বিশ্বনবী (সা.)-এর শুভাগমনে বিশ্ববাসীর আনন্দ

বিশ্বনবীর আগমনে বিশ্ববাসীর আনন্দ। এ আনন্দ মুক্তির। এ আনন্দ স্বাধীনতার। এ আনন্দ মানবাধিকারের। এ আনন্দ সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ও সমমর্যাদার। বিশ্ব যখন অন্যায়, অবিচার, জুলুম ও বহুবিধ কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল, ঠিক তখনই আল্লাহ তাআলা হিদায়াতের আলোক প্রদীপরূপে পৃথিবীর বুকে পাঠিয়েছেন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে। তিনি পৃথিবীর বুকে এমন এক সুসভ্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন, যা সর্বাঙ্গসুন্দর ও সমুজ্জ্বল আলোক আভায় উদ্ভাসিত।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসুল পাঠিয়েছি, যাতে তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো (কল্যাণ ও ন্যায়বিধান মেনে চলো) এবং তাগুত থেকে বেঁচে থাকো।’ (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ৩৬)

প্রিয় রাসুল (সা.)-এর শুভাগমন মানবজাতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্ববহ। আল্লাহ তাআলা তাঁকে ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ বা বিশ্বজগতের রহমত হিসেবে এবং নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম মর্যাদা দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তাঁর মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে রাসুল প্রেরণের ধারাবাহিকতা। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, লোকেরা প্রশ্ন করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনার নবুয়ত কখন অবধারিত হয়েছে?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘যখন আদম (আ.) শরীর ও রুহের মধ্যে ছিলেন।’ (তিরমিজি: ৩৬০৯)

‘আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে যখন “হে আবু মুহাম্মদ” (মুহাম্মদের পিতা) বলে সম্বোধন করলেন, তখন তিনি বলেছেন, “হে আল্লাহ, আপনি আমাকে কেন ‘আবু মুহাম্মাদ’ নামে ডেকেছেন?” জবাবে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমার মাথা উত্তোলন করো।” তিনি মাথা উত্তোলন করে আরশ ও এর চারপাশে রাসুল (সা.)-এর নুর মোবারক দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “এই নুর কার?” জবাবে আল্লাহ তাআলা বলেন, “এটি ওই নবীর নুর, যিনি তোমার সন্তানদের মধ্য থেকে হবেন। তাঁর নাম আসমানে ‘আহমাদ’ ও জমিনে ‘মুহাম্মদ’(সা.)। তিনি যদি না হতেন, তবে তোমাকেও সৃষ্টি করতাম না, আসমান আর জমিনও সৃষ্টি করতাম না।”’ (আল মাওয়াহিবুল লাদুনিয়া: ১/৫৭)

কোরআন মাজিদে ১০টি সুরায় রাসুল (সা.)-এর শুভাগমন সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানবজাতি, তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে অকাট্য প্রমাণ (বুরহান) এসেছে, আর আমি সমুজ্জ্বল আলোকময় নুর পাঠালাম।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৭৪) ‘(হে নবী সা.) আমি আপনাকে জগৎসমূহের প্রতি একমাত্র রহমতস্বরূপই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা-২১ আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭) ‘আল্লাহ ইমানদারদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন যে তাদের মধ্যে, তাদের নিজেদের মধ্য থেকে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৪)

প্রিয় রাসুল (সা.) ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় পবিত্র মক্কা নগরীতে কুরাইশ বংশে হাশিমি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। রাসুলে আকরাম (সা.)-এর জন্মের ৫০ বা ৫৫ দিন আগের একটি স্মরণীয় ঘটনা হলো আসহাবে ফিল বা হাতির ঘটনা।

ফাতিমা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘যখন প্রিয় নবীজি (সা.)-এর শুভ আগমন ঘটল, তখন আমি বিবি আমিনার কাছে উপস্থিত ছিলাম। আমি দেখলাম, সব গৃহ উজ্জ্বল আলোতে ভরে গেছে, আরও দেখলাম আসমানের তারকারাজি এত কাছে এসেছে যে আমার মনে হলো এই তারকা আমার ওপর পতিত হবে।’ (ফাতহুল বারি: ৬/৪২৬)

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের আমার সূচনাপর্ব সম্পর্কে বলছি। আমি হলাম ইব্রাহিম (আ.)-এর দোয়া ও ঈসা (আ.)-এর সুসংবাদ। আর আমার মায়ের স্বপ্ন, যা তিনি আমাকে প্রসব করার সময় দেখেছিলেন—এমন এক নুর উদ্ভাসিত হয়েছে, যার দ্বারা আমার আম্মাজানের জন্য সিরিয়ার প্রাসাদও উজ্জ্বল হয়েছিল।’ (দালায়েলুন নবুয়ত, ইমাম বায়হাকি, পৃষ্ঠা: ৩৫)

মুমিনের জীবনে পবিত্র কোরআনের দর্শন ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহর প্রতিফলন সবচেয়ে আনন্দের। আসুন, বিশ্বনবীর সুমহান আদর্শকে সর্বত্র বাস্তবায়ন করে, তাঁর আবির্ভাবের উদ্দেশ্যকে সফল করে, বিশ্ব শান্তি স্থাপন ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করে, জগৎ ও জীবনকে আনন্দময় করে তুলি।

প্রভুর ইচ্ছা পূর্ণ করি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি তাঁর রাসুল (সা.)-কে সঠিক পথনির্দেশ ও সত্য বিধান সহকারে পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি তাঁকে সব বিধানের ওপর বিজয়ীরূপে প্রতিষ্ঠিত করবেন। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’(সুরা-৪৮ ফাতহ, আয়াত: ২৮)

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

    [email protected]