আয়মান-মুনজেরিনের বিয়ে যে কারণে আমাদের আশাবাদী করে তোলে

একসঙ্গে জীবন শুরু করলেন আয়মান সাদিক ও মুনজেরিন শহীদ
ছবি : ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

একসঙ্গে জীবন শুরু করলেন দেশের তরুণ সমাজের দুই উজ্জ্বল মুখ আয়মান সাদিক ও মুনজেরিন শহীদ। গত শুক্রবার বিকেলে ঢাকার একটি মসজিদে তাঁদের বিয়ে হলো। বিয়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভেসে গেল তাঁদের ছবিতে। সে ছবিতে দুজনকে অন্য রকম সুন্দর দেখাচ্ছিল। এর কারণ হয়তো এ-ই, তাঁরা কেউই আড়ম্বরপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতায় ভেসে যাননি। দুজনেরই পোশাক ছিল মার্জিত, চেহারায় ছিল মাধুর্য। দুজনকেই প্রাণবন্ত আর খুশি দেখাচ্ছিল।

খ্যাতিমান হয়েও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন কাজ। আমাদের সমাজে এ রকম উদাহরণ আছে, তবে কম। একটু জনপ্রিয় হলে বা দু-পাঁচজন লোক যদি চেনে, যেচে কথা বলতে চায় বা অটোগ্রাফ নিতে আসে, দম্ভে আমাদের অনেকেরই পা মাটিতে পড়ে না। এদিক থেকে এ তরুণ ব্যতিক্রম। আয়মান সাদিককে দূর থেকে পর্যবেক্ষণে এমনই মনে হয়েছে। একই কথা বলতে হবে মুনজেরিন শহীদের বেলাতেও। গত পাঁচ থেকে সাত বছরে অনলাইন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টেন মিনিট স্কুল ছাড়াও দুজনের অসংখ্য কথাবার্তা ও আলোচনা দেখেশুনে তাঁদের সম্পর্কে এমন কথা বলাই যায়।

সে ক্ষেত্রে আয়মান ও মুনজেরিনের গাঁটছড়া বাঁধার মধ্যে অন্য রকম ইতিবাচক বার্তা রয়েছে। সেই জায়গা থেকেই এই কলাম লেখার অবতারণা।

আয়মান সাদিক টেন মিনিট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ২০১৫ সালে। পরবর্তী সময়ে পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে অনেকেই অনলাইন স্কুলটির পাশে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু শুরুটা করেছিলেন আয়মান নিজেই, বলা যেতে পারে ঝুঁকি নিয়ে। কিন্তু তিনি জানতেন, কিছু একটা হতে পারে। বিশ্বাস রেখেছিলেন, কারণ তাঁর দূরদৃষ্টি ছিল। আজ টেন মিনিট স্কুলের নাম জানে না বা এদের ভিডিও দেখেনি, এমন তরুণ-তরুণী এ দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আয়মান মেধাবী ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে লেখাপড়া করেছেন।

আর দশটা তরুণের মতো কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে সুখী জীবন কাটাতে পারতেন অনায়াসে, কিন্তু সেই নিজেকে নিয়ে বেঁচে থাকার জীবন তিনি বেছে নিতে চাননি। শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন, শিক্ষকই হয়েছেন। প্রচলিত শিক্ষক নন, অনলাইনে মাধ্যমে ভিন্ন ধরনের শিক্ষক। প্রচলিত শিক্ষক ক্লাসে বক্তৃতা করেন, ৫০ জন শিক্ষার্থী শোনে। আয়মান অনলাইনে বক্তৃতা করেন, ৫০ হাজার শিক্ষার্থী শোনে। টেন মিনিট স্কুলকে বাদ দিয়ে আজ বাংলাদেশে অনলাইন মাধ্যমের শিক্ষাকে চিন্তা করা যায় না।

প্রিয় আয়মান ও মুনজেরিন, আপনাদের যুগলজীবন সুখের হোক। পাশাপাশি আমরা আশা করি, তরুণদের শেখানোর যে পথে হাঁটা আপনারা শুরু করেছেন, সে পথ ধরে অনেক দূর, বহুদূর যাবেন। এখনো অনেক কাজ বাকি। তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। অদক্ষতা হতাশার জন্ম দেয়। আপনারা এ দেশের তরুণদের আশা হয়ে উঠুন।

কেবল এই ওয়েবসাইট নয়, বলা যেতে পারে ঢাকাসহ সারা দেশেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁর অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য তরুণদের অনেকেই পছন্দ করেন। তরুণদের ইতিবাচক চিন্তা তৈরির ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা রয়েছে।

একই কথা বলতে হবে মুনজেরিনের ক্ষেত্রেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন। এখন অক্সফোর্ডে পড়ছেন শতভাগ স্কলারশিপ নিয়ে। অনেক বছর ধরেই তিনি অনলাইন মাধ্যমে তরুণদের ইংরেজি শেখানোর কাজ করছেন। তিনি জানেন, এই ইংরেজি নিয়েই যত বিপত্তি। স্কুলের পড়া শেষ হয়, শুরু হয় কলেজজীবন। কলেজজীবন শেষ হয়, শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়জীবন।

একসময় বিশ্ববিদ্যালয়জীবনও শেষ হয়; কিন্তু ইংরেজি আর শেখা হয় না। ইংরেজি বলতে গেলে গলা শুকিয়ে যায়, লিখতে গেলে শব্দ খুঁজে পাওয়া যায় না, সারাক্ষণ ভয়, ‘গ্রামাটিক্যাল মিসটেক’ হলো কি—বাংলাদেশের লাখো তরুণের প্রায় অভিন্ন সমস্যা। অনেকেই কর্মজীবনে এসেও ইংরেজি শেখার চেষ্টা করেন। আবার কেউ আছেন, বলতে পারেন কিন্তু লিখতে পারেন না। এসব জায়গায় কাজ করছেন মুনজেরিন। আমি নিজেও তাঁর একাধিক ভিডিও দেখেছি। হাসিমুখে খুব আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করেন। যারা শিখতে চায়, তাদের মনের মধ্যে প্রবেশ করার জাদুকরি ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। মুনজেরিনের কাজ পছন্দ না করে উপায় নেই।

আরও পড়ুন

এমন প্রেক্ষাপটে মুনজেরিন ও আয়মানের বিয়ে, একসঙ্গে পথচলার সিদ্ধান্ত অন্য রকম আশাবাদী করে তোলে। সমাজে ভালো কিছুর বার্তা দেয়।

বাংলাদেশের তরুণেরা শিখতে চায়। কিন্তু অনেকেই সময়-সুযোগ পায় না। অনলাইনে টেন মিনিট স্কুলে ক্লাস করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। কারণ, অনেক তরুণেরই স্মার্টফোন নেই। অনেকের পক্ষে টাকা খরচ করে কোর্স কেনা সম্ভব হয় না।

প্রিয় আয়মান ও মুনজেরিন, আপনাদের যুগলজীবন সুখের হোক। পাশাপাশি আমরা আশা করি, তরুণদের শেখানোর যে পথে হাঁটা আপনারা শুরু করেছেন, সে পথ ধরে অনেক দূর, বহুদূর যাবেন। এখনো অনেক কাজ বাকি। তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। অদক্ষতা হতাশার জন্ম দেয়। আপনারা এ দেশের তরুণদের আশা হয়ে উঠুন।

  • কাজী আলিম-উজ-জামান প্রথম আলোর উপবার্তা সম্পাদক
    [email protected]