স্মৃতিশক্তির সঙ্গে কি গদিও হারাতে যাচ্ছেন বাইডেন

জো বাইডেন

জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য উপযুক্ত নন—এ বিষয় যত স্পষ্ট হয়ে উঠছে, ততই ডেমোক্র্যাটদের শিবিরে তত বেড়ে চলেছে কানাঘুষা।

স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট হুর গত সপ্তাহে বিচার বিভাগে যে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন, তাতে তিনি বাইডেনকে ‘দুর্বল স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন একজন সহানুভূতিশীল বয়স্ক ব্যক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বাইডেনের স্মৃতিশক্তিকে ‘অস্পষ্ট’ ‘ত্রুটিপূর্ণ’ এবং ‘কমজোরি’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর ওই প্রতিবেদন জনসমক্ষে আসার পরই ডেমোক্র্যাট শিবিরে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।

মার্কিন শ্রেণিবদ্ধ গোপন নথিপত্র পরিচালনায় জো বাইডেনের কোনো অনিয়ম ছিল কি না, তা রবার্ট হুর তদন্ত করে দেখেছেন। প্রতিবেদনে বাইডেনকে এ ধরনের অনিয়মের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

তবে ওই প্রতিবেদনে বাইডেনকে অভিযুক্ত করা হলে তাঁর যে রাজনৈতিক ক্ষতি হতো, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে প্রতিবেদনটিতে বাইডেনের মানসিক সক্ষমতা সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়ার কারণে।

প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই উদারপন্থী মিডিয়া গোষ্ঠী বাইডেনের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার হুমকিকে মোকাবিলা করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

ডেমোক্রেটিক কৌশলবিদ হ্যাক শিয়েনকফ বিবিসিকে বলেছেন, সারা দেশে ডেমোক্র্যাটদের সব স্তরে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা তাদের বিদ্যমান ক্ষমতা হারাতে চায় না এবং তারা অবশ্যই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চায় না।

কিন্তু গণহত্যায় সহযোগিতা করা বাইডেনের প্রেসিডেন্ট পদ রক্ষার জন্য উদারপন্থী মিডিয়ার মরিয়া প্রচেষ্টা ৮১ বছর বয়সী বাইডেনের ‘মানসিক সীমাবদ্ধতা’কে আড়াল কিংবা ঝাপসা করে দিতে পারছে না।

ডেমোক্র্যাটদের জন্য এখন দুঃসময় যাচ্ছে। এমন সময়ে এই ধরনের একটি প্রতিবেদনের নথি সবার সামনে না এলে হয়তো তাদের জন্য ভালো হতো।

উল্টোপাল্টা ও ভুলভাল বলে যাওয়া এবং বয়সজনিত কারণে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনার জন্য ইতিমধ্যে বিখ্যাত হয়ে ওঠা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ মাসেও একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। তিনি এমন দুজন বিশ্বনেতার সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেছেন বলে দাবি করেছেন, যাঁরা বেশ কয়েক বছর আগেই মারা গেছেন।

হুরের জমা দেওয়া প্রতিবেদনের দাবিগুলো খণ্ডন করার জন্য ডাকা অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন মেজাজ হারিয়ে বলেছেন, তিনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সক্ষম। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি ভুল করে মিসরের প্রেসিডেন্ট সিসিকে ‘মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলন করার মাত্র এক দিন আগে ৭ ফেব্রুয়ারি মৃত এবং জীবিত দুজন বিশ্বনেতার নাম গুলিয়ে ফেলেছিলেন বাইডেন। নিউইয়র্কের একটি তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে তিনি বক্তৃতা করছিলেন। ওই সময় তিনি বলেন, ২০২০ সালে তাঁর জয় ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য যে চেষ্টা হয়েছিল, তা নিয়ে সেই সময় জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট কোহল তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

বাইডেন সেই সময়কার চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের কথা বোঝাতে যাচ্ছিলেন। হেলমুট কোহলের পক্ষে তখন বাইডেনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব ছিল না। কারণ, কোহল ২০১৭ সালেই মারা গেছেন।

এর আগে ৪ ফেব্রুয়ারি নেভাদায় এক অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের প্রয়াত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁকে তিনি গুলিয়ে ফেলেন।

বাস্তবতা হলো, বাইডেনের এই অপ্রীতিকর মূকাভিনয় আর কাঁহাতক সহ্য করা যায়? প্রধান প্রধান উদারপন্থী সংবাদমাধ্যম এবং ডেমোক্রেটিক অভিজাত গোষ্ঠীর জবাব হবে: যতক্ষণ বাইডেন নিরাপদে পুনর্নির্বাচিত না হবেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হবে।

সেখানে বাইডেন বলেন, সর্বশেষ সম্মেলনে ফ্রাঁসোয়া মিতেরার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মিতেরা ১৯৯৬ সালে মারা গেছেন।

স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে বাইডেনের স্মৃতিশক্তি স্থিতিশীল অবস্থায় নেই। কিন্তু বাইডেনপন্থী পণ্ডিতদের মতে, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের সহযোগী এবং উপদেষ্টারা দায়িত্বে থাকেন, ততক্ষণ বাইডেনের বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বলতা কোনো ব্যাপার নয়।

বাইডেনের একজন সমর্থক পণ্ডিত বলেছেন, বাইডেন যদি তাঁর উপদেষ্টাদের দ্বারা পরিচালিত হন এবং উপদেষ্টারা যদি সব ঠিকঠাকমতো চালাতে পারেন, তাহলে সেটি কি অগ্রহণযোগ্য কিছু হবে?

তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে রোনাল্ড রিগ্যানের শেষ দিনগুলোতে তিনি তাঁর উপদেষ্টাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন।

সে তুলনায় বাইডেনের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা অনেক ভালো আছে। কেউ তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কোনোভাবেই উদ্বিগ্ন নয়।

বাস্তবতা হলো, বাইডেনের এই অপ্রীতিকর মূকাভিনয় আর কাঁহাতক সহ্য করা যায়? প্রধান প্রধান উদারপন্থী সংবাদমাধ্যম এবং ডেমোক্রেটিক অভিজাত গোষ্ঠীর জবাব হবে: যতক্ষণ বাইডেন নিরাপদে পুনর্নির্বাচিত না হবেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হবে।

কিন্তু সাধারণ ভোটারদের কাছে যে বার্তা পৌঁছার তা পৌঁছে গেছে। বাইডেন বারবার হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছেন এবং বক্তব্য দিতে গিয়ে স্মরণশক্তির অভাবে কথার খেই হারিয়ে ফেলছেন। এটি একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা।

বিষয়টি সাধারণ মার্কিন জনগণ অনুধাবন করতে পারছে। পাশাপাশি গাজায় ইসরায়েলকে গণহত্যায় প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করায় আরব-আমেরিকান ভোটাররাও বাইডেনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন। তারও একটা প্রভাব ভোটে পড়বে।

সব মিলিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে বাইডেনের পক্ষে প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভবত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

● জো গিল ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস, মর্নিং স্টার এবং মিডল ইস্ট আই-এর কলাম লেখক

মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত