রাজস্ব আদায়ের নতুন খাত হতে পারে ডিজিটাল অর্থনীতি

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে ডিজিটাল অর্থনীতি গতি পেয়েছে। এর প্রসার বা বিস্তৃতির পাশাপাশি এই খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি কি বিবেচনা করা যায়? এ ক্ষেত্রে কী কৌশল ও করণীয় রয়েছে, তা নিয়ে লিখেছেন মোস্তাফিজুর রহমান

সরকারি আয় বৃদ্ধির তাগিদ, আয় বণ্টনে ন্যায্যতা বিধান, উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া সরকারি ব্যয় নির্বাহ এবং অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাসের প্রেক্ষাপটে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির ইস্যুটি এখন বাংলাদেশের সামনে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জিডিপির শতাংশে বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে তুলনামূলকভাবে অনেক নিচে। আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শ্রীলঙ্কাকে বাদ রাখলে সর্বনিম্ন (২০২০-২১ অর্থবছর অনুসারে)।

রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার উৎকর্ষ নিশ্চিত করার মাধ্যমে কর ও করবহির্ভূত আয় বৃদ্ধি ও রাজস্ব ফাঁকির পথ বন্ধ করার লক্ষ্যে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই। তা না হলে রাজস্ব খাতে উদ্বৃত্ত আয় (রাজস্ব আয় ও রাজস্ব ব্যয়ের পার্থক্য) নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না এবং উন্নয়ন বাজেটের সম্পূর্ণটাই ঋণনির্ভর অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল থেকে যাবে।

রাজস্ব আদায় কম হওয়ার কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ও ঋণ পরিষেবার চাপ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আদায়কৃত রাজস্ব আয়ের ক্রমবর্ধমান অংশ ঋণ পরিষেবায় (সুদ ও আসল) ব্যয়িত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের জন্য ঋণের ফাঁদে পড়ার একটি আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। তাই এখনই সময় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় অগ্রাধিকারে রাখা যেতে পারে। এগুলো হলো, করভিত্তির সম্প্রসারণ, রাজস্ব ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশন ও আধুনিকায়ন, কর ফাঁকির বিরুদ্ধে আইনি প্রয়োগ নিশ্চিত করা ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি।

বর্তমান লেখার সংক্ষিপ্ত পরিসরে করভিত্তির সম্প্রসারণের বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল অর্থনীতিকে একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ডিজিটাল অর্থনীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা সাম্প্রতিক সময়ে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত, সেবা খাতমূলক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা এবং সেবাগ্রহণকারী ও সেবাপ্রদানকারী মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন সেবা (আইটি এনাবল্ড সার্ভিস) প্রদান করছে, যা ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় বাংলাদেশে এ ধরনের সেবা, বিশেষভাবে খুচরা ব্যবসা খাতে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে।

নিকট অতীতে ইন্টারনেট সেবার সম্প্রসারণে সরকার ও ব্যক্তি খাতের উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ও সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। ডিজিটাল অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ (যেমন আইটি পার্ক প্রতিষ্ঠা) ও নীতি সহায়তা ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এ খাতের ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের সক্রিয় ভূমিকা ও অবদান। গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন, নেটফ্লিক্স, ইউটিউবসহ বিভিন্ন বহুজাতিক ও বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতি খাতের পরিধিকে আরও ব্যাপকতা ও গভীরতা দিয়েছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, ফ্রিল্যান্সিং খাতের সঙ্গে জড়িত কর্মীসংখ্যা দিক থেকে (সেপ্টেম্বর ২০২২) বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় (প্রায় ৩৭ হাজার, যা বৈশ্বিক মোট সংখ্যার ১৬ শতাংশ, ভারত ৬২ শতাংশ নিয়ে প্রথম স্থানে)। এসব ফ্রিল্যান্সার জড়িত আছেন ক্রিয়েটিভ ও মাল্টিমিডিয়া, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং সাপোর্ট, লেখা ও অনুবাদ, ডেটা এন্ট্রি ও প্রফেশনাল সার্ভিস সেবাসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী কর্মকাণ্ডে।

ই-কমার্স, এফ-কমার্স ও আইটি এনাবল্ড বিভিন্ন সেবার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির আকার নিয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্যের ঘাটতি আছে। বাংলাদেশ বি টু সি ই-কমার্স মার্কেট রিপোর্ট ২০২২ অনুযায়ী, দেশের বিজনেস টু কনজিউমার্স ই-কমার্সের আকার প্রায় ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২০২৬ সময়কালে এ বাজার বার্ষিক ১২ দশমিক শূন্য শতাংশের বেশি হারে বৃদ্ধি পাবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের ই-কমার্স সংগঠন ই-ক্যাবের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ২ হাজার ৫০০ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম আছে। এদের ১ শতাংশ বৃহদাকার, ৪ শতাংশ মধ্যম আকারের ও ৯৫ শতাংশ ক্ষুদ্রাকার। বেসিসের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪ হাজার ৫০০ সফটওয়্যার ও আইটি এনাবল্ড সার্ভিস কোম্পানি আছে। এদের মধ্যে প্রায় ৪০০ কোম্পানি ৮০টি দেশে সফটওয়্যার ও বিভিন্ন সেবা রপ্তানি করে থাকে।

বর্তমানে ২৮টি সেবামূলক কর্মকাণ্ডকে আইটি এনাবল্ড সার্ভিস (আইটিইএস) হিসাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন ফাইন্যান্স অ্যাক্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট পোস্টিং, ডিজিটাল ডেটা এন্ট্রি ও প্রসেসিং, ডিজিটাল ডেটা অ্যানালিটিকস, কল সেন্টার সার্ভিস ও আইটি ফ্রিল্যান্সিং।

এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম থেকে প্রাপ্ত আয়ের ওপর ১ জুলাই, ২০০৮ থেকে ৩০ জুন, ২০২৪ পর্যন্ত কোনো প্রত্যক্ষ আয়কর না বসানোর বিধান আছে (যদিও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়)।

ই-কমার্সের ওপর আরোপিত মূসক (ভ্যাট) নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অবশ্য তর্কবিতর্ক হয়েছে। ৫ শতাংশ মূসক আরোপের পর তা আবার পরবর্তী সময়ে প্রত্যাহারের উদাহরণও আছে। মূসকের ভিত্তি (কমিশন বা ফি নাকি সম্পূর্ণ বিক্রয় মূল্য, তা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি আছে। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে দ্বৈত করারোপের আশঙ্কা থেকে যায়)। যেসব প্রতিষ্ঠানের ভৌত ও অনলাইন দুই ধরনের কার্যক্রমই আছে, তাদের জন্য প্রযোজ্য কর কী হবে, এসব বিষয়ে স্পষ্টতার অভাবের কারণে কর আদায়কারী সংস্থা ও কর প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে।

কর আইনে এসব বিষয়ে স্বচ্ছতা আনা প্রয়োজন। যে ২৮টি আইটি এনাবল্ড সার্ভিসের ক্ষেত্রে প্রদেয় প্রত্যক্ষ কর সুবিধার আশু সমাপ্তি হওয়ার কথা (৩০ জুন ২০২৪ ), এ বিষয়েও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এখনই। এই সুযোগ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তা সময়-নির্দিষ্টভাবে করাই যুক্তিযুক্ত হবে। কর অব্যাহতির ক্ষেত্রে ‘সানসেট ক্লজ’-এর উল্লেখ থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর স্পষ্ট ধারণা থাকে, কোন সময় পর্যন্ত তাদের জন্য প্রদেয় প্রণোদনার সুবিধাবলি কার্যকর থাকবে।

অনাবাসিক (নন-রেসিডেন্ট) কোম্পানিগুলো দ্বারা প্রদেয় কর নিয়েও জটিলতা রয়েছে। ইউটিউব, গুগল, ফেসবুক জাতীয় বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশীয় কোম্পানি ক্রীত সেবার (যেমন বিজ্ঞাপন সেবা) ওপর ১৫ শতাংশ মূসক আদায়ের বিধান রয়েছে এবং এসব কোম্পানি কর্তৃক বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর (বিন) নেওয়ার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। এ পর্যন্ত এ ধরনের নয়টি কোম্পানি ‘বিন’ নিয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, এসব কোম্পানির বাংলাদেশে কর জমা দিতে হয় না, যেহেতু বর্তমানে তাদের ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর (টিন) গ্রহণের বিধান নেই। এসব কোম্পানি অন্য দেশে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়ে থাকে (অনেক ক্ষেত্রে ট্যাক্স হেভেনগুলো)।

ফলে এসব কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করে যে লাভ করে, তার ওপর করারোপের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের সুযোগ থেকে সরকার বঞ্চিত হয়। এ সমস্যা কেবল বাংলাদেশের নয়, এটি একটা বৈশ্বিক সমস্যাও বটে। এ সমস্যার নিরসনে ও.ই. সি.ডি.-এর পক্ষ থেকে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগের আওতায় ১০০টি প্রধান ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মভিত্তিক কোম্পানির লাভের ওপর ১৫ শতাংশ হারে প্রদেয় আয়কর একটি ফর্মুলার ভিত্তিতে যেসব দেশে তারা ব্যবসা করছে, তাদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশের উচিত হবে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, আইটি এনাবল্ড ২৮টি খাতের ওপর থেকে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হলে এবং বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিংয়ের ওপর কর আরোপ করা হলে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় ই-কমার্সের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা ১৯৯৮ সাল থেকে বলবৎ আছে, তা ৩০ মার্চ ২০২৬ বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চতুর্দশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক—যেটিই আগে হবে তার পরে উঠে যাবে।

সিপিডির হিসাবমতে, বাংলাদেশ এ কারণে বছরে অন্তত ৩৫০ কোটি টাকার শুল্ক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের এ সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বিশেষত, এ কারণেও যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে বাংলাদেশের ই-কমার্স রপ্তানির ওপরেও আমদানিকারক দেশ কর্তৃক শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা থাকবে।

এ লেখার উদ্দেশ্য এই নয় যে কর কাঠামোর আওতায় এনে কেবল রাজস্ব আহরণের জন্য একটি বিকাশমান ও সম্ভাবনাময় খাতের উন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করা বা তার অবদানকে সীমিত করা।

এখানে যা বলা হয়েছে, তার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ই-কমার্স খাত ও তার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে এ খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের কথাও ভাবতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে।

বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারের কথা বিবেচনায় নিয়ে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির কৌশল বাস্তবায়নের জন্য করণীয়গুলোর পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। এগুলো হলো:

(ক) ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা প্রণোদনা, অবকাঠামো নির্মাণ, ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি ও ইন্টারনেট সেবার মূল্য সাশ্রয়ী রাখার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

(খ) একই সঙ্গে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে ডিজিটাল অর্থনীতির পরিধি সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং অনেক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও ডিজিটাল আকারে সম্পাদিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় এ খাতের বিকাশ ও এ খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে ডিজিটাল অর্থনীতিকে রাজস্ব আদায়ের কৌশলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

(গ) ডিজিটাল অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে প্রদেয় প্রণোদনা ও সহায়তা সময়-নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ ও প্রদান করতে হবে (যেমন ‘সানসেট ক্লজ’-এর মাধ্যমে), যাতে এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা প্রদত্ত সুযোগের স্থায়িত্ব সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে জানতে পারেন।

(ঘ) কর আদায় ও কর ব্যবস্থাপনার সব পর্যায়ে ডিজিটালাইজেশন চালু করার মাধ্যমে ডিজিটাল অর্থনীতি থেকে কর আহরণ সহজ করতে হবে। (ঙ) ডিজিটাল (ই-কমার্স, এফ-কমার্স) প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়নের পদ্ধতি প্রমিতকরণ (স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন) করতে হবে, যাতে অবচয় বেশি ও লাভ কম প্রদর্শনের মাধ্যমে কর ফাঁকির সুযোগ বন্ধ করা যায়।

 (চ) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ই-কমার্সের ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা নিকট ভবিষ্যতে প্রত্যাহার করা হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রক্ষণাত্মক (ডিফেন্সিভ) ও আক্রমণাত্মক (অফেন্সিভ) স্বার্থ বিবেচনায় রেখে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে এবং ই-কমার্স সেবা আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

(ছ) গুগল, অ্যামাজন, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, ফেসবুকসহ যেসব গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশে ব্যবসা করছে, তাদের আয়ের ওপর কর আরোপের ক্ষেত্রে ও.ই.সি.ডি. যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, বাংলাদেশকে সে প্রক্রিয়ার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে।

(জ) ডিজিটাল অর্থনীতিকে রাজস্ব আদায় কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধি ও যথোপযুক্ত মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

  • ড. মোস্তাফিজুর রহমান সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)