কমনওয়েলথ কেন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

বিশ্বের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ কোনো না কোনো কমনওয়েলথভুক্ত দেশের নাগরিক।

সমগ্র বিশ্ব, তথা বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে ও হচ্ছে, সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আধুনিক কমনওয়েলথ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা ও গভীর অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করা, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ও গণতন্ত্রের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ সামলানো ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করা—এই সব কটি বৈশ্বিক ইস্যুই কমনওয়েলথের প্রধান হিসেবে মহামান্য রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ বছর কমনওয়েলথ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘ওয়ান রেসিলিয়েন্ট কমন ফিউচার: ট্রান্সফরমিং আওয়ার কমন ওয়েলথ’ বা ‘আমাদের যৌথ সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে সবার জন্য একটি সহনশীল ও সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা।’ এর সঙ্গে আমাদের জনসাধারণ ও পরিবেশ; পারস্পরিক জ্ঞান আদান-প্রদান ও অংশীদারত্ব; সুযোগের সঠিক ও সর্বোচ্চ ব্যবহার; এবং সর্বজনীন চ্যালেঞ্জের কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা সম্পৃক্ত।

আধুনিক কমনওয়েলথের ৬০ ভাগেরও বেশি মানুষ ২৯ বছর বা তার কম বয়সী। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ডিজিটাল যোগাযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে এই বিশালসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠী ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম। কাজেই বলা যায় যে বাংলাদেশের এই ক্ষেত্রে অনেক অবদান রাখার ও এর পাশাপাশি অনেক কিছু অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

গত ৭৫ বছরে বিশ্বের অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালে এসেও কমনওয়েলথ কেন বাংলাদেশের জন্য প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ?

এক. কমনওয়েলথের ব্যাপ্তি বিশ্বজুড়ে—ছয়টি মহাদেশের প্রায় ২৪০ কোটি মানুষের অন্তর্ভুক্তি। তার মানে, বিশ্বের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ কোনো না কোনো কমনওয়েলথভুক্ত দেশের নাগরিক। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে কমনওয়েলথে যোগদান করে এবং বর্তমানে এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ৫৬টির মধ্যে বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক থেকে এর চতুর্থ বৃহত্তম সদস্যদেশ।

দুই. কমনওয়েলথ বিশ্বের জলবায়ু ও সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষায় কাজ করে। বৈশ্বিক জলবায়ুঝুঁকির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান একদম ওপরের দিকে। বিশ্বব্যাপী চরম আবহাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশ বরাবরই কমনওয়েলথ ও বিশ্বব্যাপী সরব ছিল। আমরা কমনওয়েলথের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশে ও বিশ্বব্যাপী কাজ করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।

তিন. কমনওয়েলথ সনদ আমাদের সবাইকে স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণে এবং শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রচারের মাধ্যমে কমনওয়েলথভুক্ত সবার জীবনমান উন্নয়নে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে। এই মূল্যবোধের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার সব সময় অটুট থাকবে।

চার. ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নতি লাভ করবে। বর্তমানে ১৪টি কমনওয়েলথভুক্ত দেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের পরে এই তালিকায় রয়েছে সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, যা ২০২৭ সালে উন্নতি লাভ করার আশা রাখে। স্বল্পোন্নত দেশ-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য কমনওয়েলথ একটি অনন্য ফোরাম এবং কমনওয়েলথের সদস্যদের অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করতে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের নীতি বা কৌশল কাজে লাগতে পারে, সে বিষয়ে ধারণা ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে। এর উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির অধিকার ও বাণিজ্যের বহুমুখীকরণবিষয়ক পরামর্শ।

পাঁচ. বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ও আমদানি-রপ্তানি থেকে সুফল অর্জন করতে কমনওয়েলথ তার সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে সাহায্য করে থাকে। ‘কমনওয়েলথ বাণিজ্য–সুবিধা’-এর মাধ্যমে সদস্যদেশগুলো সহজে এবং তুলনামূলক কম খরচে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য করতে পারে, যার মূলে রয়েছে দেশগুলোর আইনগত ও অর্থনৈতিক কাঠামোর সাদৃশ্য। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিকাশের গতি বজায় রাখতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া একটি সবুজ ও টেকসই অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হতে কমনওয়েলথের অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশও উপকৃত হতে পারে।

ছয়. বাংলাদেশের তরুণেরা কমনওয়েলথ এবং বিশ্ব-ভবিষ্যতের অন্যতম চাবিকাঠি। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগ মানুষ ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ। জনসংখ্যার দিক থেকে কমনওয়েলথের চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র হিসেবে আধুনিক কমনওয়েলথের লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশের তরুণেরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন। উপরন্তু কমনওয়েলথ বিশ্বমঞ্চে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। এর একটি হলো কমনওয়েলথ বৃত্তি, যা বাংলাদেশসহ কমনওয়েলথভুক্ত নির্দিষ্ট কিছু স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশের প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীকে প্রতিবছর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি প্রদান করে থাকে।

বাংলাদেশ ও কমনওয়েলথের অভিন্ন ভবিষ্যৎ

এ বছর অক্টোবর মাসে ‘কমনওয়েলথ হেডস অব গভর্নমেন্ট মিটিং’ উপলক্ষে আমাদের নেতারা সামোয়াতে মিলিত হবেন, যেখানে তাঁরা বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ, টেকসই ও সহনশীল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে কীভাবে আধুনিক কমনওয়েলথ একসঙ্গে কাজ করতে পারে, তা-ও আলোচনায় স্থান পাবে।

কমনওয়েলথ ও এর মূল্যবোধগুলো বর্তমান সময়ে অন্য যেকোনো সময়ের থেকে প্রাসঙ্গিক, যা বৈশ্বিক সংহতি, সহনশীলতা, তারুণ্য ও ভবিষ্যতের কথা বলে। বাংলাদেশে কমনওয়েলথভুক্ত যতগুলো হাইকমিশন রয়েছে, তারা সবাই একসঙ্গে কাজ করে যাবে, যাতে ব্যবসার পরিবেশ আরও উন্নত করা যায়, রপ্তানিনির্ভর বাণিজ্য বৃদ্ধি করা যায়, পারস্পরিক জ্ঞান আদান-প্রদান অব্যাহত থাকে এবং এক দেশের মানুষের সঙ্গে আরেক দেশের মানুষের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। এর মাধ্যমে আমরা কমনওয়েলথের ১৫০ কোটি তরুণের ক্ষমতায়ন করতে সক্ষম হব, যারা শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে অবদান রাখবে।

● নারদিয়া সিম্পসন বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার

● সারাহ কুক বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার

● ড. লিলি নিকোলস বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার

● হাঞ্জাহ মো. হাশিম বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার

● আহমেদ মাইশান বাংলাদেশে মালদ্বীপ হাইকমিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স

● সায়েদ আহমেদ মারুফ বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার

● শীলা পিলাই বাংলাদেশে সিঙ্গাপুর হাইকমিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স

● ধার্মাপালা উইরাকডি বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার