হজের সফরে দোয়া কবুলের অনন্য সুযোগ

হজের সফর পুরোটাই দোয়া কবুলের খাস সময়।
ফাইল ছবি: এএফপি

আমাদের জীবনের সব চাওয়া, সব প্রয়োজন আল্লাহর দরবারে পেশ করাই হচ্ছে দোয়া বা মোনাজাত। আল্লাহ অন্তর্যামী। তাঁর কাছে দোয়া করার জন্য কোনো ধ্বনি, শব্দ, বাক্য বা ভাষার প্রয়োজন নেই। তবে সম্ভব হলে কোরআন–সুন্নাহ থেকে বিদ্যমান কালাম দ্বারা আল্লাহর সমীপে দরখাস্ত আরজ করা উত্তম।

আল–কোরআনের সূচনাতেই সুরা ফাতিহায় দোয়া শেখানো হয়েছে, ‘আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই সাহায্য চাই।’ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন, আয়াত: ৬০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দোয়া ইবাদতের মগজ’। তিনি আরও বলেন, দোয়াই ইবাদত (বুখারি ও মুসলিম)। নবী (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দোয়া করে না, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৭৩)

মুমিনের সব দোয়া সব সময় কবুল হয়। হজের সফর পুরোটাই দোয়া কবুলের খাস সময়। দোয়া করার নিয়ম পদ্ধতি আল্লাহ তাআলা কোরআন করিমে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের রবকে ডাকো বিনীতভাবে ও সংগোপনে, নিশ্চয় তিনি সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না’

হজের শুরু হয় এই দোয়ার মাধ্যমে, ‘হাজির, আমি আপনার দরবারে, হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির, আপনার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির; নিশ্চয় সব প্রশংসা আপনার জন্য, সব নিয়ামত আপনার প্রদত্ত, আপনার রাজত্বে আপনার কোনো শরিক নেই।’ (মুআত্তা ইমাম মালিক: ৯৩২)

হজ বা ওমরাহর জন্য ইহরামের নিয়ত করা থেকে শুরু করে হজ ও ওমরাহ সম্পন্ন করে বাড়িতে ফিরে আসার পরও ৪০ দিন ধরে একজন হাজির দোয়া কবুল হয়। হজের সফরে এমন কিছু সময় ও স্থান রয়েছে, যে সময় ও স্থানে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, যে স্থানগুলোয় পূর্বেকার নবী-রাসুল, নবীজি (সা.), সাহাবায়ে কিরাম ও অলি-আউলিয়াদের দোয়া কবুল হয়েছিল। সেসব জায়গায় দোয়া করা বাঞ্ছনীয়।

মক্কা শরিফের সব স্থানে দোয়া কবুল হয়। সেসব স্থান হলো কাবা শরিফ, হাতিমে কাবা, মিজাবে রহমত, হাজরে আসওয়াদ, রোকনে হাজরে আসওয়াদ, রোকনে ইরাকি, রোকনে শামি, রোকনে ইয়ামানি, রোকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান, মুলতাজিম, কাবার দরজা, মুস্তাজার, মাকামে ইব্রাহিম, জমজম কূপ ও মাতাফ এবং মসজিদুল হারাম ও সম্পূর্ণ হারাম শরিফ।

হজের প্রতিটি আমলে বিশেষ বিশেষ দোয়া রয়েছে। তাওয়াফের প্রতি চক্করের শেষে পড়তে হয়, ‘হে আল্লাহ আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং দোজখের আগুন থেকে আমাদের রক্ষা করুন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২০১)

আরাফাত, জাবালে রহমত ও মসজিদে নামিরায় দোয়া কবুল হয়। আরাফাত ময়দানে হজরত আদম (আ.)-এর সঙ্গে হজরত হাওয়া (আ.)-এর পুনর্মিলন হয় এবং তাঁরা স্বীয় ভুলের জন্য সেখানে আল্লাহ তাআলার দরবারে এই মোনাজাত করেন, ‘হে আমাদের রব! আমরা আমাদের সত্তার প্রতি জুলুম করেছি, আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন ও দয়া না করেন; অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ২৩) তাঁদের সে দোয়া কবুল হয়; সে জন্য হাজিরা এই স্থানে সমবেত হয়ে এই দোয়া করে থাকেন।

মুজদালিফা, মিনা ও মসজিদে খায়েফ দোয়া কবুলের ঐতিহাসিক স্থান। মসজিদে খায়েফ মিনা প্রান্তরে অবস্থিত। এখানে আদিকাল থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত ৭০ জন নবী–রাসুল (আ.) আল্লাহর ইবাদত–বন্দেগি করেছেন। মিনা প্রান্তরে অবস্থিত জামরাত বা পাথর মারার স্থানগুলো, যা ছোট শয়তান (জোমরায়ে উলা), মেজ শয়তান (জোমরায়ে উস্তা), বড় শয়তান (জোমরায়ে আকাবা) নামে পরিচিত। এখানে দোয়া কবুল হয়।

মুমিনের সব দোয়া সব সময় কবুল হয়। হজের সফর পুরোটাই দোয়া কবুলের খাস সময়। দোয়া করার নিয়ম পদ্ধতি আল্লাহ তাআলা কোরআন করিমে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের রবকে ডাকো বিনীতভাবে ও সংগোপনে, নিশ্চয় তিনি সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫) ‘তুমি তোমার রবকে স্মরণ করো মনে মনে, কান্নাভরে, সশঙ্ক চিত্তে, অনুচ্চ স্বরে; সকাল ও সন্ধ্যায় আর তুমি গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ২০৫)

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

    [email protected]