মতামত
অবৈধ ইটভাটা বন্ধ না হওয়ার রাজনৈতিক অর্থনীতি
ঘুষ, স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত এলআর ফান্ড, সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা ও আইনের জটিল মারপ্যাঁচে বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ইটভাটা। ছড়াচ্ছে বায়ুদূষণ, হুমকির মুখে কৃষির ভবিষ্যৎ। সমাধানে নেই কোনো জোরালো উদ্যোগ। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ না হওয়ার রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে লিখেছেন খলিলউল্লাহ্
পরিবেশ অধিদপ্তরের এক হিসাবে, বর্তমানে দেশে সাড়ে আট হাজার ইটভাটা চালু আছে। এর মধ্যে অর্ধেকেরই পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস এসব ইটভাটা চালাতে বছরে প্রয়োজন হয় ১৪ কোটি মেট্রিক টনের বেশি মাটি। মূলত কৃষিজমির ওপরের উর্বর অংশ কেটে বানানো হচ্ছে ইট, যার ফলে মাটির পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের খাদ্যনিরাপত্তার হুমকি।
অন্যদিকে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চললেও হচ্ছে না কোনো সুরাহা। ২০২৪ সালের হিসাবে দেখা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে প্রায় ১ হাজার অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করলেও সেগুলোর ৭৫ শতাংশই আবার চালু হয়ে গিয়েছিল। (প্রথম আলো, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪)
২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন, সারা দেশে সব অবৈধ ইটভাটা ৪ সপ্তাহের মধ্যে গুঁড়িয়ে দিতে। সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলার পাশাপাশি প্রশাসনের ব্যর্থতার কথাও বলা হয়েছে। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং পাঁচজন বিভাগীয় কমিশনারকে আগামী ১৭ মার্চ সশরীর হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো, প্রশাসন কেন অবৈধ ইটভাটা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে পারছে না?
ইটভাটা আইন ও বাস্তবতা
১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। আইনি ফি দেওয়ার পাশাপাশি তখন পাঁচ হাজার টাকা দিতে হতো চেয়ারম্যানদের। তবে এ ক্ষেত্রে দর–কষাকষি করা যেত। কারণ, ইউপি চেয়ারম্যানরা যেহেতু রাজনীতিবিদ, তাই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সমর্থন তাঁদের দরকার পড়ত।
১৯৯২ সালে এ আইন সংশোধন করে ইউপি চেয়ারম্যানদের পরিবর্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা প্রশাসকদের। তখন লাইসেন্স নবায়নের ফি ৫ হাজার থেকে বেড়ে ১০ হাজার টাকা হয়। তা ছাড়া আইনে যেহেতু কাঠ পোড়ানো বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল, তাই আইন ফাঁকি দিতে পুলিশকেও ‘ম্যানেজ’ করতে হতো। ২০০১ সালে আইনটি সংশোধন করা হলে এসব ‘দেওয়া-নেওয়া’ আরও বেড়ে যায়। কারণ, বেশির ভাগ ইটভাটাই কঠোর মানদণ্ড মেনে চলতে পারত না। তাই ‘দেওয়া-নেওয়া’র পরিমাণও বাড়ত।
২০১০ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও ২০১৩ সালের ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে বলা হয়েছে, বসতি এলাকা, পাহাড়, বন ও জলাভূমির এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা করা যাবে না। কৃষিজমিতেও ইটভাটা অবৈধ। অথচ দেশের প্রায় বেশির ভাগ ইটভাটাই এ আইন মানছে না।
২০১৯ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধিত) আইনের ৪ নম্বর ধারায় উল্লেখ আছে, জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ ছাড়া কোনো ব্যক্তি ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত করতে পারবেন না। কিন্তু জেলা প্রশাসন স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত এলআর (লোকাল রিসোর্সেস) ফান্ডের বড় অংশ নেয় ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে। এমন অবস্থায় ইটভাটার লাইসেন্স না দিয়ে বা অবৈধ হলে সেগুলো বন্ধ করতে প্রশাসন কতটুকু সক্ষম?
গলার কাঁটা এলআর ফান্ড
সরকারি বিধান অনুযায়ী, মন্ত্রী বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জেলা-উপজেলা সফরে গেলে থাকা-খাওয়ার জন্য দৈনিক আলাদা ভাতা পান। তাঁদের ব্যয়ও মেটানো হয় সেই টাকা দিয়েই। কিন্তু সফরসঙ্গী ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের থাকা-খাওয়ার বাড়তি যে ব্যয়, তা মেটানো হয় এলআর তহবিল থেকে।
এ ছাড়া বিশেষ দিবস ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান আয়োজন উপলক্ষে সারা দেশের জেলা-উপজেলার শিল্পকারখানাসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ ধরনের অর্থ আদায় করা হয়। স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত এসব তহবিলের বড় জোগানদাতা অবৈধ ইটভাটার মালিকেরা।
এলআর ফান্ডের কারণে স্থানীয় প্রশাসন এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব তহবিল তোলার বিরুদ্ধে নানা সময় নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে জোরালো অবস্থান থাকার পরও যুগের পর যুগ এ ব্যবস্থা চলমান।
ইটভাটায় ‘শুয়োরের বাচ্চাদের অর্থনীতি’
প্রায় ২২ বছর আগে আকবর আলি খান তাঁর পরার্থপরতার অর্থনীতি বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে বাংলাদেশের মতো দেশের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে নাম দিয়েছিলেন ‘শুয়োরের বাচ্চাদের অর্থনীতি’। এক জায়গায় বলেছিলেন, দুর্নীতিপ্রবণ সমাজে পরিবেশের দ্রুত অবক্ষয় ঘটে। কারণ, দুর্নীতির কারসাজিতে পরিবেশসংক্রান্ত আইনকানুন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় না। এ ধরনের অর্থনীতিতে ঘুষ দিয়েও কাজ সম্পাদন করা যায় না।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ইটভাটার মালিকদের সংগঠন বিবিএমওএর প্রতিটি জেলা কমিটি সংশ্লিষ্ট জেলার এলআর তহবিলে বার্ষিক টাকা দিয়ে থাকে। নতুন ইটভাটা স্থাপনের জন্য নেজারত ডেপুটি কালেক্টরের (এনডিসি) মাধ্যমে অবশ্যই টাকা জমা দিতে হয়, যার জন্য কোনো রসিদও দেওয়া হয় না।
এ ছাড়া জরিপকারী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়েও ঘুষ দিতে হয়। কারণ, তাদের মাধ্যমেই এ বিষয়ের প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যায়। তা ছাড়া জেলা পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও মাফিয়া গোষ্ঠীগুলোকেও বছরওয়ারি চাঁদা দিতে হয়।
আইনের তোয়াক্কা না করে দিনের পর দিন এসব ইটভাটা কীভাবে চলছে? এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের বরাতে ইটভাটার মালিকেরা জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে বছরে তাঁদের প্রত্যেককে ৪–১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ‘স্পনসর’ করতে হয়। এসব অনুষ্ঠানের আগে অবৈধ ইটভাটার মালিকদের কাছে টাকা চাওয়া হয়।
ইটভাটার মালিকেরা আরও জানান, মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালিত হলেও আগে থেকে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়। মূলত উপজেলা ও জেলা অফিসে একটি সিন্ডিকেট আছে। তাদের মাধ্যমেই বিষয়টি ম্যানেজ করা হয়। কখনো উপজেলা অফিসের কর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজনকে কম দামে ইট দেওয়া হয়, আবার কখনো বিনা মূল্যে। প্রতিটি জেলায় থাকা ইটভাটার মালিকদের সমিতির মাধ্যমে প্রশাসনকে ম্যানেজ করা হয়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, ‘অনেক জায়গায় এমন হয়ে থাকে।’ তবে অভিযানের ক্ষেত্রে আগেভাগে ইটভাটার মালিকদের জানিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযানে গেলে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থাকে নিয়ে একযোগে যাই। এর মধ্য থেকে কেউ তথ্য ফাঁস করে দিলে আটকানো কঠিন।’
গত ২৬ জানুয়ারি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের ইটভাটার একজন মালিক অভিযোগ করেন, ইটভাটার ছাড়পত্র নবায়নের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাককে গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও ছাড়পত্র নবায়ন করা যায়নি। তাঁদের দুজনের ঘুষ লেনদেনের একটি অডিও রেকর্ড সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েকজন ভাটামালিক বিপুল অর্থের বিনিময়ে পরিবেশগত ছাড়পত্র পেয়েছেন বলে সেই রেকর্ডের আলাপে উঠে এসেছে। (প্রথম আলো, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫)
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার ছাড়পত্র পেতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হয়। যেহেতু ইটভাটার অনেক মালিকই এসব পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে জানেন না, তাই পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো কোনো কর্মকর্তা অবৈধ ঘুষের বিনিময়ে তা প্রস্তুত করে দেন বলে জানা গেছে।
ইটভাটার মালিকদের ভাষ্য, তাঁদের সঙ্গে সলাপরামর্শ না করেই আইনকানুন করা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, ইচ্ছা করেই এসব আইন জটিল করা হয়েছে যেন ঘুষ–বাণিজ্য চলতে পারে। আকবর আলি খান উল্লেখিত বইয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন, আমাদের মতো দেশের জনগণের উচিত সরকারকে বলা যে: ‘হুজুর, আমরা আপনার কাছে উপকার চাই না, শুধু মেহেরবানি করে আপনার শুয়োরের বাচ্চাদের সামলান।’
কী বলছে প্রশাসন
এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এলআর ফান্ডের ক্ষেত্রে বছরে একটা অডিট করার কথা বলা হয়েছিল, যা এটিকে একধরনের আইনি বৈধতা দিয়েছিল। দুইভাবে হয়ে থাকে এসব ফান্ড উত্তোলন। একটা হয়ে থাকে ব্যাংকের মাধ্যমে। আরেকটা হয় নগদ টাকার লেনদেনে, যার হিসাব সরকারি অডিটে আসে না। তবে একজন ইউএনও জানান, নগদ টাকা হিসেবে এলআর ফান্ড নিলেও সে টাকা তাঁরা জেলা প্রশাসনের হিসাবেই জমা দেন।
স্থানীয় প্রশাসন পরিবেশ অধিদপ্তরকে সহায়তা করছে না বলে যে অভিযোগ, সে ব্যাপারে জানতে চাইলে আরেকজন ইউএনও বলেন, ‘আমি নিজে গত মাসে এক অবৈধ ইটভাটার মালিককে ৩০ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছিলাম। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরকে মামলা করতে বলার পর তারা ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে সেই মালিককে ছেড়ে দিয়েছে।’
ওই ইউএনও জানান, কৃষিজমির মাটির উপরিভাগ কাটা নিষেধ বলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অবৈধ ইটভাটার মাটি কাটা হয় রাতের বেলা। তাঁর উপজেলায় গড়ে ২০ জন কনস্টেবল রাতে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাই ইটভাটার মালিকেরা প্রত্যেককে দৈনিক দেড় হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে থাকেন। এর বাইরে মাসিক ভিত্তিতেও টাকা দিয়ে থাকেন। এই কর্মকর্তা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘সরকার যদি চায়, তাহলে সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে বড়জোর সাত দিন সময় লাগবে। কিন্তু কেউ সেটা চায় না।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। প্রথম আলোর ২৬ জানুয়ারির প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেখানে ১১৯টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এদিকে পার্বত্য তিন জেলার বিভিন্ন স্থানে থাকা অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম যাতে শুরু না করতে পারে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ৪ জানুয়ারি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কর্মরত প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশে পার্বত্য এলাকায় ইটভাটা বন্ধ করতে বলা হয়েছে, উচ্ছেদ নয়। বেশির ভাগ সময় আমরা ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় ইটভাটা এক ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করে দিই। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তারা আবার সেগুলো চালু করতে পারে। পুরোপুরি উচ্ছেদ না করলে সাময়িক বন্ধ করে এর সুরাহা হবে না।’
এর মানে দেখা যাচ্ছে, এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী—কারও মধ্যে সমন্বিত কোনো পরিকল্পনা নেই। ফলে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানের নামে ‘ইঁদুর-বিড়াল’ খেলা ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না।
বিকল্পেও অগ্রগতি কম
নির্মাণকাজও যেমন চলতে দিতে হবে, তেমনি পরিবেশকেও বাঁচাতে হবে। ফলে এর একটা বাস্তবভিত্তিক সমাধান দরকার। বিকল্প হিসেবে ব্লক ইটের কথা বলা হলেও সরকারি হিসাবে দেশের মোট চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশের কম জোগান আসে ব্লক ইট থেকে। আবার এ খাতের ব্যবসায়ীরাও অতীতে সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শিকার হয়েছেন।
প্রথম আলো আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এমন এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছিলেন, তিনি সরকারের আশ্বাসে ৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন পরিবেশবান্ধব ইট নির্মাণে। বলা হয়েছিল, তাঁর কাছ থেকে সরকারি প্রকল্পের জন্য ইট কেনা হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রাখা হয়নি।
দেশের বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের বেশির ভাগই সরকারি প্রকল্প। ফলে এসব প্রকল্পে ব্লক ইট ব্যবহার করলে এর টেকসই ও সাশ্রয়ী রূপ মানুষ দেখতে পারত। তখন তারাও এসব ইটের প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠত। এ ক্ষেত্রে প্রায় আড়াই শ বছর ধরে, সেই অ্যাডাম স্মিথদের আমল থেকে চলে আসা ‘যৌক্তিক বাছাই তত্ত্বের’ বাইরে আমরা এখনো যেতে পারিনি। তাই মনে রাখতে হবে, সাধারণ মানুষ পরিবেশের চেয়ে ইটের স্থায়িত্ব ও সাশ্রয়ী দিককেই অগ্রাধিকার দেবে।
পাশাপাশি অবৈধ ইটভাটার সমস্যা সমাধানে এ দেশের রাজনৈতিক অর্থনীতির হিসাব-নিকাশ বিবেচনায় নিয়ে আইনি দিকটি খতিয়ে দেখা উচিত। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ায় ইটভাটা–সংক্রান্ত আইন বাংলাদেশে প্রথম হলেও এর বাস্তবায়নযোগ্যতা নিয়ে নানা সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই এ বিষয়ে নতুন করে ভাবা দরকার।
খলিলউল্লাহ্ প্রথম আলোর জলবায়ু প্রকল্প ব্যবস্থাপক