কমিশন হতে পারে। স্বাধীনতার পর কিন্তু আমাদের দুইটা পিএসসি ছিল, ভারতের মতো ভাগ করেই নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হতো এর মাধ্যমে। ফলে সেটি আবার ফিরিয়ে আনা যায়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ পরীক্ষার জন্যও সমন্বিত কোনো পদ্ধতি বের করা যেতে পারে। কথা হচ্ছে, সদিচ্ছা ও প্রচেষ্টা থাকলে অনেকভাবেই সমাধান সম্ভব। বিসিএস, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পরীক্ষা ছাড়াও গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এমনকি এ বছর বিভাগীয় শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা প্রমাণ করে চাইলেই বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা সম্ভব। অর্থেরও সংকট থাকার কথা না, কারণ আবেদনপত্রের ন্যুনতম ফি বাবদ প্রতি বছর হিসেব করলে শত শত কোটি টাকা আয় তো থাকছেই।

পরিশেষে রাষ্ট্রীয় কর্ণধারদের বলতে চাই, ‘হতভাগ্য’ তরুণদের অদ্ভূত ঘোড়দৌড় কবে বন্ধ হবে? এ দেশের তরুণেরা দেশের স্বাধীনতা এনেছিলেন, তাঁদের নিয়তি তো এমন হওয়ার কথা ছিল না। আমাদের তরুণেরা আজ ক্লান্ত, দোহাই লাগে, তাঁদের এবার রেহাই দিন।

  • রাফসান গালিব প্রথম আলোর সহসম্পাদক