এনসিপির সঙ্গে জোট বাঁধলে বিএনপির লাভ না ক্ষতি

বিএনপি ও নতুন গঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির মধ্যে নির্বাচনী জোট গঠনের গুঞ্জন সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোড়ন তুলেছে।

বিএনপি দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। তারা একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকেছে। দীর্ঘ ১৭ থেকে ১৮ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও দলটি ভেঙে পড়েনি। নানা চাপ, দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক সংকটের মধ্যেও সংগঠনটি টিকে আছে।

দেশের নাগরিকদের একাংশ মনে করে, আসন্ন নির্বাচনে সরকার গঠনের সম্ভাবনা বিএনপিরই সবচেয়ে বেশি। কারণ, সাংগঠনিক শক্তি ও জনভিত্তির দিক থেকে বিএনপি এখনো বাংলাদেশের সবচেয়ে সংগঠিত দল।

ফলে বিএনপির সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী জোটে আসা একেবারেই স্বাভাবিক ঘটনা। অতীতেও দলটি বেশ কিছু ছোট দলের সঙ্গে আন্দোলন ও নির্বাচনী সমন্বয় করেছে।

তবে নতুন প্রশ্ন উঠেছে—জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা তরুণদের দল এনসিপির সঙ্গে জোট করা বিএনপির জন্য কতটা লাভজনক হবে?

আরও পড়ুন

প্রথম দেখায় মনে হতে পারে, তরুণ নেতৃত্বের দল এনসিপির সঙ্গে যুক্ত হলে বিএনপি তরুণ প্রজন্মের সমর্থন কিছুটা অর্জন করতে পারে। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা কি আসলেই তেমন আশাব্যঞ্জক?

আট থেকে নয় মাস ধরে বিএনপির শীর্ষ নেতারা টক শো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সমাবেশে এনসিপিকে ‘কিংস পার্টি’ আখ্যা দিয়েছেন।

দলটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছেন। এখন সেই দলের সঙ্গেই যদি বিএনপি জোটবদ্ধ হয়, তাহলে প্রতিপক্ষ দলগুলো নিশ্চয়ই নির্বাচনী প্রচারণায় অভিযোগের আঙুল তুলে বলবে, বিএনপি নিজেই ‘কিংস পার্টি’র সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।

আরও একটি বিষয় উপেক্ষা করা ঠিক হবে না। এনসিপিকে অধ্যাপক ইউনূসের ঘনিষ্ঠ মহলের দল হিসেবে দেখা হয় এবং ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন নির্বাচন তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের অধীনই অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন

এ প্রেক্ষাপটে বিএনপির সঙ্গে এনসিপির জোট একটি জটিল বার্তা তৈরি করতে পারে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তরুণসমাজে এনসিপির বর্তমান জনপ্রিয়তা। ডাকসু, চাকসু, জাকসু ও রাকসুর সাম্প্রতিক ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এনসিপির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্রসংগঠনটি অত্যন্ত হতাশাজনক ফল করেছে।

অনেক ক্ষেত্রে তারা চতুর্থ বা পঞ্চম অবস্থানে থেকেছে, এমনকি ভোটও খুব সামান্য পেয়েছে।

যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দলটির উৎপত্তি, সেখানেও ফলাফল ছিল নিরাশাজনক।অর্থাৎ গত ১৫ মাসে এনসিপি তরুণদের একটি বড় অংশের আস্থা হারিয়েছে বলা যায়।

তরুণদের অন্যান্য সংগঠনও এনসিপির কিছু কর্মকাণ্ডে বিরক্তি প্রকাশ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি যদি এনসিপির সঙ্গে জোট গঠন করে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই বিপুল তরুণ ভোটারগোষ্ঠীর একটি অংশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির বিপক্ষে যেতে পারে।

অবশ্য কেউ কেউ বলতে পারেন, ছাত্রদলও তো সাম্প্রতিক ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভালো করতে পারেনি।

এনসিপি, যাদের জন্ম হয়েছিল জুলাই অভ্যুত্থানের পর তরুণদের নেতৃত্বে, তারাই এখন নিজেদের ক্যাম্পাসে দু-তিন শ ভোটও পাচ্ছে না। এটি নিঃসন্দেহে একটি সতর্কবার্তা।

সত্য, ছাত্রদল কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি, তবে এনসিপির মতো হতাশাজনকও হয়নি। বরং দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস রাজনীতি থেকে বঞ্চিত থাকা সত্ত্বেও তারা সংগঠন টিকিয়ে রেখেছে, যা একটি বাস্তবতা।

অন্যদিকে এনসিপি, যাদের জন্ম হয়েছিল জুলাই অভ্যুত্থানের পর তরুণদের নেতৃত্বে, তারাই এখন নিজেদের ক্যাম্পাসে দু-তিন শ ভোটও পাচ্ছে না। এটি নিঃসন্দেহে একটি সতর্কবার্তা।

তাই বিএনপির প্রয়োজন নতুন প্রজন্মের এই দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার আগে পরিস্থিতি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা।

তরুণদের সমর্থন পেতে চাইলে জোটের সিদ্ধান্ত যেন উল্টো ফল না বয়ে আনে, সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

  • ড. আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
    ই-মেইল: [email protected]

*মতামত লেখকের নিজস্ব