রমজান যেভাবে নাজাতের সুযোগ নিয়ে আসে

রমজানের সঙ্গে ইমানের যোগসূত্র প্রবল। ইমানের ভিত্তি হলো ওহি। ওহি তথা আসমানি কিতাবগুলো অবতীর্ণ হয়েছে রমজান মাসে। কোরআন মজিদও রমজান মাসে শবে কদরে অবতীর্ণ হয়েছে। ইমান যেমন মানুষকে কুফর ও শিরক থেকে মুক্ত করে, তেমনি রমজান মানুষকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করে।

মুমিনের জন্য ইমান আনার পরই সবচেয়ে জরুরি আমল হলো নামাজ। রমজান মাস হলো নামাজের মাস। যেমন তারাবিহ বা প্রশান্তির বিশ্রামের নামাজ ও কিয়ামুল্লাইল বা রাত জাগরণের নামাজের পাশাপাশি রমজানে সাহ্‌রির বদৌলতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া সহজ হয়।

রমজান মাসে রয়েছে এমন একটি রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম এবং যা লাইলাতুল কদর বা শবে কদর নামে পরিচিত। হাজার মাস মানে সোয়া ৮৩ বছর। অর্থাৎ একটি মানবজীবনের ব্যাপ্তিকালের সমান। সুতরাং রমজানের সুফল জীবনব্যাপী

এশার নামাজ ও ফজরের নামাজ জামাতে পড়ার সুযোগ বাড়ে, যাতে সম্পূর্ণ রাত বন্দেগি করার সওয়াব পাওয়া যায়। ফজরের নামাজ আগেভাগে পড়ে ঘুমানোর কারণে সকালে ইশরাক নামাজ পড়ার সুবিধা হয়।

রমজান উপলক্ষে কাজের চাপ কম থাকার কারণে চাশত নামাজ ও জাওয়াল নামাজ আদায় করার সুযোগ হয়। বিকেলে অফিস বা কর্মক্ষেত্র থেকে আগে ফেরার কারণে আসর নামাজ জামাতে পড়া যায়। ইফতার উপলক্ষে মাগরিব নামাজের জামাতও পাওয়া যায়।

সাওম বা রোজা হলো ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ। সিয়াম বা রোজা হলো রমজানের সেরা অনুষঙ্গ। আগুন যেমন সোনাকে জ্বালিয়ে নিখাদ করে দেয়, রোজা তেমন ইমানদারের ষড়্‌রিপুর কামনা–বাসনাকে পুড়িয়ে ব্যক্তিকে খাঁটি বান্দায় পরিণত করে। তাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রোজার জন্য এ মাসকেই নির্ধারণ করেছেন।

রোজা ও রমজানের একটি মাহাত্ম্য হলো ফিদইয়া। রোজা একটি শারীরিক ও মানসিক ইবাদত। কিন্তু অক্ষম ও দুর্বল ব্যক্তির জন্য এর কাজার পাশাপাশি ফিদইয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যা আর্থিক ইবাদত। এতে রোজার পরিধির ব্যাপকতা বোঝা যায়।

রোজার কাফফারা রমজানের চমৎকারিত্বের অন্যতম। রোজা শারীরিক ইবাদত হওয়া সত্ত্বেও দুর্বলচিত্তের ব্যক্তি যদি রোজা ভঙ্গ করে, তার জন্য আল্লাহ তাআলা কাফফারার বিধান দিয়েছেন। এর মাধ্যমগুলো হলো দাসমুক্ত করা বা ৬০ গরিবকে দুবেলা তৃপ্তিসহকারে খাওয়ানো অথবা একাধারে ৬০টি রোজা রাখা। মানে হলো দান–খয়রাত সদাকাত তথা গরিবের সেবা ও সমাজের কল্যাণই রমজানের মুখ্য উদ্দেশ্য।

রোজা শেষে ঈদুল ফিতরের দিন সকালবেলা ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। দাতা ও গ্রহীতার সুবিধার্থে রমজানেও দেওয়া যায়। এ ঈদের সঙ্গে ফিতরার সম্পৃক্ততার কারণে এর নাম ঈদুল ফিতর। সদকাতুল ফিতর বা ‘ফিতরা’ হলো ঈদের আনন্দকে সর্বজনীন করার উপায়। ধনী, গরিব—সবাই যেন ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারেন, তাই এ ব্যবস্থা।

মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ অন্যের আনন্দ ও বেদনায় প্রভাবিত হয়। তাই এ আনন্দের দিনে পাড়া–প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন যদি আনন্দে শামিল হতে না পারে, তবে আনন্দ পূর্ণতা পাবে না। তাই নিজের আনন্দ সবার মধ্যে বিলিয়ে দিতে ও ছড়িয়ে দিতে এ ব্যবস্থা। ফিতরা বা সদকাতুল ফিতর হলো রমজানে রোজা পালনের শুকরিয়াস্বরূপ। এটি রোজার অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দেয়।

আল্লাহর সান্নিধ্য মানবজীবনে আরাধ্য। এর অন্যতম মাধ্যম হলো ইতিকাফ। ইতিকাফ বছরের যেকোনো সময় করা যায়, কিন্তু রমজান মাসের শেষ দশক ইতিকাফ করা সুন্নতে মুআক্কাদা কিফায়া। এখান থেকেও রমজানের মহিমা অনুধাবন করা যায়। এক দশকের কম ইতিকাফ নফল হলেও এই ইতিকাফ অন্য সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি ফজিলতের।

রমজান মাসে রয়েছে এমন একটি রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম এবং যা লাইলাতুল কদর বা শবে কদর নামে পরিচিত। হাজার মাস মানে সোয়া ৮৩ বছর। অর্থাৎ একটি মানবজীবনের ব্যাপ্তিকালের সমান। সুতরাং রমজানের সুফল জীবনব্যাপী।

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

    [email protected]