ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েল তাঁর আন্তর্জাতিক বেস্টসেলার বই আউটলায়ার্স-এ বিভিন্ন সফল ও বিখ্যাত ব্যক্তির সাফল্যের রহস্য বিশ্লেষণ করেছেন। সফটওয়্যার বিলিয়নিয়ার থেকে শুরু করে প্রতিভাবান বিজ্ঞানী, বিখ্যাত রকস্টার থেকে পেশাদার খেলোয়াড়—এ রকম নানা খাতে সফল ব্যক্তিদের সাফল্যের রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, এই মানুষদের ব্যতিক্রমী অর্জনের পেছনে তাঁদের প্রতিভা যতটা না ভূমিকা রেখেছে, তার চেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে উপযুক্ত সময়ে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা।
তিনি সফলতার পেছনে প্রতিভা বা পরিশ্রমের ভূমিকাকে অস্বীকার করছেন না, কিন্তু তথ্যপ্রমাণসহ দেখিয়েছেন, এই সফল ব্যক্তিরা তাঁদের বিকশিত হওয়ার পথে যেসব বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলেন, সেগুলো না পেলে প্রতিভা থাকলেও ততটা সাফল্য আসত না। তিনি তাই লিখেছেন, পৃথিবীটাকে আরও ভালো করে গড়ে তুলতে হলে বর্তমানে ব্যতিক্রমী সুযোগ পেয়ে সফলতা অর্জনের যে ব্যবস্থা চালু রয়েছে, সেটাকে পাল্টে এমন এক সমাজ নির্মাণ করতে হবে, যেখানে সবার জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা হবে।
ব্যক্তির বিকাশে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায় হলো সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা। শিক্ষাব্যবস্থা এমন হওয়া প্রয়োজন, যেন ভৌগোলিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে কাউকে যথাযথ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে না হয়। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এ ‘সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে গণমুখী, সুলভ, সুষম, সর্বজনীন, সুপরিকল্পিত, বিজ্ঞানমনস্ক ও মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে সক্ষম শিক্ষাব্যবস্থা’ গড়ে তোলার কথা বলা হলেও দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা সেই লক্ষ্য থেকে বহু দূরে।
এমনকি শিক্ষানীতিতে যে প্রাথমিক শিক্ষাকে ‘সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক, অবৈতনিক এবং সবার জন্য একই মানের’ করার কথা বলা হয়েছে, সেই প্রাথমিক শিক্ষাই অর্থনৈতিক, আঞ্চলিক ও ভৌগোলিক বৈষম্যমুক্ত নয়। সরকারি, বেসরকারি এবং ইংরেজি মাধ্যমের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার খরচ ও মানে রয়েছে ব্যাপক তারতম্য, এমনকি শহরের সরকারি স্কুলের সঙ্গে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোর শিক্ষার আয়োজনেও রয়েছে বৈষম্য।
সম্প্রতি প্রথম আলোর এক সংবাদে রাজধানী ঢাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর যে দুরবস্থার চিত্র উঠে এসেছে, সেখানে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার আয়োজনে কী পরিস্থিতি থাকতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। (সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গরিবই রয়ে গেল, প্রথম আলো, ৪ মে ২০২৩)
প্রথম আলোর প্রতিবেদক গত তিন মাসে ঢাকার ৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে এসব বিদ্যালয়ের যে সাধারণ কতগুলো বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেছেন, সেগুলো হলো—এক. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নগরের দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুরা পড়ে। দুই. বিদ্যালয়গুলোয় সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত দপ্তরি, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়া নেই। ব্যবস্থাপনা কমিটি বা স্থানীয় মানুষের অনুদানে সামান্য বেতনে কোনো কোনো বিদ্যালয়ে এ ধরনের কর্মী রাখা হয়েছে। তিন. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মলিন ও অপরিচ্ছন্ন। চার. শিক্ষার মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। পাঁচ. সহশিক্ষা কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ছয়. বেশ কিছু বিদ্যালয়ের জমি ও অবকাঠামো বেদখল।
আম আদমি পার্টি জানে, ভারতের তীব্র প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনী ব্যবস্থায় জনগণের মন জয় করেই তাদের ক্ষমতায় থাকতে হবে। এ কারণেই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও পানির মতো পাবলিক সার্ভিস বা সর্বজন খাতের উন্নয়নের গুরুত্ব তাদের কাছে অপরিসীম। বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে, কিন্তু স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও পানির মতো সর্বজন খাতে সুলভে মানসম্পন্ন সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করা হচ্ছে না। ফলে ক্রমাগত বাণিজ্যিকীকরণে এসব খাত থেকে সুলভে মানসম্পন্ন সেবা পাওয়ার অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে।
যে রাজধানী ঢাকায় হাজার হাজার কোটি টাকার ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে, সেই ঢাকাতেই এমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে ১০ থেকে ১২টি বেঞ্চ ফেলে চলে পাঠদান কার্যক্রম। পুরান ঢাকার অভিজাত এলাকা ওয়ারীতে অবস্থিত এই ‘মুসলিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’-এ ওয়ারীর নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুরা পড়ে। তাই হয়তো এই বিদ্যালয়ে শিশুদের খেলার মাঠ তো দূরের কথা, এমনকি বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই।
বর্ষাকালে স্কুলের মেঝে স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়। এমনকি শৌচাগারও ছিল না। বছরখানেক আগে শিক্ষকেরা নিজস্ব উদ্যোগ ও এলাকাবাসীর সহায়তায় একটি শৌচাগার নির্মাণ করেছেন। এই ওয়ারীতেই এমন বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে বিদ্যালয় ভবনের অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। অফিসকক্ষসহ প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। যেকোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকির মধ্যেই চলছে শিশুদের পাঠদান।
সমস্যা শুধু জরাজীর্ণ ভবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, শিক্ষার সার্বিক আয়োজনেই অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। শিক্ষানীতি অনুসারে, বিদ্যালয়গুলোয় প্রতি ৩০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক থাকার প্রয়োজন হলেও রাজধানীর বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষক কম। গড়ে ৪৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক থাকলেও কোনো কোনো বিদ্যালয়ে এই অনুপাত আরও বেশি।
শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ, খেলাধুলা ও শরীরচর্চার আয়োজন জরুরি হলেও রাজধানীর ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৫২টিতেই কোনো মাঠ নেই। সব মিলিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর এতই দুরবস্থা যে সেখানে সন্তানদের ভর্তি করানোকে নিজেদের সম্মানহানি হিসেবে গণ্য করেন সচ্ছল অভিভাবকেরা। (সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গরিবই রয়ে গেল, প্রথম আলো, ৪ মে ২০২৩)
কিন্তু সরকারি বিদ্যালয় মানেই সেগুলোকে জরাজীর্ণ হতে হবে, সেখানে ভালো পড়াশোনা হবে না—এ রকম কোনো কথা নেই। পৃথিবীর বহু দেশের পাবলিক সেক্টর বা সর্বজন খাতে শিক্ষাব্যবস্থার সুনাম রয়েছে। এমনকি যেসব দেশে সরকারি শিক্ষা খাতের দুর্নাম রয়েছে, সেখানেও যে আন্তরিকতা ও যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে চাইলেই এই পরিস্থিতি ঘোচানো সম্ভব, তার সাম্প্রতিক একটি দৃষ্টান্ত হলো ভারতের রাজধানী দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়গুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনা। এ ঘটনা ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও দিল্লির শিক্ষা মডেল বিষয়ে যেমন আগ্রহ তৈরি করেছে, ভারতের বাইরেও সরকারি বিদ্যালয়ের এই ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ২০২২ সালের আগস্টে নিউইয়র্ক টাইমস এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছে। শিরোনাম ‘ক্লিন টয়লেটস, ইন্সপায়ার্ড টিচার্স: হাউ ইন্ডিয়া’স ক্যাপিটাল ইজ ফিক্সিং ইটস স্কুল’।
দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়গুলোও একসময় জরাজীর্ণ ছিল, সংকট ছিল শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের, শিক্ষার মান ছিল নিম্ন। এসব সরকারি বিদ্যালয়েও দরিদ্র-নিম্নবিত্তরা ছাড়া আর কেউ তাঁদের সন্তানদের পাঠাতে চাইতেন না। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয় ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি ক্ষমতায় আসবার পর স্বাস্থ্য, পানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি পাবলিক সেক্টর বা সর্বজন খাতের মতো শিক্ষা খাতেও যথাযথ গুরুত্ব প্রদানের কারণে। আম আদমি পার্টির লক্ষ্য ছিল দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়গুলোকে এমনভাবে সংস্কার করা, যেন এখানে পড়তে আসা শিশুদের মধ্যে গরিবের বিদ্যালয়ে পড়ার হীনম্মন্যতা না থাকে।
দিল্লি সরকারের ডায়ালগ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কমিশনের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য দিল্লি সরকার যেসব উদ্যোগ নেয়, তার মধ্যে রয়েছে বিদ্যমান জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ও শ্রেণিকক্ষগুলোর সংস্কার, নতুন নতুন শ্রেণিকক্ষ ও বিদ্যালয় তৈরি, আধুনিক পরীক্ষাগারসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের শিক্ষা উপকরণের জোগান দেওয়া। তা ছাড়া শৌচাগারসহ পুরো বিদ্যালয় যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, সে লক্ষ্যে বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো দেখভালের জন্য এস্টেট ম্যানেজার নিয়োগ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান-ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর বাইরেও প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে অন্তত একজন করে শিক্ষককে দেশের বাইরে কেমব্রিজ, হার্ভার্ডসহ ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুরের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান, দুর্বল শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নের জন্য ‘চুনাউতি’ (চ্যালেঞ্জ) ও ‘বুনিয়াদ’ (ফাউন্ডেশন) নামের বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ, সরকারি বিদ্যালয়গুলোর জবাবদিহি নিশ্চিতে স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে শক্তিশালী করা ও প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদি উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এ জন্য দিল্লি সরকার প্রতিবছর বাজেটের প্রায় ২৫ শতাংশ অর্থ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করে। এভাবে ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৩৭টি সরকারি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এসব উদ্যোগের মধ্য দিয়ে শুধু যে সরকারি বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে তা-ই নয়, শিক্ষার সার্বিক মানেরও উন্নয়ন ঘটেছে। ২০১৭ ও ২০২১ সালে ভারতের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জরিপ অনুসারে দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিত ও সামাজিক বিজ্ঞানে দেশের অন্যান্য রাজ্যের শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভালো স্কোর করেছে।
এ ছাড়া ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এক্সামিনেশনে (সিবিএসই) দ্বাদশ শ্রেণিতে দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাসের হার ২০১৫ সালের ৮৮ দশমিক ১ থেকে বেড়ে ২০২১ সালে ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়। শুধু তা-ই নয়, শতভাগ পাস করেছে—এ রকম সরকারি স্কুলের সংখ্যা ২০১৫ সালের ১০৩ থেকে বেড়ে ৮৭৯টিতে উন্নীত হয়। দিল্লির আম আদমি সরকারের যথাযথ উদ্যোগে দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়গুলো এমনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে যে ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী বেসরকারি বিদ্যালয় ছেড়ে সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।
আম আদমি পার্টি জানে, ভারতের তীব্র প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনী ব্যবস্থায় জনগণের মন জয় করেই তাদের ক্ষমতায় থাকতে হবে। এ কারণেই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও পানির মতো পাবলিক সার্ভিস বা সর্বজন খাতের উন্নয়নের গুরুত্ব তাদের কাছে অপরিসীম। বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে, কিন্তু স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও পানির মতো সর্বজন খাতে সুলভে মানসম্পন্ন সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করা হচ্ছে না। ফলে ক্রমাগত বাণিজ্যিকীকরণে এসব খাত থেকে সুলভে মানসম্পন্ন সেবা পাওয়ার অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ কোনো দেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান শর্তই হলো সর্বজন খাতকে শক্তিশালী ও গণমুখী করা।
সর্বজন খাতের মধ্যে শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর শিক্ষার মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, এই স্তর পরবর্তী সব স্তরের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এ প্রাথমিক শিক্ষার এই গুরুত্ব স্বীকার করলেও এবং প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে ‘স্থান ও বিদ্যালয়ভেদে সুযোগ-সুবিধার প্রকট বৈষম্য, অবকাঠামোগত সমস্যা, শিক্ষকস্বল্পতা, প্রশিক্ষণের দুর্বলতাসহ বিরাজমান সমস্যাসমূহ’ সমাধানের অঙ্গীকার করলেও এক দশকের বেশি সময় পরেও দেখা যাচ্ছে, সেই প্রকট বৈষম্য রয়েই গেছে। একদিকে দরিদ্র-নিম্নবিত্তরা নিরুপায় হয়ে সন্তানদের জরাজীর্ণ সরকারি বিদ্যালয়ের মানহীন শিক্ষা নিতে পাঠাচ্ছেন, অন্যদিকে সামর্থ্যবানেরা হাজার হাজার টাকা খরচ করে বেসরকারি বিদ্যালয় থেকে সন্তানদের জন্য শিক্ষা কিনছেন। প্রশ্ন হলো, জিডিপি বাড়লেই কি এই উৎকট বৈষম্যমূলক পরিস্থিতির অবসান ঘটবে?
কল্লোল মোস্তফা বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘বাংলাদেশে উন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতি’, ‘ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ, নজরদারি পুঁজিবাদ ও মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার ভবিষ্যৎ’। ই-মেইল: [email protected]য়ে ভবন নির্মাণ করে ফেলে রাখার ‘উন্নয়ন মডেল’