নেতানিয়াহু যে কারণে রাফা যুদ্ধে জিততে পারবেন না

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুফাইল ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম ইসরায়েল হেওমের সংবাদ জানাচ্ছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের শহর রাফায় স্থল অভিযানের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এখন তারা রাজনৈতিক নেতৃত্বের আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে।

সংবাদপত্রটির ভাষ্য হচ্ছে, এই আগ্রাসন–পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রের সবুজসংকেত পাওয়া গেছে। গাজার অন্যান্য শহরের মতো রাফা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। শহরটিতে এমনিতেই তিন লাখ বাসিন্দার বাস। এর সঙ্গে অবরুদ্ধ গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা আরও ১৪ লাখ উদ্বাস্তুর ঠাঁই হয়েছে সেখানে।

বিশ্বনেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন যে রাফায় ইসরায়েলের স্থল অভিযানে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ হতাহত হবেন। অবশ্য তাঁদের সেই উদ্বেগ ২০০ দিন ধরে গাজায় আগ্রাসন, গণহত্যা এবং সেখানকার অবকাঠামো ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে বিরত রাখতে পারেনি। সে কারণেই ইসরায়েলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক জো বাইডেনসহ বিশ্বনেতারা নেতানিয়াহুর কাছে রাফায় স্থল অভিযানের এমন একটা পরিকল্পনা চেয়েছেন, যাতে সাধারণ মানুষের প্রাণ রক্ষা করা যায় এবং সেখানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া যায়।

ইসরায়েলের অনেক লেখক, সামরিক ও কৌশলবিদ নেতানিয়াহুকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কেননা, বন্দী মুক্ত করে আনার উদ্দেশ্য একমাত্র চুক্তির মধ্য দিয়ে পূরণ হওয়া সম্ভব। নেতানিয়াহু তাঁর ঔদ্ধত্যের কারণে দেশের ভেতরে কিংবা বাইরের কোনো মিত্রের পরামর্শ শুনতে রাজি হননি। এমনকি তিনি তাঁর পৃষ্ঠপোষক জো বাইডেনসহ যুক্তরাষ্ট্রের পদস্থ কর্মকর্তা কিংবা কংগ্রেসের সদস্য কারও পরামর্শ শুনতে চাননি।

নেতানিয়াহু তাঁদের সবার উদ্বেগকে উপেক্ষা করেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে রাফায় অভিযানের পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বেশ কয়েকবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। অবশ্য বাইডেন সরকার এই দাবি অস্বীকার করেছে। কিন্তু নেতানিয়াহু বলছেন, রাফায় সামরিক অভিযান চালিয়ে তিনি হামাসের সামরিক সক্ষমতাকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবেন, যাতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন বাধ্য হয় বন্দীদের মুক্তি দিতে। এভাবে নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্রসহ পুরো বিশ্বের দাবির প্রতি বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন। একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর সব প্রচেষ্টাকে তিনি খাটো করছেন।

আরও পড়ুন

অথচ ২০০ দিন ধরে নেতানিয়াহু যুদ্ধ করছেন, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা সংঘটিত করছেন, বাড়িঘর, স্কুল, মসজিদসহ সব অবকাঠামো ধ্বংস করেছেন, কিন্তু বন্দীদের মুক্ত করে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। নেতানিয়াহু হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্ত করে আনতে পারেন একটা চুক্তির মধ্য দিয়ে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলের জেলে আটক ফিলিস্তিনি শিশু ও নারীদের মুক্তির বিনিময়ে বন্দীদের মুক্তি দিতে চেয়েছে।

এখন নেতানিয়াহু যখন রাফা অভিযানের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন, তার জোটের ভেতরে ও বাইরে এই অভিযান নিয়ে নানা সমালোচনা আসছে। হিব্রু ভাষার শীর্ষ সংবাদপত্র ম্যারিভ লিখেছে, ‘যাঁরা ভাবছেন যে রাফা এই যুদ্ধের শেষ অধ্যায় এবং এই অভিযানের মধ্য দিয়ে হামাসের পতন হয়ে যাবে, তাঁরা বুঝতে পারছেন না যে বিজয় নিয়ে নেতানিয়াহুর দাবি কৌতুক কিংবা বিভ্রমের চেয়ে বেশি কিছু নয়।’

আরও পড়ুন

ইসরায়েলের অনেক লেখক, সামরিক ও কৌশলবিদ নেতানিয়াহুকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কেননা, বন্দী মুক্ত করে আনার উদ্দেশ্য একমাত্র চুক্তির মধ্য দিয়ে পূরণ হওয়া সম্ভব। নেতানিয়াহু তাঁর ঔদ্ধত্যের কারণে দেশের ভেতরে কিংবা বাইরের কোনো মিত্রের পরামর্শ শুনতে রাজি হননি। এমনকি তিনি তাঁর পৃষ্ঠপোষক জো বাইডেনসহ যুক্তরাষ্ট্রের পদস্থ কর্মকর্তা কিংবা কংগ্রেসের সদস্য কারও পরামর্শ শুনতে চাননি।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন রাফায় ইসরায়েল অভিযান শুরু করুক আর না–ই করুক, বন্দী মুক্তির ব্যাপারে তাদের শর্তে অনড়। ইসরায়েলের নৃশংস হামলায় বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি যেন কম হয়, সেটা তারা চায়। কিন্তু তারা বলছে, ইসরায়েলের কারাগারে আটক সাড়ে আট হাজার ফিলিস্তিনির মুক্তির অধিকার আছে। গাজায় খোলা আকাশের কারাগারে যে ২৪ লাখ মানুষ বাস করছেন, তাঁদের স্বাধীনতার অধিকার আছে।

সুতরাং রাফায় স্থল অভিযান শুরু করুক আর না–ই করুক, নেতানিয়াহুর বিজয়ের স্বপ্ন সফল হবে না। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থন প্রবলভাবে বাড়ছে, নেতানিয়াহুর প্রতি ক্ষোভও তুমুলভাবে বাড়ছে।

  • মোতাসেম দালৌল ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও লেখক

    মিডল ইস্ট মনিটর থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত