কখন হজ করবেন, কখন ওমরাহ করবেন
হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই প্রথম ঘর, যা মানুষের কল্যাণের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়। এটি বরকতময় ও বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়াত। তাতে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, আছে মাকামে ইব্রাহিম। আর যে এতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে। আর মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই ঘরের হজ করা তার জন্য অবশ্যকর্তব্য (ফরজ)। আর যারা কুফরি করে, তারা জেনে রাখুক আল্লাহ নিশ্চয়ই সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।’ (সুরা-৩ আলে–ইমরান, আয়াত: ৯৬-৯৭)।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ইসলামের স্তম্ভ পাঁচটি—১. এ সাক্ষ্য প্রদান করা যে আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল, ২. সালাত কায়েম করা, ৩. জাকাত প্রদান করা,
৪. হজ সম্পাদন করা ও ৫. রমজানের সিয়াম পালন করা। (বুখারি: ৮; মুসলিম: ১৬)
জীবনে অন্তত একবার হজ করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ, যদি তাঁর হজ সম্পাদনের সামর্থ্য থাকে। হজের মৌসুমে যাতায়াতের খরচ, সফরের সময়ে নিজের ও পরিবারের স্বাভাবিক ভরণপোষণের ব্যবস্থা ও শারীরিকভাবে হজের আমলসমূহ আদায়ের সক্ষমতা থাকলে হজের সামর্থ্য প্রমাণিত হয় এবং তখন হজ ফরজ হয়ে যায়। হজের সামর্থ্য থাকলে বা হজ ফরজ হলে কালবিলম্ব না করে দ্রুত হজ সম্পাদন করা উচিত।
হজ সম্পাদনের সময় হলো ৮ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত। এ সময়ে মক্কা মোকাররমায় মিনা, আরাফাহ, মুজদালিফা ও জামারাতে হজের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ পালন করতে হয়। হজের মৌসুম হলো ১ শাওয়াল থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত। হজের ইহরামের সময় হলো ১ শাওয়াল থেকে ৯ জিলহজ পর্যন্ত। এর আগে বা পরে হজের ইহরামের নিয়ত করা যায় না। সামর্থ্য থাকলে বারবার হজ করা যায়। একবার ফরজ হজ আদায় করার পর সুযোগ থাকলে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর হজ করা উত্তম।
ওমরাহ করলে হজের ফরজ আদায় হয়ে যায় না। হজ ফরজ হলে তা অবশ্যই আদায় করতে হবে। ওমরাহ কখনোই ফরজ হজের বিকল্প নয়।
কোনো ব্যক্তির ওপর হজ একবার ফরজ হলে তিনি যদি তা পালন না করেন, পরবর্তী সময়ে সামর্থ্য হারালেও সেই ফরজ তাঁর ওপর থেকে উঠবে না। তাই যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে, তাঁদের উচিত যত দ্রুত সম্ভব ফরজ হজ আদায় করা। যদি কেউ হজ ফরজ হওয়ার পর শারীরিকভাবে সক্ষমতা হারান, তবে অবশ্যই তাঁর পক্ষ থেকে অন্য কাউকে দিয়ে বদলি হজ করানো ফরজ হয়ে যাবে। আত্মীয়-অনাত্মীয় যে কারও মাধ্যমে বদলি হজ করানো যেতে পারে। তবে শর্ত হলো তাঁর ওপর হজ ফরজ না হতে হবে অথবা তিনি আগে নিজের হজ সম্পন্ন করেছেন।
বদলি হজ করার জন্য আগে হজ পালন করা আবশ্যক নয়। হজের ব্যয়ের অর্থ অন্য কেউ প্রদান করলেও হজ আদায় হয়ে যাবে। সামর্থ্য বা সুযোগ থাকলে জীবনে অন্তত একবার ওমরাহ পালন করা সুন্নত। ৮ থেকে ১৩ জিলহজ হজের সময় ছাড়া বছরের যেকোনো সময় ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করা যায় এবং ওমরাহ সম্পাদন করা যায়। ওমরাহ পালনে হজের মূল স্থান আরাফাহ, মুজদালিফা, মিনা ও জামারাতে যেতে হয় না।
ফরজ হজ পালন করার আগে বা পরে ওমরাহ করতে কোনো বাধা নেই। কারণ, ওমরাহর জন্য নির্ধারিত কোনো বিশেষ সময় নেই। বছরের যেকোনো সময় ওমরাহ করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন সময়ে ওমরাহ করেছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রমজান মাসে ওমরাহ করলে তা নবীজি (সা.)–এর সঙ্গে হজ করার সমান সওয়াবের অধিকারী করে।
তবে মনে রাখতে হবে, ওমরাহ করলে হজের ফরজ আদায় হয়ে যায় না। হজ ফরজ হলে তা অবশ্যই আদায় করতে হবে। ওমরাহ কখনোই ফরজ হজের বিকল্প নয়। ওমরাহ করার পর যদি কারও ওপর হজ ফরজ না হয়, তবে তাঁর জন্য হজ পালন বাধ্যতামূলক নয়। (জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়া বিশ্বকোষ)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম