বিশ্লেষণ
নির্বাচনে জেন-জিরা পুরোনোদের সঙ্গে জোট করল না কেন
বাংলাদেশে গণ–অভ্যুত্থানের ১৩ মাসের মাথায় নেপালে গণ–অভ্যুত্থান ঘটে। আর তাদের গণ–অভ্যুত্থানের পর জাতীয় নির্বাচনের তারিখ পড়েছে বাংলাদেশের নির্বাচনের ২০ দিন পর। সেই নির্বাচন নিয়ে লিখেছেন আলতাফ পারভেজ
দুই দেশেই গণ–অভ্যুত্থানের ধরনে অনেক মিল ছিল। প্রত্যাশাও ছিল কাছাকাছি। আন্তর্জাতিক মহল উভয় অভ্যুত্থানের কারিগর হিসেবে জেন-জিদের কর্তৃত্ব দিয়েছিল। এখন তারা উভয় দেশের নির্বাচনী ফলাফল দেখতে আগ্রহী। নির্বাচন দেখতে উভয় দেশে অনেক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আসছেন।
নেপালের জেন-জিরা এ মুহূর্তে বিশেষভাবে নজর রাখছে বাংলাদেশের নির্বাচনপূর্ব ঘটনাবলির ওপর। নির্বাচনী লড়াইয়ের ভেতর দিয়ে তারা গণ–অভ্যুত্থানের বিজয় ধরে রাখতে মরিয়া। পুরোনো দলগুলোর বিপরীতে নিজস্ব প্রার্থী-পছন্দ নিয়ে এগোচ্ছে তারা। এর মাঝে নতুন নির্বাচনের বদলে পুরোনো পার্লামেন্ট পুনরুজ্জীবনের দাবিতে এতদিনের প্রধান দলগুলো মামলাও করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে।
অভ্যুত্থানের সংগঠকেরা যখন নির্বাচনের মুখোমুখি
কাছাকাছি সময়ে নির্বাচন হলেও নেপাল ও বাংলাদেশের নির্বাচনী পটভূমি একরকম নয়। বাংলাদেশে নবীন ভোটারদের দুটি প্রজন্ম সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখেনি আজও। তাঁদের কাছে এবারের নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে প্রথমবারের মতো ভোটকেন্দ্রে ঢোকার নাগরিক আনন্দ।
অন্যদিকে সমকালীন নেপালে সুষ্ঠু ভোটের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিক চরিত্র পেয়ে গেছে বহু আগেই। তার পরও যে সেখানে তরুণরা গণ–অভ্যুত্থান ঘটাল, সেটি নির্বাচিত সরকারগুলোর কাজে হতাশা থেকে। প্রধান সব দলের প্রতি তাদের গভীর ক্ষোভ। গণ–অভ্যুত্থানের পর নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন দিতে বাংলাদেশের মতো বেশি সময় নেয়নি। ৫ মার্চ দেশটিতে নির্বাচন হবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের মতোই ভোটের রোডম্যাপ ঘোষিত হয়ে গেছে। নেপালের এবারের নির্বাচন জেন-জি সংগঠকদের জন্য বিশেষভাবে এ কারণে চ্যালেঞ্জিং যে, ভোটদাতারা পুরোনো ব্যবস্থার বিপরীতে তাদের কতটা জনপ্রতিনিধি হিসেবে বাছাই করবে, সেটির পরীক্ষা হবে।
নির্বাচনী মেরুকরণে র্যাপার পার বালেন শাহর উত্থান
নেপালে অভ্যুত্থান হয়েছিল ইউএমএল (ইউনাইটেড মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট পার্টি) ও কংগ্রেস জোট-সরকারের বিরুদ্ধে। বিরোধী দল ছিল মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি। প্রধান এই তিন দল পালা করে বিগত দশকে দেশ পরিচালনা করেছে। জেন-জিদের গণ–অভ্যুত্থানের অভিমুখ এই তিন দলের দিকেই ছিল। দেশটিতে রাজতন্ত্রপন্থী প্রভাবশালী দলও আছে। অভ্যুত্থানে সে-ই প্রজাতন্ত্রী পার্টিরও ইন্ধন ছিল। প্রধান দুই কমিউনিস্ট পার্টি এবং নেপালের কংগ্রেস মিলে দেশটি থেকে একদা রাজতন্ত্র হটিয়েছিল।
এবারের নির্বাচনে ওপরের সব দলই অংশ নেবে। অভ্যুত্থানকারী তরুণরা বলছে, পুরোনো এসব দলের কেউ তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে না, তারা নতুন রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে চায়। অভ্যুত্থান হঠাৎ হওয়ায় এবং অভ্যুত্থানের পেছনে সংগঠিত ও শক্তিশালী কোনো দলের উপস্থিতি না থাকায় নেপালিদের মধ্যে জেন-জিদের দাবিদাওয়া নিয়ে বিতর্ক আছে। অভ্যুত্থানকালে দেশজুড়ে ব্যাপক ভাংচুরেও অনেকে ক্ষুব্ধ। প্রায় ৮৪ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ক্ষতি হয়েছে। তবে সাধারণভাবে সব নেপালি মনে করেন দুর্নীতি মানুষের হতাশার রূঢ় বাস্তবতা তৈরি করেছিল। এখন ভোটেই কেবল বোঝা যাবে দেশ পুরোনো রাজনীতিবিদদের প্রত্যাখ্যান করছে কি না।
নির্বাচনী মেরুকরণের জনমিতিক দিকটাতে নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ মিল। নেপালে প্রায় এক–তৃতীয়াংশ ভোটারের বয়স ৩০ বছরের নিচে। জেন-জি নেতারা এই ভোটারদের লক্ষ্য করে একটি দল গঠন করতে মরিয়া চেষ্টা করছিলেন গত কয়েক সপ্তাহে। যেহেতু তাঁদের মধ্যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সমবয়সী কোনো নেতা নেই। তাই সমচিন্তার কিছুটা বয়োজ্যেষ্ঠদের খুঁজছিলেন তাঁরা।
পুরোনো দলগুলোও বসে নেই। ইউএমএল এবং মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি গণ–অভ্যুত্থানকালীন ধকল কাটিয়ে উঠে ইতিমধ্যে সম্মেলন শেষ করে নবোদ্যমে কাজে নেমেছে। এই দুই দল কিংবা নেপালের কংগ্রেসেও পুরোনো নেতৃত্বের কোনো বদল ঘটছে না। অভ্যুত্থান শেষেও পুরোনো দলগুলোর এ রকম সাবলীল ভঙ্গি দেখে জেন-জি আন্দোলনের সংগঠকেরা মনে করছে গণ–অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলো রক্ষা করতে হলে নির্বাচনে নিজস্ব প্রার্থী লাগবে। বিশেষ করে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁরা বিকল্প কাউকে খুঁজছিলেন। সেই সূত্রে তাঁদের শিবিরে এ মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত হলেন কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহ।
এই সাবেক র্যাপার ও প্রকৌশলী একদা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের হারিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় শহরে মেয়র হয়ে চমক দেখিয়েছিলেন। ব্যক্তি বালেন জনপ্রিয় হলেও তাঁর দল নেই। সেই প্রেক্ষাপটে তাঁর সঙ্গে সম্প্রতি রাজনৈতিক চুক্তি হলো স্বতন্ত্র পার্টির রবি লামিচ্ছানের। শেষোক্ত দল এবং ব্যক্তিও একদা তরুণ সমাজের আগ্রহ ও সমর্থনে রাজনীতিতে নেমেছিলেন। রাজনীতিতে এই দুজনের উত্থান মূলত ২০২২ থেকে। এখন তাঁরা উভয়ে মিলে সাত দফা এক চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টির ব্যানারে জেন-জিদের ভোটের মাঠে জড়ো করতে নেমেছেন। ২৮ ডিসেম্বর থেকে এটা শুরু।
বলা যায়, সেপ্টেম্বর বিদ্রোহের উপদলগুলো এখন এই দুজনের নেতৃত্বে একটা প্ল্যাটফর্ম আকারে কাজের দিকে এগোচ্ছে। এই প্ল্যাটফর্মে নেপালের মাওবাদী সশস্ত্র আন্দোলনের শুরুর দিককার তাত্ত্বিক বাবুরাম ভট্টরাইয়েরও যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক জেন-জি এই জোটে উজ্জ্বলো নেপাল পার্টির কুলমান ঘিসিংকেও দেখতে চাইছে। সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তা তাঁর সংস্কারবাদী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তরুণ সমাজে বেশ জনপ্রিয়। এই তিনজন একসঙ্গে দাঁড়ালে পুরোনো দলগুলোর জন্য একটা শক্ত চ্যালেঞ্জ তৈরি হতো। সম্ভাব্য দলটি তাদের প্রতীক হিসেবে রবি লামিচ্ছানদের দলের ‘ঘণ্টা’কে বাছাই করেছে। নেপালে তরুণদের কাছে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে এটা সুপরিচিত।
বালেন শাহ এবং রবি লামিচ্ছানের মধ্যে কোনো কারণে ঐক্য ভেঙে গেলে বালেন শাহ হয়তো একাই জেন-জিদের একাংশের সমর্থনে নির্বাচনে লড়বেন। তবে বালেন ও রবির নেতৃত্বে সদ্য গঠিত এই নির্বাচনী জোট জেন-জিদের আকাঙ্ক্ষার পক্ষে কতটা জোয়ার তৈরি করতে পারবে, তা এখনই বিস্তারিত বলা মুশকিল। কাঠমান্ডুর বাইরে এখনো প্রধান তিনটি দলের ব্যাপক সাংগঠনিক ভিত্তি রয়েছে। নতুন সমীকরণে এটা স্পষ্ট, নির্বাচনে জেন-জিরা বালেন শাহকে তাদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উপস্থাপন করবে।
নির্বাচনে আছে ভূরাজনীতির উত্তাপও
জেন-জিদের জন্য নির্বাচনকালীন একটি চ্যালেঞ্জ হলো চীন ও ভারতের উদ্বেগ সামলানো। নেপালের সেপ্টেম্বর অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত কিছু কিছু উপদলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক লেনদেনের সংযোগ প্রকাশিত হওয়ায় চীন ও ভারত তাদের ওপর কড়া নজর রাখছে। নেপালের ভৌগোলিক অবস্থান চীন ও ভারতের স্বার্থের বিবেচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা উভয়ে এখানে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি গোপন প্রভাব দেখতে চায় না।
স্থানীয় বামপন্থীরা মনে করছে দেশের রাজনীতিতে তাদের প্রভাব হ্রাস করতে জেন-জি অভ্যুত্থানে ওয়াশিংটন অনেক জ্বালানি জুগিয়েছে। নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের অনেক নীতিনির্ধারকেরও একই মত। শেষোক্ত দুই দেশ তাদের এত দিনের বন্ধুভাবাপন্ন পুরোনো দলগুলোকে জোরেশোরেই নির্বাচনে মদদ দিতে পারে এবারও। ফলে নেপালের এই নির্বাচন ভূরাজনৈতিকভাবেও এক অদৃশ্য মল্লযুদ্ধ চলবে।
চীন ও ভারত বিশেষভাবে জেন-জিদের সম্ভাব্য সম্মিলিত দল বা প্ল্যাটফর্মের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি রবি লামিছানেকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা মনে করে রবিকে নেপালের রাজনীতির নেতৃত্বে আনতে বিশেষ একটি দেশ তৎপর রয়েছে। রবি একসময় মাওবাদী দলের সঙ্গে জোটভুক্ত সরকারে দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন। জনপ্রিয় সাংবাদিকতার জীবন ছেড়ে রাজনীতিতে আসার চার-পাঁচ বছরের মধ্যে তিনি নেপালের গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্র এখন। তবে বালেন শাহর মতো নিষ্কলুষ নয় তাঁর ক্যারিয়ার।
রাজনীতিতে এসে প্রথমে তিনি ঝামেলায় পড়েন অতীতের আমেরিকান সিটিজেনশিপ নিয়ে। ২০০৭ থেকে ১০ বছর আমেরিকার নাগরিক হিসেবে সেখানে ছিলেন তিনি। পরে দেশে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে দুর্নীতির দায়েও অভিযুক্ত হন। গণ–অভ্যুত্থানকালে তিনি ললিতপুরে কারাগারে ছিলেন। অভ্যুত্থানের মধে৵ দলের কর্মীরা তাঁকে জোর করে সেখান থেকে নিয়ে আসে। সে সময় ওই কারাগারের ১ হাজার ৩০০ বন্দীও বেরিয়ে যায়। কয়েক দিন পর নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়ে সব বন্দিকে আবার ফিরতে নির্দেশ দিলে রবিও স্বেচ্ছায় কারাগারে ফেরেন। তবে ১৯ ডিসেম্বর মুক্তি পান। তাঁর এই মুক্তি জেন-জিদের রাজনৈতিক প্রভাবেই হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
রবি লামিছানের ছোট্ট রাজনৈতিক জীবনে বিতর্কিত অনেক কিছু থাকলেও তরুণদের একাংশের কাছে তিনি এখনো জনপ্রিয়। ধারণা করা হয় কে পি শর্মা ওলি, পুষ্পকুমার দাহাল, শেরবাহাদুর দেউবা পুনঃপুন প্রধানমন্ত্রী হয়েও তরুণদের সুশাসনের ক্ষুধা মিটাতে না পারায় তারা যেকোনো মূল্যে এখন জাতীয় নেতৃত্বে বদল চাইছে—যদিও বিকল্প ধারার দল ও নেতৃত্ব গড়ার জন্য যথেষ্ট সময় নিয়ে কাজ করেনি তারা। নির্বাচনক সামনে রেখে কিছুটা তাড়াহুড়ার ভেতর দিয়ে সেটি কিছুটা বাস্তব চেহারা নিয়েছে শেষমেশ। মূলত জেন-জিদের সাংগঠনিক অগোছালো অবস্থার কারণেই মধ্যপন্থী বিকল্পরূপে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বালেন শাহর জন্য রাস্তা প্রশস্ত হলো।
রবি লামিচ্ছানের চেয়ে বয়সে ছোট হলেও দেশটির প্রভাবশালী ধনাঢ্যরা এবং মিডিয়া হাউসগুলোও বালেনকে সমর্থন করবে বলে ইঙ্গিত মিলছে। সবচেয়ে বড় মিডিয়া হাউস কান্তিপুর গ্রুপের সঙ্গে ইতিমধ্যে বালেনের বৈঠক হয়েছে। ডলারের হিসাবে নেপালের একমাত্র বিলিয়নিয়ার বিনোদ চৌধুরীর সঙ্গেও বালেনের এক দফা আলাপ হয়েছে ২৬ ডিসেম্বর।
বিনোদ চৌধুরী নেপালের সর্বশেষ পার্লামেন্টে কংগ্রেসভুক্ত এমপি ছিলেন। তবে তার আগে একসময় তিনি ইউএমএলের হয়েও একবার পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন। এখন বালেনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক থেকে মনে হচ্ছে, দেশটির নাগরিক সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে নতুন নেতৃত্ব খুঁজছেন। বালেন-রবির জোট যদি ব্যবসায়ী মহল ও মিডিয়া সাম্রাজ্যের সমর্থন পায়, তাহলে বিদ্যমান মূলধারার দলগুলোর বিরুদ্ধে নির্বাচনে শক্ত চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে তারা, যেমনটি বাংলাদেশে ঘটাতে পারেনি এনসিপি।
বাংলাদেশের মতো নেপালেও গণ–অভ্যুত্থানকালে প্রচুর অস্ত্র খোয়া গেছে, লুট হয়েছে; যার সব উদ্ধার হয়নি। ফলে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে শঙ্কা আছে। ইউএমএল ও কংগ্রেসের অনেক নেতা কাঠমান্ডুর সর্বত্র অবাধে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করেন না এখনো। ইউএমএল–প্রধান কেপি শর্মা ওলি এবং নেপালের কংগ্রেসের রমেশ লেখকের কাঠমান্ডুর বাইরে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে।
এই দলগুলো নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কার কথা বলছে। তবে সবাই প্রকাশ্যে চাইছে নির্বাচন নির্ধারিত তারিখে হোক, যদিও মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি যতটা জোরেশোরে নির্বাচন চাইছে, কংগ্রেস ও ইউএমএল ততটা জোরে চাইছে না; কিন্তু এই তিন দলই নির্বাচনের আগে পুরোনো সংসদ পুনরুজ্জীবিত হলে খুশি হবে বলে মনে হচ্ছে।
সে ক্ষেত্রে আবারও জনবিক্ষোভ শুরুর শঙ্কা আছে। বালেন ও রবি লামিছানের যৌথ অবস্থানের মাধ্যমে জেন-জিদের রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রচেষ্টা একটি স্পষ্ট আদল নেওয়ার মুখে জেন-জিরা কোনোভাবে আবার পুরোনো পার্লামেন্টের অধীনে দেশকে দেখতে চাইবে না। বালেন শাহ ও রবি লামিছানে বলছেন, তাঁরা জেন-জি আন্দোলনের সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করে নেপালকে এক দশকের মধ্যে একটি শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে চান। অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে এই ধরনের বক্তব্য প্রলুব্ধকর। বালেনের তীব্র জাতীয়তাবাদী কথাবার্তাও তাঁর প্রতি অনেকের আকর্ষণের কারণ। কিন্তু প্রশাসন পরিচালনা এসবের চেয়েও বেশি কিছু চায়। বাংলাদেশ গণ–অভ্যুত্থানের ১৭ মাস শেষে বেশ ভালোভাবেই এই তিক্ত সত্য জেনেছে।
আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে বিশ্লেষক
মতামত লেখকের নিজস্ব
