আলতাফ পারভেজের বিশ্লেষণ
ভারতের ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’ কি সফল হবে
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত সরকার নকশালপন্থীদের বিরুদ্ধে বড় সাফল্য পেয়েছে। এতে ভারতে সশস্ত্র আন্দোলন একেবারেই থেমে যাবে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন আলতাফ পারভেজ
গণচীনের ‘চেয়ারম্যান মাও’ মারা গেছেন ৪৯ বছর হলো। তিনি বেঁচে থাকতেই ১৯৬৭ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মাও সে–তুংয়ের রাজনৈতিক চিন্তা ও সামরিক কৌশল নিয়ে বিপ্লবের নিরীক্ষায় নেমেছিলেন চারু মজুমদারের নেতৃত্বে একদল কমিউনিস্ট। ১৯৭২ সালে চারুবাবুকে হত্যা করা হয়। তারপর ধীরে ধীরে পশ্চিমবঙ্গে সমাজ পরিবর্তনের ওই চেষ্টা দুর্বল হয়ে গেছে। কিন্তু ভারতের অন্যত্র মাওবাদীরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে—এমন বলার সুযোগ মেলেনি কখনো।
সম্প্রতি নতুন করে অনেক মাওবাদী সংগঠক হত্যা করল ভারত সরকার। প্রশ্ন উঠছে, চীনে যা নেই, ভারতে সেই আদর্শবাদের বীজ থেকে প্রাণ হয়ে জেগে ওঠে কেন বারবার? কী ধরনের বাস্তবতায় ভারত থেকে মাওবাদ নির্মূল করা যাচ্ছে না।
‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’
পশ্চিমবঙ্গের আগে সমকালীন ভারতে সমাজবদলের প্রথম সশস্ত্র চেষ্টা হয় ১৯৪৬ সালে তেলেঙ্গানায়। প্রধানত ভূমি সংস্কারের দাবিতে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত এই বিদ্রোহ চলে। তারপর অনুরূপ বড় চেষ্টা হিসেবে নকশালবাড়ি আন্দোলন এই বাংলাতেও বেশ ছাপ রেখেছিল। দক্ষিণ এশিয়ায় নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রভাব এত বেশি ছিল যে মাওবাদীরা আজও রাজনৈতিক সাহিত্যে ‘নকশাল’ নামেও অভিহিত হন।
পশ্চিমবঙ্গের সেই অধ্যায়ের কাছাকাছি সময়ে একই রকম চেষ্টা শুরু হয় অন্ধ্র প্রদেশের দিকে। তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র তখন একই প্রদেশ ছিল। সেখানে অন্যদের মধ্যে বড় গ্রুপটি ছিল কোন্দাপল্লি সিতারামাইয়ার নেতৃত্বাধীন ‘পিপলস ওয়ার’। ওই অঞ্চল থেকে এ শতাব্দীর শুরুতে ভারতীয় মাওবাদীদের ভরকেন্দ্র স্থানান্তরিত হয় কাছের ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড ও বিহারের দিকে।
ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো মাওবাদী গেরিলাদের বিরুদ্ধে এবার বড় ধরনের সফলতা পেল এখানকারই (ছত্তিশগড়ের) নারায়ণপুরে। তারা এ অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’। এ বছরের ২১ এপ্রিল থেকে এ অভিযান চলছে।
গত মাসে এ অভিযানকালেই নিহত হন মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই-এম) সাধারণ সম্পাদক কেশব রাও এবং তাঁর সঙ্গে আরও ২৭ জন। এর মধ্যে অন্তত আটজন ছিলেন বড় মাপের সংগঠক। ৫ ও ৬ জুন সরকার হত্যা করে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য সুধাকর ও তেলেঙ্গানা কমান্ডার ভাস্করকে। তাঁদের দুজনকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ৪০ ও ৪৫ লাখ রুপি করে পুরস্কার ঘোষণা করা ছিল।
সরকার যদিও বলছে, অভিযানকালে সংঘর্ষে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তবে দেশটির মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এগুলো একদম ঠান্ডা মাথার খুন। একটা বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাঁদের মেরে ফেলা হয়।
তবে ঘটনাস্থলে যা–ই ঘটে থাকুক, সরকারের দিক থেকে এ রকম বড় বড় নেতাকে ‘খতম’ করতে পারা সাফল্যের ব্যাপার। অমিত শাহ বেশ উল্লসিতও। কারণ, মনমোহন সিংয়ের মতো তাঁর কাছেও মাওবাদ ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ‘এক নম্বর শত্রু’ এবং এবারকার অভিযানেরও সরাসরি নির্দেশদাতা তিনি। ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে অমিত শাহ ভারতকে নকশালমুক্ত করবেন বলে জানান।
সরকার মাওবাদীদের প্রতি তার আক্রোশ লুকাচ্ছে না। কেশব রাওসহ আট গেরিলা নেতার মৃতদেহ নিকটজনদের না দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত চলতি অভিযানকালে প্রায় ৫৫০ জন মাওবাদীকে হত্যা করেছে সরকার।
‘রেড জোন’ ম্যাপিং
বর্তমানে অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট চলছে প্রধানত তেলেঙ্গানা ও মহারাষ্ট্রসংলগ্ন ছত্তিশগড়ের বিজয়পুর ও নারায়ণপুরে। এ অঞ্চল অন্ধ্র ও ওডিশারও কাছে। ওডিশার কালাহান্দি, মহারাষ্ট্রের গাদচিরোলি ও তেলেঙ্গানার ভাদ্রাদি কথাগুদেম ছত্তিশগড়সংলগ্ন এলাকা। বিজয়পুর ও নারায়ণপুরের পূর্বে জঙ্গলাকীর্ণ বস্তার অঞ্চল, যা এখন চারটি জেলায় ভাগ করা হয়েছে।
ব্রিটিশ আমলে বস্তার ছিল স্বাধীন রাজ্য। বস্তার ও আশপাশের পাঁচ রাজ্যের সীমান্তবর্তী জনপদগুলোতেই মাওবাদীদের প্রভাব খুব বেশি। এখানকার ৪০ শতাংশ মানুষেরই জীবনযাপন বনাঞ্চলভিত্তিক।
আদিবাসী–অধ্যুষিত এসব এলাকা দারিদ্র্যপীড়িত ও ঘনবসতিপূর্ণও। কৃষিই এখানকার জনজীবনের প্রধান অবলম্বন। প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ আছে এসব এলাকায়। মাওবাদীদের উৎখাত করার উদ্যোগের পেছনে বড় এক অর্থনৈতিক কারণ খনিজের বিলিবণ্টনের সরকারি ইচ্ছা। স্থানীয় মানুষের হাতে বন্দুক থাকলে দূরদূরান্তের করপোরেটদের এসব এলাকা তুলে দেওয়া যায় না।
সশস্ত্র বিদ্রোহীদের দমনে সমাজের মানসিক প্রস্তুতি বাড়াতে পাঁচ রাজ্যসন্নিহিত এই এলাকাকে মিডিয়ায় ‘রেড জোন’ বলে প্রচার করা হয়। আসলে এটা ভারতের অন্যতম ‘পভার্টি জোন’ (দরিদ্র এলাকা)। এখানে ২০ থেকে ২৫টি জেলায় মাওবাদীদের ঘেরাও অবস্থায় রেখেছে সরকারের অনেকগুলো বাহিনী।
এবারের অভিযানে যুক্ত আছে সিআরপিএফ, স্পেশাল টাস্কফোর্স ইউনিট, ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড এবং এদের কেন্দ্রীয় ভরসা হিসেবে সিআরপিএফের ভয়ংকর ‘কোবরা ফোর্স’। অত্যাধুনিক অস্ত্র ও যোগাযোগপ্রযুক্তি নিয়ে নকশালদের বিরুদ্ধে নেমেছে তারা।
সরকারের দিক থেকে স্বস্তির বিষয় হলো, দু–তিন দশক আগেও আশপাশের শতাধিক জেলায় গেরিলাদের প্রভাব থাকলেও এখন তা অনেক গুটিয়ে আনা গেছে।
২০০৪ সালে পুরোনো কয়েকটি মাওবাদী গ্রুপ মিলে যখন সিপিআই-এম গড়ে ওঠে, তখন কয়েক বছর দ্রুতলয়ে আশপাশে তাদের বিকাশ ঘটছিল। এখন সে অবস্থা আর নেই।
মাওবাদীরা যে কারণে কোণঠাসা
বাংলাদেশে বহু আগে নিহত মাওবাদী নেতা সিরাজ সিকদারের এমন একটা উক্তি ছিল যে জনগণ হলো পানির মতো; গেরিলারা মাছ হয়ে সেখানে থাকে, সাঁতরায়। এ বক্তব্যকে সঠিক ধরলে প্রশ্ন ওঠে, ভারতের রেড করিডরে সরকার এখন এত সহজে মাওবাদী নেতাদের হত্যা করতে পারছে কেন? জনগণের ভেতর অক্সিজেন পেতে কি তবে কোনো সমস্যা হচ্ছে তাদের?
ওই অঞ্চলের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বার্তা হলো, অতীতে যখন সরকারের চাপ এড়াতে অন্ধ্রের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাওবাদীরা বস্তারের আদিবাসী সমাজে এসে আশ্রয় নেয়, তখন উভয় পক্ষের জন্য এটা ছিল উপকারী এক সামাজিক চুক্তি। মাওবাদীরা আদিবাসীদের সাহস দিয়েছে, বিনিময়ে শেষোক্তরা গেরিলা তাত্ত্বিকদের দিয়েছে আশ্রয়। কিন্তু সম্প্রতি আদিবাসী সমাজে নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
সরকারও নানা প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের সমাজের মূলধারায় টেনে আনতে বহুকাল ধরে চেষ্টা করছিল। বিশেষ করে সশস্ত্রতা ছেড়ে আসা গেরিলাদের জন্য সরকার প্রলুব্ধকর ‘পুনর্বাসন কর্মসূচি’ নিয়েছে। এ রকম কর্মসূচির মধ্যে আছে আত্মসমর্পণকারী গেরিলাদের জন্য ৫০ হাজার রুপি পর্যন্ত পুরস্কার, নির্দিষ্ট পরিমাণে জমি দেওয়া এবং দুই বছরের মধ্যে যাবতীয় মামলা মীমাংসার প্রতিশ্রুতি। এর মধ্যে আবার দলত্যাগী নকশাল ও সরকারপন্থী আদিবাসীদের বাছাই করা অংশ দিয়েও সরকার একটা বাহিনী বানিয়েছে বস্তার অভিযানের সহযোগী হিসেবে।
‘পার্টি’ বিভিন্ন সময় নৈতিকভাবে অধঃপতিত কোনো ক্যাডারকে যখন বহিষ্কার করে, সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি তাঁকে উচ্চ দামে সংগ্রহ করে নেয়। এ রকম সবাইকে জঙ্গল এলাকায় সরকারের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করানো হচ্ছে। তাঁদের বলা হয় ‘রিজার্ভ গার্ড’। এসবেরই মিলিত ফল জঙ্গলের গভীরে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর ঢুকতে পারা।
সরকারি সূত্রগুলোর ইঙ্গিত হলো, অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্টের মাধ্যমে সরকার বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে তারকা গেরিলা নেতা মাদভি হিডমাকে ধরার লক্ষ্যকে। মাওবাদীদের ১ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ৪৪ বছর বয়সী হিডমা কয়েক বছর ধরে সরকারি বাহিনীগুলোকে বেশ ভোগাচ্ছেন।
এবারের সরকারি কৌশলের লক্ষণীয় একটা দিক দেখা যাচ্ছে, বড় ধরনের সংঘর্ষের বদলে তারা প্রতিপক্ষের প্রধান প্রধান নেতাকে টার্গেট করছে। কেশব রাওয়ের জায়গায় মাওবাদীদের নতুন নেতা হিসেবে লক্ষ্মণ রাও গণপতির নাম আলোচিত হওয়ামাত্র তিনিও ‘হাই ভ্যালু টার্গেট লিস্টে’ আছেন এখন। এ ধরনের কৌশল নেওয়া হয়েছে মূলত মাওবাদের বিরুদ্ধে শহরাঞ্চলে প্রচারযুদ্ধে এগিয়ে থাকতে।
রেড জোনে দীর্ঘদিন মাওবাদীরা মুক্তাঞ্চলের মতো থাকলেও চারদিকে সরকারের তীব্র চাপ ও নজরদারি তাদের সেখানে নিজস্ব ধাঁচের সমাজ-কল্পনাকে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে বাস্তবায়নের সুযোগ দেয়নি। আদিবাসী–অধ্যুষিত অঞ্চলকে কাঠামোগতভাবে পাল্টে ফেলার অবস্থায়ও ছিল না তারা। ফলে দীর্ঘ সরকারি চাপে স্থানীয় মানুষ সেখানে ক্লান্ত। বিশেষ করে সরকার পুরো রেড করিডরকে ড্রোনভিত্তিক নজরদারির অধীন নিয়ে এসেছে।
অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে ভারত এখন এত বড় এক রাষ্ট্র যে বস্তার অঞ্চলের স্থানীয় সমাজ আর রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর চাপ নিতে পারছে না, নিতে চায়ও না। প্রকৃতপক্ষে কয়েক বছর ধরে ভারত পাকিস্তানের চেয়েও বড় যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে নিজ দেশের গরিব এসব এলাকার মানুষদের বিরুদ্ধে।
চলতি বাস্তবতায় মাওবাদীদের রাজনৈতিকভাবে কৌশল পাল্টানোর সময় হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। যদিও এই রাজনীতিতে অনমনীয়তার যে পুরোনো বৈশিষ্ট্য আছে, তা থেকে বেরিয়ে সিপিআই-এম বাস্তবানুগ কোনো রাজনৈতিক লাইন গ্রহণ করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে।
মাওবাদীদের প্রতি ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের বিরাগও সরকারকে এই রাজনীতি দমনে বিশেষ সাহায্য করছে। যেহেতু মাওবাদীরা ভারত রাষ্ট্রের বিপরীতে সংগ্রামরত কাশ্মীরি ও শিখদের সমর্থন করে, এ কারণে মূলধারার জাতীয়তাবাদী দলগুলো মাওবাদী নেতাদের সাম্প্রতিক মৃত্যুতে আগের মতোই বেশ নির্বিকার।
সরকারের ভরসা নিরাপত্তা বাহিনী
১৯৭২ সালে চারু মজুমদারকে হত্যার পর পশ্চিমবঙ্গে যে রকম নিবিড়ভাবে নকশাল নিধনাভিযান চালানো হয়, তাতে অনেকেই ভেবেছিল, ভারতে আর কেউ সমাজ পাল্টাতে অস্ত্র হাতে নেওয়ার সাহস পাবে না। কিন্তু প্রায় পাঁচ দশক পরের অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট জানাচ্ছে, মাওবাদী রাজনীতি বিকাশের মেঠো উপাদান মাঠপর্যায় থেকে উৎপাটন করা যায়নি। এর মূল কারণ হলো দারিদ্র্য ও সামাজিক বৈষম্য। কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফামের স্টাডি এটা দেখিয়েছিল যে ভারতে ওপরতলার ধনীদের ১ শতাংশের হাতে দেশটির সম্পদের ৪০ শতাংশ রয়েছে। সেই তুলনায় সমাজের নিচুতলার ৫০ শতাংশের হাতে সম্পদ আছে মাত্র ৩ শতাংশ। নিচুতলার এই ৫০ শতাংশ মানুষ যা আয় করে, সেটা ওপরতলার ১ শতাংশের আয়ের সমান।
বলা বাহুল্য, এ রকম সমস্যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও আছে। ভারতে কিছু মানুষের হাতে সম্পদের পুঞ্জীভবন প্রকৃতই অত্যধিক। বর্তমানে বৈশ্বিক বিলিয়নিয়ারদের তালিকায় ভারতের দুই শতাধিক ব্যক্তি রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরই এ ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান।
ধনবৈষম্য ও অর্থনৈতিক শোষণের দিক থেকে মনোযোগ সরাতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশে শাসকদের একাংশ সমাজবিপ্লব ঠেকানোর প্রেসক্রিপশন হিসেবে স্বাধীনতার পর থেকে ধর্মের আবেদন বাড়াতে শুরু করে। কাঠামোগতভাবে ধর্মীয় সংস্থা ও দলগুলোকে মদদ দেওয়া হয়।
ভারতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। দেশজুড়ে হিন্দুত্ববাদের জাগরণ ঘটানো হয়। যার ফল হিসেবে দেখা যায়, সবচেয়ে দরিদ্র প্রদেশ হয়েও ওডিশা, বিহার ইত্যাদি জায়গায় সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোয় বিজেপিই জিতেছে। কিন্তু তারপরও অতিদারিদ্র্যপীড়িত এলাকাগুলোয় কিছু মানুষ মুক্তির বিকল্প উপায়ও খুঁজছেন।
ধর্মীয় জাগরণে সেখানকার সবকিছু ঢেকে ফেলা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকার মাওবাদ দমনে প্রধানত ভরসা করছে এখন নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ওপর। তাদের জবাবদিহিহীন বিপুল ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বস্তারে নিরাপত্তা বাহিনীর চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুর থেকে মহারাষ্ট্রের গাদচিরোলি পর্যন্ত জাতীয় সড়ক বানানো হয়েছে। এই সড়ক তৈরির পর থেকে নকশালদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষও বেড়েছে।
২০২৩ ও ২০২৪ সালে এ রকম সংঘর্ষ ছিল যথাক্রমে ৬৯ ও ১২৩টি। এ বছর প্রথম ৫ মাসে ৪৯ দফা সংঘর্ষ হয়ে গেছে। এসবই মাওবাদের সক্রিয় উপস্থিতির স্মারক। তবে আহত-নিহত মানুষের সংখ্যাও তাদের দিকেই বেশি। সরকারি বাহিনীর অগ্রাভিযান বিলম্বিত করতে তারা সামরিক কৌশল হিসেবে বেশি ব্যবহার করছে মাইনসহ নানান বিস্ফোরক। এতে এ অঞ্চলে বেসামরিক মানুষের মৃত্যুও অনেক।
প্রশ্ন হলো, নির্মম এই দমনাভিযানের পরও অমিত শাহর ডেটলাইন অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে মাওবাদীরা নির্মূল না হলে ভারতের শাসকেরা কী বলে মুখরক্ষা করবেন?
আলতাফ পারভেজ: দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক
*মতামত লেখকের নিজস্ব