হজে যাওয়ার আগে হজের বিধান জানা জরুরি

পবিত্র হজফাইল ছবি: এএফপি

হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। (বুখারি: ৭)। কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর তরফ থেকে সেসব মানুষের জন্য হজ ফরজ, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান; আয়াত: ৯৭)

হজের নির্ধারিত স্থান হলো মক্কা মুকাররমায় কাবা, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা ইত্যাদি এবং মদিনা মুনাওয়ারায় রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর রওজা শরিফ।

শারীরিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের ওপর জীবনে একবার হজ ফরজ। হজের নিয়তকে ইহরাম বলে। সম্পাদনপদ্ধতি অনুসারে হজ তিন প্রকার—১. ইফরাদ, ২. কিরান ও ৩. তামাত্তু।

হজ সম্পাদনরত হাজিরা ৯ জিলহজ (হজের বা আরাফাতের দিন) ও ১০ জিলহজ (কোরবানির ঈদের দিন) ছাড়া হজের অন্য দিনগুলোতে রোজা পালন করতে পারবেন

ইফরাদ হজ: শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পন্ন করলে একে ‘ইফরাদ হজ’ বা একক হজ বলা হয়। ইফরাদ হজ পালনের জন্য ঢাকা থেকে শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে মক্কা শরিফে পৌঁছার পর তাওয়াফ ও সাঈ করে ইহরাম না ছেড়ে ১০ জিলহজ হজ সম্পাদন হওয়ার পর ইহরাম ছাড়তে হবে।

কিরান হজ: হজ ও উমরাহর জন্য একত্রে ইহরামের নিয়ত করে একই ইহরামে তা সম্পন্ন করলে তাকে ‘কিরান হজ’ বা যৌথ হজ বলা হয়।

কিরান হজ পালনের জন্য ঢাকা থেকে উমরাহ ও হজের একত্রে ইহরামের নিয়ত করে মক্কা শরিফে পৌঁছার পর প্রথমে উমরাহর তাওয়াফ ও সাঈ করে ইহরাম না ছেড়ে সেই ইহরামেই হজ সম্পাদন করে ১০ জিলহজ ইহরাম ছাড়তে হবে।

তামাত্তু হজ: একই সফরে প্রথমে উমরাহর ইহরামের নিয়ত করে, তা সম্পন্নপূর্বক হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পাদন করাকে ‘তামাত্তু হজ’ বা সুবিধাজনক হজ বলা হয়। বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ হাজি তামাত্তু হজ করে থাকেন।

তামাত্তু হজের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে শুধু উমরাহর ইহরামের নিয়ত করে মক্কা শরিফে পৌঁছে তাওয়াফ ও সাঈ করে মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম সমাপ্ত করতে হবে। এরপর ৭ জিলহজ হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে ১০ জিলহজ তা সমাপ্ত করতে হবে।

কিরান ও তামাত্তু হজে দমে শোকর বা কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব। এতে অপারগ হলে ১০টি রোজা পালন করতে হবে। এর মধ্যে অন্তত তিনটি রোজা হজকালীন মক্কা শরিফে রাখতে হবে।

হজ সম্পাদনরত হাজিরা ৯ জিলহজ (হজের বা আরাফাতের দিন) ও ১০ জিলহজ (কোরবানির ঈদের দিন) ব্যতীত হজের অন্য দিনগুলোতে রোজা পালন করতে পারবেন। যাঁরা হজ পালনরত নন, তাঁদের জন্য ৯ জিলহজ রোজা রাখা সুন্নত এবং ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ রোজা রাখা নিষেধ।

হজের ফরজগুলো

হজের ফরজ তিনটি—১. ইহরামের নিয়ত বা ইচ্ছা করা; ২. অকুফে আরাফা করা বা ৯ জিলহজ জোহর থেকে ১০ জিলহজ ফজরের পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো সময় আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা এবং ৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা বা ১০ জিলহজ ভোর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো সময় কাবাঘর তাওয়াফ করা (সাতবার প্রদক্ষিণ করা)।

পুরুষদের ইহরাম অবস্থায় খোলা চাদর পরতে হয়, মাথা খালি রাখতে হয়, পায়ের পাতা উন্মুক্ত থাকে এমন স্যান্ডেল পরতে হয়। নারীদের ইহরামের বিশেষ কোনো পোশাক নেই; তবে মুখমণ্ডল খোলা রাখতে হবে।

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজগুলো: প্রাণী হত্যা, জীবের ক্ষতি, ক্ষৌরকর্ম, সুগন্ধি ব্যবহার, রতিক্রিয়া, অন্যায় আচরণ, কলহবিবাদ। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৯৭)।

হজের ওয়াজিবগুলো

হজের ওয়াজিব সাতটি—১. আরাফাত থেকে মিনায় ফেরার পথে মুজদালিফা নামক স্থানে ১০ জিলহজ ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কিছু সময় অবস্থান করা, ২. সাফা ও মারওয়া সাঈ করা বা দৌড়ানো; ৩. রমিয়ে জিমার বা ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ জামরায় শয়তানকে পাথর মারা; ৪. তামাত্তু ও কিরান হজে দমে শোকর বা কোরবানি করা; ৫. মাথার চুল মুড়িয়ে বা কেটে ইহরাম সমাপ্ত করা; ৬. বিদায়ী তাওয়াফ করা এবং ৭. মদিনা শরিফ রওজাতুন নবী (সা.) জিয়ারত করা। (ইউসুফ ইসলাহি, আসান ফিকাহ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৫১)।

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

    [email protected]