বাউল–বিরোধিতার আড়ালে চলছে গ্রামের অর্থনীতি দখলের লড়াই

পালাগানের আসরে আবুল সরকারছবি: পালার ভিডিও থেকে সংগৃহীত

অগ্রহায়ণ মাস চলছে। গ্রামীণ সংস্কৃতিতে মাসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসেই দেশের প্রান্তিক কৃষকেরা মাঠের ধান গোলায় তোলেন। হাটে-বাজারে সেই ধান বিক্রি করে একসঙ্গে বেশ কিছু টাকা হাতে আসে কৃষকদের। চাকরিজীবীদের জীবনে ঈদের মাসে যেমন একসঙ্গে বেশ কিছু টাকা হাতে আসে, কৃষকদের জীবনে অগ্রহায়ণ মাস তেমনই। এই সময়ই তাঁরা বাড়িতে স্বজনদের দাওয়াত দেন, পিঠাপুলি বানান, নবান্ন উৎসব করেন এবং নানান সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজন করেন।

অগ্রহায়ণের শুরুতেই সাধারণত গ্রামবাংলায় শীত নেমে আসে। দিন ছোট এবং রাত দীর্ঘ হয়। দীর্ঘ রাতগুলোকে উদ্‌যাপন করতে আবহমানকাল ধরেই নানান সাংস্কৃতিক উৎসব করে আসছেন গ্রামবাংলার লোকেরা। এসব উৎসবে বাউলগান, পালাগান, গাজির গান, যাত্রাপালা, জলসা কিংবা মাজারগুলোতে ওরস শরিফের প্রভাব একসময় ছিল সবচেয়ে বেশি। গ্রামের বাজার অর্থনীতিতে এসব সাংস্কৃতিক ধারার মানুষদের মধ্যে বিতর্ক ও বিরোধিতা যেমন ছিল, একই সঙ্গে আবার ছিল সহাবস্থানও। ১৯৯০–এর দশক থেকে ওয়াজ মাহফিলও এই তালিকায় জায়গা করে নিতে থাকে এবং ধীরে ধীরে প্রতাপশালী হয়ে ওঠে।

মতাদর্শিক কারণেই ওয়াজ মাহফিল ওপরের সব কটি সাংস্কৃতিক ধারার বিরোধী। আর সেই বিরোধিতা প্রকাশে ওয়াজের বক্তারা কখনো রাখঢাক করেননি। শীতের মৌসুমে ওয়াজগুলোতে বাউলগান, ওরস, জলসা কিংবা যাত্রাপালার বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার বিগত দশকগুলোর নিয়মিত ঘটনা। তবু এই বিরোধ বা বিষোদ্‌গার ছিল সামাজিক বোঝাপড়ার স্তরেই। মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কেউ মামলা–মোকদ্দমা বা সংগঠিত হামলার প্রয়োজন বোধ করেনি। কিন্তু এখন সেটা করছে। কেন?

আরও পড়ুন

২.

সর্বশেষ ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী দেশে মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। সেটা এখন হয়তো আরও বেড়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন বলছে, শুধু রাজধানী ঢাকাতেই বাস করে ৩ কোটি ৬৬ লাখ মানুষ। অন্যান্য বিভাগীয় শহরের (মহানগর) জনসংখ্যাও সব মিলিয়ে ২ কোটির কাছাকাছি। এ ছাড়া দেড় কোটির মতো প্রবাসী ছড়িয়ে রয়েছেন বিশ্বের নানান প্রান্তে। মানে দেশের মোট জনসংখ্যার অন্তত ৪১ শতাংশ লোক নিশ্চিতভাবেই গ্রামে থাকেন না। থাকেন মহানগরীগুলোতে ও প্রবাসে। বাকি যাঁরা গ্রামে থাকেন, তাঁদের ভেতর নারী ও শিশুর হার বেশি। সামাজিক বাস্তবতায় গ্রামের রাত্রিকালীন আয়োজনে তাঁদের অংশগ্রহণের সুযোগ কম।

ফলে নবান্ন বা শীতের মৌসুমে এখন দেশের ৮৭ হাজার ১৯১টি গ্রামে পালাগান, ওরস শরিফ কিংবা ওয়াজ মাহফিল যা–ই হোক, তা হয় খুব অল্পসংখ্যক মানুষকে কেন্দ্র করে। ফলে এসব অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির যে চাকাটি চলমান ছিল সেটি খুবই সংকুচিত হয়ে এসেছে। এই ক্ষুদ্র অর্থনীতি আর অল্প লেনদেনের ভেতরে তীব্র হয়ে উঠেছে বিবিধ সাংস্কৃতিক ধারার প্রতিযোগিতা!

দেশের অর্থনীতির শক্তিশালী ভিতগুলো এখন আর গ্রামকেন্দ্রিক নেই। অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তির আসনে বসে আছে তৈরি পোশাকশিল্প ও প্রবাসী আয়। ফলে গ্রামের উৎসবগুলো বহু আগেই লোকবল ও অর্থনৈতিক শূন্যতায় জৌলুশ হারিয়েছে। সীমিত পরিসরে তবু নানা ধারার সাংস্কৃতিক আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। মাজারগুলোতে ওরস শরিফ ও ওয়াজ মাহফিল ছাড়া প্রায় সব কটি সাংস্কৃতিক ধারাই চলছিল ধুঁকে ধুঁকে।

অবশ্য এই পরিবর্তন শুধু জনসংখ্যা বা বাজার অর্থনীতির কারণই হয়নি। টেলিভিশন ও তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বায়িত নতুন বিনোদনের দুনিয়াও গ্রামীণ বিনোদনের পুরোনো সাংস্কৃতিক ধারাকে অনেকটা হটিয়ে দিয়েছে। টেলিভিশন আর ইন্টারনেটের পর্দা মাঠঘাটে সংস্কৃতির অর্থনৈতিক সংগ্রামকে আরও তীব্রতর করে তুলেছে। প্রতিযোগিতার এই তীব্রতা বিবিধ ধারা সংস্কৃতির মধ্যেকার অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বকে আর বিষোদ্‌গারের সীমানায় আটকে রাখতে পারছে না। সম্প্রতি সেই সীমানা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। দ্বন্দ্বগুলো এখন রূপান্তরিত হয়েছে সহিংসতায়। এই সহিংসতা দেশকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সাংস্কৃতিক বিভাজনের পথে।

স্কুলশিক্ষার্থীরা পালা উপভোগ করছে
সংগৃহীত

৩.

শেখ হাসিনা তাঁর টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে দেশকে বহুবার বহুভাবে ঠেলে দিয়েছিলেন বিভাজনের মুখে। কখনো সাম্প্রদায়িকতা বনাম অসাম্প্রদায়িক বিভাজন, কখনো জঙ্গি বনাম সেক্যুলার বিভাজন, কখনো নির্বাচন বনাম উন্নয়ন বিভাজন। ওই সব বিভাজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচন ও ক্ষমতার প্রশ্ন থেকে বিরোধী শক্তিদের দূরে রাখা, নিজের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করা। শেখ হাসিনার সরকার অনেকাংশে সফলও হয়েছিল এই প্রকল্পে। তাঁর শাসনামলে গণতন্ত্রপন্থী দলগুলোর চেয়ে বিভাজনের কান্ডারি সাম্প্রদায়িক সংগঠন ও তাদের আন্দোলনগুলো ছিল বেশি চোখে পড়ার মতো।

২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটল। যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হাসিনার পতন ঘটালো তাতে ফাটল ধরল দ্রুত। আন্দোলনের শক্তিগুলো নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে একে অপরের প্রতি বিদ্বিষ্ট ও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠল। এই বিদ্বিষ্ট ও প্রতিহিংসাপরায়ণ নতুন বাস্তবতায় বাউল-ফকির ও মাজারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিরও সহিংস রূপায়ণ ঘটল।

নবান্ন মৌসুমের পর দেশের গ্রামেগঞ্জে যেসব সাংস্কৃতিক মজমার আয়োজন হয়, লোকধারার শিল্পীদের কোণঠাসা করা গেলে সেখানে প্রতিষ্ঠা করা যাবে ডানপন্থী রাজনৈতিক বয়ানের একক আধিপত্য। এতে কৃষকের উদ্বৃত্ত অর্থনীতির পুরোটাই নিয়ে নেওয়া যাবে নিজেদের জিম্মায়, বাড়ানো যাবে স্থানীয় প্রভাব। অর্থনীতি যার জিম্মায় থাকবে, স্থানীয় রাজনীতিও চলে যাবে তাঁদেরই জিম্মায়।
আরও পড়ুন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ৫ মাসেই ৪৪টি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। জানুয়ারিতে এ তথ্য জানিয়েছে সরকারেরই প্রেস উইং। জানুয়ারির পরের ১০ মাসেও এ হামলা কমেনি। বর্তমান সরকারের আমলে মাজারে হামলার ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। মাজার ছাড়াও হামলা হয়েছে বাউলের আখড়ায়, মামলার শিকার হয়েছেন বাউল-ফকিররা। এমনকি কবর থেকে তুলে একজনের লাশও পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সবই ঘটেছে প্রশাসনের নীরবতায় ও গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিরোধহীনতায়।

দেশে সক্রিয় বড় গণতন্ত্রপন্থী দল এখন বিএনপি। বিএনপির বিপরীতে যে রাজনৈতিক দল বা শক্তিগুলো আছে, সেগুলো নির্বাচনমুখী বটে, তবে বৃহত্তর সংজ্ঞায় তারা কতটা গণতন্ত্রপন্থী তা নিয়ে বিতর্ক তোলার যথেষ্ট সুযোগ আছে। জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিবাদের বিপরীতে এখন ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এই পটভূমিতে গণ-অভ্যুত্থানের তরুণ শক্তিদের নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল শুরুতে আশা জাগালেও তা ক্রমবর্ধমান হারে তলিয়ে যাচ্ছে হতাশায়। ফলে গণ-অভ্যুত্থানের পরের রাজনৈতিক বাস্তবতা ক্রমশ ডানপন্থার দিকে হেলে পড়েছে।

আঠারো ও উনিশ শতকে বাংলায় আউল-বাউল ও চারণকবির আবির্ভাব দেখা যায়। তাঁদের গানে ছিল মানবতার স্ফুরণ। আলোকচিত্রটি সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জের পদ্মহেম ধাম–এর লালন শাহ্ বটতলায় আয়োজিত বাউল গান অনুষ্ঠানের।
ছবি: কবির হোসেন
আরও পড়ুন

৪.

এই বাস্তবতায় যখন আমরা দেখি, বাউল-ফকির বা মাজারসহ যত কিছু ডানপন্থীরা অপছন্দ করে, ঘুরেফিরে সেগুলোই হামলা ও মামলার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে, তখন মনে হতে পারে এটা কেবল ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক ভিন্নমতের ওপর হামলা। কিন্তু এর যে একটা অর্থনৈতিক দিকও আছে, লাগাতার হামলার পরেও সেই বিষয়টি প্রায় আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

যখন বাউল, মাজারের ভক্ত কিংবা ফকির-সন্ন্যাসীদের ওপর হামলা করা হয়, তা কেবল হামলাতেই শেষ হয় না। এটি একটি বার্তাও দিয়ে যায়। সাংস্কৃতিক জমিন থেকে উচ্ছেদের বার্তা। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ দেখা গেছে গত এক সপ্তাহে। পালাগানের শিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানানোয় মানিকগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁয়ে ভক্ত ও বাউলদের পেটানো হলো। এরপর শুক্রবার রাজধানীর পল্টনে ‘বাউল সন্দেহে’ একজনকে বেধড়ক পেটানো হলো। যদিও পরে দাবি করা হয় সেটি ছিল মোবাইল চুরির ঘটনা। একই দিনে শাহবাগেও একটি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হামলা চালানো হলো।

আরও পড়ুন

সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘটেছে আরেকটি বেদনাদায়ক ঘটনা। সেখানে একটি পরিবারের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সদস্যরা পৌর মুক্তমঞ্চে প্রায় ৫০ বছর ধরে গান গেয়ে সংসার চালান। বাউলদের ওপর হামলার ঘটনার ভেতরই বুধবার কিছু লোক এসে তাঁদের গান গাইতে মানা করে যায়। এর পর থেকে তাঁদের গান গাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। ১৩ সদস্যের ওই পরিবারটির ৯ জনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। অন্ন ব্যবস্থা নিয়ে অসহায়ের মুখে পড়েছেন তাঁরা। স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে আবারও গান গাওয়া শুরু করলেও পুরো ব্যাপারটি নিয়ে তাঁরা এখন ভীত। ভয় নিয়ে কি গান হয়?

হামলা ছাড়াও ডানপন্থী মহল থেকে জনসমাজে ক্রমেই ছড়ানো হয়েছে বাউলবিরোধী বিষবাষ্প, প্রায় প্রকাশ্যেই তৈরি করা হয়েছে বাউল-ফকিরদের নিধনের প্রেক্ষাপট। আর ডানপন্থী রাজনীতিকেরা এই নিধনের পক্ষে সম্মতি উৎপাদন করছে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক নিরাপত্তার আশায়।

বাউল-ফরিক, সাধু-সন্ন্যাসী বা মাজারপন্থী মানুষেরা যে ডানপন্থী শক্তির বিপরীতে অবস্থান করে, এটা কোনো গোপন খবর নয়। তারা ডানপন্থী শক্তিকে ভোট দেবে না। ফলে নানা অজুহাতে ও অভিযোগে তাঁদের সামাজিকভাবে একঘরে করে দেওয়ার আয়োজন চলছে, যেন নির্বাচনের মাঠে তাঁরা প্রভাব রাখতে না পারেন এবং জনমত উৎপাদন করতে না পারেন।

এ ছাড়া নবান্ন মৌসুমের পর দেশের গ্রামেগঞ্জে যেসব সাংস্কৃতিক মজমার আয়োজন হয়, লোকধারার শিল্পীদের কোণঠাসা করা গেলে সেখানে প্রতিষ্ঠা করা যাবে ডানপন্থী রাজনৈতিক বয়ানের একক আধিপত্য। এতে কৃষকের উদ্বৃত্ত অর্থনীতির পুরোটাই নিয়ে নেওয়া যাবে নিজেদের জিম্মায়, বাড়ানো যাবে স্থানীয় প্রভাব। অর্থনীতি যার জিম্মায় থাকবে, স্থানীয় রাজনীতিও চলে যাবে তাঁদেরই জিম্মায়।

আবুল সরকারের মুক্তির দাবির কর্মসূচিতে তাঁর অনুসারীদের ওপর হামলা।
ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

৫.

এই পুরো প্রেক্ষাপটে একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট। বাংলাদেশের লোকধারার সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ কেবল ধর্মীয় বা মতাদর্শিক টানাপোড়েনের ফল নয়। এটি একই সঙ্গে ক্ষমতার রাজনীতি ও অর্থনৈতিক আধিপত্যের গভীর লড়াই। গ্রামীণ সমাজে সাংস্কৃতিক পরিসর সংকুচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিসরটুকু দখলের চেষ্টাও বহুগুণে বাড়ছে। বাউল-ফকির-মাজারপন্থীদের ওপর হামলা করে যেটুকু জায়গা দখল করা হচ্ছে, তা শেষ পর্যন্ত রূপান্তরিত হচ্ছে নির্বাচনী মাঠে প্রভাব বাড়ানোর কৌশলে, কিংবা গ্রামীণ সাংস্কৃতিক অর্থনীতিতে আদর্শগত একচ্ছত্রতা প্রতিষ্ঠার রাজনীতিতে। ফলে সাংস্কৃতিক সহাবস্থান, বাংলার বহু শতাব্দীর বিকশিত ঐতিহ্য ধীরে ধীরে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে ভয়, সন্দেহ ও সহিংসতার এক নতুন বাস্তবতায়।

এই সহিংস আক্রমণগুলো বাংলাদেশের বহু সংস্কৃতির স্রোতকে শুধু ক্ষতবিক্ষতই করছে না, বরং গ্রামীণ সমাজে অবিশ্বাস ও বিভাজনের এক দীর্ঘস্থায়ী কাঠামো তৈরি করছে। বাউল, পালাগান বা মাজারকেন্দ্রিক আধ্যাত্মিকতার চর্চা এই সমাজের বৈচিত্র্য, মানবিকতা, সহিষ্ণুতা ও সমন্বয়ের যে ধারাকে বহন করত, তা এখন অস্তিত্বের সংকটে। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো, এখন পর্যন্ত রাষ্ট্র বা মূলধারার রাজনৈতিক শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে এই আক্রমণের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। এর ফলে বার্তাটি আরও জোরালো হচ্ছে যে সহিংসতা ও দমন যেন স্বাভাবিক ও যৌক্তিক।

একটি গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ফ্যাসিবাদের মঞ্চে আবারও দাঁড়াতে হবে এই দেশকে, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছুই হতে পারে না।

  • সৈকত আমীন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক

    *মতামত লেখকের নিজস্ব