হজ ও বদলি হজের পরিচয় ও বিধান

হজের আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা করা ও সফর বা ভ্রমণ করা। ইসলামি পরিভাষায় হজ হলো নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত স্থানে বিশেষ কিছু কর্ম সম্পাদন করা।

হজের নির্ধারিত স্থান হলো মক্কা শরিফে খানায়ে কাবা, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরাফা, মুজদালিফা ইত্যাদি এবং মদিনা শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর রওজা শরিফ।

হজের বিশেষ আমল বা কাজ হলো ইহরাম, তাওয়াফ ও সাঈ, অকুফে আরাফা, অকুফে মুজদালিফা, অকুফে মিনা, দম বা কোরবানি, হলক ও কসর এবং জিয়ারতে মদিনা রওজাতুন নবী (সা.) ইত্যাদি।

হজ ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের একটি। হজ আল্লাহ তাআলার বিশেষ বিধান। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সমর্থ পুরুষ ও নারীর ওপর হজ ফরজ।

বদলি হজ সম্পাদনের জন্য আগে হজ আদায় করা শর্ত নয়; বরং নতুনদের দ্বারা বদলি হজ করালে তাঁর নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, আবেগ ও অনুরাগ বেশি থাকে। তবে যাঁর নিজের হজ ফরজ হয়ে অনাদায়ি রয়েছে, তিনি বদলি হজ করতে পারবেন না

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আল্লাহর তরফ হতে সেসব মানুষের জন্য হজ ফরজ করা হয়েছে, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান; আয়াত: ৯৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রকৃত হজের পুরস্কার জান্নাত ব্যতীত অন্য কিছুই নয়। শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে যাঁরা হজ পালন করবেন, আল্লাহ তাআলা তাঁদের হজ কবুল করবেন এবং তাঁদের জন্য অফুরন্ত রহমত ও বরকত অবধারিত।

নবী করিম (সা.) বলেন, হজ মানুষকে নিষ্পাপে পরিণত করে, যেভাবে লোহার ওপর থেকে মরিচা দূর করা হয়। (তিরমিজি)। ‘যে ব্যক্তি যথাযথভাবে হজ পালন করে, সে আগেকার পাপ থেকে এমনভাবে নিষ্পাপ হয়ে যায়, যেরূপ সে মাতৃগর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন ছিল।’ (বুখারি)

যে ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ হয়েছে অথচ তিনি হজ আদায় করেন না, তাঁর বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ (ফরজ হওয়া সত্ত্বেও) না করে মারা যায়, তাকে বলে দাও, সে ইহুদি হয়ে মরুক অথবা খ্রিষ্টান হয়ে।’ (মুসলিম)

হজ জীবনে একবার করা ফরজ। সামর্থ্যবানদের জন্য প্রতি পাঁচ বছর অন্তর হজ করা সুন্নত। সুযোগ থাকলে বারবার বা প্রতিবছর হজ করায় বাধা নেই। যে কারও অর্থ দ্বারা হজ সম্পাদন করা যাবে; হাদিয়া বা অনুদানের টাকা দিয়েও হজ করলে তা আদায় হবে।

চাকরি বা কোনো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল হিসেবে কর্তব্য কাজের সুবাদে হজ করলেও হজ আদায় হবে। এটি বদলি হজ না হলে নিজের ফরজ হজ আদায় হবে; ফরজ হজ আগে আদায় করে থাকলে এটি নফল হবে। নফল হজ অন্য কারও বদলি হজের নিয়তে আদায় করলে তা–ও হবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)

হজ সম্পাদনে শারীরিকভাবে অক্ষম হলে অন্য কাউকে দিয়ে বদলি হজ করানো যায়। বদলি হজ যিনি সম্পাদন করেন, যিনি অর্থায়ন করেন এবং যাঁর জন্য হজ করা হয়, সবাই পূর্ণ হজের সওয়াব পাবেন। যাঁরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ আদায় করতে পারেননি, তাঁদের কর্তব্য হলো বদলি হজ করানো বা বদলি হজের জন্য অসিয়ত করে যাওয়া।

অসিয়তকৃত বদলি হজ অসিয়তকারীর সম্পদ বণ্টনের আগে প্রতিপালন করা বা সম্পাদন করানো ওয়ারিশদের জন্য ওয়াজিব। অসিয়ত না করে গেলেও সব ওয়ারিশ সম্মিলিতভাবে বা কোনো ওয়ারিশ নিজ উদ্যোগে বা ব্যক্তিগতভাবে তা আদায় করতে বা করাতে পারবেন। এতেও মৃত ব্যক্তি দায়মুক্ত হবেন এবং বদলি হজ করনেওয়ালা ও করানেওয়ালা উভয়ে সওয়াবের অধিকারী হবেন।

মৃত বা জীবিত যে কারও বদলি হজ করানো যায়। আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধব অথবা পরিচিত–অপরিচিত যে কেউ যে কারও বদলি হজ করতে বা করাতে পারেন। বদলি হজ আদায় করতে বা করাতে যাঁর জন্য বদলি হজ করা হবে বা করানো হবে, তার অনুমতি বা অবগতি প্রয়োজন নেই; তবে সম্ভব হলে তা উত্তম।

বদলি হজ সম্পাদনের জন্য আগে হজ আদায় করা শর্ত নয়; বরং নতুনদের দ্বারা বদলি হজ করালে তাঁর নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, আবেগ ও অনুরাগ বেশি থাকে। তবে যাঁর নিজের হজ ফরজ হয়ে অনাদায়ি রয়েছে, তিনি বদলি হজ করতে পারবেন না।

বদলি হজ আত্মীয়–অনাত্মীয়, নারী–পুরুষ যে কেউ করতে পারেন। তবে বিজ্ঞ পরহেজগার লোক হলে উত্তম।

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

  • যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

  • [email protected]