ইউক্রেন থেকে পশ্চিমের আশীর্বাদের হাত সরার অপেক্ষায় পুতিন

ভ্লাদিমির পুতিন
ছবি : রয়টার্স

রাশিয়া সর্বাত্মক সামরিক অভিযান চালানোর পর এক বছর পার হয়েছে এবং ইউক্রেন এখনো লড়াইয়ের ময়দানে বুক চিতিয়ে টিকে আছে। ইউক্রেনের বাসিন্দারা নজিরবিহীন সাহসিকতা নিয়ে দেশের পক্ষে লড়ে যাচ্ছেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যেখানে ইউক্রেনকে পরাস্ত করা কয়েক দিনের বিষয় বলে ভেবেছিলেন, সেখানে ইউক্রেনের বাহিনী পুতিন বাহিনীকে থামিয়ে দিয়েছে এবং পূর্ব এবং দক্ষিণ পাশের অঞ্চলে তাঁরা মরিয়া হয়ে পুতিনের সেনাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন।

সর্বশেষ ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, গত সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে রাশিয়া ইউক্রেনের যে ভূখণ্ডটি দখলের ঘোষণা দিয়েছিল, তার সবটা তারা ধরে রাখতে পারছে না। মস্কো একের পর এক হারের মুখে পড়ছে। তবে যুদ্ধ থেকে পুতিনের ফিরে আসারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলো অত্যন্ত জোরালোভাবে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে। ২০ ফেব্রুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কিয়েভ সফর করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, যুদ্ধে জয়ের জন্য ইউক্রেনের যত দিন সময় লাগবে, তত দিন যুক্তরাষ্ট্র তার পাশে থাকবে। তার পরের দিনই ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি কিয়েভ সফর করে জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেন।

কয়েক দিন আগে মিউনিখ প্রতিরক্ষা সম্মেলনে ইউরোপিয়ান নেতারা ইউক্রেনের প্রতি তাঁদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলেন। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ ইউক্রেনকে যতগুলো সম্ভব ততগুলো ট্যাংক সরবরাহ করতে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ইউক্রেনে ব্রিটিশ যুদ্ধ কপ্টার পাঠানোর আদেশ অনুমোদন করেছেন।

ফ্রান্সের চরম ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মারিঁ লো পেনও রাশিয়ার বিষয়ে যথেষ্ট নমনীয়। তাঁর উত্তরসূরি ও ন্যাশনাল র‍্যালি পার্টির নেতা জর্ডান বারডেলা ক্রেমলিনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নিতে ফ্রান্স সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একইভাবে স্লোভাকিয়ার বিরোধী দলও পুতিনের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা বলছে।

এ ছাড়া ক্রেমলিনকে অর্থনৈতিকভাবে কাবু করার জন্য পশ্চিমা দেশগুলো অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে অটল রয়েছে। সর্বশেষ রাশিয়ার পরিশোধিত তেল কেনার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমা সমর্থন কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুটিয়ে আনা হচ্ছে। শুরুতে পশ্চিম প্রস্তাব করেছিল, রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং রুশ ধনকুবেরদের যে অর্থ জব্দ করা হয়েছে, তা সহায়তা হিসেবে কিয়েভকে দেওয়া হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি থেকে তারা সরে আসছে।

অন্যদিকে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর ওরবানের মতো একাধিক নেতা এখনো পুতিনের প্রতি সহমর্মিতা পোষণ করেন। ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির সরকারের অন্যতম শরিক দলের নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনির সঙ্গে পুতিনের সদ্ভাব অনেক আগে থেকেই। ২০১৪ সালে পুতিন ক্রিমিয়া দখল করার পর সেখানে গিয়ে তিনি পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

আরও পড়ুন

ফ্রান্সের চরম ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মারিঁ লো পেনও রাশিয়ার বিষয়ে যথেষ্ট নমনীয়। তাঁর উত্তরসূরি ও ন্যাশনাল র‍্যালি পার্টির নেতা জর্ডান বারডেলা ক্রেমলিনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নিতে ফ্রান্স সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একইভাবে স্লোভাকিয়ার বিরোধী দলও পুতিনের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা বলছে।

এ অবস্থায় পুতিন আশা করছেন, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে গাঁটছড়া বাঁধার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে পারে।

ইউক্রেনের ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যভুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে এখনো বাস্তবসম্মত বলে মনে করা হচ্ছে না। ইউক্রেন সীমান্তের বিরাট এলাকা রাশিয়ার বাহিনীর কবজায় রয়ে গেছে বলে কিয়েভের ন্যাটোভুক্ত হওয়ার আশা ক্ষীণ অবস্থায় রয়েছে।

আর গত বছর ইউক্রেনের ইইউ সদস্য প্রার্থিতার বিষয়টি অনুমোদিত হলেও ইইউ সদস্য হতে কিয়েভকে আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। এ অবস্থায় ইউরোপের দেশগুলোর ক্ষমতার পালাবদলের অপেক্ষায় আছেন পুতিন।

 আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

  • ম্যাক্সিমিলিয়ান হেস ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একজন ফেলো