সন্তানের সুশিক্ষায় ইসলাম যা বলে

সন্তানের শৈশব সুন্দর হলে সে ইহকাল ও পরকালে গর্বের ধন হবে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা এমন নারীদের বিয়ে করো, যারা অধিক সন্তানপ্রিয়। আমি তোমাদের সুসন্তানের জন্য রোজ কিয়ামতে গর্বিত হব।’ (নাসায়ি: ৩২২৭, আবুদাউদ: ২০৫০)

আল্লাহ তাআলা অনাগত সন্তানের জন্য দোয়া ও শুভকামনা শিখিয়েছেন। ‘হে আমার প্রভু! আমাকে সুসন্তান দান করুন।’ (সুরা-৩৭ ছফফাত, আয়াত: ১০০)। ‘হে আমার প্রভু! আমাদের সাথিদের ও আমাদের সন্তানদের আমাদের জন্য চোখের শীতলতায় পরিণত করুন, আর আমাদের মুত্তাকিনদের প্রধান করুন।’ (সুরা-আল ফুরকান, আয়াত: ৭৪)

‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের উভয়কে আপনার অনুগত করুন, আর আমাদের বংশধরদেরও আপনার অনুগত করুন; আপনার বিধান আমাদের প্রত্যক্ষ করান এবং আমাদের প্রতি মনোনিবেশ করুন! নিশ্চয় আপনি তওবা কবুলকারী ও দয়ালু।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৮)

সন্তান যেন বার্ধক্যে পিতা–মাতাকে নিঃসঙ্গ ফেলে না রাখে, সে জন্য প্রার্থনা, ‘হে আমার প্রভু! আমাকে একা ছেড়ে দেবেন না, আপনিই তো সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী দাতা।’ (সুরা-২১ আম্বিয়া, আয়াত: ৮৯)

সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন উত্তম পারিবারিক পরিবেশ। কোরআন করিমের ভাষায়, ‘হে আমার প্রভু! আমাকে উত্তম পরিবার দান করুন, নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৩৮)। ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ইহকালে ও পরকালে কল্যাণ দান করুন, আর দোজখের আজাব থেকে আমাদের রক্ষা করুন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২০১)

কোনো শিশু যদি অভিভাবকের অবহেলার কারণে পথচ্যুত হয়ে যায়, তাহলে সে হাশরের দিনে আল্লাহর কাছে অভিভাবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে, ‘হে আমাদের রব! আমরা আমাদের অভিভাবক ও বড়দের অনুসরণ করেছি, তারা আমাদের বিপথগামী করেছে। হে আমাদের প্রভু! আপনি তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং মহা–অভিসম্পাত করুন।’ (সুরা-৩৩ আহজাব, আয়াত: ৬৭-৬৮)

শিশুদের নামাজ, রোজাসহ ইবাদতে এবং ধর্মীয় আচার–অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে অভ্যস্ত করাতে হবে, যাতে মানসিক ও নৈতিক শক্তিতে বলীয়ান হতে পারে। কোরআন, হাদিস ও ধর্মগ্রন্থ এবং ধর্মীয় সাহিত্যপাঠে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বোঝাতে হবে। আত্মীয়স্বজন, পাড়া–প্রতিবেশী ও সমাজের সবার সঙ্গে মেশার সুযোগ তৈরি করতে হবে।

হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘ নিজেদের সন্তানদের স্নেহ করো এবং তাদের ভালো ব্যবহার শেখাও।’ (বুখারি)। ‘সন্তানকে সদাচার শিক্ষা দেওয়া দানখয়রাতের চেয়েও উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ)। ‘তোমরা সন্তানদের জ্ঞান দান করো; কেননা তারা তোমাদের পরবর্তী যুগের জন্য সৃষ্ট।’ (বায়হাকি)।

শিশুদের ইবাদত ও আমলের বিষয়ে পিতা–মাতা, অভিভাবকসহ শিক্ষক–শিক্ষিকা এবং সব স্তরের সচেতন নাগরিকেরই দায়িত্ব পালন করতে হবে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, আর এ ব্যাপারে প্রত্যেককেই জবাবদিহি করতে হবে।’ (মুত্তাফাকুন আলাইহি; বুখারি: ৮৫৩, মুসলিম: ১৮২৯)।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়; তবে তিনটি কাজের প্রতিদান পেতে থাকে। এমন দান, যার কল্যাণ চলমান থাকে; এমন জ্ঞান, যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে; এমন সৎকর্মশীল সন্তান, যে তার (পিতা–মাতার) জন্য দোয়া করে।’ (ইবনে কাসির)

অপ্রাপ্তবয়স্ক বা নাবালেগ শিশুদের নামাজ, রোজা ও আমলের সওয়াব পিতা–মাতা ও অভিভাবকেরা পাবেন। নাবালেগ শিশু রোজা রেখে ভেঙে ফেললে তার কাজা বা কাফফারা কিছুই লাগবে না।

এতদঞ্চলে সাধারণত মেয়েরা ১১ থেকে ১৩ বছরে এবং ছেলেরা ১৩ থেকে ১৫ বছরে বালেগ বা সাবালক হয়; তখন থেকেই এদের নামাজ, রোজা ইত্যাদি ফরজ হয়। যদিও সাত বছর থেকে শিখন ও দশ বছর থেকে বাস্তব প্রশিক্ষণমূলক আমল শুরু করাতে হয়।

● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]