স্মার্ট বাংলাদেশ বনাম কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি

বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে কিশোর অপরাধ চরমভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণত অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিশোরদের বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে।

অপরাধে জড়িত কিশোরদের নেওয়া হচ্ছে সংশোধনাগারে এবং প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কঠিন আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না। সাধারণত তারা মাদকাসক্ত, মাদক চোরাচালান, ইভটিজিং, সন্ত্রাসী, গ্যাং তৈরি করে চলাফেরা করা, জমি দখল করার জন্য ভাড়ায় খাটা, হামলা, খুন, রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে গিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করা, ছেলেমেয়ের অবাধ মেলামেশা, টাকার বিনিময়ে সামাজিক অপকর্মে জড়ানোসহ ইত্যাদি সামাজিক অপরাধে জড়িত থাকে।

এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন টিকটক ও লাইকিতেও তাদের অসহনীয় কনটেন্ট দেখা যায়। যার মাধ্যমে আরও অনেক কিশোর অপরাধের জন্য উৎসাহিত হয়।

রাজধানী ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশে কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ঢাকার মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, ডেমরাসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের দৌরাত্ম বেশি।

সাধারণত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের প্রতিনিধিত্বেই তারা অপরাধে জড়াতে উৎসাহিত হয়। যে কারণে অপরাধীরা কারাগারে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই জামিনে বের হয়ে আবার অপরাধ করতে থাকে। তাদের মধ্যে অপরাধে জড়িত হওয়ার পরও ন্যূনতম কোনো অপরাধবোধ কাজ করে না। তারা দ্বিধা করে না জেলে যাওয়া নিয়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর সংশ্লিষ্টতা থাকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে পড়েও তারা খুব সহজেই জামিনে বের হয়ে আসছে। এভাবে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকলে কেউই নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে না।
পারিবারিক শিক্ষার অভাব, দুর্বল আইনি ব্যবস্থা, সামাজিক বিপর্যয়, মূল্যবোধের অবক্ষয়, জনপ্রতিনিধিদের অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়া, প্রযুক্তির অপব্যবহার, অর্থনৈতিক দুর্দশা, সঠিক দিকনির্দেশনার অভাব, মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে কিশোরেরা সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে।

কিশোর অপরাধ দমনে রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তিগতভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনি ব্যবস্থা কঠোর করতে হবে।

সামাজিকভাবে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে, পারিবারিক শিক্ষায় ত্রুটি রাখা যাবে না, সন্তানদের সঠিক খোঁজখবর নিতে হবে, পাঠ্যপুস্তকে মূল্যবোধ গঠনে নীতি-নৈতিকতা সম্বন্ধে নির্দেশনা দিতে হবে, অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, জনপ্রতিনিধিদের এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের এই বিষয়ে বিশেষভাবে নজরদারি করতে হবে। যেসব জনপ্রতিনিধি তাদের প্রশ্রয় দেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

টিকটক, লাইকিসহ যেসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের উসকানিমূলক কার্যক্রম দেখা যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিশোরেরা অপরাধে জড়িত হওয়ার পেছনে মা-বাবার সঠিক পরিচালনার অভাব ও অবহেলাও একটি বড় কারণ। তাই আদর্শ মা-বাবা হিসেবে গড়ে উঠতে দম্পতিদের জন্যও সঠিক কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন।

ঢাকাসহ দেশের যেসব জায়গায় তাদের দৌরাত্ম্য বেশি, সেসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে এবং সাদাপোশাক পরিহিত বাহিনীর মাধ্যমে মনিটরিং করতে হবে। অপরাধে জড়িত কিশোরদের সংশোধনাগারে নেওয়ার পাশাপাশি কাউন্সেলিং করাতে হবে, যাতে তারা পরবর্তী সময় আর কোনো অপরাধে না জড়ায়।

আজকের শিশু-কিশোরেরাই আগামীর বাংলাদেশ। তাদের মাধ্যমেই তৈরি হবে ভবিষ্যতের স্বপ্নের অত্যাধুনিক বাংলাদেশ। তারা দেশের অমূল্য সম্পদ। তারা উচ্ছন্নে গেলে দেশের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে। তাই কিশোর অপরাধ দমনে রাষ্ট্র, সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামাজিক, পারিবারিকসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

মো. মিনহাজুর রহমান
শিক্ষার্থী, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।