সান ফ্রান্সিসকোতে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশনের (অ্যাপেক) শীর্ষ সম্মেলনের এক ফাঁকে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বৈঠক আহামরি কোনো ফল আনেনি।
এই দুই দেশের সম্পর্কে স্থিতিশীলতা আনা যদি তাঁদের বৈঠকের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে সে উদ্দেশ্য অর্জিত হয়েছে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে গেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং কৌশলগত যে গভীর চিড় ধরে আছে, তা সারাই করা মোটেও সহজ হবে না।
আদতে শুধু মুখের বুলি আওড়ে স্থিতিশীলতা অর্জন করা যায় না। এর জন্য নীতি বদলানোর দরকার হয়। কিন্তু চীন সহসাই তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন ও পূর্ব চীন সাগর কিংবা অন্য কোথাও তার সার্বভৌমত্ব ইস্যুতে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে, এমন আভাস দেওয়া কঠিন। একের পর এক দেশকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যে আনতে চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নামের যে প্রকল্প নিয়েছে, সেই প্রকল্পকে বেইজিং সংকুচিত করবে, এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
চীন তার পরমাণু অস্ত্রাগার আরও বড় করার পরিকল্পনা করছে। মার্কিন নৌবাহিনীকে যত দূর সম্ভব চীনের উপকূল থেকে দূরে রাখা যায়, সেই চেষ্টা করতে বেইজিং নিজের নতুন সক্ষমতা তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। এ ছাড়া নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করতে দেশটি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল ও প্রযুক্তিপণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে। এর পাশাপাশি তারা আরও অনেক কিছু করতে চাইবে।
চীন ইতিমধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে গিলে ফেলছে। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিম এশিয়ার কথা বলা যেতে পারে। ওই অঞ্চলটি ইতিমধ্যে আমেরিকান শক্তির জন্য ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, ২০৪৯ সাল নাগাদ চীন বিশ্ব শাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার যে সময়সীমা ঘোষণা করেছে, সেই ঘোষিত উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে তারা সরে আসবে না।
অন্যদিকে চীনের হুমকি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রও তার রাজনৈতিক, প্রযুক্তি ও সামরিক স্তরে নিজের কৌশল থেকে পিছপা হবে না। চীনকে লাগামের মধ্যে রাখতে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র যে জোট গঠন করেছে, তাকে অধিকতর শক্তিশালী করার নীতি দেশটি ধরে রাখবে। দেশটি তাইওয়ানকে অস্ত্র দেওয়াও অব্যাহত রাখবে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনকে দুর্বল করে রাখার লক্ষ্য কোয়াডের ব্যাপ্তি বাড়ানো বা অকাস জোট গঠনের বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র অবিচল থাকবে।
অর্থাৎ এই দুই পরাশক্তি পরস্পরবিরোধী দুই অবস্থানে থাকবে। তার মানে এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের অবসান হওয়ার সম্ভাবনা এখনই দেখা যাচ্ছে না।
এমনিতে আমেরিকান জনগণ যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের ওপর খবরদারি করা পরাশক্তি হিসেবে দেখতে চায়। একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনের বিষয়ে নমনীয় ভাব প্রকাশ করছে—এটি আমেরিকান জনগণ পছন্দ করে না। হয়তো সে কারণেই জো বাইডেন তাঁর আগামী নির্বাচন ও ভোটের কথা মাথায় রেখে সি চিন পিংয়ের সঙ্গে আলোচনার সময় বেশ কিছু ইস্যুতে শক্ত কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের দিক থেকেও খুব একটা উষ্ণ অভিব্যক্তি প্রকাশ পায়নি। তবে সফলতা বলতে যেটি এসেছে, তা হলো এই দুই নেতা যাতে প্রয়োজনে সরাসরি টেলিফোনে কথা বলতে পারেন, সে জন্য আলাদা একটি হটলাইন চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটিকে অবশ্য অর্জন হিসেবে খাটো করে দেখা ঠিক হবে না।
এনডিটিভি অনলাইন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত আকারে অনূদিত
কানওয়াল সিবাল ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব