শীতের সকালে গরম কৌতুক

শীত কেন পড়ে না—এই অভিযোগের মধ্যেই ভালোই শীত পড়ে গেছে। তেঁতুলিয়ায় ৬ দশমিক ১ পর্যন্ত তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল। এখন রবীন্দ্রনাথের গানের প্যারোডি গাওয়া যায়, শীতের হাওয়ায় লাগল কাঁপন নন্দলালের হাড়ে হাড়ে। কিন্তু গাইতে গেলে দাঁতে দাঁত লেগে ঠকঠক শব্দ হয়। গানের সুর ঠিক থাকে না। শীতকালে দাঁতের সঙ্গে দাঁত বাড়ি খেয়ে ঠকঠক করতে থাকে কেন?

এ প্রশ্নের উত্তর হলো: বাইরে শীত থাকলে শরীর মস্তিষ্ককে বার্তা পাঠায়। মস্তিষ্ক তখন আমাদের মাংসপেশিকে বলে, কাঁপো। মাংসপেশি কাঁপলে তাপ উৎপাদিত হবে, আমাদের শরীর শীতের বিরুদ্ধে লড়তে পারবে।

এই অবস্থায় আজ ছুটির দিনের সকালটা বরং শুরু করি কিছু কৌতুক দিয়ে। বলে রাখা ভালো, এই কৌতুকগুলো আমি অনলাইনে বিভিন্ন কৌতুকের সাইট থেকে নিয়ে থাকি। এগুলো আমার রচিত নয়, আবিষ্কৃত তো নয়ই। আমি কপি-পেস্ট করি, নয়তো ইংরেজি থেকে অনুবাদ করি। এ পর্যন্ত কেন বলতে হচ্ছে? ভাই, পাঠ্যপুস্তকে বিদেশি সাইট থেকে তথ্যসূত্র ছাড়া হুবহু অনুবাদ তুলে দেওয়ার ফলে সমালোচনার যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, এরপর অপাঠ্য কলামে কৌতুক বললেও তার সূত্র না বলা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

ঘড়ি বলল মোরগকে, ভোরবেলা ঘুম থেকে ডেকে তোলার কাজে তোমার চেয়ে আমি ঢের ভালো। অনেক ভেবে মোরগ বলল, কিন্তু তোমাকে দিয়ে বিয়েবাড়ির রোস্ট বানাতে পারবে না! মোরগের মাংসের কথা যখন উঠলই, তখন মিসরের একটা খবর তুলে ধরি প্রথম আলো ডটকম থেকে। মিসরে মুরগির মাংসের দাম অনেক বেড়ে গেছে। সরকার তাই জনগণকে মুরগির পা ফেলে না দিয়ে খেতে বলেছে। তাতে হয়েছে দুই বিপদ, এক. সমালোচকেরা মাঠ গরম করে ফেলেছেন, আমরা কি এত গরিব হয়ে গেছি যে আমাদের শেষ পর্যন্ত মুরগির পা খেতে হবে? দুই. আর বাজারে মুরগির পায়ের দামও গেছে বেড়ে!

খবরটা পড়ে আমাদের ভালোই লাগছে! আমাদের দেশে সবকিছুর দাম বাড়ছে, মাছের দাম, মাংসের দাম, তেলের দাম, গ্যাসের দাম, ডলারের দাম, ফলারের দাম। কমছে শুধু টাকার দাম, আলুর দাম, আর ভোটারের দাম। তো মিসরের লোকেরা এখন ঠেকায় পড়ে মুরগির পা খাচ্ছে, শুনে সান্ত্বনা পাচ্ছি।

পরের কৌতুকটা আমি নিচ্ছি আপজোকস ডটকম থেকে।
একজন লোক এক হাজার ডলারের চেক ভাঙাতে ব্যাংকে গেছেন। তিনি ব্যাংকের ক্যাশিয়ারকে বললেন, ‘আমাকে নগদ ডলার দিন।’

ক্যাশিয়ার বললেন, ‘আপনার অ্যাকাউন্টে অর্থটা রেখে দিন। নিরাপদে থাকবে। বছর শেষে এক হাজার ডলারের বদলে আপনি পাবেন এক হাজার পঞ্চাশ ডলার। থাকুক না ডলারটা।’

গ্রাহক বললেন, ‘কিন্তু আপনাদের ব্যাংক যদি ফেল করে! শুনেছেন তো, নাম না জানা ঠিকানাবিহীন কোম্পানি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি ডলার তুলে নিয়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে! এ রকমটা হলে আপনাদের ব্যাংক তো দেউলিয়া হয়ে যাবে। আপনারা আমাদের মতো খুদে আমানতকারীর টাকা রাখেন। তারপর সেটা বিভিন্ন বড় পার্টিকে লোন দেন। তারা আপনাদের উচ্চসুদে টাকাটা ফেরত দেয়। সেইভাবেই তো ব্যাংক চলে। এখন যদি ঋণ গ্রহণকারীরা টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়, তাহলে তো আমরা আমাদের টাকা কোনো দিনও ফেরত পাব না।’
ব্যাংকের কর্মচারী বললেন, ‘না না। ভয় পাবেন না। আমাদের ব্যাংকের টাকা বিমা করা আছে। আমরা বিপদে পড়লে বিমা কোম্পানি সব টাকার জোগান দেবে?’
‘কিন্তু সব ব্যাংক যদি ফেল করতে থাকে, তখন তো বিমা কোম্পানিও তো ধসে যাবে।’
‘তখন আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তখন বিমা কোম্পানিকে টাকা দেবে।’
‘কিন্তু কতজনকে দেবে? কেন্দ্রীয় ব্যাংকও যদি ধসে যায়?’
‘তাহলে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর সরকার তখন এগিয়ে আসবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বাঁচাতে?’
‘কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার যদি ধসে পড়ে?’
‘মাত্র ১০০০ ডলারের বিনিময়ে যদি এই কাজটা করা যায়, তাহলে কি আমাদের তা-ই করা উচিত নয়?’

পরের কৌতুকটা পেয়েছি ইবাংলা লাইব্রেরি থেকে। এক লোক জাদুঘরে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়ল। জাদুঘরের কর্মচারীরা ছুটে এলো। করছেন কী? করছেন কী? এটা সিরাজউদ্দৌলার চেয়ার। লোকটা বলল, ভাই একটু বসে থাকি না, আর পারছি না, সিরাজ ভাই আসার আগে বলবেন, উঠে যাব! কর্মচারীরা বললেন, সিরাজ ভাই আইলে উঠবেন, এইটার কোনো গ্যারান্টি আছে? একবার চেয়ারে বইলে কেউ ওঠে?

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘প্রার্থী’ কবিতায় সূর্যকে বলেছেন উত্তাপ দিতে, আমাদের স্যাঁতসেঁতে ঘরে, আর গলির ধারের উলঙ্গ ছেলেটাকে। বলেছেন, সূর্য হলো অগ্নিপিণ্ড, তার কাছ থেকে উত্তাপ পেয়ে আমরা যখন নিজেদের জড়তা পুড়িয়ে ফেলতে পারব, তখন হয়তো ওই উলঙ্গ ছেলেটাকে ঢেকে দিতে পারব গরম কাপড়ে। কবিরা কথা বলেন ইঙ্গিতে, কোনো গূঢ় বার্তা তিনি হয়তো দিতে চেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেন, ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো। তবে তেঁতুলিয়া কিংবা রংপুরের মানুষ জানে, সূর্য না উঠলে দিনরাত্রিগুলো বড় কষ্টে যায়। সারা রাত খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে তার পাশে বসে থাকতে হয়!

এই রকম দিনে বরং ভূপেন হাজারিকার এই গানটা গাওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে:
শিশিরে ভেজানো রাতে
বস্ত্রবিহীন কোনো খেতমজুরের
ভেঙে পড়া কুটিরের ধিকিধিকি
জ্বলে থাকা, তুষে ঢাকা আগুনের
রক্তিম যেন এক উত্তাপ হই
আমি যেন এক উত্তাপ হই...

  • আনিসুল হক প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক