গাজার সঙ্গে ৮ মুসলিম দেশ কি বড় বিশ্বাসঘাতকতা করল

অনেক দিন ধরেই ইহুদিবাদীরা বেশ চিন্তিত। হলিউড থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াজগৎ পর্যন্ত সব দিকেই ইসরায়েলকে বর্জন করার দাবি জোরালো হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে তরুণসমাজের কাছে ইসরায়েল এখন সবচেয়ে ঘৃণিত রাষ্ট্র হয়ে উঠছে। এমনকি ইহুদিবাদীদের শক্ত ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রেও তরুণ প্রজন্ম ইসরায়েল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেকে এখন ইসরায়েলকে কৌশলগত বোঝা মনে করছেন। তাঁরা গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা এবং আগ্রাসী যুদ্ধগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিরবচ্ছিন্ন সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছেন।

তাঁদের যুক্তি, কোটি কোটি মার্কিন করদাতার অর্থ এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সম্পদ একটি গণহত্যার কাজে লাগানো হচ্ছে, যা কেবল বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ঘৃণা তৈরি করবে, অথচ সেই করের টাকা ও সামরিক সম্পদ এর চেয়ে ভালো কাজে ব্যবহার করা যেত। বিশ্বজুড়ে গাজা যুদ্ধ নিয়ে বয়ানের লড়াইয়ে ইসরায়েল হেরে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

ভিকটিমের ওপর দোষ চাপানোর কৌশল

বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে জনমত তৈরি হয়েছে, আশ্চর্যজনকভাবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তা নিয়ে একেবারেই বিচলিত নন। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য হলো দুর্নীতি মামলা এড়িয়ে যতটা সম্ভব ইসরায়েলের ক্ষমতায় থাকা। তবে ইসরায়েল নিয়ে চিন্তিত কট্টর ইহুদিবাদীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে বিশ্বজুড়ে বয়ানের লড়াইয়ে ইসরায়েলের হেরে যাওয়া নিয়ে।

পরিস্থিতি পাল্টাতে তারা একটি পুরোনো কিন্তু কার্যকর কৌশল পুনরায় ব্যবহার করেছে—দোষ সম্পূর্ণভাবে ভিকটিমের ওপর চাপিয়ে দেওয়া। এ কৌশল ২০০০ সালের ক্যাম্প ডেভিডের ব্যর্থতার পরও কাজে লাগানো হয়েছিল, যখন বিল ক্লিনটন ও এহুদ বারাকের আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার সব দোষ ইয়াসির আরাফাতের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।

পুরোনো এই মার্কিন-ইসরায়েলি কৌশল (যা ক্যাম্প ডেভিড ২০০০ এবং অসলো চুক্তির পরও বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে) এবারও প্রয়োগ করা হয়েছে। এখানে ইসরায়েলের একটি প্রস্তাবকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। আর আরবরা তা গ্রহণ করলেই ইসরায়েল তখন সেই প্রস্তাবকে নিজেদের সুবিধামতো বদলে ফেলে।

তবে এটি ২০০০ সাল নয়, ২৫ বছর পেরিয়ে গেছে। হাজার হাজার (কিছু অনুমানমতে প্রায় ২ লাখ) ফিলিস্তিনি গণহত্যার শিকার হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এখন আর বয়ানের লড়াইয়ে আগের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে পারছে না। তাদের কিছু ‘বলির পাঁঠার’ প্রয়োজন। দুঃখজনকভাবে, তারা সেই বলির পাঁঠা খুঁজে পেয়েছে কথিত ‘মুসলিম বিশ্বেই’।

মুসলিম বিশ্বের বিরাট বিশ্বাসঘাতকতা

মুসলিম বিশ্বের আটটি প্রভাবশালী দেশ (কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, পাকিস্তান, জর্ডান ও মিসর) তাড়াহুড়া করে ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনাটির অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। এ পদক্ষেপকে ফিলিস্তিনের প্রতি বিরাট বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।

নেতানিয়াহু যখন ট্রাম্পের পরোক্ষ সমর্থনে এই শান্তি পরিকল্পনার মূল পয়েন্টগুলো সাজালেন এবং এর মধ্য দিয়ে তিনি যেন ঘোষণা করলেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র কখনো গঠিত হবে না এবং আইডিএফ (ইসরায়েলি সেনাবাহিনী) গাজা উপত্যকার বিশাল অংশ দখল করে থাকবে; তখন মনে হলো, মুসলিম বিশ্বের এই আট দেশ নিজেরাই পুরোনো মার্কিন-ইসরায়েলি কৌশলের শিকার হয়েছে।

মুসলিম বিশ্বের কাছে ট্রাম্পের দেওয়া একটি প্রতিশ্রুতি ছিল, ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখল করবে না। নেতানিয়াহু সেটিও বাদ দিয়ে দিয়েছেন। যদিও নেতানিয়াহু বিপজ্জনক হারে পশ্চিম তীরে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন ও সম্প্রসারণ করায় ট্রাম্পের সেই প্রতিশ্রুতি অর্থহীনই ছিল।

হোয়াইট হাউসে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (বাঁয়ে) ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবি: রয়টার্স

নেতানিয়াহুর সাজানো ছাড়াও গাজা নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ভয়াবহ একটি দলিল। এতে যে সুনির্দিষ্ট সময়রেখা ও প্রক্রিয়া যুক্ত করা হয়, তা মূলত ইসরায়েলের সুবিধাকে মাথায় রেখে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা কী পাবে, তা অস্পষ্ট ও ধোঁয়াচ্ছন্ন।

আটটি দেশের অনুমোদন দেওয়া ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনাটির উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য এখানে দেওয়া হলো:

১. একজন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার আগেই সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে (নেতানিয়াহুকে সব জিম্মি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চুক্তি থেকে সরে আসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে)।

২. গাজা শাসন করবে ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ, যার প্রধান হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রিটিশ মিডিয়া যে ব্যক্তিকে ‘গণবিধ্বংসী প্রতারণার হাতিয়ার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, সেই টনি ব্লেয়ার থাকবেন ‘ভাইসরয়’ হিসেবে।

৩. ২০২০ সালের ট্রাম্পের যে শান্তি পরিকল্পনা ছিল, সেটিকে গ্রহণ করতে হবে। সেই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি নিয়ন্ত্রণের অধীনে থাকা এলাকাকে মারাত্মকভাবে আরও সংকুচিত করে দিয়েছে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে দখল করা অঞ্চল থেকে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের জাতিসংঘের দাবির বিপরীতে এ পরিকল্পনা কার্যত একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে বাতিল করে দেয়।

৪. হামাসকে সম্পূর্ণরূপে নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে। কাজটি সম্পন্ন হবে মূলত এই মুসলিম দেশগুলোর বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স (আইএসএফ) দ্বারা। অথচ ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বিশাল অংশ দখল করে থাকবে এবং যতক্ষণ না তারা আইএসএফের কাজের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট হচ্ছে, ততক্ষণ তাদের প্রত্যাহারের বিষয়ে ভেটো দেওয়ার অধিকার থাকবে। কোনো দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের অধিকার আন্তর্জাতিক আইনে সুরক্ষিত আছে, সে বিষয়কেই এ দাবি উপেক্ষা করেছে।

৫. চুক্তিতে বহুবার ‘নতুন গাজা যেন তার প্রতিবেশীদের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি না করে’—এ কথার উল্লেখ রয়েছে। এর মাধ্যমে গণহত্যা ও যুদ্ধের জন্য নির্যাতিত ভিকটিমদেরই দোষী করা হয়েছে, যাদের ভূমি দখল করা হয়েছে।

৬. গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের প্রত্যাহারের কোনো সময়সীমা নেই। তবে ইসরায়েল গাজা উপত্যকার অভ্যন্তরে অনির্দিষ্ট একটি নিরাপত্তা পরিধিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য দখল করে থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

৭. ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে যেকোনো অগ্রগতিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) সংস্কারের একটি অস্পষ্ট শর্তের অধীন করা হয়েছে। পিএ সেখানে যথেষ্ট ‘সংস্কার’ করেছে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার ইসরায়েলের কাছেই থাকবে।

আরও পড়ুন

মুসলিম নেতাদের নীরব সম্মতিতে ট্রাম্প আরও ঘোষণা করেন যে হামাসকে আগামী তিন বা চার দিনের মধ্যে এই পরিকল্পনা মেনে নিতে হবে। অন্যথায় তিনি নেতানিয়াহুকে নতুন উদ্যমে গণহত্যা পুনরায় শুরু করার জন্য পূর্ণ সমর্থন দেবেন।

সুতরাং ট্রাম্পের পরিকল্পনায় এটি কোনো শান্তি চুক্তি নয়; বরং এটি একটি চরমপত্র। এই চুক্তি ইসরায়েলের হাতে হত্যা ও অনাহারের মুখে থাকা ২০ লাখ ফিলিস্তিনির জীবন ও মর্যাদাকে কাজে লাগিয়ে হামাসকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার চেষ্টা করছে।

আটটি মুসলিম দেশ কর্তৃক এ পরিকল্পনা গ্রহণ করে আব্রাহাম চুক্তির চেয়েও বড় বিশ্বাসঘাতকতা করছে (কারণ, আব্রাহাম চুক্তি অন্তত একুশ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যার আগে হয়েছিল)। এ পরিকল্পনাকে সমর্থন করে আটটি মুসলিম দেশ ফিলিস্তিনিদের আগ্রাসী ও সন্ত্রাসী হিসেবে চিত্রিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে ইসরায়েল এবং তার গণহত্যার কাজগুলোকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। তারা বিশ্বজুড়ে চলমান বয়ানের লড়াইকে ইসরায়েলের পক্ষে ঘুরিয়ে দিতে একটা বড় আঘাত হেনেছে।

এটি আমাকে বিখ্যাত পাকিস্তানি চিন্তাবিদ ইকবাল আহমেদের একটি উক্তি মনে করিয়ে দেয়, ‘আমরা এক নষ্ট সময়ে বাস করছি। এটা মুসলমানদের ইতিহাসের অন্ধকার যুগ—আত্মসমর্পণ আর আপসের যুগ, যেখানে পাগলামি বারবার মাথা তুলতে থাকে।’

গাজা যুদ্ধ নিয়ে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এ বৈঠকটি হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
ফাইল ছবি

বিশ্বাসঘাতকতার কারণ ও পরিণতি

কেউ প্রশ্ন করতে পারে, কী কারণে এই আট মুসলিম দেশ এমন জঘন্য বিশ্বাসঘাতকতায় অংশ নিল? মনে হচ্ছে, প্রতিটি অংশগ্রহণকারী দেশের ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে। যেমন:

১. অজনপ্রিয় ও অবৈধ সরকারগুলোর টিকে থাকার জন্য ট্রাম্পের সমর্থন প্রয়োজন (মিসর ও পাকিস্তান)।

২. সিরিয়ার একটি অংশে ভাগ বসানোর সুযোগ (তুরস্ক)।

৩. ট্রাম্পের পরিকল্পনার অধীনে গাজায় তৈরি হতে যাওয়া ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে’ অর্থনৈতিক সুবিধা লাভের সুযোগ। পাশাপাশি যুদ্ধ চললে ইসরায়েলি আগ্রাসন থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের রক্ষা করতে অস্বীকার করবে—এ ভয়ও কাজ করেছে (সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও কাতার)।

নির্মম পরিহাস হচ্ছে, জুডাসের মতো এই দেশগুলোও তাদের বিশ্বাসঘাতকতার ফল বেশি দিন উপভোগ করতে পারবে না। কোনো বিদেশি শক্তির পুতুল হয়ে উঠলে জনপ্রিয়তাহীন ও অবৈধ সরকারগুলোর দুর্বলতা আরও বেড়ে যায়। সিরিয়া নিয়ে ইসরায়েলের স্পষ্ট নীতি আছে। সিরিয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার ইচ্ছাশক্তি ও শক্তি অর্জন করার আগপর্যন্ত ইসরায়েল দেশটিকে স্থিতিশীল হতে দেবে না।

আর গাজার ধ্বংসাবশেষ ও লাশের ওপর দাঁড়িয়ে যারা অর্থনৈতিক লাভ ও নিরাপত্তা আশা করছে, তারা শিগগিরই জানবে যে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ (গ্রেটার ইসরায়েল) গঠনের প্রকল্পটি ইসরায়েলের জন্য নাৎসি জার্মানির ‘বৃহত্তর জার্মানি’ প্রকল্পের মতোই অবিচ্ছেদ্য।

দস্তয়েভস্কির ‘অপরাধ ও শাস্তি’ উপন্যাসের একটি চরিত্রের ভাষায়, একজন ফিলিস্তিনি এই বিভ্রান্ত মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে বলতে পারে: ‘তোমাদের সবচেয়ে বড় পাপ হলো তোমরা নিজেদের ধ্বংস করেছ এবং কোনো কারণ ছাড়াই বিশ্বাসঘাতকতা করেছ!’

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সামনে পথ

এই বিরাট বিশ্বাসঘাতকতা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে খুব কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে। আগেও তারা মুসলিম দেশগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য সহায়তা পাচ্ছিল না, এখন তারা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়েছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সামনে কী কী বিকল্প আছে?

ট্রাম্পের পরিকল্পনা মেনে নিলে কেবল নেতানিয়াহুরই জয় হবে (যে জয় তিনি এখনো যুদ্ধক্ষেত্রে পাননি)। কিন্তু এতে গণহত্যা থামবে, সেটিও নিশ্চিত হবে না। পরিকল্পনাটিতে ইসরায়েলি জিম্মিদের পুনরুদ্ধার করার পর ইসরায়েলের পক্ষে সব প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

পরিকল্পনা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করলে নেতানিয়াহু ও তাঁর মার্কিন মিত্ররা আটটি গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশের পরোক্ষ সমর্থন নিয়ে গণহত্যা পুনরায় শুরু করতে পারবে। একই সঙ্গে হামাসকে ‘বাধা সৃষ্টিকারী’ হিসেবে চিত্রিত করে বয়ানের লড়াইয়ে সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে।

সম্ভবত ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের জন্য সেরা বিকল্প হলো, ট্রাম্প পরিকল্পনার অস্পষ্ট বিষয়গুলোর জন্য স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং সুদৃঢ় গ্যারান্টি চাওয়া।

নিঃসন্দেহে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু সেই গ্যারান্টি দেবেন না। তাঁরা তাঁদের নিজস্ব অসৎ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ‘হামাস এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে’ বলে তেমনটি চিত্রিত করার চেষ্টা করবেন।

তবে তাঁদের এই দাবি ভিত্তিহীন প্রমাণিত হবে এবং গণহত্যা পুনরায় শুরু হলেও বয়ানের লড়াইয়ে ফিলিস্তিনই প্রভাবশালী থাকবে। গণহত্যা পুনরায় শুরু হলে ইসরায়েলি জিম্মিদের উদ্ধারের সম্ভাবনাও কমে যাবে, ফলে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিকভাবে ফিরে আসার আশাও ভেঙে যাবে।

এখানে হেনরি কিসিঞ্জারের বিখ্যাত উক্তিটি প্রাসঙ্গিক, ‘প্রথাগত সেনাবাহিনী যদি না জেতে, তাহলে তারা হারে, আর গেরিলা বাহিনী না হারলেই জিতে যায়।’

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যদি আগামী বছর ইসরায়েলিদের ভোটে নেতানিয়াহু ক্ষমতাচ্যুত না হওয়া পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে, তবে আশা আছে যে ইসরায়েল অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতায় ডুবে যাবে। এমনটি হলে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হতে পারে, যা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনীর অক্ষুণ্ন থাকার গ্যারান্টি দেবে এবং গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার নিশ্চিত করবে।

  • হাসান বোখারি পাকিস্তানি শল্যচিকিৎসক, ইতিহাসবিদ, ফিলিস্তিনবিষয়ক গ্রন্থপ্রণেতা। পাক-ফিলিস্তিন ফোরামের সদস্য।

মিডল ইস্ট মনিটর থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: রাফসান গালিব