উম্মতের প্রতি নবীজি (সা.)-এর ভালোবাসা

মহান আল্লাহ তাআলা ভালোবেসে কুল মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। ভালোবাসায় মানবতার মুক্তি নিহিত রেখেছেন। বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক হিসেবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন।

তিনি পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘(হে প্রিয় হাবিব) আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাও তবে আমাকে অনুসরণ করো, তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন; আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা-৩ আলে ইমান, আয়াত: ৩১)

প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহ তাআলা উম্মতের প্রতি মায়া–মমতা ও প্রেম দিয়ে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসুল এসেছেন, যিনি তোমাদের বিপন্নতায় কষ্ট পান, তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা-৯ তওবা, আয়াত: ১২৮)

নবী করিম (সা.) প্রত্যহ উম্মতের গুনাহের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেছেন, ‘রাসুল (সা.)–এর অন্তর প্রসন্ন দেখলে আমি বলতাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমার জন্য দোয়া করুন। তিনি বলতেন, “হে আল্লাহ! আপনি আয়েশার আগে ও পরের, গোপন ও প্রকাশ্য গোনাহসমূহ ক্ষমা করুন।”’ রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর দোয়া শুনে হজরত আয়েশা (রা.) হেসে মাথা নিচু করে ফেলতেন।

তাঁর হাসিমাখা মুখ দেখে রাসুল (সা.) বলতেন, ‘আমার দোয়াতে কি তুমি আনন্দিত হয়েছ?’ হজরত আয়েশা (রা.) বলতেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! এটা কেমন কথা, আপনার দোয়ায় আমি আনন্দিত হব না?’ তখন রাসুল (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহর শপথ, এভাবেই আমি প্রত্যেক নামাজের পর আমার উম্মতের জন্য দোয়া করি।’ (ইবনে হিব্বান: ৭১১১)

সব মানুষ নবীজি (সা.)–এর উম্মত। তাই রাসুল (সা.)–এর ভালোবাসাও ছিল নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য। যারা ইমান আনতে পারেনি, তাদের জন্য তিনি পেরেশান থাকতেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ওই সব লোক ইমান আনছে না, এ কারণে কি তাদের চিন্তায় ও পেরেশানিতে আপনি নিজেকে শেষ করে দেবেন?’ (সুরা-৪২ শুরা, আয়াত: ৩)

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) গুনাহগার উম্মতের প্রতি বিশেষ স্নেহশীল ছিলেন। অনাগত উম্মতের প্রতি তাঁর তীব্র ভালোবাসা ছিল। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার ভাইদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ইচ্ছা করছে।’ সাহাবিরা বললেন, ‘আমরা কি আপনার ভাই নই?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমরা তো আমার সাহাবি তথা সঙ্গী। আমার ভাই হলো যারা আমার ওপর ইমান আনবে, কিন্তু আমাকে দেখবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ: ১২৭১৮)

উম্মতের প্রতি নবীজি (সা.)–এর ভালোবাসার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত হলো উম্মতের পক্ষ থেকে তাঁর কোরবানি প্রদান। তিনি মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে নিজেই কোরবানি করতেন। হজরত আবু রাফে (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানির সময় দুটি মোটাতাজা ও শিংবিশিষ্ট দুম্বা ক্রয় করতেন।

ঈদের নামাজ আদায় করে খুতবা প্রদান করতেন। অতঃপর তিনি নামাজের স্থানে দাঁড়ানো থাকতেই একটি দুম্বা নিয়ে আসা হতো। তা নিজ হাতে ছুরি দিয়ে জবাই করে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! এটা আমার পুরো উম্মতের পক্ষ থেকে, যারা আপনার তাওহিদের সাক্ষ্য দিয়েছে এবং আমার রিসালাত পৌঁছে দেওয়ার সাক্ষ্য দিয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ: ২৭৭৮২)

আরও পড়ুন

বদরের যুদ্ধে ৩১৩ জন সাহাবি যখন যুদ্ধে উপনীত হলেন, তখন প্রিয় নবী (সা.) আল্লাহর দরবারে তাঁদের জন্য দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! এই সাহাবিরা আমার অনেক আদরের, এই সাহাবিদের আপনি মারবেন না, এঁদের আপনি রক্ষা করুন।’

নবী করিম (সা.) মুমিনদের ব্যাপারে এতটুকু স্নেহ-মমতা রাখেন, যতটুকু মুমিনরা স্বীয় সত্তা সম্পর্কে স্নেহ-মমতা রাখেন না। অর্থাৎ আমরা নিজেকে যতটুকু ভালোবাসি, প্রিয় নবীজি (সা.) তার চেয়েও বেশি আমাদের ভালোবাসেন। (সুরা-৩৩ আহযাব, আয়াত: ৬

আল্লাহর পরে মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন প্রিয় নবীজি (সা.) এবং আল্লাহর পরে মানুষের প্রতি সবচেয়ে বেশি দয়া, করুণা ও অনুগ্রহ প্রিয় নবীজি (সা.)–এর। ভালোবাসার প্রতিদান ভালোবাসা, অনুগ্রহের প্রতিদান অনুগ্রহ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অনুগ্রহের বিনিময় অনুগ্রহ ব্যতীত আর কী হতে পারে? তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামত অস্বীকার করবে।’ (সুরা-৫৫ রহমান, আয়াত: ৬০-৬১)

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]