বিজয়ের মাস
১৪, ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর: ঢাকায় এ তিন দিন কী ঘটেছিল
জন আর কেলি ছিলেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের কর্মকর্তা। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে তিনি ঢাকায় আসেন। ঢাকায় থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলো প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার সহিংস ঘটনাবলির শেষ তিনটি দিন নিয়ে তাঁর এই লেখা প্রকাশ করা হলো।
আগস্ট মাসে জাতিসংঘ শরণার্থী হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান আমাকে ঢাকায় পাঠান সেখানকার শরণার্থীদের সম্ভাব্য সমস্যায় তাঁদের সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব জাতিসংঘের ত্রাণ কর্মকাণ্ডের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন পল মার্ক হেনরি, জাঁদরেল ফরাসি ভদ্রলোক। ঢাকায় একটা সংক্ষিপ্ত সফরে এসেছিলেন তিনি ডিসেম্বরে। তখন সহিংসতা শুরু হয়ে গেলে তিনি ঢাকায় আটকা পড়ে যান। তিনি আমাকে সামরিক ও সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব দেন।
১৪ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার
১৪ ডিসেম্বর সকালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ড. এ এম মালিক আমাকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ফোন করেন। হোটেলে আমি ও জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা পিটার হুইলার ছিলাম। ড. মালিক ফোনে আমাকে তাঁর অবস্থা দেখার জন্য গভর্নর্স হাউসে যেতে বলেন। আগে ঢাকায় জাতিসংঘ শরণার্থী হাইকমিশনের প্রতিনিধি হিসেবে এবং যুদ্ধের সময় যখন আমি সামরিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করছিলাম, তখন অনেকবার ড. মালিকের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে।
আমি ও পিটার হুইলার যখন গভর্নর্স হাউসে ড. মালিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাই, তখন তিনি একটা কেবিনেট বৈঠকে ছিলেন; কিন্তু তবু বেরিয়ে এসে আমাদের নিয়ে গেলেন তাঁর এডিসির অফিসে। তাঁর ব্যক্তিগত পরিস্থিতির ব্যাপারে তিনি আমাদের পরামর্শ চাইলেন।
আমি তাঁকে বললাম আমার মনে হয় তাঁর ও তাঁর মন্ত্রীদের সামনে এখন মৃত্যুর বিরাট ও প্রকট ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। আমি আরও বললাম যে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি যদি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল নিউট্রাল জোনে আশ্রয় না নেন, তাহলে হয়তো ওই রাতটার ফাঁড়াই তিনি কাটাতে পারবেন না। তবে নিউট্রাল জোনে প্রবেশের অনুমতি পেতে হলে তাঁদের সব সরকারি দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিতে হতো। তিনি বললেন যে তাঁর মন্ত্রিসভা ওই মুহূর্তে ভাবছেন তাঁরা পদত্যাগ করবেন কি করবেন না, তবে তাঁরা তা করতে অনিচ্ছুকই ছিলেন। তিনি বললেন যে তিনি নিজে মনে করেন ওই মুহূর্তে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত হবে না। কারণ, তাহলে ইতিহাসের দৃষ্টিতে রণে ভঙ্গ দিয়ে পলায়ন বলে মনে হবে।
সেই মুহূর্তে গভর্নর্স হাউসটি কয়েকটা প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ভয়াবহভাবে কেঁপে উঠল। এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল যে ভারতীয় বিমানবাহিনীর আক্রমণের কবলে পড়েছে ভবনটি। আমি ও পিটার হুইলার তক্ষুনি ঝুলবারান্দা টপকে পেরিয়ে বেরিয়ে এলাম এবং গজ পাঁচেক দূরে একটা জিপের নিচে আশ্রয় নিলাম। গোটা ছয়েক ভারতীয় বিমানের প্রত্যেকটা থেকে দুবার করে রকেট ও কামানের আঘাত এসে পড়ল ভবনটির ওপরে।
গভর্নর্স হাউসের ওপর হামলা চলছে, এরই মধ্যে আমি প্রায় ২০ গজ দৌড়ে চলে এলাম একটা ট্রেঞ্চের কাছে, ট্রেঞ্চটা ততক্ষণে সৈন্যে ভর্তি, আমি উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লাম। এই পুরোটা সময় ধরে আমি আমার হাতের ওয়াকিটকিতে আক্রমণটি সম্পর্কে ধারা বর্ণনা চালিয়ে যেতে থাকলাম পল-মার্ক হেনরির উদ্দেশে, যিনি তখন জাতিসংঘের লোকেশনে অবস্থান করছিলেন। জেনারেল ফরমান আলী নিরাপত্তার খোঁজে ছুটছিলেন, ছুটতে ছুটতে তিনি আমাকে বললেন, ভারতীয়রা আমাদের ওপরে এই হামলা করছে কেন?
২০ গজ দূরে গভর্নর্স হাউসের ওপর ভারতীয় বিমানগুলো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রকেট আর কামানের গোলা নিক্ষেপ করে। এই পরিস্থিতিটা জেনারেল ফরমান আলীর সঙ্গে গল্প করার উপযুক্ত নয় বলে আমার মনে হলো, তিনি তাঁর নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে থাকলেন। আক্রমণের আওয়াজে কানে তালা লেগে যাওয়ার জোগাড়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা থামল এবং আমি আমার গাড়িতে উঠে পিটার হুইলারকে তুলে নিয়ে জাতিসংঘের লোকেশনে ফিরে এলাম।
জাতিসংঘ লোকেশনে এসে আমি ঘটনা সম্পর্কে পল-মার্ক হেনরিকে জানালাম এবং দ্য অবজারভার-এর গ্যাভিন ইয়াংয়ের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি গভর্নর্স হাউসে কী ঘটেছে, তা দেখতে যাওয়ার প্রস্তাব করলেন। আমি রাজি হলাম এবং আমার গাড়িতে করে তাঁকে নিয়ে গভর্নর্স হাউসে আবার গেলাম। সেখানে সামরিক সচিবের সঙ্গে আমাদের দেখা হলো, তিনি আমাদের জানালেন যে ড. মালিক ও তাঁর মন্ত্রিপরিষদ গভর্নর্স হাউসের বাঁ দিকে একটা বাংকারে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি আমাদের সেখানে নিয়ে গেলেন। তাঁরা তখনো দ্বিধান্বিত পদত্যাগ করবেন কি না তা নিয়ে। আমি তাঁদের বললাম যে আমার মনে হয় তাঁরা কেবল অনিয়মিত সৈন্যদের হাতে নিহত হওয়ার বিপদের সম্মুখীন তাই নয়, তাঁদের নিজেদের রক্ষীদের ওপরও তাঁদের আর নির্ভর করা চলে না, বরং ভারতীয় বিমানবাহিনী নিজেও তাদের জীবনের ওপর প্রত্যক্ষ হামলা করে বসেছে।
সেই মুহূর্তে ভারতীয় বিমানবাহিনী গভর্নর্স হাউসের ওপর দ্বিতীয়বারের মতো বিধ্বংসী হামলা চালাল। বাংকারটি ভূমির ওপরে ছিল বলে সেটা খুব একটা নিরাপদ ছিল না, আর আমরা জানতাম না ভারতীয় বিমানবাহিনী সেটার অস্তিত্বের কথা জানত কি না। একটা সরাসরি আঘাত হলে সেটা নিশ্চিতই উড়ে যাওয়ার কথা। আক্রমণ চলতে থাকল। মন্ত্রীরা তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে পদত্যাগপত্র লিখলেন, ড. মালিক সব মন্ত্রীর উপস্থিতিতে সেটাতে স্বাক্ষর করলেন। সদ্য সাবেক গভর্নর ও সদ্য সাবেক মন্ত্রীরা ওই দিনই একটু পরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিউট্রাল জোনে উঠে এলেন।
১৫ ডিসেম্বর, বুধবার
১৫ ডিসেম্বর খুব সকালবেলা ড. মালিক হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আমার কাছে এসে বললেন যে ১৪ ডিসেম্বর গভর্নর হিসেবে তাঁর পদত্যাগ ও গভর্নর্স হাউস থেকে প্রস্থানের মাঝামাঝি সময়ে তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছ থেকে একটা টেলিগ্রাম পেয়েছেন। আমি যত দূর জানি, এই প্রথম প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া একটা যুদ্ধবিরতির অনুমোদন দিলেন।
ড. মালিক বললেন, প্রেসিডেন্টের নির্দেশনার ব্যাপারে তিনি জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। ইয়াহিয়ার নির্দেশ: যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এখন আপনাকে নিতে হবে। নিয়াজির সঙ্গে যোগাযোগ করার ব্যাপারে ড. মালিক আমার সহযোগিতা চাইলেন। আরও প্রাণহানি ঠেকানোর উদ্দেশ্যে আমি আমার ব্যক্তিগত সামর্থ্য থেকে তাঁকে সহযোগিতা করতে রাজি হলাম। তারপর আমি নিউট্রাল জোনে পাকিস্তান সামরিক লিয়াজোঁ কর্মকর্তা কর্নেল গাফফারের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তারপর আমরা তিনজন আমার রুমে গেলাম এবং সেখান থেকে জেনারেল নিয়াজিকে ফোন করলাম। ড. মালিক জেনারেল নিয়াজিকে জিজ্ঞেস করলেন, প্রেসিডেন্টের নির্দেশের ব্যাপারে তিনি কী পদক্ষেপ নিয়েছেন।
জেনারেল নিয়াজি উত্তরে বললেন যে এ ব্যাপারে তিনি ড. মালিকের সঙ্গে আলোচনা করতে চান। তিনি ড. মালিককে হোটেল ছেড়ে ক্যান্টনমেন্টে যেতে বললেন। আমি ড. মালিককে বললাম, যদি উনি নিউট্রাল জোন ত্যাগ করেন, তাহলে তাঁর আর কোনো নিরাপত্তা থাকবে না। আর আগের দিন তাঁর পদত্যাগ ও তাঁর পরবর্তী পরিস্থিতিতে নিউট্রাল জোন ত্যাগ করা তাঁর জন্য বিপজ্জনকই হবে। আমি উল্টো তাঁকে পরামর্শ দিলাম জেনারেল নিয়াজিকে হোটেলে আসতে বলতে, কিন্তু নিয়াজি জানালেন তিনি তাঁর পক্ষ থেকে জেনারেল ফরমানকে পাঠাচ্ছেন।
জেনারেল ফরমান ঠিক সময়ে উপস্থিত হলেন। আমি একজন বিদেশি, আর যা–ই হোক না কেন, কোনো মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নয়, ব্যক্তিগতভাবে কাজ করছিলাম, তাই তাঁদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের এ রকম একটা আলোচনা থেকে আমি সরে গেলাম। ড. মালিক জেনারেল ফরমান ও কর্নেল গাফফার আলোচনায় বসলেন। পরে তাঁরা আমাকে আবার আমন্ত্রণ জানালেন এবং তাঁদের প্রণীত কতগুলো প্রস্তাব দেখালেন, যা জেনারেল ফরমান জেনারেল নিয়াজির কাছে অনুমোদন আর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে পাঠানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন।
প্রস্তাবগুলো এই:
আরও প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি বন্ধ করতে আমরা সম্মানজনক শর্তে এই প্রস্তাবগুলো জানাতে ইচ্ছুক:
ক. পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধবিরতি এবং সব সহিংসতা তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ।
খ. জাতিসংঘের আয়োজন অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানের হাতে প্রশাসনের শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর;
গ. জাতিসংঘকে নিশ্চিত করতে হবে:
১. সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীগুলোর সব সশস্ত্র সদস্যের পশ্চিম পাকিস্তান প্রত্যাবর্তনের আগপর্যন্ত সুরক্ষা ও নিরাপত্তা;
২. পশ্চিম পাকিস্তানি সব বেসামরিক ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তাদের পশ্চিম পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তনের আগপর্যন্ত নিরাপত্তা;
৩. ১৯৪৭ সালের পর পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসরত সব অস্থানীয় ব্যক্তির নিরাপত্তা;
৪. ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে যারা পাকিস্তান সরকারের সেবা করেছে এবং পাকিস্তানের স্বার্থে সহযোগিতা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রত্যাঘাতমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে না এই মর্মে নিশ্চয়তা।
জেনারেল ফরমান ওই দিনই পরে আমাদের কাছে ফিরে এসে তাঁদের প্রস্তাবের ব্যাপারে জেনারেল নিয়াজি ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলে কথা দিয়ে গেলেন। রাত নয়টার দিকে তিনি ফিরে এসে আমাদের জানালেন, জেনারেল নিয়াজি প্রস্তাবগুলো অনুমোদন করলেও ইসলামাবাদ (খ) প্রস্তাবটি, অর্থাৎ ‘পূর্ব পাকিস্তানের কাছে প্রশাসন হস্তান্তর’ প্রস্তাবটি নাকচ করে দিয়েছে। যুদ্ধবিরতির আরও একটি উদ্যোগ এভাবেই শেষ হলো।
১৬ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার
১৬ ডিসেম্বর খুব সকালে আমরা জানতে পেলাম ভারতীয় সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ওই দিনই ঢাকার সময় সকাল সাড়ে নয়টার মধ্যে আত্মসমর্পণের আলটিমেটাম দিয়েছে। কর্নেল গাফফার, লিগ অব রেডক্রস সোসাইটিজের সভেন ল্যামপেল ও আমি হোটেল থেকে টেলিফোনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে যোগাযোগের জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করলাম, কিন্তু আমরা যোগাযোগ করতে পারলাম না। ব্রিটিশ আর্মির পদাতিক বাহিনীর একজন অফিসার হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপের ফ্রন্টে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা থেকে আমি বেশ ভালোভাবে জানি ঢাকার ওপর একটা সর্বাত্মক সামরিক আক্রমণ কী মর্মান্তিক প্রাণহানি ও ধ্বংসলীলা ডেকে আনতে পারে। কর্নেল গাফফার আমাদের বললেন যে আগের দিন ভারতীয় বিমান হামলায় পাকিস্তানি বাহিনীর কম্যুনিকেশন সেন্টার ধ্বংস হয়ে গেছে, আর তিনি নিশ্চিত জানেন না, প্রথমত, জেনারেল নিয়াজি আলটিমেটাম গ্রহণ করবেন কি করবেন না, দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আলটিমেটাম গ্রহণ করেছে কি করেনি, সেটা তারা ভারতীয় বাহিনীকে জানাতে পেরেছে কি না।
প্রায় সাড়ে আটটার দিকে কর্নেল গাফফার, ল্যামপেল ও আমি ঠিক করলাম, নিউট্রাল জোন থেকে বেরিয়ে গাড়িতে করে ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে জেনারেল নিয়াজির কাছ থেকে শুনব কী হচ্ছে, তিনি ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন কি না।
কিছুক্ষণ পরে আমরা কমান্ড বাংকারে পৌঁছালাম, কিন্তু জেনারেল নিয়াজিকে দেখা গেল না। তবে আমরা জেনারেল ফরমানকে বাংকারের ভেতরে পেলাম। আসমানের দিকে চেয়ে তিনি এমন একটা ভাব করলেন যে মনে হলো তিনি সব আশা ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি আমাকে জানালেন, তাঁকে পূর্ব পাকিস্তানে সমগ্র পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে কথা বলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানালেন, তাঁরা ভারতীয় আলটিমেটাম গ্রহণ করতে রাজি হয়েছেন। তিনি নিশ্চিত করে আরও জানালেন যে কম্যুনিকেশন সেন্টার ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তাঁরা আলটিমেটাম গ্রহণ করেছেন এই তথ্য ভারতীয় বাহিনীকে জানাতে পারেননি।
আমি জেনারেল ফরমানের কাছে জানতে চাইলাম, একটা কম্যুনিকেশন চ্যানেল হিসেবে আমি জাতিসংঘের রেডিও নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাকিস্তান বাহিনীর আলটিমেটাম গ্রহণের খবরটা প্রচার করি তা তিনি চান কি না। জেনারেল ফরমান হ্যাঁ–সূচক জবাব দিলেন, আমি তাঁকে বাংকারের বাইরে নিয়ে এলাম, যাতে আমার হ্যান্ডসেট রেডিওটি কাজ করতে পারে। আমি জাতিসংঘ লোকেশনে হেনরির সঙ্গে যোগাযোগ করলাম।
জেনারেল ফরমানের উপস্থিতিতে আমি হেনরিকে মেসেজটা দিলাম এবং জেনারেল ফরমান আরও দুটি পয়েন্ট যোগ করলেন: এক. পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যোগাযোগব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভারতীয় বাহিনীর প্রতি যুদ্ধবিরতির সময় আরও ছয় ঘণ্টা বাড়ানোর অনুরোধ, দুই. ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্টাফ অফিসারদের একটা দলকে আরও সমঝোতা নিয়ে আলোচনার জন্য সম্ভব হলে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা বিমানবন্দরে আসার আমন্ত্রণ, যেখানে তাঁরা নিরাপদ আচরণ ও যথার্থ সৌজন্য লাভ করবেন। আমি পুরো মেসেজটা আমার রেডিওতে ঠিকমতো হেনরিকে জানিয়ে দিলাম, তিনি তৎক্ষণাৎ তা নয়াদিল্লি পাঠালেন। তখন সকাল ৯টা বেজে ২০ মিনিট।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
জন আর কেলিজাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের সাবেক কর্মকর্তা