তাহলে কি পদ্মা সেতুর সুফল শরীয়তপুরবাসী পাবে না?

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর শরীয়তপুরের সড়ক এভাবে স্থবির হয়ে পড়ে
ছবি: সংগৃহীত

গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলো। আর এই পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী হওয়ার কথা ছিল শরীয়তপুর জেলার মানুষের। কিন্তু হলো পুরো উল্টোটা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে ঢাকা থেকে সরাসরি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত বেড়ে গেল। এতে যানবাহনের সংখ্যাও বাড়লো। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মধ্যে ২০ জেলা কাঙ্ক্ষিত সুফল পেলেও শরীয়তপুর জেলার মানুষ পড়লো মহা বিপাকে। কারণ শরীয়তপুর জেলার সঙ্গে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০২০ সালে প্রকল্প অনুমোদন দিলেও শরীয়তপুর জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং জেলা প্রশাসনের অবহেলা, একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের উদাসিতার কারণে আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। ওই সংযোগ সড়কের প্রকল্পের সঙ্গে আরও ছিল ২টি আরসিসি সেতু এবং ছোটবড় ২৭টি কালভার্ট।

পদ্মা সেতু চালুর পর এখন সওজ ও জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, আগের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুনে। এখন নতুন করে কাজ শুরু হবে, তা সম্পন্ন হতে লাগবে আরও অন্তত ২ বছর। এদিকে পদ্মা সেতুর আদলে জেলায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে উল্লেখ্যযোগ্য হারে। শরীয়তপুর সদর হতে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশ স্থানে তীব্র যানজট এখন নিত্যদিনের চিত্র। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

যানবাহনের চাপ বাড়ায় সেই আদিকালে নির্মাণ করা মেয়াদোত্তীর্ণ ১২ ফুট প্রশস্ত সেতুগুলো এমন নড়বড়ে হয়ে পড়েছে, যা রীতিমতো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। যেকোনো সময় সেতু ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এরই মধ্যে দুই সেতুর একটি কোটাপাড়া সেতুর অভিমুখে সওজ সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছে। সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেতু দিয়ে ইজিবাইক, যাত্রীবাহী বাস, মালবোঝাই ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ভারী যানবাহন চলাচল করছে হরদম।

কথা বললাম শরীয়তপুর সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বললেন, কোটাপাড়া সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমরা সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছি। এখন নির্দেশনা না মেনে ভারী যানবাহন চলাচল করলে আমরা কী করতে পারি। জানতে চাইলাম, এই সড়কের দ্বিতীয় ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ডুবিসায়বর বন্দর কাজীরহাট সেতুর কথা। তিনি জানালেন, কোটাপাড়া সেতুর তুলনায় ওই সেতু ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে না, তাই ওখানে কোনো সতর্কতার দরকার নেই। অথচ সেতু দুটির একি হাল।

এখন কথা হচ্ছে, সেতু ঝুঁকিপূর্ণ তাই সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দায় সারলেন কর্তৃপক্ষ। কোনো ধরনের কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। করা হলো না কোনো বিকল্প ব্যবস্থা।
তাহলে কি শরীয়তপুরের মানুষ কোনো দুর্ঘটনায় জীবন না দেওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে উঠতে তাঁদের এই ভোগান্তির শেষ হবে না?
প্রশ্ন রইল, ঘুমিয়ে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

  • মো. পলাশ খান
    সমাজকর্মী ও সাংবাদিক