কাতারের পর তুরস্ক কি ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেট

কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের হামলা। হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের লক্ষ্য করা চালানো হয়েছে, যদিও তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ছবি: এএফপি

গত সপ্তাহে কাতারের ওপর ইসরায়েলের বিমান হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ‘ন্যাটোবহির্ভূত প্রধান মিত্র’ এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেশ ইসরায়েলের সমর্থক ভাষ্যকারেরা দ্রুত নজর ঘুরিয়ে নেন তুরস্কের দিকে।

ওয়াশিংটনে ডানপন্থী আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো মাইকেল রুবিন প্রস্তাব করেন যে তুরস্ক হতে পারে ইসরায়েলের পরবর্তী লক্ষ্য এবং সতর্ক করেন যে ন্যাটো সদস্যপদ তুরস্কের রক্ষাকবচ হবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসরায়েলি একাডেমিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মেইর মাসরি পোস্ট করেন, ‘আজ কাতার, কাল তুরস্ক।’

আঙ্কারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা অস্বাভাবিক কঠোর ভাষায় লেখেন, ‘জায়নবাদী ইসরায়েলের কুকুর...শিগগিরই তোমাদের মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার মধ্য দিয়ে পৃথিবী শান্তি খুঁজে পাবে।’

মাসের পর মাস ধরে ইসরায়েল–সমর্থিত সংবাদমাধ্যম তুরস্কবিরোধী বক্তব্য বাড়িয়েছে, তুরস্ককে ‘ইসরায়েলের সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু’ হিসেবে উপস্থাপন করছে। ইসরায়েলি ভাষ্যকারেরা পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের উপস্থিতিকে ‘হুমকি’ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী সিরিয়া পুনর্গঠনে দেশটির ভূমিকাকে ‘নতুন উদীয়মান বিপদ’ হিসেবে চিত্রিত করেছে।

আরও পড়ুন

ইসরায়েলের আঞ্চলিক আগ্রাসন বাড়তে থাকায় এবং গাজায় যুদ্ধের কোনো সমাপ্তি না আসায়, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান আগস্টে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করেন।

আটলান্টিক কাউন্সিলের নন-রেসিডেন্ট ফেলো ওমের ওজকিজিলসিক আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আঙ্কারায় এই (তুরস্কবিরোধী) বক্তব্য গুরুত্বসহকারে নেওয়া হয়, কারণ ইসরায়েলকে আঞ্চলিক আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা করতে দেখা হচ্ছে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘তুরস্ক ক্রমবর্ধমানভাবে মনে করছে যে ইসরায়েলি আগ্রাসনের কোনো সীমা নেই এবং এটা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাচ্ছে।’

কাতারের ওপর হামলা আঙ্কারার মনে ন্যাটো মিত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আরও সন্দেহ জাগিয়েছে। দোহা ওয়াশিংটনের বিশেষ মিত্র হয়েও ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে দৃশ্যমান কোনো প্রতিক্রিয়া পায়নি। এতে প্রশ্ন উঠেছে—ন্যাটো সনদে বলা হলেও যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই তুরস্কের ওপর কোনো হামলাকে নিজের ওপর হামলা হিসেবে দেখবে? তবে তুরস্ক আরব রাষ্ট্রগুলোর মতো নয়; দেশটি অনেক আগেই বুঝেছে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর ওপর নির্ভর করা যাবে না।

এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ক্রমেই তাঁর দেশের সম্প্রসারণবাদী লক্ষ্য নিয়ে প্রকাশ্যে গর্ব করতে শুরু করেছেন। আগস্টে যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় তিনি কি ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ধারণায় বিশ্বাস করেন, তিনি উত্তর দেন, ‘অবশ্যই।’

আঙ্কারার কাছে এই বক্তব্য নিছক প্রতীকী নয়—এটি এমন এক ইসরায়েলি আধিপত্যের স্বপ্নকে প্রকাশ করে, যা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিস্তৃত এবং সরাসরি তুরস্কের আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।

রোববার আল-জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফিদান বলেন, ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ভিশন হলো এমন একটি প্রকল্প, যা কিছু জায়নবাদীর মতে আধুনিক সিরিয়া, লেবানন, মিসর ও জর্ডান পর্যন্ত বিস্তৃত। এর উদ্দেশ্য হলো এ অঞ্চলের দেশগুলোকে দুর্বল, অকার্যকর করে রাখা এবং বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে বিভক্ত করা।

শুধু কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় গণহত্যামূলক হামলা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে প্রায় প্রতিদিনের অভিযান চালানোর পাশাপাশি ইসরায়েল ইয়েমেন ও সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে এবং তিউনিশিয়ায় গাজার সাহায্যবাহী নৌবহরে হামলার অভিযোগও উঠেছে।

এই পটভূমিতে তুরস্ক ও ইসরায়েল ইতিমধ্যেই ‘ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা’য় আবদ্ধ, বলেন ওজকিজিলসিক। তাঁর মতে, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড তুরস্কের এজেন্ডার সঙ্গে সংঘর্ষ তৈরি করছে—যেখানে তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী (কেন্দ্রীকৃত) রাষ্ট্র চায়, আর ইসরায়েল চায় বিভক্ত রাষ্ট্র, যেখানে একাধিক শক্তি ক্ষমতা ধরে রাখবে।

আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী

ইসরায়েল আরব অঞ্চলের একমাত্র প্রভাবশালী শক্তি হয়ে উঠতে চাইছে—এমন ধারণা জুলাই মাসে আরও জোরালো হয়, যখন তুরস্কে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও সিরিয়ার বিশেষ দূত টম ব্যারাক এক চমকপ্রদ মন্তব্য করেন, ইসরায়েল চায় সিরিয়া ভেঙে টুকরা টুকরা হোক। তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী জাতি-রাষ্ট্রগুলোই, বিশেষ করে আরব রাষ্ট্রগুলোকে ইসরায়েলের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়।’

আঙ্কারার জন্য এই বার্তা ছিল স্পষ্ট, নিরাপদ থাকতে চাইলে ইসরায়েলকে আঞ্চলিক আধিপত্য কায়েম করতে হবে। ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডও তা প্রমাণ করছে। ৮ ডিসেম্বর সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ মস্কোয় পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দেশটি সিরিয়ার ওপর ডজন ডজনবার বোমা হামলা চালিয়েছে এবং সেই বিশৃঙ্খলার সুযোগে সিরিয়ার ভূখণ্ড দখল করেছে।

২০২৪ সালে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর নেতৃত্বের বড় একটি অংশকে হত্যা করেছে এবং যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও লেবাননের কিছু অংশ দখল করে রেখেছে, যাতে দলটিকে দুর্বল বা ধ্বংস করা যায়। জুন মাসে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালিয়ে ১২ দিনের এক যুদ্ধ শুরু করে, যাতে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু হয়, শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা নিহত হন এবং যুক্তরাষ্ট্রকেও এই যুদ্ধে টেনে আনা হয়। ইসরায়েলের হামলাগুলোর উদ্দেশ্য ছিল শুধু তেহরানের প্রতিরক্ষা ও পারমাণবিক সক্ষমতাকে দুর্বল করা নয়, বরং ইরানে সরকার পরিবর্তনের জন্য ওয়াশিংটনকে প্ররোচিত করা।

রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
ছবি: এএফপি ও রয়টার্স

এখন ইসরায়েল তুরস্ককে তার আঞ্চলিক আধিপত্যের পরবর্তী সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। এ কারণেই আঙ্কারাকে সিরিয়ায় নতুন ঘাঁটি স্থাপন করতে দেওয়া হবে না—এ বিষয়ে তেল আবিব দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। কারণ, এটা ইসরায়েলের জন্য হুমকি হতে পারে বলে নেতানিয়াহু আগে বলেছিলেন।

অবসরপ্রাপ্ত তুর্কি অ্যাডমিরাল ও ব্লু হোমল্যান্ড মতবাদপ্রণেতা সেম গুরদেনিজ সতর্ক করে বলেছেন, ‘তুর্কি-ইসরায়েলি সংঘাতের প্রথম প্রকাশ সম্ভবত সিরিয়ার ভূমি ও আকাশসীমায় ঘটবে।’ ব্লু হোমল্যান্ড হচ্ছে এক সামুদ্রিক কৌশল, যা তুরস্ককে এজিয়ান, পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণসাগরে তার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা ও স্বার্থ সুরক্ষার আহ্বান জানায়।

গুরদেনিজ আল–জাজিরাকে আরও বলেন, ‘আমেরিকান পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রিস ও গ্রিক সাইপ্রাস প্রশাসনের সঙ্গে জটিলভাবে যুক্ত হয়ে সাইপ্রাসে ইসরায়েলের বাড়তে থাকা সামরিক ও গোয়েন্দা উপস্থিতিকে আঙ্কারা ব্লু হোমল্যান্ডকে ভেঙে দুর্বল করার উদ্দেশ্যমূলক প্রচেষ্টা হিসেবে দেখে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আঙ্কারার কাছে এটি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নয়, বরং এক আক্রমণাত্মক ঘেরাও কৌশল, যা তুরস্কের সামুদ্রিক স্বাধীনতা ও সাইপ্রাসবাসী তুর্কিদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’

আরও পড়ুন

একই সময়ে সিরিয়া প্রসঙ্গে ইসরায়েল কোনো রাখঢাক না রেখে বলছে—তাদের কাছে স্থিতিশীল সিরিয়া মানে কেবল একটি ফেডারেল কাঠামো, যেখানে থাকবে ‘ভিন্ন ভিন্ন স্বায়ত্তশাসন’। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সাআর ফেব্রুয়ারিতে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন। অন্যদিকে তুরস্ক নতুন সিরীয় প্রশাসনকে সমর্থন করছে, যা জোর দিচ্ছে একটি কেন্দ্রীয় ও একক রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর।

তবে আপাতত ইসরায়েল-তুরস্ক সম্পর্ককে ‘নিয়ন্ত্রিত উত্তেজনা’ হিসেবে বর্ণনা করা যায়, বলেন তুরস্কের নেজমেত্তিন এরবাকান বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল অ্যান্ড রিজিওনাল স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক গোকহান চিনকারা। তিনি আল–জাজিরাকে বলেন, ‘বর্তমানে তুরস্কের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি হবে সিরিয়ায় অনিয়ন্ত্রিত গোষ্ঠীগত সংঘাতের বিস্তার। এ কারণে আঙ্কারা সম্ভবত নতুন সিরীয় প্রশাসনকে যুক্তিসংগত বাস্তব পন্থা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছে।’

গোকহান চিনকারা আরও বলেন, ‘সিরিয়ার নিরাপত্তা যন্ত্রের অপরিপক্বতা যেকোনো সম্ভাব্য গোষ্ঠীগত সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণকে কঠিন করে তোলে এবং দেশটিকে দীর্ঘমেয়াদি জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক সংঘাতে নিমজ্জিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। স্বল্প মেয়াদে তাই একক রাষ্ট্রীয় কাঠামো গ্রহণ করা কঠিন মনে হচ্ছে।’

‘রেড লাইন’ ও ঝুঁকিগুলো

নেতানিয়াহু নিজে ‘বালকানাইজড সিরিয়া’ অর্থাৎ জাতিগত ও ধর্মীয় ভিত্তিতে বিভক্ত এক সিরিয়া—প্রতিষ্ঠার পক্ষে জোর দিচ্ছেন। তিনি দক্ষিণ সিরিয়ার একটি বড় অংশের নিরস্ত্রীকরণের দাবি তুলেছেন, যেখানে প্রধানত দ্রুজ জনগোষ্ঠী বসবাস করে। এটি কার্যকর হলে দেশের অন্য গোষ্ঠীগুলোর (যেমন কুর্দি ও আলাওয়ি) মধ্যেও নিজস্ব স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে উসকে দিতে পারে।

আঙ্কারাভিত্তিক সরকারি ঘনিষ্ঠ থিঙ্কট্যাংক ‘সেটা’র পররাষ্ট্রনীতি গবেষণার পরিচালক বলেন মুরাত ইয়েশিলতাশ বলেন, ‘সিরিয়ায় তুরস্কের সুস্পষ্ট রেড লাইন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আঞ্চলিক শৃঙ্খলা পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা বিভিন্ন বিপদ ও ঝুঁকি বয়ে আনছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে বিভাজনকে আরও গভীর করছে।

আরও পড়ুন

গত মার্চে ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নিরাপত্তা থিঙ্কট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ (আইএনএসএস) একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। সেখানে তুরস্ক ও কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) উদীয়মান শান্তিপ্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়। চার দশকের বেশি সময় ধরে চলা এই সশস্ত্র সংঘাতে ৪০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে।

নিবন্ধে বলা হয়, এই প্রক্রিয়া সিরিয়ার কুর্দিদের স্বশাসিতভাবে পরিচালিত হওয়ার সক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে এবং তুরস্ককে দক্ষিণ সিরিয়ায় তার প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দিতে পারে, যা ইসরায়েলের ‘অপারেশনাল স্বাধীনতার জন্য হুমকি’ বাড়াবে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে দক্ষিণ সিরিয়ায় নতুন দখল করা বিস্তীর্ণ অঞ্চলগুলো ‘অসীম সময়ের জন্য’ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

তুরস্ক যখন নবগঠিত দামেস্ক সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে সিরিয়ার হোমস প্রদেশে সম্ভাব্য সামরিক ঘাঁটি এবং হামা প্রদেশের প্রধান বিমানবন্দর ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছিল, তখন ইসরায়েল ওই স্থানগুলোতে বোমা হামলা চালায়। ইয়েশিলতাশ সতর্ক করে বলেন, ‘যদি তেল আবিব এই পথেই অটল থাকে, তবে আঙ্কারা ও তেল আবিবের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে। তুরস্ক তার দক্ষিণ সীমান্তে অস্থিতিশীলতা চিরস্থায়ী করার মতো নীতি মেনে নিতে পারে না।’

আরও পড়ুন

কিংস কলেজ লন্ডনের নিরাপত্তা অধ্যয়নের সহযোগী অধ্যাপক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেন, ‘তবে পূর্ণাঙ্গ প্রতিদ্বন্দ্বিতা “অবশ্যই অনিবার্য নয়”, কারণ উভয় পক্ষই সংঘাতের খরচ সম্পর্কে সচেতন—বিশেষ করে পারস্পরিক অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতার কারণে।’ ক্রিগ আল–জাজিরাকে বলেন, ‘ইসরায়েলের তুরস্কের প্রতি হুমকি কোনো প্রচলিত সামরিক আগ্রাসন নয়, বরং সিরিয়া, পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও দক্ষিণ ককেশাসে তুরস্কের স্বার্থকে পরোক্ষ উপায়ে টার্গেট করা।’

ওয়াশিংটনের পূর্ণ ও নিঃশর্ত সমর্থন যেহেতু নেতানিয়াহুর আঞ্চলিক পুনর্গঠন পরিকল্পনার পেছনে রয়েছে, ক্রিগের মতে আঙ্কারার করণীয় হলো—কৌশলগত প্রতিরোধ শক্তিশালী করা, বিশেষত বিমান প্রতিরক্ষা, ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ও গোয়েন্দা সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে; কাতার, জর্ডান ও ইরাকের সঙ্গে আঞ্চলিক জোট গঠন করা; একই সঙ্গে ওয়াশিংটনের সঙ্গে যোগাযোগের পথ খোলা রাখা, যাতে ‘পূর্ণ কৌশলগত বিচ্ছিন্নতা এড়ানো যায়’।

ক্রিগ আরও বলেন, ‘আঙ্কারাকে বুঝতে হবে ভবিষ্যতের সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু কূটনৈতিক ঘোষণা বা আনুষ্ঠানিক বিবৃতির বদলে সম্ভবত থাকবে ধূসর এলাকায়—গোপন অভিযান, বিমান হামলা ও প্রক্সি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে।’

  • এলিস জেভরি ইস্তাম্বুলভিত্তিক একজন সাংবাদিক। তিনি মূলত বলকান, তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে কাজ করেন।

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ