উপাত্ত সুরক্ষা আইনে নাগরিক অধিকার কতটা সুরক্ষা পাবে

ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন নিয়ে ২০১৯ থেকেই বাংলাদেশে আইসিটি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ২০২১ সালে খসড়া প্রকাশ করা হলে তা নিয়ে অনেক হইচই শুরু হয়। আইনে নাগরিক অধিকারের চেয়ে সরকার ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কয়েক দফা খসড়া বের হলেও প্রচণ্ড চাপের কারণে সেটি আর মন্ত্রিসভায় পাস করা যায়নি।

সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যক্তিগত উপাত্ত বা গোপনীয়তা সুরক্ষার জন্য দুটি অধ্যাদেশ পাস করেছে—ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ও জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ।

যেকোনো আইন কার্যকর ও অর্থবহ হতে হলে সেটি অবশ্যই একটি পূর্বানুমানযোগ্য আইনি কাঠামোর ভেতর প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু যখন কোনো আইন ব্যক্তিগত ব্যাখ্যার ওপর নির্ভরশীল হয়, তখন সেটি সহজেই অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে। ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ অনেকটা এ সমস্যায় পড়েছে, যা বাস্তবে এটিকে একই সঙ্গে অকার্যকর ও নাগরিক অধিকারবিরোধী করে তুলেছে।

২.

সবচেয়ে বিতর্কিত ধারাটাই দিয়ে শুরু করি। অধ্যাদেশে ২৯ ধারায় বাংলাদেশের বাইরে গোপনীয় ব্যক্তিগত উপাত্ত স্থানান্তর নিয়ে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। উপাত্ত মজুত বা ডেটা লোকালাইজেশন অর্থাৎ নির্ধারিত শ্রেণির উপাত্ত স্থানীয়ভাবে বা দেশের ভেতর সংরক্ষণ করা।

ইন্টারনেট যেভাবে কাজ করে তার কারণে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানকে উন্নত নিরাপত্তা ও গতি নিশ্চিত এবং খরচ কমানোর জন্য দেশের বাইরে উপাত্ত সংরক্ষণ করতে হয়, যা আমাদের বাইরের বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত রাখে। এ ব্যবস্থার ফলেই আমরা প্রতিদিনের সাধারণ অ্যাপস, যেমন ফেসবুক বা জিমেইল ব্যবহার করতে পারি কিংবা সহজে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেখতে পারি।

এক পক্ষ বলছে, উপাত্ত স্থানান্তরের এই শর্তাবলি সব উপাত্তকে লোকালাইজেশনের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে, যা অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত খারাপ এবং এ রকম হলে বাংলাদেশের গ্রাহক সহজে ইন্টারনেট ব্যবহার বা এর সব সুবিধা ভোগ করতে পারবে না। ২০ থেকে ৩০ বছর আগে চীন যে রকম ছিল, সে রকম বহির্বিশ্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

সরকার থেকে বলা হচ্ছে এ রকম কঠোর নিষেধাজ্ঞা নেই। যেহেতু আইন কোনো একটা বিধানের ওপর কার্যকর হয় না, তাই এখানে সম্মিলিতভাবে ২৯(১), ২৯(২), ২৯(৪), ২৯(৫), ২৯(৬) ও তফসিল–১ দেখতে হবে।

দেখা যাচ্ছে, এনআইডি, পাসপোর্ট নম্বর, গোপনীয় হেলথ ইনফরমেশনের মতো কিছু নির্দিষ্ট গোপনীয় ব্যক্তিগত উপাত্ত বাংলাদেশের আদালতের এখতিয়ারের ভেতর থাকতে হবে, যেটি করার একমাত্র উপায় হলো দেশের ভেতর তা মজুত রাখা। বাংলাদেশি আদালতের বিদেশে কোনো এখতিয়ার নেই।

লক্ষণীয় হলো কোনটি গোপনীয় ব্যক্তিগত উপাত্ত বা কোনটি নয়, সেই সিদ্ধান্ত সরকার এককভাবে নেবে। অর্থাৎ যদি কাল সরকার, আপনার মুঠোফোন নম্বর, আইপি অ্যাড্রেস বা গাড়ির লাইসেন্স প্লেট নম্বরকে গোপনীয় ব্যক্তিগত উপাত্ত হিসেবে নির্ধারণ করে, তাহলে সেটি স্থানান্তর করতে আলাদা শর্ত মানতে হবে।

সরকারি সংস্থার হাতে বিস্তৃত ক্ষমতা থাকলে কী কী করা সম্ভব, সেটি আমরা বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে নাগরিকের ইন্টারনেট ব্যবহার, তথ্য অধিকার ও বাক্‌স্বাধীনতার ওপর চরম নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা সম্ভব।

আবার যদি সরকার মনে করে, আপনার মুঠোফোন নম্বরকে ‘সীমাবদ্ধ ব্যক্তিগত উপাত্ত’ হিসেবে ক্ল্যাসিফাই করা হবে, তাহলে সেটি একেবারেই বিদেশে স্থানান্তর করা যাবে না। মুঠোফোন নম্বর স্থানান্তর ছাড়া আপনি ফেসবুক, ওয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন না, দুবাই-মালয়েশিয়ায় ফোন দিতে পারবেন না, ট্রেনের-উড়োজাহাজের টিকিট কাটতে পারবেন না। অনেক ক্ষেত্রে মুঠোফোনের বেসিক অ্যাপসও ব্যবহার করতে পারবেন না।

বিধিসম্মত যেকোনো সংস্থা এ রকম দ্ব্যর্থক বিধানকে প্রকৃতপক্ষে ডেটা লোকালাইজেশন হিসেবেই ইন্টারপ্রেট করবে। কারণ, তার কাছে কোনো প্রিডিক্টেবল বা পূর্বানুমানযোগ্য কাঠামো নেই। আজ এক কথা, কাল আরেক কথা, পরশু নতুন কোনো উপাত্তকে স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করার সরকারি নির্দেশ আসতে পারে।

সরকারি সংস্থার হাতে এ রকম বিস্তৃত ক্ষমতা থাকলে কী কী করা সম্ভব, সেটি আমরা বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে নাগরিকের ইন্টারনেট ব্যবহার, তথ্য অধিকার ও বাক্‌স্বাধীনতার ওপর চরম নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা সম্ভব।

৩.

উপাত্ত মজুতের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, অধ্যাদেশটি নাগরিক অধিকার ও গোপনীয়তা সুরক্ষার ক্ষেত্রে কতটুকু কার্যকর। কাগজে-কলমে মোটাদাগে ভালো মনে হলেও এটি আসলে বাস্তবায়নযোগ্য নয়। অধিকাংশ বিধানই হয় স্ববিরোধী, নয়তো বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়।

অধ্যাদেশের ১৩(৩) ধারায় সব ব্যক্তিগত উপাত্ত মুছে ফেলার অধিকারের (রাইট টু ইরেজ) শর্তাবলি দেওয়া আছে। ধরেন, আপনি ব্যক্তিগত তথ্য কোনো ব্যাংকে দিয়েছেন অ্যাকাউন্ট খোলার সময়।

শুক্রবার সকালে ‘প্যা পো’ করে উঠল ফোন। চরম বিরক্তি নিয়ে ফোন ধরে বললেন, ‘হ্যালো’। অপর পাশে কেউ বলল, ‘আমাদের গ্রাহক হিসেবে সাইনআপ করলে বিশেষ অফার! প্রতি কেজি পেঁয়াজের ওপর ১০ পয়সা ছাড়।’ ‘ধ্যাত’ বলে লাইন কেটে দিলেন। এরপর শুরু হলো এসএমএসের হিড়িক।

সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় হাবিজাবি অফারের চোটে আপনি বিরক্ত। আপনি জানেন না, কাউকে আপনার মুঠোফোন নম্বর ব্যাংক দিয়েছে, নাকি মোবাইল অপারেটর। আপনি ব্যাংকে গিয়ে একদিন চিল্লাপাল্লা করলেন। তারপর বললেন, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেন তারা মুছে ফেলে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন অনুয়ায়ী ব্যক্তিগত তথ্য ছাড়া আপনি অ্যাকাউন্ট চালাইতে পারবেন না।

আপনি বললেন, দরকার নেই অ্যাকাউন্ট। বন্ধ করে দিলেন। অ্যাকাউন্ট বন্ধ হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনের অধীন সব প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছর পর্যন্ত অ্যাকাউন্টধারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করতে হয়।

আরও পড়ুন

এই পর্যায়ে ব্যাংক জানাল তাদের আর কিছু করার নেই। ডেটা প্রসেসিংয়ের সময় হয়তো কোনো তৃতীয়পক্ষ বা থার্ড পার্টি ভেন্ডার মার্কেটিংয়ের জন্য নিয়েছে। এই ভেন্ডার ব্যাংকের ওটিপি পাঠায়, যেটিতে আপনার সম্মতি আছে।

আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন এই ভেন্ডারকে ধরবেন। কিন্তু ভেন্ডার আরও ১০ ভেন্ডারের কাছে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করেছে। কার কাছ থেকে কীভাবে তথ্য গিয়েছে, সেটির কোনো হদিস গ্রাহক (আইনি ভাষায় উপাত্তধারী) হিসেবে আপনার কাছে নেই। ব্যাংকের পক্ষে এই সাপ্লাই চেইন মনিটরিং করা সম্ভব নয়।

সত্যি বলতে, অধ্যাদেশ অনুযায়ী তার এখতিয়ারের বাইরে উপাত্ত সংরক্ষণ বা প্রক্রিয়াকরণ বেআইনি। তার মানে সাপ্লাই চেইন মনিটরিং ও সেখানকার উপাত্ত অ্যাকসেস করা যাবে না। এটা একদম অচল অবস্থা, যদি না আপনি পুরো বিষয় নিয়ে আদালতে যান, টাকাপয়সা খরচ করে ভালো আইনজীবী ধরেন। ব্যক্তিগত উপাত্ত মুছে ফেলার কোনো অধিকার আপনি আসলে এখনকার কাঠামোয় বাস্তবায়ন করতে পারবেন না।

এই রাইট টু ইরেজ বিধানটি ইউরোপিয়ান আইন জিডিপিআরের আর্টিকেল ১৭ থেকে কপি করা হয়েছে। কিন্তু ইউরোপে রাইট টু ইরেজ কাঠামোর প্রায় ৩০ বছরের আইনতত্ত্ব (জুরিসপ্রুডেন্স) আছে। তার ওপর ইউরোপিয়ান মানবাধিকার ব্যবস্থা ৭২ বছর ধরে চলমান। বাংলাদেশে মানবাধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্তরে অনেক কিছু করা বাকি আছে। এ ছাড়া আমাদের সংবিধানে মানবাধিকারের বিধানগুলো এখনো প্রাগৈতিহাসিক ঔপনিবেশিক বন্দোবস্তের ওপর নির্ভরশীল।

তাড়াহুড়া না করে, আগের সরকারের ফর্মুলা অনুসরণ না করে, বাস্তবসম্মত ও নাগরিক অধিকারের প্রতি অগ্রাধিকার দিয়ে একটি কার্যকর আইন প্রণয়ন করা খুবই সম্ভব ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি। কেবল করার জন্য করা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ না করে এদিক-ওদিক থেকে জোড়া লাগিয়ে এমন একটি আইন তৈরি করা হয়েছে, যা বাস্তবে কার্যকর করা অসম্ভব।

৪.

অধ্যাদেশটি তাড়াহুড়া করে পাস করার আরেকটি ব্যাখ্যা হলো নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ডার্ক ওয়েবে সহজেই পাওয়া যায় এবং এটি ঠেকাতে হবে। সেই তথ্য কে ডার্ক ওয়েবে বিক্রি করে? রাষ্ট্রীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই তথ্য বিক্রির অভিযোগ আছে।

যেকোনো রাষ্ট্রেই সরকার ও তার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোই সবচেয়ে বড় উপাত্ত সংগ্রাহক। আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে এনটিএমসিসহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা কীভাবে নাগরিকদের ওপর নজরদারি চালায় ও সংবেদনশীল উপাত্ত সংগ্রহ করে।

অথচ এই অধ্যাদেশে সরকার ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জবাবদিহির বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যদি রাষ্ট্রের পুরো একটি অংশ বা কার্যক্রম জবাবদিহির বাইরে রাখা হয়, তবে সেই একই কার্যক্রমের জন্য কর্মকর্তাদের শাস্তি দেওয়া কার্যত অকার্যকর বা অপ্রয়োগযোগ্য হয়ে পড়ে।

আর যদি আদালত তাদের এই কাঠামোর আওতায় আনার চেষ্টা করে, তখন বিধানগুলোর কনট্রাডিকশন বা জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে তারা আইনের ঊর্ধ্বেই থাকবে। বাংলাদেশ তথ্য অধিকার আইনের ক্ষেত্রেও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা একই অজুহাত দিয়েছে।

যদি সত্যিকার অর্থেই নাগরিকের গোপনীয়তা এবং উপাত্ত অধিকার নিয়ে মাথাব্যথা থাকত, তাহলে এনটিএমসির মতো প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত এবং ডিজিএফআইয়ের ক্ষমতার আওতা নির্ধারণ করাকে প্রাধান্য দেওয়া হতো।

উপাত্ত সুরক্ষা আইনে ডেটা লোকালাইজেশনের মাধ্যমে আইন অমান্যকারী দেশি-বিদেশি কোম্পানির ওপর বিশাল জরিমানা আরোপ করার একটা বড় মোটিভেশন হলো গুগল-ফেসবুককে অ্যাকাউন্টেবল করা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোম্পানির কর্মীদের জেল হতে পারে। এ জন্য আদালতকে সীমারেখার বাইরে এখতিয়ার দেওয়া হয়। উদ্যোগ ভালো হলেও বাস্তবে হাতে গোনা কয়েকটি দেশে তা সম্ভব হয়েছে। কারণ, কোম্পানিগুলো ব্যবসাকে প্রাধান্য দেয়।

অধ্যাদেশ প্রয়োগ করে টেক কোম্পানিগুলোকে কমপ্লায়েন্ট করতে কোম্পানির পাশাপাশি বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প সরকারের সঙ্গে দর–কষাকষি করতে হবে। কারণ, ট্রান্সন্যাশনাল ডেটা আদান-প্রদান একটি ভূরাজনৈতিক ইস্যু।

৫.

গত এক বছরে সরকার ও সরকারপ্রধানের রাজনৈতিক পুঁজির পুরোটাই গিয়েছে ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ কতটা ভয়ংকরভাবে দেশ ধ্বংস করেছে, সেটি বুঝতে এবং আন্তর্জাতিকভাবে নতুন বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে। সেই সঙ্গে গুম-খুনের বিচার এবং পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে। এর ভেতর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ, চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নানা বিষয় তো আছেই। যতটুকু পুঁজি বাকি আছে, আন্তর্জাতিক মহলে বিশ্বাসযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রতিষ্ঠা করতে সেটি কাজে লাগানোই অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

কালেভদ্রে টেক কোম্পানির বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা কোনো কোনো দেশে এগোলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে আউট অব কোর্ট সেটেলমেন্ট হয়। যদি সরকারের পক্ষ থেকে নন-কমপ্লায়েন্ট কোম্পানির ওপর জরিমানা আরোপ করা হয় এবং বিস্ময়করভাবে কোনো কোম্পানি যদি দিতে রাজি হয়, তাহলে সেই টাকা সরকারের পকেটে ঢুকবে। কাজেই সাধারণ নাগরিকের প্রতিকার পাওয়ার কোনো উপায় নেই।

বাংলাদেশে যেখানে সরকার এখনো পর্যন্ত জুলাইয়ের শহীদদের পূর্ণ তালিকা প্রস্তুত করতে পারেনি, অনেকেই ক্ষতিপূরণ পাননি, সেখানে এ রকম একটা জটিল অবস্থায় অধ্যাদেশের দণ্ডমূলক ব্যবস্থা এবং ভুক্তভোগীদের জন্য কোনো নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ কাঠামো কতটুকু বাস্তবসম্মত, তা বিবেচনায় নিতে হবে।

দুঃখের বিষয়, তাড়াহুড়া না করে, আগের সরকারের ফর্মুলা অনুসরণ না করে, বাস্তবসম্মত ও নাগরিক অধিকারের প্রতি অগ্রাধিকার দিয়ে একটি কার্যকর আইন প্রণয়ন করা খুবই সম্ভব ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি। স্বচ্ছভাবে সকল অংশীদারদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা হয়নি।কেবল করার জন্য করা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ না করে এদিক-ওদিক থেকে জোড়া লাগিয়ে এমন একটি আইন তৈরি করা হয়েছে, যা বাস্তবে কার্যকর করা অসম্ভব। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে কার্যত ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে।

  • সাবহানাজ রশিদ টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারনেট নীতিমালা ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফেলো

*মতামত লেখকের নিজস্ব