প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে নিয়মিত বার্ষিক সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। সেখানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় স্থান করে নেওয়া শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার হিসেবে অনেক সময় মেলামাইন অথবা কাঁচের প্লেট, গ্লাস দেওয়া হয়ে থাকে। বিষয়টা যে এখনই চোখে পড়লো ব্যাপারটা এমনও না।
সে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনোটায় না কোনোটায় অনেকেই পড়ে আসছি এবং পুরস্কার হিসেবে প্লেট, গ্লাসও পেয়ে এসেছি। যদিও এই পুরস্কারের চল অনেক আগে থেকেই চলমান। কিন্তু এখন এ পর্যায়ে এসে বিষয়টা চোখে ভিন্নভাবে ধরা পড়লো এবং ভাবার এক বিষয়ে পরিনত হলো।
কথা হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থালাবাটি পুরস্কার হিসেবে থাকবে কেন? পুরস্কার হবে বই ও পরিবেশকেন্দ্রিক। কেননা শিক্ষার উদ্দেশ্যই হলো আচরণের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন। আর এই আচরণের পরিবর্তন আসবে এই বই থেকে।
প্লেট আর গ্লাস হয়তো ব্যবহার হবে সর্বোচ্চ এক বছর বা দু’বছর অথবা আলমারিতে শোভা পাবে। বিষয়টা নিয়ে অন্যভাবে ভেবে দেখুন তো। যদি পুরস্কার হিসেবে প্লেট না হয়ে বই হয় তাহলে কেমন হয়? বইটা তার কাছে অনেক দিন থাকবে। বইটি পড়ে সে সমৃদ্ধ হবে।
বই পড়ার মাধ্যমে জ্ঞান চর্চা হয়। দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। এর ফলে জীবনে পরিবর্তন আসে। আশপাশের মানুষের মধ্যে ও সমাজেও পরিবর্তন আনে। সমাজ থেকে সেই পরিবর্তন ক্রমে ক্রমে দেশ এবং দেশ থেকে সেই পরিবর্তন বিশ্বকেও ছুঁয়ে ফেলবে। এমনটা সম্ভব নয় কী? ভেবে দেখুনতো কতোই না ভালো কিছু হবে। হ্যাঁ, সত্যি বই ঠিক এমনিভাবে বিশ্বকে বদলে দিতে পারে। এই ক্ষমতা বইয়ের আছে। বই পড়ুয়া মানুষের আছে এবং বইয়ের লেখকদের তো আছেই।
আমাদের প্রয়োজন শুধু এসব মানুষকে বই পড়ার সুযোগ করে দেওয়া। ওরাইতো আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। এরাই তো এই দেশ, সমাজ ও জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করবে। দেশ ও দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে পুরস্কার হিসেবে থালাবাটির পরিবর্তে বই দেওয়া এখন সময়ের দাবি। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তায় এমন মহৎ উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব। মানুষ চাইলে অনেক কিছু করতে পারে। আসুন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে থালাবাটি দেওয়ার সংস্কৃতি উঠিয়ে বই পুরস্কারের সংস্কৃতি নিয়ে আসি।
‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’—সেই শিক্ষার বীজ যেসব যায়গা থেকে বপন হয়, সেসব যায়গায় বইয়ের সুগন্ধ ছড়িয়ে দিতে হবে। তখনই সেই বীজ থেকে ভালো এবং উচ্চ গুণাগুণ সমৃদ্ধ ফসল আশা করা যাবে। আসুন বিষয়টা নিয়ে ভাবি।
রুবেল আহমেদ
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ