জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে আট লাখ বাংলাদেশি দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে গমন করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশি আরব উপসাগর ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন। সেই তুলনায় পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে অভিবাসনের হার কম।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৯৯৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মাত্র ৫৩ হাজার ৬৭৮ জন বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে গমন করেছেন। এসব অভিবাসী মূলত বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) উদ্যোগে এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেমের (ইপিএস) অধীনে চাকরি করতে কোরিয়াতে গিয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় অভিবাসী শ্রমিক প্রেরণে অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ইপিএসের আওতায় বাংলাদেশের জন্য যে কোটা বরাদ্দ আছে, তা বাংলাদেশ পূরণ করতে পারছে না।
ইপিএস সিস্টেমের জনপ্রিয়তার কারণ
এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) হলো দক্ষিণ কোরিয়াতে বিভিন্ন খাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগে একটি আইনি ব্যবস্থা। কোরিয়া এবং বাংলাদেশ, চীন, নেপাল, পাকিস্তানসহ ১৬টি দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় শ্রম চুক্তির (বিএলএ) পরিপ্রেক্ষিতে ইপিএসের মাধ্যমে কোরিয়াতে বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
ইপিএসের মাধ্যমে প্রতিটি দেশের জন্য অভিবাসী কর্মী নিয়োগে মূলত কোটার ব্যবস্থা করা হয়, যার মাধ্যমে বছরে নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পান।
২০০৭ সালে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে প্রথম দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই হওয়ার মাধ্যমে বোয়েসেল এককভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্প, নির্মাণ এবং কৃষি খাতে কর্মী পাঠানো শুরু করে।
২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা থেকে মোট ১ লাখ ৫ হাজার ৮৯১ জন অভিবাসী শ্রমিক এ পদ্ধতিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে গিয়েছেন। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ নেপালের তুলনায় অনেক কম অভিবাসী শ্রমিক দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঠাতে পেরেছে।
ইপিএস প্রোগ্রামের অধীনে বাংলাদেশ থেকে ২০১৯ সালে ১ হাজার ৬৪৭ জন, ২০২০ সালে ২০৮ জন, ২০২১ সালে ১০৮ জন এবং ২০২২ সালে ৫ হাজার ৯১০ জন কোরিয়ায় অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে গিয়েছেন। এ আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো দক্ষিণ কোরিয়াতে আমাদের শ্রমবাজারকে কীভাবে বিস্তৃত করা যায় এবং একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাধাসমূহ নিয়ে আলোকপাত করা।
কর্মসংস্থানের সুযোগ
কোরিয়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অত্যন্ত কম হওয়ায় ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এ কারণে ভবিষ্যতে কোরিয়ান অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের ২০২২ সালের জুন মাসের তথ্যানুযায়ী, জাহাজ নির্মাণশিল্পে ৪ হাজার ৮০০ কর্মী, তৈরি উত্পাদনশিল্পে ২৭ হাজার জন, খাদ্য ও ক্ষুদ্র কুটিরশিল্পে ১৪ হাজার ২০০ জন এবং পরিবহন খাতে প্রায় ২ হাজার ৩০০ জন কর্মীর ঘাটতি ছিল। ফলে কোরিয়ান সরকার বিদেশি কর্মী নিয়োগে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক নিয়মকানুন সহজ করেছে, যাতে বিদেশি শ্রমিকদের দিয়ে তারা শ্রমবাজারের এই ঘাটতি দূর করতে পারে।
২০২২ সালে কোরিয়ান সরকার ৬৯ হাজার বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য ই-৯ ভিসার বন্দোবস্ত করেছিল, যা তাদের আগের বছরের বরাদ্দকৃত কোটার তুলনায় বেশি ছিল। এ ছাড়া সাম্প্রতিক কালে কোরিয়ান সরকার বিভিন্ন খাতে নতুন কোটা বাড়ানোর ইচ্ছা পোষণ করেছে। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে দক্ষিণ কোরিয়ার যেসব খাতে লোকবলের ঘাটতি রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে।
কোরিয়া থেকে ফেরত আসা অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে সাক্ষাত্কারে জানা গেছে যে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সাধারণত কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের সততা ও নৈতিকতা, কাজের দক্ষতা এবং সাংস্কৃতিক ধ্যানধারণা কাছাকাছি হওয়ার কারণে কর্মক্ষেত্রে আমাদের কর্মীদের চাহিদা আছে। বাংলাদেশি শ্রমিকেরা যদি নিজেদের আরও দক্ষ করে তুলতে পারে, তাহলে কোরিয়াতে আরও বেশি কাজের সুযোগ করতে পারবে।
উচ্চ আয়ের সম্ভাবনা
দক্ষিণ কোরিয়াতে কাজ করলে ভালো বেতনের সম্ভাবনা থাকে—এ ধারণা প্রায়ই বাংলাদেশি চাকরিপ্রার্থীদের অভিবাসনে আগ্রহী করে তোলে। দ
ক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফেরত আসা অভিবাসীদের থেকে জানা যায় যে কোরিয়াতে চার বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করতে পারলে কমপক্ষে এক কোটি টাকা আয় করা সম্ভব, যা বাংলাদেশি শ্রমিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। উপার্জিত অর্থ দিয়ে তাঁরা তাঁদের সন্তানদের শিক্ষা, পরিবারের ঋণ শোধ করেন এবং পরিবারকে অর্থ পাঠান, যাতে তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার চেষ্টা করা যায়।
দক্ষতা উন্নয়ন
কোরিয়া বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতা ও কাজের অভিজ্ঞতায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া অর্থনৈতিকভাবে সফল এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত হওয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকেরা সেখানে নতুন দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জনের সুযোগ লাভ করেন, যা তাঁদের পেশাগত দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে পারে। এ ছাড়া নতুন প্রযুক্তিগত জ্ঞান, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা অর্জনের পর তাঁরা দেশে ফিরে এলেও বিভিন্নভাবে লাভবান হতে পারেন।
রেমিট্যান্স এবং অর্থনৈতিক প্রভাব
কোরিয়া থেকে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৯৬ দশমিক ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৫ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এতে বোঝা যাচ্ছে যে কোরিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের আয়ের জন্য খুবই টেকসই উৎস, ভবিষ্যতে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কোরিয়াতে শ্রমিক পাঠানোর সীমাবদ্ধতা
অন্যান্য দেশে কোটার পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কোরিয়ান সরকার ২০২৩ সালে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য ১০ হাজার কোটা বৃদ্ধি করেছিল। ইপিএস সিস্টেমে কোটা বাড়ানো মূলত কোরিয়ান সরকারের সিদ্ধান্ত। তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে কোন খাতে কতজন শ্রমিকের প্রয়োজন, তার ওপর নির্ভর করে এটা বরাদ্দ করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোটা বৃদ্ধি নির্ভর করছে বাংলাদেশ সরকার ও দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের মধ্যে কোন ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান আছে তার ওপর। দুই দেশের আন্তসম্পর্কে যদি কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকে, তাহলে কোটা বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
শ্রমিক নির্বাচনে নিয়োগকর্তাদের ভূমিকা
বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায়, বাংলাদেশ সম্পর্কে কোরিয়ান নিয়োগকর্তাদের চমৎকার মনোভাব থাকলেও কর্মী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কর্মীরা নিয়োগকর্তাদের প্রথম পছন্দ না–ও হতে পারেন। কিছু কোরিয়ান নিয়োগকর্তাদের ধারণা এমন যে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকেরা সে দেশের সাংস্কৃতিক ও কাজের নিয়মকানুন ঠিকমতো অনুসরণ করেন না। এ ভ্রান্ত ধারণার কারণে নিয়োগকর্তাদের পছন্দের তালিকায় বেশির ভাগ সময় ভিয়েতনাম বা নেপালের মতো দেশগুলো প্রাধান্য পায়। এ ভ্রান্ত ধারণা দূরীকরণে বহুপক্ষীয় উদ্যোগের অনুপস্থিতি রয়েছে।
কোরিয়ান ভাষা শেখার সীমাবদ্ধতা
ইপিএস সিস্টেমের আওতায় কোরিয়াতে কাজের সুযোগের প্রধান ও প্রথম যোগ্যতা হলো ভাষাজ্ঞান। অভিবাসীরা কোরিয়ান ভাষায় উত্তীর্ণ হয়ে কোরিয়া যেতে পারলেও তাঁদের অনেকেই বাস্তবসম্মত ভাষার দক্ষতা অর্জন করতে ব্যর্থ হন। বলে রাখা ভালো, কোরিয়ার বিভিন্ন শহরে ভাষার আঞ্চলিকতা ও উচ্চারণে ভিন্নতা থাকায় অনেক ক্ষেত্রে অভিবাসীরা তা বুঝতে অক্ষম হন। কাজেই ট্রেনিং সেন্টার থেকে বাংলাদেশি অভিবাসীরা যে ভাষার দক্ষতা অর্জন করেন, তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে তাঁরা যথেষ্ট সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হন। একই সঙ্গে কোরিয়ান সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
কোরিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশের কোটা বৃদ্ধির সুপারিশসমূহ
দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি অভিবাসীদের কাজের সুযোগ বাড়াতে হলে কিছু বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে।
প্রথমত, অন্যান্য দেশের তুলনায় কোরিয়াতে বেশি শ্রমিক পাঠাতে হলে প্রথমেই বাংলাদেশ ও কোরিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের কোটার সংখ্যা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, তা দূর করতে কোরিয়ার নাগরিক সমাজ, নিয়োগকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আমাদের যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও কাজের প্রতি বাংলাদেশি কর্মীদের মূল্যবোধ বেশি বেশি প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সম্পর্কে সঠিক ধারণা তৈরি করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ কোরিয়াতে অভিবাসনের মূল মানদণ্ড হলো ভাষার জ্ঞান। যদিও কোরিয়াতে ভাষার দক্ষতা অর্জনের পরই অভিবাসন সম্ভব, তারপরও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আরও দক্ষ করে কোরিয়াতে পাঠাতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণসহ আরও বেশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ এবং আধুনিক ভাষা শেখার জন্য যে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি দক্ষতা এবং সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়, তার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
কোরিয়ান ভাষাকে শুধু টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রাইভেট সেক্টরে আরও জনপ্রিয় করতে হবে। এ লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম আমাদের ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বোয়েসেলকে উদ্যোগী হয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারগুলো মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, যেন তাঁরা কোরিয়ান ভাষাবিষয়ক কোর্সগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করেন।
তৃতীয়ত, কোরিয়ান ভাষায় দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে যাঁরা কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষিত, তাঁদেরকে সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে। যদি একজন শ্রমিকের ভাষা ও কারিগরি দক্ষতা দুটোই থাকে, তাহলে তা একজন কোরিয়ান নিয়োগকর্তার জন্য বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে কাজ করবে।
এ ছাড়া ভবিষ্যতে কোরিয়ান শ্রমবাজার নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা করতে হবে। কোন কোন খাতে কী ধরনের লোকবলের প্রয়োজন বা কোন ধরনের দক্ষতার চাহিদা আছে, তা নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা করতে হবে। এটা বাংলাদেশ ও কোরিয়া—উভয় শ্রমবাজারে সুফল বয়ে আনবে।
চতুর্থত, কোরিয়ান নিয়োগকর্তা বা ব্যবসায়ীরা যেন বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন, সে ব্যবস্থা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁদের পারস্পরিক যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে উভয় পক্ষই উদ্যোগী হয়ে ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার এবং কোরিয়ার শ্রমবাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। একইভাবে এসব ক্ষেত্রে আমাদের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
পঞ্চমত, কোরিয়াতে স্থায়ীভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিরা, যাঁরা কোরিয়াতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন, তাঁদের সঙ্গে কোরিয়ান সরকারের একধরনের ভালো সম্পর্ক থাকে। তাঁরা যেন নিজ দেশ সম্পর্কে কোরিয়ান সমাজে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করতে পারেন, সে বিষয়ে তাঁদের উৎসাহ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, যারা কোরিয়ান সমাজে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে কাজ করবে, তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পর্যায় তাদের সম্মাননা দেওয়া যেতে পারে।
পরিশেষে আমাদের মনে রাখা দরকার যে আমাদের অভিবাসী শ্রমিকদের বাজার মূলত মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক হয়ে গেছে, যেখানে শ্রমিকদের আয় প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। সরকার চেষ্টা করছে নতুন দেশে শ্রমবাজার বিস্তৃত করতে।
এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের জন্য একটি চমৎকার সুযোগের সৃষ্টি করেছে। এতে আমরা দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে ও অধিক রেমিট্যান্স উপার্জন করতে পারব। সেদিক দিয়ে আমাদের অবশ্যই উদ্যোগী হতে হবে, যেন আমরা দক্ষিণ কোরিয়াতে আরও অধিক সংখ্যক দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারি। এতে করে আমদের শ্রমিকদের ভাগ্যের উন্নতি হবে এবং অধিক রেমিট্যান্স উপার্জনের কারণে বাংলাদেশও লাভবান হবে।
মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার ও সেলিম রেজা শিক্ষক ও সদস্য, সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।
কে এম নূর-ই-জান্নাত গবেষণা সহযোগী, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স, (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।