জেলেনস্কিকে ক্যালিফোর্নিয়ায় চাকরি খুঁজতে হবে

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
ছবি: এএফপি

এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে রুশ সেনাদের হাতে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুত শহরের পতন হতে যাচ্ছে। সেটি কত দিনের মধ্যে হবে? সম্ভবত বড়জোর দিন কয়েক লাগবে। এক সপ্তাহের বেশি যে লাগবে না, তা প্রায় নিশ্চিত। ইউক্রেন বলেছে, শহরটি থেকে তারা ইতিমধ্যে এলিট ফোর্সকে সরিয়ে ফেলেছে। শুধু আকস্মিক আক্রমণ ঠেকানোর জন্য অপরিহার্য কিছুসংখ্যক সেনা এখনো সেখানে রাখা হয়েছে। শেষ মুহূর্তে তাদেরও সরানো হবে।

ইউক্রেনের বাহিনীর পাল্টা আক্রমণ কাজে আসেনি। রাশিয়ার ছত্রীসেনা, ভাগনার পিএমসি নামের আধা সামরিক বাহিনীসহ বিপুলসংখ্যক নিয়মিত সেনার দাপটের সামনে তাদের পক্ষে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি। ইত্যবসরে, ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ইউক্রেন নতুন যেসব ব্রিগেড তৈরি করছে, তাদের ধসিয়ে দেওয়ার জন্য রুশ বাহিনী নতুন উদ্যমে আক্রমণ চালাচ্ছে। ইউক্রেনের এ নতুন ব্রিগেডগুলোকে পশ্চিমা আধুনিক অস্ত্র দেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু তা চালানোর জন্য যে প্রশিক্ষণ দরকার, তা তারা পায়নি।

আরও পড়ুন

এ ধরনের আনাড়ি ব্রিগেডগুলোকে অনেক জটিল কারিগরি সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কারণ, পশ্চিমা সমরাস্ত্র পরিচালনার জন্য যেসব খুচরা যন্ত্রাংশ ও মেরামতকেন্দ্র দরকার, তা তারা পাচ্ছে না। এ ছাড়া ভিন্ন ভিন্ন ধরনের গোলাবারুদের ব্যবহারও তাদের
জটিলতায় ফেলেছে। যেমন পশ্চিমাদের সরবরাহ করা লেপার্ড ২ ট্যাংকে সাধারণ ট্যাংকের গোলা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। প্রতিস্থাপন সরবরাহের অভাব তাদের ওপর আরও হামলা নেমে আসার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে কি না, সেটি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর অধিকতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সহজভাবে বলতে গেলে, ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ এখন নেই বললেই চলে। যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা গোলাবারুদ প্রায় শেষ হয়ে গেছে এবং তারা এসব অস্ত্র দক্ষিণ কোরিয়া ও ইসরায়েলে সরবরাহ করতে শুরু করেছে। কারণ, ইসরায়েলের জেনারেলদের আশঙ্কা, ইরানের সঙ্গে তাদের উত্তপ্ত যুদ্ধ বেধে যাওয়াটা এখন কয়েক সপ্তাহের ব্যাপার মাত্র। দক্ষিণ কোরিয়া মোটামুটি চুপ মেরে আছে।

এর প্রধান কারণ হলো প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়েওল মাত্রই ওয়াশিংটন সফর করলেন এবং সেখানে তাঁকে একই মঞ্চে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বলভাবে দেখা গেছে। এখনই তিনি যুদ্ধংদেহী কিছু প্রকাশ করবেন না। যদ্দুর মনে হয়, সফরটি ছিল সম্পূর্ণ আনুষ্ঠানিক এবং মূলত নিষ্ফল।

আরও পড়ুন

দেখা যাচ্ছে, একেবারে শেষ সময়ে এসে ইউক্রেন আরও সেনা নিয়োগ করার চেষ্টা করছে। কখনো কখনো বয়সে তরুণ লোকদের যোদ্ধা হিসেবে নিয়োগ করার জন্য ইউক্রেন কঠোর পন্থা অবলম্বন করছে বলেও অভিযোগ আছে। এ ধরনের যোদ্ধাদের যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া অনেক সময়ই সম্ভব হয় না।

সোজা ভাষায় বলতে গেলে, এই যোদ্ধাদের কামানের খোরাকের চেয়ে বেশি কিছু ভাবা যায় না। কিন্তু ইউক্রেনীয়রা তাদের আমেরিকান প্রভুদের চোখে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে প্রমাণ করতে চায় এবং সে কারণেই তাঁরা রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো ভবঘুরে অথবা ম্যাকডোনাল্ড’স-এর মতো জনপ্রিয় বিপণিবিতানের সামনে ভিড় জমানো তরুণ ছেলেপেলেকে ধরে আনছে সেনা হিসেবে নিয়োগ করার জন্য। আসতে না চাইলে তাঁদের বেধড়ক পেটানো হচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

বাখমুত পতনের পর সম্ভবত রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানাবে। তবে পুনর্নির্বাচনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট বাইডেন পুনর্নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান অবস্থার কোনো পরিবর্তন চান বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু আধা প্রৌঢ় বাইডেন উত্তরোত্তর হোঁচট ও ধাক্কা খাওয়ায় এবং পুনর্নির্বাচনে জেতার জন্য কী পরিমাণ ইউক্রেনীয় নাগরিকের মৃত্যুকে তিনি অনুমোদন দেবেন, তা ঠিক করতে না পারায় তাঁর পুনর্নির্বাচন সুদূরপরাহত হয়ে পড়ছে।

অভিবাসীদের একটি বিশাল ঢেউ শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তজুড়ে প্লাবিত হবে; কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই ভালো ক্রেডিট স্কোর অর্জন করা লোকদের ওপর নতুন কর বসানো হবে। ইতিমধ্যে মুদ্রাস্ফীতি আমেরিকার মধ্যবিত্তকে গলা টিপে মারছে এবং সবচেয়ে যেটি খারাপ, তা হলো বাইডেন প্রশাসন তরুণ বয়সীদের যৌনজীবনকে পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এ অবস্থায় বাইডেনের পুনর্নির্বাচন বেশ কঠিন হবে বলেই মনে হচ্ছে।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে কোনো ধরনের সমঝোতা না হলে রাশিয়া পরিকল্পনামাফিক ইউক্রেনের নতুন ব্রিগেডগুলো ধ্বংস করতে থাকবে। বৃহত্তর বাহিনী, উন্নত কৌশল এবং অধিকতর বিমান শক্তি, বিমান প্রতিরক্ষা এবং স্থল সরঞ্জামের সাহায্যে রাশিয়ানরা খুব ভালোভাবে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে পরাজিত করবে এবং কিয়েভে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করবে বলে মনে হচ্ছে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সেদিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয়, যখন বাইডেনকে ওয়াকারে ভর করে হাঁটতে হতে পারে এবং জেলেনস্কিকে ক্যালিফোর্নিয়ায় চাকরি খুঁজতে হতে পারে।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

  • স্টিফেন ব্রায়েন সেন্টার ফর সিকিউরিটি পলিসি এবং ইয়র্কটাউন ইনস্টিটিউটের একজন সিনিয়র ফেলো