নারীদের সিয়াম সাধনা ও রমজানের আমল

ইবাদত ও প্রতিদানে নারী ও পুরুষের রয়েছে যথাযথ যৌক্তিক অধিকার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি কোনো বিশ্বাসী নারী বা পুরুষ সৎকর্ম করে, অবশ্যই তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ১২৪) মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোনো নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করে, রমজান মাসে রোজা পালন করে, নিজের সম্ভ্রম ও ইজ্জত–আবরু রক্ষা করে এবং শরিয়াহসম্মত বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করে; সে জান্নাতের আটটি দরজার যেকোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ (আবুদাউদ, ইবনে হিব্বান: ৪১৬৩, আল মুজামুল আওসাত, তাবরানী: ৪৭১৪; সহিহ আলবানী)।

যাবতীয় ইবাদত নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদিতে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমান সুযোগ ও দায়িত্ব রয়েছে। নারীরা রোজা পালনের পাশাপাশি তারাবিহ নামাজও পড়বেন এবং রমজানের অন্যান্য সুন্নত আমল যথা পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও ইতিকাফ ইত্যাদিও আমল করবেন।

মায়েরা রোজা অবস্থায় শিশুকে দুধ পান করালে রোজার কোনো প্রকার ক্ষতি হয় না এবং অজুও ভঙ্গ হয় না। মায়েদের স্তন্য থেকে দুগ্ধ নিঃসরণ হলেও রোজার বা অজুর ক্ষতি হয় না। কাটাছেঁড়া বা ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বা তরল বের হলে রোজার কোনোরূপ ক্ষতি হয় না, তবে অজু ভঙ্গ হবে। বমি হলেও রোজার ক্ষতি হয় না, এতে অজু ভঙ্গ হয়। রোজা শুধু পানাহার ও রতিক্রিয়া দ্বারা বিনষ্ট হয়। নারীদের রজঃস্রাব বা প্রসবোত্তর স্রাব হলে রোজা ভঙ্গ হবে। এই রোজা পরে কাজা আদায় করতে হবে; কাফফারা আদায় করতে হবে না। সন্তানসম্ভবা নারীকে যদি গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কায় বিজ্ঞ ও ধর্মসচেতন চিকিৎসক রোজা রাখতে বারণ করেন, তবে সেই রোজা পরে কাজা আদায় করতে পারবেন। নারীরা রজঃস্রাব বা প্রসবোত্তর স্রাব চলাকালে রোজা রাখতে পারবেন না, ওই রোজাগুলোও পরে কাজা আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া মিসরিয়া)

মাসিক পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব চলাকালে রোজা রাখা যায় না, নামাজ পড়া যায় না এবং পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা যায় না, কাবাঘর তাওয়াফ করা যায় না। এ ছাড়া অন্যান্য দোয়া দরুদ ও ইস্তিগফার এবং হাদিস, তফসির পড়া যায়; তাসবিহ তাহলিল, জিকির আসকার, অজিফা ইত্যাদিও আমল করা যায়। এ অবস্থায় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন হয়ে জায়নামাজও ব্যবহার করতে পারবেন, সাহ্‌রি ও ইফতারে শামিল হতে পারবেন, রান্নাবান্নাসহ সব কাজ করতে পারবেন। ঋতুমতী নারীর স্পর্শে কেউ অপবিত্র হয় না বা কারও অজু–গোসল নষ্ট হয় না। ‘রজোবতী রমণীর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীসুলভ আচরণ বা রতিক্রিয়া নিষিদ্ধ বা হারাম।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২২২)

রোজা অবস্থায় তেল, সুরমা, সুগন্ধি, স্নো, ক্রিম, পাউডার, কসমেটিকস বা সাজসরঞ্জাম ব্যবহার করা নিষিদ্ধ নয়। তবে লক্ষ রাখতে হবে পর্দা-পুশিদা ও শরিয়তের বিধানের লঙ্ঘন যেন কখনো না হয়। (ফাতাওয়া শামী)।

রোজা অবস্থায় মাসিক শুরু হলে ওই রোজাটি পরে কাজা আদায় করতে হবে, কিন্তু সেদিন পানাহার থেকে বিরত থাকবেন। অনুরূপ রোজার মধ্যে মাসিক চলাকালে দিনের বেলায় তা বন্ধ হলে সেদিনও পানাহার থেকে বিরত থাকবেন, কিন্তু এটি রোজা হিসেবে গণ্য হবে না; পরে এই রোজাটিও কাজা আদায় করবেন।

 কোনো নারীর যদি তিন দিনের কম বা ১০ দিনের বেশি সময় মাসিক পিরিয়ড হয় অথবা নিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার পর পুনরায় রক্তক্ষরণ হয়, একে ইস্তিহাজা বলে। ইস্তিহাজা চলাকালে নামাজও পড়তে হবে এবং রোজাও রাখতে হবে। অনুরূপভাবে সন্তান প্রসবের ৪০ দিন পরও যদি রক্তপাত বন্ধ না হয়, তাহলে অজু–গোসল করে যথারীতি নামাজ আদায় করতে হবে এবং রোজাও রাখতে হবে। এ উভয় অবস্থায় নফল নামাজ, নফল রোজা ও অন্যান্য সব ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব ও নফল ইবাদত করা যাবে। নামাজ, তাওয়াফ, কোরআন তিলাওয়াত, স্পর্শ করাসহ সব ইবাদত করতে পারবেন। (আদ দুররুল মুখতার)।

রোজা অবস্থায় যদি কেউ কোনো ছোট্ট শিশু বা অন্য কাউকে প্রয়োজনে খাবার চিবিয়ে বা দাঁত দিয়ে কেটে বা টুকরো করে দেন, এতে রোজা ভাঙবে না। যেসব নারী ও পুরুষ রান্নারান্নার কাজ করেন, তাঁরা প্রয়োজনে রোজা অবস্থায়ও তরকারি বা খাবারের স্বাদ পরীক্ষা করতে বা লবণ দেখতে পারবেন। মুখে বা জিবে নিয়ে তারপর ফেলে দিতে হবে এবং তারপর থুতু ফেলে দিলেই মুখ পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ অবস্থায় প্রয়োজন মনে করলে পানি দিয়ে কুলি করেও নিতে পারেন। (আর রদ্দুল মুহতার)

রোজা অবস্থায় তেল, সুরমা, সুগন্ধি, স্নো, ক্রিম, পাউডার, কসমেটিকস বা সাজসরঞ্জাম ব্যবহার করা নিষিদ্ধ নয়। তবে লক্ষ রাখতে হবে পর্দা-পুশিদা ও শরিয়তের বিধানের লঙ্ঘন যেন কখনো না হয়। (ফাতাওয়া শামী)।

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

  • যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

  • [email protected]