আল্লাহর সাহায্যের জন্য চাই নিরঙ্কুশ আনুগত্য

ধর্ম

আল্লাহ তাআলা ভালোবেসে কুল মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। জিন–ইনসান বানিয়েছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। (সুরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত: ৫৬)। মানুষকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন খেলাফতের দায়িত্ব দিয়ে। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৩০) যারা সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে, তাদের সম্মানিত করা হবে বেলায়াত বা বন্ধুত্বের মর্যাদায়। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৫৭)

জীবনে সফলতা ও বিজয় দয়াময় আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সম্ভবপর নয়। তাই আমরা সব কাজের শুরুতে বলি, ‘পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে।’ (সুরা-২৭ নামল, আয়াত: ৩০)। বান্দা চাইলে আল্লাহ তা দান করেন। এমনকি আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করেন। আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দেন, প্রতিটি আহ্বানে সাড়া দেন, সব আবেদন মঞ্জুর করেন, সব দোয়া কবুল করেন। (মিশকাত শরিফ)

কোরআন হাকিমের বর্ণনা, ‘যদি কোনো সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে, তবে আল্লাহ এমন নন যে তিনি তাদের পরিবর্তন করবেন এবং নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’

আমরা সুরা ফাতিহায় যখন বলি, ‘ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসত্বায়িন (শুধু আপনারই ইবাদত করি আর শুধু আপনার কাছেই সাহায্য চাই)।’ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হাজা বাইনি ওয়া বাইনা আবদি’ (এই সিদ্ধান্তই ফায়সালা হলো আমার ও আমার বান্দার মাঝে—বান্দা আমার ইবাদত ও আনুগত্য করবে, আমি তাকে সাহায্য–সহযোগিতা করব)। আমরা যখন বলি, ‘ইহদিনাস সিরাতল মুস্তাকিম, সিরাত্বল্লাজিনা আন আমতা আলাইহিম, গয়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়া লাদ–দল্লিন!’ (আমাদের সঠিক পথ দেখান, তাদের পথ, যাদের আপনি নিয়ামত দিয়েছেন; তাদের পথ নয়, যারা অভিশপ্ত (ইহুদি) আর যারা পথভ্রষ্ট (খ্রিষ্টান)।

তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘লিআবদি মা সাআল’ (আমার বান্দা যা চায়, তার জন্য তা-ই)। (মুসলিম শরিফ: ৭৬৪ [আ. ন.৩৯৫])। কোরআন মজিদের ঘোষণা, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য করো, আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের অবস্থান দৃঢ় করবেন।’ (সুরা-৪৭ মুহাম্মদ, আয়াত: ৭)

আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আরও বলেন, ‘এরা (ইহুদি ও তাদের দোসরেরা) কি এর পূর্বে যা ঘটেছে, তার অনুরূপ ঘটনার প্রতীক্ষা করছে? বলো, “তোমরা প্রতীক্ষা করো, আমিও তোমাদের সঙ্গে অপেক্ষা করছি।” 

পরিশেষে আমি আমার রাসুলদের ও মুমিনদের উদ্ধার করি। এভাবে মুমিনদের উদ্ধার করা আমার দায়িত্ব।’ (সুরা-১০ ইউনুস, আয়াত: ১০২-১০৩) ‘আমি তো তোমাদের পূর্বে রাসুলদের প্রেরণ করেছিলাম তাদের সম্প্রদায়ের নিকট। তারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিল। অতঃপর আমি অপরাধীদের প্রতিশোধমূলক শাস্তি দিয়েছিলাম। আর মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব।’ (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৪৭)

বিজয়ের জন্য চাই আল্লাহর সাহায্য। আল্লাহর মদদেই বিজয় আসে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় যখন আসবে, আর আপনি দেখবেন মানুষ দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে, তখন আপনি আপনার রবের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং তাঁর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি তওবা কবুলকারী।’ (সুরা-১১০ নাসর, আয়াত: ১-৩)

আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য বান্দাকে সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করতে হবে। কোরআন হাকিমের বর্ণনা, ‘যদি কোনো সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে, তবে আল্লাহ এমন নন যে তিনি তাদের পরিবর্তন করবেন এবং নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ৫৩) ‘এবং আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে।’ (সুরা-১৩ রাআদ, আয়াত: ১১)

মুমিনদের প্রতিশ্রুত বিজয় আসবেই। কোরআন কারিমের বর্ণনা, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর রাসুল (সা.)–এর স্বপ্ন যথাযথভাবে সফল করে দেখিয়েছেন।...এ ছাড়া তিনি তোমাদের দিয়েছেন এক সদ্য বিজয়। তিনি তাঁর রাসুল (সা.)–কে পথনির্দেশ, সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন, অন্য সব ধর্ম ও জীবনবিধানের ওপর এটিকে বিজয়ীরূপে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আর সাক্ষী বা সাহায্যকারী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা-৪৮ ফাতহ, আয়াত: ২৭-২৮)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]