ট্রাম্প-বাইডেন তো বসেছিলেন, আপনারাও আলোচনায় বসুন

দেশের জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ কবে নির্বাচন হবে, কবে নাগাদ মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া যাবে ইত্যাদি নির্বাচনবিষয়ক কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়েছে।

এ মুহূর্তে দেশের সব রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা উচ্ছ্বাস থাকার কথা ছিল নির্বাচন নিয়ে। কিন্তু সে রকম কিছু কি আদৌ দেখা যাচ্ছে?

উল্টো যেদিন তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, সেদিন অবরোধ চলছিল, তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে পরের দিন কয়েকটি রাজনৈতিক দল হরতাল ডেকেছিল।

প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি এরই মধ্যে তফসিল প্রত্যাখ্যান করে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে।

আরও পড়ুন

এই যে একটা সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে, দেশের সাধারণ মানুষ কি আদৌ এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাতে চায়? তাহলে কেন জনগণকে আতঙ্কের মধ্য দিয়ে যেতে হবে? কেন দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচন বিষয়ে রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে না?

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক আগে থেকেই দেশের রাজনৈতিক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র একটা বিশাল অংশ দখল করে আছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কার পক্ষে, কার বিপক্ষে—এ নিয়েও কম আলোচনা হয়নি।

আরও পড়ুন

এসব আলাপ-আলোচনার মধ্যেই সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আগে ট্রাম্প-বাইডেন আলোচনা করুক। এরপর নাহয় আমরা আলোচনা করব।’

গণতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থায় আলোচনা করতে কেন এত চিন্তা করতে হবে? কেন সামান্য আলোচনা করতেও নানা শর্ত জুড়ে দিতে হয় দলগুলোকে? বিরোধী দলগুলো শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। সরকারও শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। আলোচনা করতে কেন এত অনীহা সবার?

যুক্তরাষ্ট্রে কি ট্রাম্প-বাইডেন আলোচনা করেননি? ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ট্রাম্প-বাইডেন তো অনেকবার আলোচনা করেছেন। টেলিভিশনে সরাসরি বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন। সেই বিতর্কে তাঁরা নিজেদের পলিসি নিয়ে আলোচনা করেছেন। সমালোচনা করেছেন। হয়তো তাঁদের মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনার তত্ত্ব নিয়ে ভিন্নতা আছে।

গণতন্ত্র স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের কথা বলে, সংঘাতের কথা নয়। গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্যই যদি নির্বাচন করতে হয়, তাহলে দেশের প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা না করে নির্বাচন হয়ে গেলে সেটা হয়তো গণতন্ত্র রক্ষার নির্বাচন হবে; কিন্তু গণতন্ত্র নিজেই হয়তো তার সৌন্দর্য হারাবে

তাই বলে তো তাঁরা মুখ দেখাদেখি বন্ধ করে দেননি। তাই বলে তো তাঁরা আলোচনা, তর্কবিতর্ক বন্ধ করে বসে থাকেননি। উল্টো রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে অনেকবার তর্কে জড়িয়েছেন সরাসরি।

২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যদি ট্রাম্প নিজ দল থেকে মনোনয়ন পান, আর বাইডেনও যদি নিজ দল থেকে নির্বাচিত হন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আমরা এই দুজনের বেশ কয়েক রাউন্ড তর্কবিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা দেখতে যাচ্ছি।

এটাই তো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আপনার যাকে পছন্দ হবে না, যে হয়তো আপনার খারাপ চায় কিংবা শত্রু, তার সঙ্গেও আপনাকে কথা বলতে হবে। তার সঙ্গে আলোচনা-সমালোচনা, তর্কবিতর্কে লিপ্ত হতে হবে।

কারণ, গণতন্ত্র স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের কথা বলে, সংঘাতের কথা নয়। গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্যই যদি নির্বাচন করতে হয়, তাহলে দেশের প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা না করে নির্বাচন হয়ে গেলে সেটা হয়তো গণতন্ত্র রক্ষার নির্বাচন হবে; কিন্তু গণতন্ত্র নিজেই হয়তো তার সৌন্দর্য হারাবে।

তাই নির্বাচনের আগে একবার অন্তত আলোচনা করুন। চেষ্টা করুন আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমাধানের পথ পাওয়া যায় কি না। সংঘাত কখনোই কারও কাম্য হতে পারে না।

  • ড. আমিনুল ইসলাম জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
    ই-মেইল: [email protected]