জনাব, পরীক্ষা না নিয়ে ফার্স্ট ক্লাস কিংবা পাস নম্বর দেবেন কি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির আয়োজনে এক মানববন্ধনে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক দাবি তুলেছেন, নির্বাচন ছাড়াই বর্তমান সংসদ ও সরকারের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হোক। এর যুক্তি হিসেবে তিনি করোনা দুর্যোগের সময়টিকে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ওই সময়ে সরকার ও সংসদ ঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি। তাই আগামী পাঁচ বছর নির্বাচন ছাড়াই বর্তমান সরকারের মেয়াদ বাড়ানো হোক। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন তিনি।

বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নতুন কিছু নয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে বর্তমান সময়ে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, শিক্ষকেরা জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা বাদ দিয়ে রাজনীতি এবং পদপদবি পাওয়ার কাজেই নিজেদের মনোনিবেশ করেছেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বোধ করি মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছেন।

আপনি যদি ভালো করে খেয়াল করে দেখেন, এমনকি সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিরাও  প্রকাশ্যে এমন কথা বলে বেড়াচ্ছেন না। অথচ তিনি সরাসরি বলে বসেছেন, নির্বাচন ছাড়া সরকারের মেয়াদ বাড়ানো হোক।

আরও পড়ুন

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে তিনি করোনার দুই বছরের কথা বলেছেন, সরকার নাকি এই সময়ে কোনো কাজ করতে পারেনি। তাহলে সরকার যে সব সময় বলছে, করোনার সময় মানুষকে বিনা মূল্যে টিকা দেওয়া, যে সময়টায় সবকিছু বন্ধ ছিল, তখন পোশাকশ্রমিকদের ভাতা দেওয়া কিংবা দরিদ্র মানুষদের নানাভাবে সাহায্য দেওয়া সরকারের সাফল্য। এই শিক্ষক কি সরকারের এসব কাজকেও অস্বীকার করছেন? তাহলে তিনি কী করে বললেন, সরকার এবং সংসদ ওই সময় কিছু করেনি?

তিনি তো একজন শিক্ষক। এখন কেউ যদি প্রশ্ন করেন, আপনি ভালো রেজাল্ট কী করে করেছেন, পরীক্ষা না দিয়ে? শিক্ষক কীভাবে হয়েছেন, ইন্টারভিউ না দিয়ে? অথবা এই শিক্ষকের বর্তমান কোনো ছাত্রছাত্রী যদি এখন দাবি করেন, তাঁরা পরীক্ষা না দিয়ে পাস করতে চান। ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হতে চান। তাহলে এর উত্তরে তিনি কী বলবেন?

যতটুকু জেনেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির একটা পদেও আছেন তিনি। পদে থেকেই তিনি এ কথা বলেছেন। এর চেয়েও অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, সমিতির অন্য শিক্ষকেরা তাঁর এই কথার কোনো প্রতিবাদ পর্যন্ত করেননি।

আসলে এই দেশে আমরা যাঁদের মেধাবী হিসেবে জানি, যাঁদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে মনে করি, তাঁরা আসলে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি নন। তাঁরা স্রেফ রাজনৈতিক দলগুলোর অন্ধ সমর্থক এবং সেই হিসেবে কিছু সুযোগ-সুবিধা নেওয়াই এখন তাদের উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাস্তবতা পুরো জাতিকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

  • ড. আমিনুল ইসলাম জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি। ই-মেইল: [email protected]