ডিজিটাল বিপ্লবের বাস্তবতা বনাম স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকথা

২০২১ সালের মধ্যে জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালে সাত দিনব্যাপী ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট’-এর মধ্য দিয়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনে ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করে বর্তমান সরকার। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্প হিসেবে ই-গভর্নমেন্ট সেবা, আইসিটি খাতে প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল ক্লাসরুম/ডিজিটাল ল্যাব, ডিজিটাল সেন্টার, ডিজিটাল ডাকঘর, বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন, স্মার্ট কার্ড পরিচয়পত্র, ই-পাসপোর্ট, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১, ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্র, ইউনিয়ন পর্যন্ত ফাইবার, ফোরজি, হাই-টেক পার্ক, ইনকিউবিশন সেন্টার ইত্যাদিকে সামনে এনেছে। এটা ঠিক যে, সরকার বেশ কিছু অবকাঠামোগত উদ্যোগ নিয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিমাত্রায় সময়ক্ষেপণ এবং দুর্নীতির ফলে এসব অবকাঠামোর সুফল আসেনি।

সরকার বহু ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক অবকাঠামো নিয়েছে, তবে ই-গভর্নমেন্ট নামে যে সেবার কথা বলা হচ্ছে, তা আসলে ফরম পূরণ, প্রিন্টিং ও স্ক্যানিং এই তিন সেবা। প্রথমত, এটা সত্যিকারের ই-গভর্নমেন্ট সেবা নয়, দ্বিতীয়ত, এটা সাধারণ মুঠোফোনে ইন্টারনেটেই দেওয়া যায়। ফোরজি, মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, রাইড শেয়ারিং, ই-কমার্স খাত বেসরকারি উদ্যোগ, এখানে সরকারের ভূমিকা লাইসেন্স দেওয়ার বাইরে কিছু নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতির কারণে লাইসেন্স প্রদানেও বিলম্ব হয়েছে। স্কুল-কলেজে ভর্তি, দূরশিক্ষণ কার্যক্রম, নিবন্ধন নামে আছে বাস্তবে অনলাইনে নেই। ইন্টারনেট গতির বেহাল অবস্থার কারণে ফ্রিল্যান্সারদের আয় বিঘ্নিত হচ্ছে। এখনো পেপাল সেবা আসেনি বলে ফ্রিল্যান্সারদের বিদেশি পেমেন্ট ব্যাংক ট্রান্সফারনির্ভর।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ৩০০টি স্কুল অব ফিউচার, বহু স্কুলে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব করেছে, তবে অধিকাংশ স্কুলে প্রশিক্ষক নেই। আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার এবং জেলাভিত্তিক হাই-টেক পার্কগুলো সেবাভিত্তিক কার্যক্রমে নেই, বরং বেসরকারি কোম্পানিগুলো আইটি পার্কে কার্যালয় ভাড়া নিচ্ছে। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগের প্রতিশ্রুত সুফল আসছে না।

আরও পড়ুন

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত ২০২১ সালের বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকে ১৫৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় ১১৯ তম, প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় ৭৭, উচ্চশিক্ষায় ১২২, গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে ১৩৬, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ১১৭, অর্থনীতিতে ১০১ এবং সাধারণ সক্ষমতার পরিবেশে ১৩৪ তম। ফ্রান্সভিত্তিক ‘বিজনেস স্কুল ইনসিয়েড’ ও ওয়াশিংটনভিত্তিক ‘পোর্টুল্যান্স ইনস্টিটিউটের’ প্রকাশিত ২০২১ সালের ‘গ্লোবাল ট্যালেন্ট কমপিটিটিভনেস ইনডেক্সে’ ১৩৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৩।

জাতিসংঘের সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশনের’ প্রকাশিত ২০২১ সালের বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে ১৩২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৬ নম্বরে। উদ্ভাবন সূচকেও দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে আছে বাংলাদেশ। মানব উন্নয়ন সূচক ২০২০ মতে, বাংলাদেশের ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর জন্মনিবন্ধন হার মাত্র ২০, এখনো জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়।

মুঠোফোন ইন্টারনেটের ওকলা সূচকে বাংলাদেশ বরাবরই তলানিতে। ২০২১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৭ তম, পেছনে ছিল কেবল ফিলিস্তিন, ভেনেজুয়েলা ও আফগানিস্তান। সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান কেব্লডটকোডটইউকে-এর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি সূচকে ২২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৯৫ তম। বাংলাদেশের মুঠোফোনসেবার মান যাচ্ছেতাই, যখন-তখন কল ড্রপ হয়। শহরের বাইরে, রেল ও সড়কে ইন্টারনেট-সেবা মানসম্পন্ন নয়। তবে সরকারের আড়িপাতার (লফুল ইন্টারসেপ্ট) সক্ষমতা ব্যাপক।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোপন নথি, আন্তরাষ্ট্রীয় চুক্তির শ্রেণিকৃত পিডিএফ কপি সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন কার্যালয় ও ব্যক্তির ই-মেইলে ঘোরে। নাজুক মামলার সাক্ষী, আসামি বাদী-বিবাদী কল রেকর্ড, কল ট্রেইস এসএমএস লগ প্রায়ই সাংবাদিকদের হাতে চলে আসে। নাগরিকের তথ্যসুরক্ষার জন্য আইনের উদ্যোগ আছে, কিন্তু গোপনীয়তা রক্ষার চর্চা নেই। পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্তৃক নাগরিকের মুঠোফোনের কল রেকর্ড, এসএমএস এবং এপ মেসেজ রেকর্ড হাতানোর সংবাদ আসছে সংবাদমাধ্যমে।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সার্ফশার্কের করা চলতি বছরের ডিজিটাল জীবনমান সূচকে বিশ্বের ১১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬ তম, প্রতিবেশী ভারতের অবস্থান ৫৯ তম। এশিয়ার ৩৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৩ তম।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে নেই বেকারত্ব এবং উদ্যোক্তা তথ্যশালা। নেই অতিদারিদ্র্য ও দারিদ্র্যের তথ্যশালা, প্রায়ই শিক্ষা উপবৃত্তি, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা ভাতায় দুর্নীতির তথ্য নিয়মিত সংবাদমাধ্যমে আসে। দেশের জনসংখ্যা নিয়ে আছে বিপুল বিতর্ক। মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি, কৃষিজমির পরিমাণ, কৃষকসংখ্যা, গবাদিপশুর সংখ্যাসহ খানা জরিপের ফলাফল ইত্যাদি দেশের প্রায় প্রতিটি অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান নিয়ে ব্যাপক মাত্রার গোঁজামিলের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি দেশের পরিসংখ্যান মান, আর্থিক খাতের তথ্যের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন বেহাল জাতীয় তথ্যশালা দিয়ে মানসম্পন্ন কোনো ডিজিটাল কিংবা স্মার্ট সেবা আদৌ দেওয়া সম্ভব কি?

আন্তর্জাতিক তথ্য এবং সূচক বিবেচনায় সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে, টানা তিন মেয়াদে ১৩ বছর পেরিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের প্রতিশ্রুতি ২০২১ সালে অর্জিত হয়নি। বৈশ্বিক জ্ঞান, মেধা ও ডিজিটাল গভর্ন্যান্স সেবা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে এবং ডিজিটাল ডেটাবেজকেন্দ্রিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্র প্রস্তুতিহীন।

মানুষের জীবন সহজ করার কথা বলে ২০১৩ সাল থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ৬০০-র বেশি সেবা অ্যাপ বানিয়েছে সরকার। আপডেট না হওয়ায় এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে গুগল প্লে থেকে অধিকাংশই মুছে গেছে (১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, টিবিএস)। ৬০০ সরকারি অ্যাপের ৬০০ ব্যবহারকারীও হয়নি। করোনা টিকাদানের জন্য সুরক্ষা অ্যাপটি বহুল ব্যবহৃত, তবে সেটি ব্যক্তি উদ্যোগে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বিসিএস কর্মকর্তারা বিনা মূল্যে নির্মাণ করেছেন। ৯৯৯ সেবাটি বেসরকারি আন্তর্জাতিক মোবাইল যোগাযোগ সংস্থার (ত্রিজিপিপি) ‘জরুরি মান সেবা’ বলে সেখানেও সরকারের তেমন ভূমিকা নেই!

অভিযোগ আছে, বিশ্বব্যাংকের কালোতালিকাভুক্ত অযোগ্য ঠিকাদারকে দেওয়া হয়েছে বিআরটিএ-এর ড্রাইভিং লাইসেন্সের কাজ। লাইসেন্স প্রিন্ট আটকে ছিল দীর্ঘদিন। প্রায় ১২ লাখ আবেদনকারী অনিশ্চয়তায়, কেউ কেউ ২ বছর অপেক্ষা করেও পাচ্ছেন না ড্রাইভিং লাইসেন্স (১২ অক্টোবর ২০২১, প্রথম আলো)। গাড়ি চুরি বন্ধে বিআরটিএ রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন (আরএফআইডি) প্রযুক্তি ক্রয়ের পরে দেখা গেছে চোরাই গাড়ি শনাক্তকরণে ব্যর্থ ডিজিটাল নম্বর প্লেট। এসেছে, পুরো রাজধানীকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার খরচে উদ্যোগ। গাড়ি, ট্রাক, মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট ডিজিটাল, কিন্তু সারা দিন গাড়ির কাগজ পকেটে নিয়ে ঘোরা লাগে।

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায় বাড়াতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি নামের মেশিন বসানোর উদ্যোগে নষ্ট হয়েছে কয়েক বছর। আয়করব্যবস্থা ডিজিটাল করা এবং রিটার্ন দাখিল অনলাইনে আনার প্রকল্পটি দুই বছরের জায়গায় শেষ হয়েছে সাত বছরে, কিন্তু কাজ শেষের দুই বছরেও রাজস্ব বোর্ডকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়নি ভিয়েতনামের প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৪০ লাখ করদাতার ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য বেহাতের গোপনীয়তা ঝুঁকিসহ সিস্টেমটিতে কমপক্ষে ১০টি ঝুঁকির বিষয় উঠে এসেছে সরকারি তদন্তে। অনলাইন করব্যবস্থা বলা হলেও ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কর দেওয়ার সুযোগ নেই এতে, উৎসে কর কিংবা অগ্রিম আয়করও দেওয়া যায় না।

ব্যক্তিগত কর ছাড়া প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি কর দেওয়া সম্ভব নয় এতে। এসব সীমাবদ্ধতা নিয়েই কাজ শেষ হয়েছে বিদেশি ঋণনির্ভর প্রকল্প।

বিগত কয়েক বছরে পাসপোর্ট অফিসের কেন্দ্রীয় সার্ভারের সমস্যায় দেশে ও বিদেশে পাসপোর্ট এবং ই-পাসপোর্টের সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে নিয়মিত। বিমানবন্দরে ই-পাসপোর্ট গেট চালু হয়েছে, কিন্তু ই-পাসপোর্টধারীরা সেটা ব্যবহার করতে পারছেন না। কয়েক লাখ বিদেশগামীর পাসপোর্ট আবেদন অপেক্ষমাণ। ভূমি নিবন্ধনের ভবন উন্নত হয়েছে, কিন্তু রেজিস্ট্রেশনের সব কাজই ম্যানুয়াল। পানি, বিদ্যুৎ, পাসপোর্ট প্রায় অফিসেই ঘুষ তদবিরের দৌরাত্ম্য। একের পর এক অযোগ্য ঠিকাদারের খরচে প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের বাজেট!

বিদ্যমান সিস্টেমগুলোর লাইফ-সাইকেল এমন সময়ে শেষ হওয়া শুরু হচ্ছে, যখন দেশ চরম ডলার-সংকটে পড়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ পরিশোধ, রিজার্ভ স্বল্পতা ও আমদানি-রপ্তানির ব্যালান্সশিটে বড় ধরনের সমস্যা আছে। অর্থাৎ ডিজিটাল নামে বেশুমার অর্থ খরচ হলেও সুফলের তালিকা নগণ্য।

রেলের টিকিটের ঠিকাদার পরিবর্তনের কেলেঙ্কারির পর টিকিট কাটা সহজ হলেও টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ বেড়েছে, অধিকাংশ টিকিট কালোবাজারে। ১৯৯৪ সালে কম্পিউটারাইজড আসন সংরক্ষণ ও টিকিটিং-ব্যবস্থা উদ্বোধন করা হলেও ৪৫৮টি স্টেশন ও জংশনের মধ্যে সুবিধা পৌঁছেছে মাত্র ৬২ টিতে। টিকিটে যাত্রীর নাম-পরিচয় থাকে না বলে টিকিট নৈরাজ্য নিত্যদিনের চিত্র।

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ডিজিটাল করার কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে, এখানে ভুলের লাখো অভিযোগ আছে। এনআইডিতে ভুলের বিষয়টি স্বীকার করে খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলছেন, ‘ভুলের পরিমাণ এত বেশি যে আমার মনে হয় কোটি কোটি ভুল। এটা নিয়ে বিপদে পড়ছি।’ (আমাদের সময়, ১৯ জুলাই ২০২২)।
এদিকে, ‘ধারণা করা হচ্ছে, সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৫ কোটি জন্মনিবন্ধন একেবারেই গায়েব হয়ে গেছে। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বিষয়টি জানিয়েছেন’ (জনকণ্ঠ, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২)।

বিদ্যুৎ খাতের স্ক্যাডা প্রায় ১২ বছরের পুরোনো, স্বয়ংক্রিয়ভাবে লোডশেডিং, লোডট্রিপিং ও জেনারেশন ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থাপনা শতভাগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যায় না,২০২২ সালে দুইবার জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড বিপর্যয় হয়েছে। ঢাকার রাস্তার ট্র্যাফিক লাইটের সব কটিই অকেজো, আগে সেগুলো জ্বলত-নিভত, যদিও হাতে ট্র্যাফিক কন্ট্রোল হতো। এখন গুলশান-২ ছাড়া কোথাও ঠিকঠাক লাইটই জ্বলে না।

সরকারি সেবার ‘ডিজিটাল’ স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে ওয়েব থেকে ফর্ম ডাউনলোড করে, হাতে পূরণ করে নির্ধারিত অফিসে জমা দেওয়া। ডকুমেন্ট প্রিন্ট করে স্ক্যান করার নাম ডিজিটাল। বন্দরে, বিআরটিএ-তে কিছু সফটওয়্যার অটোমেশন হয়েছে, কিন্তু ঘুষ-তদবিরের জন্য প্রতিটা জায়গায় ম্যানুয়াল ইনপুট দেওয়া হয়! বিদ্যমান সিস্টেমগুলোর লাইফ-সাইকেল এমন সময়ে শেষ হওয়া শুরু হচ্ছে, যখন দেশ চরম ডলার-সংকটে পড়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ পরিশোধ, রিজার্ভ স্বল্পতা ও আমদানি-রপ্তানির ব্যালান্সশিটে বড় ধরনের সমস্যা আছে। অর্থাৎ ডিজিটাল নামে বেশুমার অর্থ খরচ হলেও সুফলের তালিকা নগণ্য।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার স্লোগান তুলেছে। ২০০৯ থেকে টানা ১৪ বছর ‘ডিজিটাল’স্লোগানের সরকার ক্ষমতায় থেকেও বাংলাদেশ স্মার্ট হয়নি কেন, এই আত্মজিজ্ঞাসা দরকার। স্মার্ট প্রকল্প হচ্ছে, স্মার্টলি টাকা খরচ ও অর্থ পাচার হচ্ছে, কিন্তু সরকারি সেবা স্মার্ট হচ্ছে না। যেখানে আজকের উন্নত বিশ্ব প্রায় শতভাগ স্মার্ট, সেখানে বাংলাদেশকে স্মার্ট হতে ২০৪১ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কেন—এমন প্রশ্নও যৌক্তিক।

  • ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক। গ্রন্থকার: চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ; বাংলাদেশ: অর্থনীতির ৫০ বছর; অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবিত কথামালা; বাংলাদেশের পানি, পরিবেশ ও বর্জ্য
    faiz. taiyeb@gmail. com