আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দাকে নানাভাবে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদহানি, প্রাণহানি ও ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে; তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যারা তাদের প্রতি মসিবত আপতিত হলে বলে, “নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই এবং তাঁর কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।”’
বান্দা যখন তাঁর দ্বারস্থ হয়, তখন আল্লাহ ক্ষমা ও দয়ার কুদরতি হাত প্রসারিত করেন। বান্দা ইস্তিগফার করলে আল্লাহ আজাব দূর করে দেন। কোরআনের বর্ণনা, ‘আপনি তাদের মাঝে থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না এবং তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করলে তখনো আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না।’ (সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ৩৩)
আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করে তার মধ্যে পাপ-পুণ্যের সম্ভাবনা দিয়ে রেখেছেন। কোরআন কারিমে রয়েছে, ‘অতঃপর আল্লাহ তাতে (মানবসত্তায়) অপরাধপ্রবণতা ও তাকওয়া বা সতর্কতার জ্ঞান দান করলেন।’ (সুরা-৯১ শামছ, আয়াত: ৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ সকাল–সন্ধ্যায় বিশ্বাসের সঙ্গে সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠ করে, সে যদি ওই দিন রাত্রে বা দিবসে ইন্তেকাল করে, তাহলে সে জান্নাতি হবে।’
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘সব মানুষই অপরাধী। তাদের মাঝে উত্তম হলো তওবাকারী।’ (তিরমিজি: ২৪৯৯, মুসনাদে আহমাদ: ১৩০৪৯, ইবনে মাজাহ: ৪২৫১) নবী করিম (সা.) আরও বলেন, ‘যদি কেউ গুনাহ মাফের উদ্দেশ্যে ইস্তিগফার করাকে নিজের ওপর আবশ্যক করে নেয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে তিনটি পুরস্কার দেবেন: তার জীবনের কঠিন অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করবেন, তাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, তাকে অচিন্তনীয় ও অকল্পনীয় স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (মুসলিম ও তিরমিজি)
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। এতে অগণিত মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘দুর্ভাগা তারা, যারা রমজান পেয়েও মাগফিরাত বা ক্ষমা লাভ করতে পারল না।’ (বুখারি শরিফ)
আল্লাহ তাআলার একটি গুণ হচ্ছে ক্ষমা করা। পবিত্র কোরআনে ক্ষমার ব্যাপারে তিনটি শব্দ বারবার ব্যবহৃত হয়েছে—গাফির, গাফফার ও গফুর। ‘গাফির’ অর্থ ক্ষমাকারী, ‘গাফফার’ অর্থ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, ‘গফুর’ অর্থ পরম ক্ষমাশীল। যেমন ‘তিনি গুনাহ ক্ষমাকারী’। (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৩) ‘জেনে রেখো, তিনি পরাক্রমশালী পরম ক্ষমাশীল’ (সুরা-৩৯ যুমার, আয়াত: ৫) ‘হে (নবী মুহাম্মদ সা.), আপনি আমার বান্দাদের বলে দিন, আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সুরা-১৫ হিজর, আয়াত: ৪৯)
হাদিসে কুদসিতে রয়েছে, ‘বান্দা যদি দৈনিক ৭০ বার অপরাধ করে এবং ৭০ বার ক্ষমা চায়, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ প্রিয় নবীজি (সা.) দৈনিক ৭০ বারের অধিক বা ১০০ বার ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। অথচ তিনিসহ সব নবী–রাসুল ছিলেন মাসুম বা সম্পূর্ণ নিষ্পাপ। কারণ, তওবা ও ইস্তিগফার স্বতন্ত্র ইবাদত, এতে আল্লাহ খুশি হন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ সকাল–সন্ধ্যায় বিশ্বাসের সঙ্গে সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠ করে, সে যদি ওই দিন রাত্রে বা দিবসে ইন্তেকাল করে, তাহলে সে জান্নাতি হবে।’ সাইয়েদুল ইস্তিগফার হলো, ‘আল্লাহুম্মা আন্তা রব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা; খলাকতানি ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাস্তাততু, আউজুবিকা মিন শার্রি মা ছনাতু, আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবুউ লাকা বিজাম্বি; ফাগফির লি, ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ-জুনুবা ইল্লা আন্তা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই।
আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনারই বান্দা, আর আমি আছি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের ওপর আমার সাধ্যমতো। আমি আপনার কাছে পানাহ ও আশ্রয় চাই আমার অনাসৃষ্টির অকল্যাণ এবং অপকার ও ক্ষতি হতে। আমি স্বীকার করছি, আমার প্রতি আপনার সব নিয়ামত, আরও স্বীকার করছি, আপনার সমীপে আমার সব অপরাধ। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন; আর অবশ্যই আপনি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই।’ (বুখারি: ৬৩২৩ ও মুসলিম)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম