তিন বন ধ্বংস হয়েছে যেসব প্রকল্পে

আজ ২১ মার্চ বিশ্ব বন দিবস। এবার এ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো, ‘বন ও উদ্ভাবন: উন্নততর বিশ্বের জন্য নতুন সমাধান সূত্র’। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে কীভাবে নানা প্রকল্পের নামে কৃত্রিম বন সৃষ্টি হলো? কী করে বিনাশ হলো প্রকৃতি? এ লেখায় সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজেছেন পার্থ শঙ্কর সাহা

কক্সবাজারে বিলীন হয়ে যাওয়া চকরিয়া সুন্দরবনের সাক্ষী এই দুই সুন্দরী গাছ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সুন্দরবনের জায়গায় গড়ে উঠেছে চিংড়ি ঘের ও লবণ মাঠ। সুন্দরী গাছকে বাঁচিয়ে রাখতে বন বিভাগ গাছ দুটিতে ‘সংরক্ষিত’ প্ল্যাকার্ড লাগিয়েছে।ছবি : এস এম হানিফ

নেরে দালবত (৭৬) এখন আর মধুপুর বনটাকে চিনতে পারেন না। মান্দি জাতিগোষ্ঠীর সাবেক এই স্কুলশিক্ষকের জন্ম টাঙ্গাইলের মধুপুর বনের গাইরা গ্রামে। এই বন বাংলাদেশের অনন্য মাতৃসূত্রীয় মান্দি বা গারো জাতিগোষ্ঠীর আবাসস্থল। নেরে দালবতের ছোটবেলায় দেখা এ বনের বড় বড় শাল, বট ও নাম না-জানা শত শত প্রজাতির গাছ এখন উধাও। বড় একটা এলাকাজুড়ে এখন আকাশিয়া গাছের ‘লাগানো বন’। আছে আগ্রাসী প্রজাতির রবারগাছ। মাইলের পর মাইল বন কেটে তৈরি হয়েছে কলা-আনারসের খেত। কিন্তু ছোটবেলায় দেখা বন এখনো তাঁর স্মৃতিতে রয়ে গেছে।

নেরে দালবতের কথা, ‘বনে এমন জায়গা ছিল, সূর্যের আলো পড়ত না। আমি ছোটবেলায় বনে জুমচাষ দেখেছি। ময়ূর পর্যন্ত ছিল। আমাদের খাবারের সংস্থানও হতো বনের মাধ্যমে।’ থাজা, আমপেংসহ নানা প্রজাতির আলুর কথা বললেন নেরে। এখন আর এগুলো খুঁজেও পাওয়া যায় না।

আরও পড়ুন

সত্তরের দশকের শেষাবধি মধুপুর বনের অবস্থা মোটামুটি ভালোই ছিল। আশির দশকের শেষে বিদেশি ঋণে সামাজিক বনায়নের নামে বনের বিপুল গাছপালা কেটে সেখানে বিদেশি প্রজাতির ইউক্যালিপটাস ও আকাশিয়া গাছের বিস্তার ঘটে। নেরে দালবতের কথা, ‘বনের খারাপটা হইতে শুরু করল সামাজিক বন আইস্যা।’

মধুপুর বনের চেহারাই শুধু পরিবর্তন হয়নি, বনবাসী মানুষের জীবনেও এসেছে কষ্ট। এই স্কুলশিক্ষক ১৪টি বন মামলার আসামি। ১৩ বন মামলাই খারিজ হয়ে গেছে। একটি এখন আছে। একটি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০০৪ সালে ইকোপার্ক করতে চেয়েছিল বন বিভাগ। তখন যাঁরা বাধা দিয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয় বন বিভাগ। নেরে তাঁদেরই একজন।

শুধু মধুপুরের বন নয়, বন এবং বননির্ভর মানুষের দুঃখগাথা ছড়িয়ে আছে কক্সবাজারের চকরিয়া সুন্দরবন ও পার্বত্য চট্টগ্রামেও। এসব এলাকাতেও উন্নয়নের নামে হয়েছে বন বিনাশ।

মধুপুরে ধারাবাহিকভাবে বন ধ্বংসের চিত্র

মধুপুর বন বিনাশ

আশির দশকের শেষের দিকে থানা বনায়ন ও নার্সারি উন্নয়ন প্রকল্পের (টিএএনডিপি) অধীন মধুপুর বনে ‘সামাজিক বনায়ন’ শুরু হয়। এতে অর্থায়ন করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এর লক্ষ্য ছিল আগে থেকেই ক্ষয়প্রাপ্ত বা দখলকৃত জমিতে জ্বালানি কাঠ উৎপাদন।

 এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় থেকে মধুপুর বন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত বিলীন হতে শুরু করে। স্থানীয় প্রজাতির গাছ কেটে একচেটিয়াভাবে বিদেশি প্রজাতির গাছ লাগানো করা হয়। সামাজিক বনায়নের প্রথম ধাপে এসব বিদেশি প্রজাতির গাছের মধ্যে আকাশিয়া ও ইউক্যালিপটাস অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ বনে ১৯৮৬ সালে বিদেশি প্রজাতির রবার গাছের চাষ শুরু হয়েছিল।

প্রাকৃতিক বনের গাছ কেটে কথিত সামাজিক বনায়নে চাষ করা গাছ ১০ বছরের মধ্যে কেটে ফেলার কথা। গাছ কাটা হলে ফাঁকা জমি দখল করে তাতে ব্যাপকভাবে কলা, আনারস ও পেঁপের মতো অর্থকরী ফল ও ফসলের চাষ শুরু করে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভূমিদস্যুরা। সাম্প্রতিক সময়ে মসলা (বিশেষ করে আদা ও হলুদ) চাষও বনভূমির উল্লেখযোগ্য এলাকা এবং গারো ও অন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের দখলে থাকা জমি দখল করে নিয়েছে। এখন মধুপুরের হাজার হাজার একর জমি এবং শালবনের বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছে আনারসের খেত। উদ্বেগজনকভাবে এর চাষ বাড়ছে। এসবের আবাদ নিয়ন্ত্রণ করছে বহিরাগত ও ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন

তবে বন বিভাগ মধুপুরে বন বিনাশের ভিন্ন কারণের কথা বলছে। টাঙ্গাইল বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাজ্জাদুজ্জামান বলেন, বন বিনাশে মূলে আছে গারোদের বসতি স্থাপন। গারোদের সঙ্গে মিলে বহিরাগতদের বন ধ্বংস। পরে বাধ্য হয়ে সেখানে সামাজিক বনায়ন করা হয়েছে। তবে বন বিভাগেরও কিছু দায় আছে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

বনের বিনাশ নিয়ে বন বিভাগ যতই সাফাই দিক, উপগ্রহ চিত্র কিন্তু মধুপুরের বনে সামাজিক বনায়নের কুফল স্পষ্ট করেছে। বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) দুই গবেষক এম এ সালাম এবং এম এ টি প্রামাণিকের করা ‘ফরেস্ট কভার চেঞ্জ অ্যানালিসিস ইউজিং রিমোট সেনসিং টেকনিকস ইন মধুপুর শাল ফরেস্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় এ চিত্র পাওয়া যায়।

গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৭৩ সালে মোট বনে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি শালবনে আচ্ছাদিত ছিল। ২০১৫ সালে এর পরিমাণ দাঁড়ায় আড়াই হাজার হেক্টরের কিছু বেশি। বনের প্রায় ৬০ শতাংশ জমি রবার বাগান, আনারস বাগান কিংবা আগ্রাসী প্রজাতির আকাশিয়াগাছে আচ্ছাদিত হয়ে গেছে।

মধুপুরের স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানবাধিকার সংগঠন জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক বলছিলেন, বিদেশি অর্থায়নে লাগানো গাছ ও অর্থকরী ফসল থেকে কিছু মানুষ অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত লাভবান হচ্ছে। কিন্তু বনটি হারিয়েছে এবং হারাচ্ছে তার সম্পদ।

১৯৭৬ সালে চকরিয়া সুন্দরবনের আয়তন ছিল ১৯ হাজার ৬১৭ একর। ১৯৯৫ সালে বনের আয়তন কমতে কমতে ৮৬৬ একরে দাঁড়ায়

চকরিয়া সুন্দরবন, যেখানে আর বন নেই

মধুপুরে তবু শালবনের ছিটেফোঁটা অবশিষ্ট আছে। কিন্তু কক্সবাজারের উপকূলবর্তী চকরিয়ার সুন্দরবনে এখন আর কোনো গাছ নেই। ১৯৭২ সালেই এখানে এক অনন্যসুন্দর বন ছিল। এর আয়তন সে সময় ছিল ১৯ হাজার একরের বেশি। ১৯৮২ সালে সেখানে এডিবির অ্যাকুয়া কালচার প্রকল্পের নামে চিংড়ি চাষের প্রকল্প শুরু হয়। এর ফলে বন কেটে শত শত চিংড়িঘের গড়ে ওঠে।

বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) সেখানে মাছ চাষের প্রকল্প নিয়ে আসে ১৯৮৬ সালে। সে সময় চিংড়ির চাষের জন্য ২৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে তাদের প্রকল্পের মাধ্যমে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বনের এলাকায় ৫০০টি চিংড়িঘের হয়। প্রতিটির আয়তন ছিল ১০ একর।

এসব প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে সমৃদ্ধ বনটি ধীরে ধীরে একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়। এই বন বিনাশ চোখের সামনেই দেখেছেন চকরিয়া উপজেলার চিরিংগা ইউনিয়নের চরণদ্বীপ এলাকার বাসিন্দা আবদুল মালেক (৭৬)। তিনি প্রথম আলোকে বলছিলেন, আশির দশকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চোখের সামনে সুন্দরবনের কেওড়া, বাইন ও সুন্দরীগাছ কেটে মাছের ঘের করা হয়েছে। এখন বন বলতে কোনো কিছু নেই। বনের জায়গায় লবণের মাঠ ও মাছের ঘের তৈরি করা হয়েছে।

চকরিয়ার বন ১৯৭৯ সাল পর্যন্তও অটুট ছিল। ১৯৮২ সালে বনের উত্তর-পশ্চিমাংশের খানিকটা উধাও হয়ে বনের পরিমাণ দাঁড়াল ৮ হাজার ৬৫০ একরে। ১৯৯৫ সালে পুরো বন উধাও হয়ে গেছে। ১৯৯৪ সালে বিশ্বব্যাংক তাদের প্রকল্প সমাপনী প্রতিবেদনে বলেছে, ‘প্রকল্পের ফলে কোনো পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দেয়নি; বরং দীর্ঘ মেয়াদে জলাবদ্ধতার মতো সমস্যা মিটেছে। কোনো সুন্দরবন কাটা হয়নি।’ তবে ১৯৮৯ সালে এডিবির প্রতিবেদনে অবশ্য ৮০০ হেক্টর বন উজাড় হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল-আমিন দীর্ঘদিন ধরে উপকূলীয় বন নিয়ে গবেষণা করেন। চকরিয়া সুন্দরবনের বিনাশ তাঁর কাছে ‘এক বড় পরিবেশগত বিপর্যয়’। তিনি বলছিলেন, এ বন ছিল অসংখ্য প্রজাতির গাছ ও প্রাণীর আবাসস্থল। এর বাইরে এ বনের বড় গুরুত্ব ছিল, এটি প্রাকৃতিক ঝড়ঝঞ্ঝায় বর্ম হিসেবে কাজ করত। ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজার উপকূলে যে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ ও সম্পদহানি হয়েছে, তা হয়তো রোধ করা যেত, যদি ওই বন থাকত।

বন কেটে উজাড় করার পর বছর পাঁচেক চিংড়ির উৎপাদন অপেক্ষাকৃত ভালো হয়েছিল। তারপর থেকেই এখানে কমতে থাকে চিংড়ির উৎপাদন। গবেষণার ওপর ভিত্তি করে মোহাম্মদ আল-আমিন বলেন, ‘এর কারণ হলো বন কাটায় যেসব অণুজীব নষ্ট হয়ে গেছে, তা আর ফিরে আসেনি। দিন দিন সেগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। মাটির গুণগত মান নষ্ট হয়েছে। এর মাশুল আমাদের দিতে হবে।’

রাঙামাটির ঝগড়াবিল মৌজার তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ার রাবার গাছের বাগান।
ছবি : সুপ্রিয় চাকমা

রবার ও নরম কাঠের গাছে বিপন্ন পাহাড়ের বন

নোয়াপতং ও বাইশারি বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুটি ইউনিয়ন। এ দুই এলাকার মধ্যে নোয়াপতংয়ের মানুষ দেখেছেন, কীভাবে প্রাকৃতিক বন নির্মূল করে সেখানে কর্ণফুলী কাগজের কারখানার কাঁচামালের জন্য নরম কাঠের বনায়ন শুরু হয়। আর বাইশারির চাক জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বিপন্নতা বাড়িয়েছে রবারের চাষ।

১৯৭০–এর দশকে দেশে রবারের চাষ শুরু হয়। এডিবির পরামর্শ ও সহায়তায় এ প্রকল্প পার্বত্য চট্টগ্রামেও চলে। পাহাড়ের ৩৫ হাজার একর এলাকার বন কেটে রবারের চাষ চলছে। এখানে আর কোনো প্রাকৃতিক বন ফিরে আসবে না। পার্বত্য এলাকায় বন বিভাগ ১৯৭৮ সালে করে কাপ্তাই পাল্পউড বিভাগ আর ১৯৮২ সালে হয় বান্দরবান পাল্পউড বিভাগ। পাল্প বা কাগজের মণ্ডের জন্য নরম কাঠের সরবরাহ করতেই এই দুই বিভাগের উদ্ভব। দুই বিভাগ মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ ৬৪ হাজার একর জমি পায়।

সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (সিডা) এবং বাংলাদেশ সরকার মিলে পাহাড়ে প্রথম পাল্পউডের প্রকল্প নেয়। এর নাম ছিল ‘ডেভেলপমেন্ট অব পাল্পউড প্লান্টেশন ইন দ্য সিএইচটি ফরেস্টস’। এর ভুক্তভোগী পাহাড়ি মানুষ। নোয়াপতং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান শম্ভু তঞ্চঙ্গ্যা প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘আমাদের প্রাকৃতিক বন কেটে পুরো এলাকায় নরম সব কাঠ লাগানো হলো। এখন সেই বনও নষ্ট হয়েছে। মাঝে প্রাকৃতিক বনটি শেষ হয়েছে।’

বন বিনাশ, দায় কার

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) পরিচালক ফিলিপ গাইন তিন দশকের বেশি সময় ধরে দেশের বনাঞ্চলে বিদেশি প্রকল্পের ক্ষতি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘অপরাধ করে নিষ্কৃতি পাওয়ার যে সংস্কৃতি আমাদের দেশে চালু আছে, তার সুযোগ নিয়ে ঋণদাতা সংস্থাগুলো এসব অন্যায় প্রকল্প চালিয়ে যায়। এর অবসান আজও হয়নি।’

প্রাকৃতিক বন নষ্ট করে যেসব প্রকল্প হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন দেশি-বিদেশি অনেক পরামর্শক। বিদেশি দাতারা অর্থ দিয়েছে, সরকার নিয়েছে। তাই এখানে দেশের নীতিনির্ধারণে যাঁরা ছিলেন বা আছেন, তাঁদের দায় আছে বলে মনে করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।

সাবের হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন,‘বন বিভাগসহ আমাদের অনেক দপ্তরেরই প্রকল্পের বিষয়ে আগ্রহ থাকে। অনেক সময় আমরা ভালো-মন্দ বিচার করি না। এর কারণ হয়তো আমাদের দুর্বলতা। কিন্তু নিজেরা সক্ষম হলে এগুলো আর আসবে না। আমরা এখন সেই চেষ্টাই করছি।’

পরিবেশ আন্দোলনের ক্ষেত্রে ‘দূষণকারীর দেনা’ বলে কথা আছে। অর্থাৎ যার কারণে পরিবেশ ধ্বংস, তার দায় আর্থিক মূল্যে মেটাতে হবে। বন উজাড় করে যেসব প্রকল্প হয়েছে, তার ক্ষতির দায় নেওয়া কি সম্ভব নয়?

এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বিদেশি সংস্থা, মন্ত্রণালয়ের ‘প্রকল্পপ্রিয়’ কর্মকর্তা এবং বনসংলগ্ন এলাকার স্থানীয় সুবিধাবাদী চক্রের কারণে দেশের বনাঞ্চলে একের পর এক পরিবেশবিনাশী প্রকল্প চলছে। এর পেছনে আছে এই ঔপনিবেশিক মানসিকতা।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান আরও বলেন, দেখা গেছে, বিদেশ থেকে অতি নিম্নমানের পরামর্শক এসে এসব প্রকল্পে কাজ করেন। তাদের সঙ্গে দেশেরও সেই মানের লোক জুটে যায়। আর তাদের কারও কোনো জবাবদিহি থাকে না। তবে জোরালো প্রতিবাদ, উন্নত মানের গবেষণার কারণে একাধিক ঋণদাতা সংস্থা কখনো কখনো তাদের প্রকল্প বাতিল করেছে—এমন নজিরও আছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশে উন্নত গবেষণা এবং গবেষক তৈরির ক্ষেত্রে নজর নেই।