মাহে রবিউল আউয়াল যে কারণে বরকতময়

মসজিদে নববি, মদিনা

মাহে রবিউল আউয়াল অত্যন্ত বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ মাস। এ মাসেই পৃথিবীতে শুভাগমন করেন মানবতার মুক্তিদূত, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, আখেরি নবী ও সর্বশেষ রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)। এ মাসেই তিনি প্রিয় জন্মভূমি মক্কা মোকাররমা থেকে মদিনা মনোয়ারায় হিজরত করেন। আবার এ মাসেই তিনি ইন্তেকাল করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ইমানের পূর্বশর্ত। তাই মাহে রবিউল আউয়াল হলো মুমিনের ভালোবাসার মাস। ভালোবাসা প্রকাশ পায় তাঁর নির্দেশ পালন ও অনুসরণের মাধ্যমে। পবিত্র কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘বলুন (হে রাসুল সা.), যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ করো; আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৩১) প্রিয় নবীজি হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, পুত্র এবং সবকিছুর চেয়ে প্রিয় হব।’ (সহিহ বুখারি: হাদিস ১৩, ১৪)

রবিউল আউয়াল হিজরি চান্দ্রবর্ষের তৃতীয় মাস। রবি অর্থ বসন্ত আর আউয়াল মানে প্রথম। সুতরাং রবিউল আউয়াল হলো আরবের বসন্তের প্রথম মাস। বসন্তকালে প্রকৃতি ফুলে ফলে সুশোভিত হয়, নতুন জাগরণের সূচনা ঘটে, পরিবেশ প্রশান্ত ও আনন্দময় হয়ে ওঠে। (লিসানুল আরব)

রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস। মুসলিম সমাজে দিনটি ‘ফাতিহায়ে দোয়াজদাহুম’ নামে পরিচিত। দোয়াজদাহুম ফারসি শব্দ, যার অর্থ ১২, অর্থাৎ ১২ তারিখের ফাতিহা অনুষ্ঠান।

রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস। মুসলিম সমাজে দিনটি ‘ফাতিহায়ে দোয়াজদাহুম’ নামে পরিচিত। দোয়াজদাহুম ফারসি শব্দ, যার অর্থ ১২, অর্থাৎ ১২ তারিখের ফাতিহা অনুষ্ঠান। পরে এই দিন ‘মিলাদুন্নবী (সা.)’ নামে প্রসিদ্ধ হয়।

পরে এই দিন ‘মিলাদুন্নবী (সা.)’ নামে প্রসিদ্ধ হয়। এর অর্থ নবীজি (সা.)-এর জন্মোৎসব। পরবর্তী সময়ে এর সঙ্গে ‘ঈদ’ শব্দ যোগ হয়ে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)’ বলা হয়, অর্থাৎ মহানবী (সা.)-এর জন্মোৎসব। এ সময় আরেকটি পরিভাষাও প্রচলিত হয়েছে, তা হলো ‘সিরাতুন্নবী (সা.)’, অর্থাৎ নবী (সা.)-এর জীবন ও কর্মের আলোচনা। এ দিবসে অনেক স্থানে জশনে জলুশ বা শোভাযাত্রা ও আনন্দ র‍্যালি আয়োজন করা হয়।

মিলাদ শব্দের অর্থ জন্মলগ্ন, জন্মক্ষণ বা জন্ম নিয়ে আলোচনা। প্রচলিত অর্থে মিলাদ বলতে বোঝায় হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও জীবনী আলোচনা এবং তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করা। পবিত্র কোরআন মাজিদে আছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা নবী (সা.)-এর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতাগণ তাঁর জন্য দোয়া করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করো এবং যথাযথ সালাম পেশ করো।’ (সুরা-৩৩ আহযাব, আয়াত: ৫৬)

সিরাত অর্থ জীবনচরিত বা জীবন আদর্শ। সিরাতুন্নবী (সা.) মানে হলো নবীজি (সা.)-এর জীবন ও কর্ম আলোচনা, পর্যালোচনা ও অনুশীলন করা। মিলাদুন্নবী (সা.) ও সিরাতুন্নবী (সা.)-এর মূল শিক্ষা হলো কালেমায়ে তাইয়েবা, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর প্রেরিত রাসুল)। এ কালেমার গভীর অর্থ হলো, ‘আমি বিশ্বপ্রভু আল্লাহর প্রতি ইমান আনলাম এবং তাঁর সব আদেশ-নিষেধ মেনে নিলাম।’ (ইমানে মুজমাল)

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি সেই মহান প্রভু, যিনি তাঁর রাসুলকে প্রেরণ করেছেন সঠিক পথনির্দেশ ও সত্য ধর্মসহ, যাতে এই ধর্মকে বিজয়ী করেন সব ধর্মের ওপর, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।’ (সুরা-৯ তাওবা, আয়াত: ৩৩; সুরা-৬১ ছফ, আয়াত: ৯) আরও বলা হয়েছে, ‘রাসুল (সা.) তোমাদের যা দিয়েছেন, তা গ্রহণ করো, আর যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকো।’ (সুরা হাশর: ৭)

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

  • যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

    [email protected]