পরিবেশদূষণে কার লাভ, কার ক্ষতি

রামচন্দ্র গুহ তাঁর ‘এনভায়রনমেন্টালিজম: অ্যা গ্লোবাল হিস্টোরি’ বইয়ে দেখিয়েছেন, সর্বজনের পরিবেশবাদ তাঁর জীবন–জীবিকা আর সংস্কৃতিরই অংশ। প্রান্তিক দরিদ্র মানুষের কাছে পরিবেশ শহর ছেড়ে বনে গিয়ে রোমান্টিক সময় কাটানোর উপাদান নয়, তাঁর জীবনেরই অংশ।

ভারতের হিমালয় অঞ্চলের অধিবাসীরা যখন উত্তরাখন্ডের বন রক্ষার জন্য ‘চিপকো’ বা বৃক্ষ আলিঙ্গন আন্দোলন গড়ে তোলেন কিংবা ব্রাজিলের আমাজন অঞ্চলের জনগণ যখন আমাজন বনভূমিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য ‘চিকো’ আন্দোলনে নারী-পুরুষ-শিশুদের হস্তবন্ধন বা ‘এমপাতে’ তৈরি করেন কিংবা বাংলাদেশের ফুলবাড়ির জনগণ যখন জল-জমি-জীবন রক্ষার জন্য ফুলবাড়ি অভ্যুত্থান ঘটান, তখন তা রক্ত-ঘাম-শ্রমের বিনিময়ে জীবন-জীবিকা-সংস্কৃতি রক্ষার লড়াইয়েরই অংশ।

বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন মডেল সর্বজনের জীবন-জীবিকা-সংস্কৃতির ওপর পরিবেশের গুরুত্ব বিষয়ে সংবেদনশীল নয়। এই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ধারার একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, তা নিম্ন মজুরি ও উচ্চ পরিবেশদূষণের ওপর ভিত্তি করে ঘটছে। এ দেশের শ্রমিকদের শ্রম যেমন সস্তা, পরিবেশও তেমন সস্তা। এখানে মুনাফার স্বার্থে খেয়ালখুশিমতো শ্রম ও পরিবেশ শোষণ করা যায়, যার ফলাফল হিসেবে ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে এ দেশের পরিবেশ ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষের জীবন–জীবিকা। যে প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দোহাই দিয়ে এই পরিবেশ শোষণ চলছে, তাতে নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী স্বল্প মেয়াদে আর্থিকভাবে লাভবান হলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা সেই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথেই বিরাট প্রতিবন্ধকতা হিসেবে আবির্ভূত হয়।

আরও পড়ুন

কলকারখানার বর্জ্যদূষণে রাজধানী ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদ দূষণে মৃতপ্রায়। পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুসারে, এসব নদ–নদীতে দৈনিক ৬০ হাজার ঘনমিটারের বেশি বিষাক্ত বর্জ্য নির্গত হয়। শিল্পকারখানাগুলোয় বর্জ্য শোধনাগার না থাকা এবং কিছু কারখানায় থাকলেও তার ব্যবহার না হওয়ায় এমনটি ঘটছে। প্রতি ঘনমিটার তরল বর্জ্য পরিশোধন করতে ৩০ টাকা প্রয়োজন হয় বলে মূলত পরিশোধন ব্যয় সাশ্রয় করতে বছরের পর বছর এসব অপরিশোধিত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। (শিল্পবর্জ্যের এক-চতুর্থাংশই প্রিন্টিং ও ডায়িং কারখানার, বণিক বার্তা, ২ এপ্রিল ২০১৬)

কলকারখানার তরল বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদ-নদী ও খাল-বিলে নির্গত করলে গুটিকয় কারখানামালিকের স্বল্প মেয়াদে আর্থিক লাভ হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সর্বজন। দূষিত পানিতে মাছের উৎপাদন কমে যায়, ফলে জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। পানিদূষণের কারণে মাটিও দূষিত হয়, ফলে শুকনা মৌসুমে বিলে ফসল উৎপাদন কমে যায়। খাল-বিল-নদ-নদীর দূষিত কালো দুর্গন্ধযুক্ত পানি ব্যবহারের কারণে চারপাশের মানুষের অসুখ–বিসুখ বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, নদ-নদীর দূষিত পানি ভূগর্ভের পানির স্তরকেও দূষিত করে। আর ওই ভূগর্ভ থেকেই আমাদের খাওয়ার ও সেচের পানির বড় অংশের জোগান আসে, যা খাবারের সঙ্গে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে প্রাণঘাতী সব রোগের সৃষ্টি করে।

দূষিত উন্নয়ন ও ক্ষতিকর প্রভাবের উদাহরণ হিসেবে ঢাকার গাজীপুর কিংবা সিলেটের হবিগঞ্জের দিকে তাকানো যেতে পারে। গত এক দশকে গাজীপুরে বহু শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে, কিন্তু তার জন্য ধ্বংস করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ বনভূমি ও জলাভূমি। গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের ২ হাজার ২২০টি কারখানার মধ্যে মাত্র ৫৫৬টিতে বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ইটিপি রয়েছে, যার মাত্র ১ শতাংশ বর্জ্য পরিশোধনের জন্য নিয়মিত ব্যবহার করা হয়।

এর ফলাফল কী হয়েছে এবং কার মুনাফার জন্য কাকে খেসারত দিতে হচ্ছে, তা বোঝার জন্য গাজীপুর সদর, কাপাসিয়া, কালীগঞ্জ ও শ্রীপুর উপজেলার ৪০ বর্গকিমি এলাকাজুড়ে বিস্তৃত বেলাই বিলের দূষণের দিকে তাকানো যেতে পারে।

টঙ্গী, বোর্ডবাজার, জয়দেবপুর, রাজেন্দ্রপুর ও শ্রীপুর এলাকার শিল্পকারখানার তরল বর্জ্য তুরাগ, চিলাই ও বালু নদের পানি দূষিত করছে, সেই দূষণ খালের মাধ্যমে বেলাই বিলকেও দূষিত করছে। ফলে যেখানে নব্বইয়ের দশকে প্রতি বিঘা জমিতে ধান পাওয়া যেত ২৪ থেকে ২৫ মণ, দূষণের কারণে ফলন কমতে কমতে বর্তমানে বিঘাপ্রতি ধান পাওয়া যায় ১৩ থেকে ১৪ মণ।

পাঁচ থেকে ছয় বছর আগেও একদল জেলে যেখানে প্রতি রাতে জাল ফেলে ৩৫ থেকে ৪০ কেজি মাছ পেতেন, দূষণের কারণে কমতে কমতে তা সাত থেকে আট কেজিতে নেমে আসে। এভাবে দূষণে মাছ কমে যাওয়ায় জেলেরা পেশা ছেড়ে দিনমজুরি করতে বাধ্য হয়েছেন।

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় দুটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দূষণের কারণে ওই এলাকার মাধবপুরের পাঁচটি, লাখাই উপজেলার দুটি হাওরসহ সাতটি হাওরের কৃষিজমি চাষ করা যাচ্ছে না। শিল্পকারখানা দুটি ওই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত রাজ খালে কোনো ধরনের পরিশোধন ছাড়াই বিষাক্ত তরল বর্জ্য ফেলার কারণে পানিদূষিত হয়ে ফসল হচ্ছে না, খাল-বিলে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না, স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগে ভুগছেন অনেকে।

আরও পড়ুন

এভাবে মাত্র অল্প কয়েকজন শিল্পকারখানার মালিকের অতিরিক্ত মুনাফার জোগান দিতে গিয়ে নদ-নদী, খাল-বিল দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ।

এবার দেখা যাক বাংলাদেশে বায়ুদূষণের পরিস্থিতি কী এবং তাতে কার লাভ, কার ক্ষতি। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউএয়ার’এর ‘ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্টে’ বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্বের অন্যতম দূষিত দেশ এবং রাজধানীর তালিকায় স্থান পেয়ে আসছে।

আইকিউএয়ারের রিপোর্ট অনুসারে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের গড় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা বায়ুর মানসূচক ছিল ১৫৬, যা অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্ষিক মানসূচকের সীমার ১৩ দশমিক ২ গুণ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত বায়ুদূষণবিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স-২০২৩ অনুসারে, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশে পরিণত হয়েছে। এই দূষিত বাতাসে নিশ্বাস নেওয়ার কারণে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে প্রায় ৬ দশমিক ৮ বছর।

পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা কোনো বড়লোকি ব্যাপার নয়, বরং পরিবেশ নিয়ে সচেতন না থাকলে ও পরিবেশদূষণ প্রতিরোধ না করলেই বড়লোকের স্বার্থ রক্ষা হয়। সবার সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্যই পরিবেশ রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল পরিবেশ প্রশ্নটিকে অবহেলা করে শুধু আর্থিক প্রবৃদ্ধিকেই বড় করে দেখায় তা কতিপয়ের স্বার্থে সর্বজনের বিরুদ্ধে কাজ করে। এই ধরনের পরিবেশ বিধ্বংসী অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেলকে প্রত্যাখ্যান করা তাই জরুরি।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণা অনুসারে, গত ৮ বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ৪৭ দিন ভালো বায়ু গ্রহণ করতে পেরেছেন। এ সময় ৫৯৮ দিন মধ্যম মানের বায়ু, ৭৭৮ দিন সতর্কতামূলক, ৬৮৩ দিন অস্বাস্থ্যকর, ৫৪১ দিন খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৫৫ দিন ‘দুর্যোগপূর্ণ বায়ু’ গ্রহণ করে।

বায়ুদূষণের প্রধান উৎস হলো ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের ধোঁয়া, কলকারখানা ও ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া, অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামতের কারণে সৃষ্ট ধুলা। ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন চালিয়ে, জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে কলকারখানা ও ইটভাটা থেকে পরিশোধন ছাড়াই দূষিত বায়ু নির্গত করে এবং যথাযথ সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই নির্মাণকাজ করা ও নির্মাণসামগ্রী পরিবহন ও মজুত করে রাখার মধ্যে দিয়ে কয়েক হাজার পরিবহনমালিক, কারখানামালিক কিংবা ঠিকাদারগোষ্ঠী আর্থিকভাবে লাভবান হলেও শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গোটা দেশের মানুষ।

বাংলাদেশের বাতাস যখন পিএম ২.৫, সালফার ডাই–অক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইডের অতি ঘনত্বের কারণে বিষাক্ত, সরকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো এমন সব পদক্ষেপ নিচ্ছে, যার মাধ্যমে বায়ুদূষণকে আইনি বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনুধাবন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যেখানে বস্তুকণা ২.৫-এর মানমাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম থেকে কমিয়ে ৫ মাইক্রোগ্রাম করেছে, সেখানে বাংলাদেশে বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২-এ বায়ুর মানমাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে বাড়িয়ে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম করা হয়েছে।

এই বিধিতে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্গত বায়ুদূষণকারী উপাদানের সর্বোচ্চ মাত্রা বাংলাদেশে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী চীন কিংবা জাপানের সর্বোচ্চ মাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হারে নির্ধারণ করা হয়েছে।

কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্গত ক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম), সালফার ডাই–অক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইডের অনুমোদিত মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২০ সালের পূর্বে নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যথাক্রমে ১০০ মিগ্রা, ৪০০ মিগ্রা ও ৪০০ মিগ্রা এবং ২০২০ সালের পরে নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৫০ মিগ্রা, ২০০ মিগ্রা ও ২০০ মিগ্রা। (বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২, তফসিল ৫) অথচ বাংলাদেশের কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী জাপান ও চীনের নিজ দেশে এসব বায়ুদূষণকারী উপাদানের অনুমোদিত মাত্রা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কঠোর। পিএম ২.৫, সালফার ডাই–অক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইডের অনুমোদিত মাত্রা জাপানে যথাক্রমে ৫ মিগ্রা, ২৮ মিগ্রা ও ৪০ মিগ্রা এবং চীনে ১০ মিগ্রা, ৩৫ মিগ্রা ও ৫০ মিগ্রা।

এভাবে দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মুনাফার স্বার্থে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি অবহেলার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বায়ুদূষণের কারণে মানুষ বেশি হারে শ্বাসকষ্ট, কাশি, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, স্ট্রোক ও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫-এর মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত মাত্রার চেয়ে প্রতি শতাংশ বেশি হওয়ার জন্য একজন ব্যক্তির শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১২ দশমিক ৮ শতাংশ, কাশির ঝুঁকি ১২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি ৮ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে যায়।

বাংলাদেশের বাতাসে পিএম ২.৫-এর মাত্রা সাত গুণের বেশি হওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, যার ফলে প্রতিবছর ৭৮ থেকে ৮৮ হাজার মানুষ বায়ুদূষণের শিকার হয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করছেন।

বায়ুদূষণের কারণে মানুষ যে শুধু শারীরিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তা নয়। মানসিক রোগেও বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। বায়ুদূষণকারী অতিক্ষুদ্র কণা নিশ্বাস–প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে একপর্যায়ে মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা দীর্ঘ মেয়াদে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতা ও উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়। বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫-এর মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মাত্রা থেকে ১ শতাংশ বাড়লে মানুষের বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে ২০ শতাংশ।

এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়, তার পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৯ থেকে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। (ব্রিদিং হেভি: নিউ এভিডেন্স অন এয়ার পলিউশন অ্যান্ড হেলথ ইন বাংলাদেশ, বিশ্বব্যাংক, ২০২২, পৃষ্ঠা- xv- xvii, ৩৯)

কাজেই পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা কোনো বড়লোকি ব্যাপার নয়, বরং পরিবেশ নিয়ে সচেতন না থাকলে ও পরিবেশদূষণ প্রতিরোধ না করলেই বড়লোকের স্বার্থ রক্ষা হয়। সবার সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্যই পরিবেশ রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল পরিবেশ প্রশ্নটিকে অবহেলা করে শুধু আর্থিক প্রবৃদ্ধিকেই বড় করে দেখায় তা কতিপয়ের স্বার্থে সর্বজনের বিরুদ্ধে কাজ করে। এই ধরনের পরিবেশ বিধ্বংসী অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেলকে প্রত্যাখ্যান করা তাই জরুরি।

  • কল্লোল মোস্তফা টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক লেখক