নাগরিক অধিকার সুরক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নাগরিক অধিকার তিন প্রকার—সামাজিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার। সামাজিক অধিকারের প্রথম হলো জীবনের নিরাপত্তার অধিকার।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা বৈধ কারণ ছাড়া এরূপ কাউকে হত্যা কোরো না, যা আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন।’ (সুরা-৭ ইসরা, আয়াত: ৩৩) ‘তোমরা দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা কোরো না, কেননা আমিই তাদের রিজিক দিই এবং বিশেষত তোমাদের রিজিক দান করি, নিশ্চয়ই তাদের হত্যা করা বড় ধরনের অপরাধ।’ (সুরা-৭ ইসরা, আয়াত: ৩১)
নাগরিকের দ্বিতীয় অধিকার হলো খাদ্যনিরাপত্তা ও জীবিকার অধিকার। আল্লাহ তাআলা ‘রাজ্জাক’, অর্থাৎ খাদ্য ও জীবিকার মালিক। মানুষ চেষ্টা দ্বারা জীবিকা অর্জন করে। রাষ্ট্রের কর্তব্য হলো এমন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যাতে প্রত্যেক নাগরিক সহজে সম্মানজনক জীবিকা অর্জন করতে পারে। যদি কোনো ব্যক্তি নিজ প্রচেষ্টায় পর্যাপ্ত জীবিকা না পায়, তবে রাষ্ট্রের কর্তব্য তার জীবিকার ব্যবস্থা করা।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘আর জমিনে এমন কোনো প্রাণী নেই, যার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ গ্রহণ করেননি।’ (সুরা-১১ হুদ, আয়াত: ৬) অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আমি তোমাদের জীবিকার দায়িত্ব নিচ্ছি এবং তোমাদের সন্তানদেরও।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৫১)
কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী বা ধর্মের বিরুদ্ধে অশোভন মন্তব্য করা অথবা ধর্মীয় নেতাদের গালমন্দ করা ইসলামি রাষ্ট্রে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে যেসব উপাস্যকে ডাকছে, তোমরা তাদের গালি দিয়ো না; তাহলে তারাও শত্রুতা–অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দেবে।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১০৮)
নাগরিকের তৃতীয় অধিকারটি হলো অবাধ ও নির্বিঘ্ন চলাচলের অধিকার। নাগরিকেরা নিজ রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে পূর্ণ স্বাধীনতায় যাতায়াত, চলাচল ও পরিভ্রমণ করতে পারবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা জমিনে ভ্রমণ করো এবং তার ফলে উপার্জিত রিজিক আহার করো।’ (সুরা-৬৭ মুলক-১৫)
চতুর্থ অধিকার হলো ধর্মচর্চার অধিকার। প্রত্যেক নাগরিক তার ধর্ম পালন ও শিক্ষা দান করতে পারবে। পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘ধর্মে কোনো জোরজবরদস্তি নেই।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৫৬) অন্য আয়াতে এসেছে, ‘মুমিন হওয়ার জন্য আপনি কি লোকদের বাধ্য করবেন?’ (সুরা-১০ ইউনুস, আয়াত: ৯৯) বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ধর্মশালা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুরক্ষা করা ইসলামি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ধর্মীয় অনুভূতির পবিত্রতা ইসলামে স্বীকৃত।
কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী বা ধর্মের বিরুদ্ধে অশোভন মন্তব্য করা অথবা ধর্মীয় নেতাদের গালমন্দ করা ইসলামি রাষ্ট্রে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে যেসব উপাস্যকে ডাকছে, তোমরা তাদের গালি দিয়ো না; তাহলে তারাও শত্রুতা–অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দেবে।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১০৮)
নাগরিকের পঞ্চম অধিকারটি হলো বাক্স্বাধীনতা বা স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার। অর্থাৎ বলার অধিকার, লেখার অধিকার, প্রচারের অধিকার, সংবাদপত্রের, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা প্রভৃতি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বলো কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের যাবতীয় কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৩৫)
নাগরিকের ষষ্ঠ অধিকার হলো ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার। প্রত্যেক নাগরিক নিজ নিজ অপরাধের শাস্তি ভোগ করবে। কারও অপরাধের দায়ভার অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কোনো বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।’ (সুরা-৫৩ নজম, আয়াত: ৩৮) উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া কাউকে হয়রানি করা, গ্রেপ্তার করা, হামলা মামলা করা, নির্বাসন দেওয়া, দেশান্তরি করা কিংবা শাস্তি প্রদান করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যখন কোনো ফাসেক তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তার সত্যতা যাচাই করে দেখো। যেন এমন না হয় যে না জেনে তোমরা কারও অসুবিধা সৃষ্টি করবে এবং পরে নিজ কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হবে।’ (সুরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ৬) হাদিস শরিফে এসেছে, ‘মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার হাত ও জবান থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি)
অষ্টম সামাজিক অধিকার হলো ইজ্জত-আবরু সংরক্ষণের অধিকার। রাষ্ট্র সব নাগরিকের মানসম্মান, সামাজিক মর্যাদার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। কারও নাম বিকৃত করা, কারও যশ-খ্যাতি নষ্ট করা, কারও ব্যক্তিগত ব্যাপারে কটাক্ষ বা বিদ্রূপ করা ইসলামি রাষ্ট্রে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের এক দল যেন অন্য দলকে নিয়ে হাসি-তামাশা না করে, কেননা তারা তামাশাকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে, তোমরা একে অপরকে দোষারোপ কোরো না এবং একে অপরকে বিকৃত নামে ডেকো না।’ (সুরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ১১)।
শিক্ষালাভের অধিকার নাগরিকের নবম সামাজিক অধিকার। পবিত্র কোরআনের প্রথম নির্দেশই হলো ‘পড়ো।’ (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত: ১) মহানবী (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘জ্ঞানার্জন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ) জ্ঞানচর্চা ব্যতীত নাগরিক দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। এ কারণে শিক্ষার্জনসুবিধা নারী-পুরুষ সবারই সমান অধিকার।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম