ডালিম ফুলের মতো টুকটুকে এই শিশুটির নাম খাদিজা। বয়স সাড়ে চার বছর। সে আমার গলায় দলা পাকানো একটা কষ্ট আটকে দিয়েছে। সে কষ্ট নামছে না।
অদ্ভুত মায়াবতী এই মেয়েটা কিছুদিন আগেও ছোট ছোট পায়ে বাড়ির উঠোনে ঘুরঘুর করত। হাঁস-মুরগির পেছনে ছুটত। তার চোখে ধরা দিত পৃথিবীর তাবৎ বিস্ময়।
এখন সে হাসপাতালের বিছানায়। তার চোখে এখন দুঃসহ যন্ত্রণা। সে জানে না, তার বিছানা লাগোয়া জানালার ও পাশে ‘উটের গ্রীবার মতো’ মৃত্যু এসে উঁকি দিচ্ছে।
কথাটা জানেন চিকিৎসকেরা। আর জানেন খাদিজার মা শারমিন আর ও বাবা মোহাম্মাদ ইউনুস।
শারমিন ও ইউনুস দম্পতি যদি জানতেন, মেয়েটার বাঁচার কোনো আশা নেই, তাহলে হয়তো আশা ছেড়ে দিয়ে তাঁরা খাদিজাকে কোলে নিয়ে তার চিরবিদায়ের জন্য অপেক্ষা করতেন।
কিন্তু ‘সমস্যা’ হলো, আশা আছে। সেই আশা বেশ জোরালো। খাদিজার ঠিক চিকিৎসা হলে সে বেঁচে যাবে—এই আশা তাঁদের ঘুমাতে দিচ্ছে না।
মাস দু-এক আগের একটি ভয়ংকর দুর্ঘটনা তাঁদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। বিছানায় ঘুমাচ্ছিল খাদিজা। পাশে মোমবাতি জ্বালানো ছিল। সেটি পড়ে গিয়ে খাদিজার জামায় আগুন ধরে যায়। এতে তার গলার নিচ থেকে নাভি পর্যন্ত পুড়ে যায়।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বাসিন্দা ইউনুস ও শারমিন দম্পতির একমাত্র সন্তান খাদিজা। হতদরিদ্র বলতে যা বোঝায়, এই দম্পতি তাই।
এসএসসি পাশ ইউনুস এক সময় পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। এখন ঢাকায় কারওয়ানবাজারে দিনমজুরির কাজ করেন। সামান্য যা কিছু আয় হয়, তা গ্রামের বাড়িতে থাকা স্ত্রী সন্তানকে পাঠান।
কিন্তু একমাত্র সন্তান খাদিজাকে নিয়ে প্রায় এক মাস ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রয়েছেন তাঁরা। উপার্জন বন্ধ। ধারদেনার পর্ব শেষ হয়েছে।
আত্মীয়স্বজনের সহায়তাও শেষ। এখন ইউনুসের শেষ সম্বল ভিটে বাড়ি আছে। ইউনুস জানিয়েছেন, সেটি তিনি বিক্রি করতে চেয়েছেন। অসহায়ত্বের সুযোগে সামান্য ভিটের যে দাম, তার চার ভাগের এক ভাগ দাম একজন দিতে চেয়েছিলেন।
মেয়েকে বাঁচাতে তাতেও তিনি রাজি আছেন। কিন্তু ভিটেটি কিনতে চাওয়া ব্যক্তি এখন তা নিতে রাজি নন।
বার্ন ইউনিটে আইসিইউতে গত ২০ মার্চ থেকে খাদিজা ভর্তি আছে। ইতিমধ্যে তাঁর শরীরে একাধিক অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তার শরীরে আরও অস্ত্রোপচার করতে হবে এবং চিকিৎসা হবে দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল।
কিন্তু ইউনুস-শারমিন দম্পতি এখন আক্ষরিক অর্থে নিঃস্ব। মা-বাবা হিসেবে তাঁরা সন্তানের সুস্থতায় অলৌকিক কিছু ঘটার আশায় আছেন।
পৃথিবীতে যা কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটে, খোঁজ নিলে দেখা যায়, তার পেছনে পরম করুণাময় কোনো না কোনো কার্যকারণ রেখে যান।
এই অসহায় পিতা ইউনুসকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। সদাহাস্য ইউনুস এখন দিশা হারিয়ে ‘বোবা’ হয়ে যাওয়া একজন বাবা। তাঁর সব কথা শুনে ও খাদিজাকে দেখে আমিও এক অলৌকিক ঘটনার অপেক্ষা করা শুরু করেছি।
এ ধরনের মহৎ কাজে সফলতা পাওয়ার জন্য ধনী মানুষের চেয়ে হৃদয়বান দাতার প্রয়োজন বেশি। ‘করুণার ধরন হলো আকাশ ভেঙে নামা বৃষ্টির মতো, তার স্পর্শে দাতা-গ্রহীতা দুজনই ধন্য হয়’—শেক্সপিয়ারের এই কথায় ভরসা করে খাদিজার বাবার মতো আমিও সেই ধন্য হওয়া মানুষের অপেক্ষায় আছি। কিছু অলৌকিক মানুষের অপেক্ষায় আছি।
যে দেশে হাজার হাজার কোটিপতির বাস, যে দেশে সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় কোটি টাকা কয়েক দিনের মধ্যে গণচাঁদা তুলে জোগাড় করে ফেলা যায়, যে দেশে অসংখ্য-অগণিত মানুষ প্রতিদিন বিনোদনের পেছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করে, সেই দেশে খাদিজা ‘আব্বা, আমার ব্যথা লাগতেছে’ বলতে বলতে মরে যাবে, এটা কেমন কথা!
খাদিজা এই পৃথিবীর সন্তান। তাঁর চিকিৎসার খরচ জোগানোর দায় ছিল তার মা-বাবার। তাঁরা সব হারিয়ে এখন যেহেতু সর্বস্বান্ত, সেহেতু সেই দায় আমাদের।
এই দায় অস্বীকারের কোনো পথ নেই। কোনো হৃদয়হীন কোটিপতি এই দায় এড়াতে চাইলে এড়াতে পারেন, কিন্তু ধনী-গরিব যেকোনো হৃদয়বান মানুষ এর দায় এড়াতে পারেন না।
অনেক সময় একটি মসজিদ বা একটি মন্দির বা একটি হাসপাতাল বহু মানুষের চাঁদার টাকায় নির্মিত হয়। সেখানে চাঁদা দেওয়া কোনো ব্যক্তি যখন সেই মসজিদ বা মন্দির বা হাসপাতালের কাছে আসেন, তখন তিনি এক স্নিগ্ধ প্রশান্তি অনুভব করেন। তাঁর মনে হতে থাকে, তিনি যে ভবনের সামনে দাঁড়ানো, সেই ভবনের কোনো না কোনো ইট কিংবা কোনো না কোনো বালুকণায় তাঁর উপার্জিত অর্থ মিশে আছে। তিনি অনুভব করেন, এই ভবনে তাঁর ভাগ আছে।
হৃদয়বান মানুষের সামনে খাদিজা এখন সেই মহান ইমারতের মতো। সবার ছোট ছোট দানে যদি খাদিজার চিকিৎসার অর্থ জোগাড় করা সম্ভব হয়, যদি সেই অর্থের চিকিৎসায় সে সেরে ওঠে, সে যদি ছবির সুস্থ খাদিজার মতো আবার ফিক করে একদিন হেসে ওঠে, সেই হাসির স্নিগ্ধ আলোর জ্যোতির মধ্যে দানকারী প্রত্যেক মানুষের ভাগ থাকবে।
এ ধরনের মহৎ কাজে সফলতা পাওয়ার জন্য ধনী মানুষের চেয়ে হৃদয়বান দাতার প্রয়োজন বেশি। ‘করুণার ধরন হলো আকাশ ভেঙে নামা বৃষ্টির মতো, তার স্পর্শে দাতা-গ্রহীতা দুজনই ধন্য হয়’—শেক্সপিয়ারের এই কথায় ভরসা করে খাদিজার বাবার মতো আমিও সেই ধন্য হওয়া মানুষের অপেক্ষায় আছি। কিছু অলৌকিক মানুষের অপেক্ষায় আছি।
২০২১ সালে মাহিব নামের একটি শিশুর চিকিৎসায় সবাইকে পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি একটি লেখা লিখেছিলাম। সে সময় সবাই অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছিলেন। তবে মাহিব শেষ পর্যন্ত মারা গিয়েছিল। খাদিজার ক্ষেত্রে সে ঘটনা ঘটবে না, সেই আশা করছি।
খাদিজার চিকিৎসায় সাহায্য পাঠানোর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন।
বিকাশ নম্বর:
01984740570-ইউনুস (খাদিজার বাবা, বিকাশ);
01615649810-শারমিন (খাদিজার মা, বিকাশ)
ব্যাংক হিসাব:
ডাচ বাংলা ব্যাংক (সাভার শাখা)
নাম: মোহাম্মাদ ইউনুস
হিসাব নম্বর: ১৩৭১৫৮০০৩০৫৮৮