অভ্যন্তরীণ অভিবাসীরা গ্রামীণ অর্থনীতির যে সম্ভাবনা দেখালেন

করোনা মহামারির ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল শহরকেন্দ্রিক কর্মসংস্থান। এ সময় অভ্যন্তরীণ অভিবাসী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ গ্রামে ফিরে গিয়েছিল। করোনা মহামারির সময় অভ্যন্তরীণ অভিবাসী শ্রমিকদের অবস্থা এবং ভবিষ্যতে এ রকম পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় নিয়ে এই লেখা।

নিজের ও পরিবারের উন্নত জীবনের আশায় দেশের বাইরে কাজ করতে যাওয়ার প্রবণতা যেমন প্রবল, ঠিক তেমনি দেশের ভেতরেও স্থানান্তরের ঘটনাও কিন্তু কম নয়। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ উন্নত জীবনের আশায়, জীবিকা নির্বাহের লক্ষ্যে, এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়াতে তাঁদের আবাসস্থল ছেড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিবাসন করেন।

তাঁদের অধিকাংশেরই মূল গন্তব্য রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক পরিচালিত খানার আয় ও ব্যয় জরিপ, ২০২২-এর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৯ শতাংশ মানুষ জীবনকালে একবার হলেও নিজ এলাকা ছেড়ে দেশের ভেতর অন্য অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছেন।

করোনা মহামারি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের ধরন ও প্রকৃতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছিল। মহামারিকালে লকডাউন এবং ভ্রমণনিষেধাজ্ঞার কারণে অভ্যন্তরীণ অভিবাসীরা, বিশেষ করে যাঁরা শহরে কাজ করতেন, তাঁদের অনেককেই স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে গ্রামে ফিরে যেতে হয়েছিল। সে সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষেরা।

ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং মৌলিক চাহিদা পূরণের সামর্থ্য না থাকায় সমাজে এক ‘নতুন দরিদ্র’ গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছিল । অনুমান করা হয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে বসবাসরত প্রায় ৬ কোটি নিম্ন আয়ের মানুষ সে সময় বেকারত্ব, খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা (ঘাটতি ও অপুষ্টি), স্বাস্থ্যসেবা এবং চিকিৎসায় জটিলতা ও অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। (বাংলাদেশ ওপেন ইনোভেশন ল্যাব, ২০২২)

লকডাউনের শেষের দিকে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও অনেকেই চাকরি বাঁচাতে বা নতুন চাকরির খোঁজে আবার গ্রাম থেকে শহরে চলে এসেছিলেন।  ধারণা করা হয়, গ্রামে চলে যাওয়ার পর গ্রামের আর্থসামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে অথবা সেখানে স্থায়ী জীবন ধারণের কোনো ব্যবস্থা করতে না পেরে তাঁরা আবার শহরে চলে এসেছিলেন। কেউ কেউ শহরের ব্যয়বহুল জীবনযাত্রার কথা ভেবে আবার গ্রামে থেকে যান।

■ করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন শহরে বসবাসরত গৃহকর্মীরা। ■ অভ্যন্তরীণ অভিবাসীরা সুযোগ পেলে নিজেদের আয় নানাভাবে বৃদ্ধি করতে পারেন। ■ অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের ব্যবস্থাপনা ও তাঁদের অধিকার সুরক্ষায় তেমন কোনো নিয়মকানুন নেই।

এ লেখার মূল বিষয়বস্তু হলো মহামারিকালে লকডাউন কীভাবে অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের নিজ অঞ্চলে এবং গন্তব্যস্থলে জীবনযাত্রা ও কর্মসংস্থানকে প্রভাবিত করেছে এবং ঝুঁকির মধ্যেও কীভাবে তাঁরা বিভিন্ন সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। রাজশাহী ও ঢাকায় অবস্থানরত তৈরি পোশাকশ্রমিক, পরিবহনশ্রমিক, গৃহকর্মী ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত সাধারণ শ্রমিক, যাঁরা স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মহামারিকালে শহর থেকে গ্রামে চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এ আলোচনা করা হয়েছে। 

এ সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশের বয়সই ২৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। তাঁরা করোনাকালীন সংকটকালে কীভাবে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছিলেন এবং কর্মক্ষেত্রে সৃষ্ট নানা দুর্দশা কাটিয়ে উঠেছিলেন, তা এই আলোচনায় উঠে এসেছে। সামনের দিনগুলোয় শহরকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে আবার কোনো আঘাত এলে তা মোকাবিলায় এই করোনাকালীন অভিজ্ঞতা আমাদের কোনো কাজে লাগবে কি না, সেটাও আলোচিত হয়েছে। 

জীবিকার চ্যালেঞ্জ

অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের অনেকেই করোনাকালে আকস্মিকভাবে কাজ হারিয়েছিলেন। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন শহরে বসবাসরত গৃহকর্মীরা। তাঁদের পরিবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিল। শহরের বিভিন্ন ধনী এলাকায় কাজের ক্ষেত্রে তাঁরা নানা ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হন। করোনা পরিস্থিতিতে এটার আরও অবনতি ঘটেছিল। 

ঢাকায় গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত ৪২ বছর বয়সী মালা বেগমের (ছদ্মনাম) ছয় সদস্যের পরিবার তাঁর আয়ের ওপর নির্ভরশীল। মহামারিকালে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় তাঁর স্বামী তাঁকে কাজে যেতে নিষেধ করলেও পরিবারের কথা ভেবে তিনি কাজ করতেন। তবে তিনি সে সময় কেবল একটি বাসায় কাজ পেয়েছিলেন। দেশে কোনো নিজস্ব জমিজমা না থাকায় তিনি ও তাঁর পরিবার কখনোই গ্রামে ফেরত যাওয়ায় চিন্তা করেননি।

লকডাউন জারি করার পর প্রথম এক মাস তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও সরকার পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু রাখার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু চাকরির অনিশ্চয়তায় সে সময় কারখানায় কর্মরত অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। ৩৩ বছর বয়সী সোলাইমান হোসেন (ছদ্মনাম) ও তাঁর স্ত্রী ঢাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। লকডাউনে তাঁদের কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা দুজনেই কাজ হারিয়েছিলেন। পরে কাজ না পাওয়ায় ঢাকায় বেঁচে থাকার তাগিদে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালানো শুরু করেন সোলাইমান।

শ্রমবাজারে নতুন কাজের সুযোগ  

লকডাউনে খারাপ সময়ের মধ্যেও অনেকেই ভিন্ন ধরনের পন্থা অবলম্বন করায় নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। এতে অর্থ উপার্জনের সুযোগও হয়েছিল। গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, লকডাউন পরিস্থিতিতে কিছু খাতে কর্মীদের চাহিদা বেড়েছিল। করোনাকালে রাজশাহী ও এর আশপাশের অঞ্চলে চালের চাহিদা অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছিল। কারখানাগুলোয় দিন–রাত কাজ চলায় শ্রমিকদের সেই সময় দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছিল। কর্মীর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রমিকেরা গ্রাম থেকে নিজেদের পরিবার-পরিজন নিয়ে এসে উপার্জন বৃদ্ধি করেছিলেন।

রাজশাহীর হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নিয়োজিত এক কর্মকর্তার মতে, প্রথম ও দ্বিতীয় লকডাউনে পরিবহন নিষেধাজ্ঞার সময়ে আলুর চাহিদা বেশি ছিল। সে সময় কারখানায় প্রায় প্রতিদিনই কাজ করে শ্রমিকেরা ভালো মজুরি পেয়েছিলেন। শ্রমিকের চাহিদা বেশি থাকায় এই কর্মীরা পরে আর গ্রামে ফিরে যাননি। এক পুরুষ অভিবাসী শ্রমিক জানান, করোনাকালে শ্রমিকের চাহিদা বেশি হওয়ায় তিনি তাঁর স্ত্রী এবং দুই মেয়েকে নিয়ে শহরে এসেছিলেন। উপার্জিত অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে তিনি গ্রামে কৃষিজমি বর্গা দিয়েছিলেন, ধান কিনতে এবং বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। 

করোনাকালে কর্মীর সংখ্যা কম থাকায় রাজশাহী শহরের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সে সময় গ্রাম থেকে লোক নিয়োগ করা শুরু করেছিলেন। লকডাউনে অন্যান্য জেলায় মুড়ির কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজশাহীতে থাকা কারখানাগুলোর ওপর চাপ অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২৮ বছর বয়সী সাহানা বেগম (ছদ্মনাম) আগে কখনো রাজশাহী শহরে আসেননি। মুড়ি কারখানায় লোক নিয়োগের কথা শুনে কাজ শুরু করেন। লকডাউনে কাজ করার কারণে তাঁর মজুরি সে সময় যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাই গ্রামে ফিরে না গিয়ে তিনি শহরে থেকে গিয়েছিলেন।

এ দৃষ্টান্তগুলো থেকে স্পষ্ট যে অভ্যন্তরীণ অভিবাসীরা সুযোগ পেলে নিজেদের আয় নানাভাবে বৃদ্ধি করতে পারেন। 

নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ

লকডাউনে অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের অনেকেই নতুন ধরনের কাজ করা শুরু করেছিলেন। লকডাউনে খাদ্যপণ্য বিক্রির ব্যবসা নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে—এ ধারণায় অনেকেই এ রকম ব্যবসা শুরু করেছিলেন। সে সময় পণ্যের জোগান কম থাকায় কিছু পণ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছিল। ৫০ বছর বয়সী মমতাজ বেগম (ছদ্মনাম) লকডাউনে রাজশাহী শহরে সবজি বিক্রি করে যথেষ্ট লাভ করেছিলেন।

করোনাকালে অনেকেই আবার নতুন ব্যবসাও শুরু করেছিলেন। ৫২ বছর বয়সী তাজুল ইসলাম (ছদ্মনাম) ও তাঁর পরিবার লকডাউনে ঢাকা থেকে গ্রামে চলে যান। সে সময় তাঁর বড় মেয়ে জমানো অর্থ দিয়ে গ্রামে একটি বিউটি পারলার খুলেছিলেন। আর তাঁর স্ত্রী গ্রামে কৃষিজমি আবাদ করেছিলেন। এতে তাঁদের ধারদেনা শোধ হয়েছিল। গ্রামে ভালোভাবে থাকলেও তিনি ও তাঁর পরিবার এই আয় দিয়ে শহরে ফেরা অসম্ভব বলে মনে করেন।

তবে সবার জন্য এই লকডাউন সুফল বয়ে আনেনি। পর্যাপ্ত সচেতনতা এবং অর্থের অভাবে অনেকেই এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিজেদের চিন্তাভাবনা ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারেননি। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য সরকারিভাবে কিছু সাহায্য-সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সে সময় কমপক্ষে ২৩টি সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তবে নানা জটিলতায় তার সুফল অনেকেই পাননি। আমাদের গবেষণায় সাক্ষাৎকার দেওয়া অধিকাংশই কোনো সাহায্য না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

পুনরায় শহরে ফিরে আসার কারণ 

লকডাউনে গ্রামে যাওয়ার পর অনেকেই কৃষিকাজ ও পশুপালনের মতো কাজে যুক্ত হন। কৃষিজাত পণ্যের তেমন কোনো সুগঠিত বাজারব্যবস্থা না থাকায় তাঁদের অনেকেই সফল হতে পারেননি। মহামারি–পরবর্তী সময়ে তাঁদের আর গ্রামে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। 

এ ছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য এবং গ্রামাঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য যে পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন, সে রকম কোনো বিনিয়োগ নেই। শহরে মেগা প্রজেক্টে প্রতিনিয়ত নতুন ধরনের বিনিয়োগ হয়। সে রকম কোনো বিনিয়োগ এখনো গ্রামে হয়নি। 

লক্ষণীয়, আমাদের যাবতীয় ব্যাংকিং কার্যক্রম শহরকেন্দ্রিক। এর ফলে পর্যাপ্ত আর্থিক সেবার অভাবে অনেকেই প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। এতে অনেকেই শহরমুখী হতে রীতিমতো বাধ্য হয়েছিলেন।

আমাদের করণীয়

অভ্যন্তরীণ অভিবাসন একটি স্বাভাবিক ও নিয়মিত ঘটনা। বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি মানুষই অভ্যন্তরীণ অভিবাসী। দেশের বাইরে যেতে ইচ্ছুক অভিবাসীদের জন্য যথেষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের ব্যবস্থাপনা ও তাঁদের অধিকার সুরক্ষায় তেমন কিছু নেই।

গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা এই শ্রমিকদের অধিকাংশই শহরের মানুষদের বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকেন। করোনাকালে তাঁদের গুরুত্ব ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, তাঁদের শুধু সেবাদানকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, অধিকারের কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি।

অভিবাসীদের অনেকেই শহরে দিনমজুর বা অস্থায়ী ভাসমান উপায়ে নিজেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। লকডাউনে এই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাঁরা অনেকটাই বাধ্য হয়ে গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন। ভবিষ্যতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে শহরে তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত ও টেকসই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত।

চতুর্থত, বাংলাদেশের বড় শহরগুলোয় জেলা শহর বা গ্রামাঞ্চলের তুলনায় জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেশি, জীবনের অনিশ্চয়তাও অনেক বেশি। কিন্তু শহরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সচল রাখতে গ্রাম থেকে আসা এসব মানুষের গুরুত্ব অসীম। তাই তাঁরা যেন শহরে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।

ধারণা করা হয়, আগামীর পৃথিবীতে নতুন কোনো যুদ্ধ বা মহামারির আঘাত এলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শহরকেন্দ্রিক অর্থনীতি। করোনা মহামারিতে এটাই প্রমাণ হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এ রকম পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের খুব বেশি চিন্তাভাবনা বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই। আমাদের যাবতীয় বিনিয়োগ শহরকেন্দ্রিক অবকাঠামো নির্মাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু লকডাউনের সময় গ্রামীণ অর্থনীতি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছিল।

কৃষক বা গ্রামাঞ্চলে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা এখনো ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। গ্রামে এখনো অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থার তেমন সুব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত কাজের সুযোগও নেই। নেই ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল। গ্রামীণ সমাজে যে তারল্যসংকট আছে, তা পূরণ করার কোনো উদ্যোগ নেই। 

করোনা মহামারি শহরগুলোতে অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের চাপ কমানোর সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু সঠিক দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনার অভাবে তাঁদের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে জাগ্রত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ করার সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়ে গেছে। যতটুকু সুযোগ এখনো অবশিষ্ট আছে, তা কাজে লাগানোর জন্য বিলম্ব না করেই এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। 

জালাল উদ্দিন শিকদারসেলিম রেজা  শিক্ষক ও সদস্য, সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

কে এম নূর-ই-জান্নাত  গবেষণা সহযোগী, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।