ইলন মাস্ক কেন ট্রাম্পের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন

‘ইলন মাস্ক হোয়াইট হাউসে তাঁর একটা কাজের নিশ্চয়তা পাওয়ার আশায় একজন অপরাধীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলেছেন।’ছবি; রয়টার্স

দুনিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী ও অসহনীয় দুই ব্যক্তি যদি একসঙ্গে হন, তাহলে কী ঘটতে পারে? আসুন সেটা খুঁজে দেখার চেষ্টা করি। গুজব আছে যে ইলন মাস্ক হোয়াইট হাউসে তাঁর একটা কাজের নিশ্চয়তা পাওয়ার আশায় একজন অপরাধীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলেছেন। সেই ব্যক্তি আর কেউ নন, জালিয়াতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত ও পরবর্তী মার্কিন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক খবরে জানিয়েছে, গত মাসে এই জুটি টেলিফোনে বেশ কয়েকবার কথা বলেছে। ট্রাম্প পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তাঁর একজন সম্ভাব্য উপদেষ্টা হিসেবে মাস্কের নিয়োগের বিষয়ে দুজনের মধ্যে আলাপ হয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানাচ্ছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে ইলন মাস্ককে সীমান্ত নিরাপত্তা ও অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টার পদে বসানো হতে পারে।

এসব বিষয়ে উপদেশ দেওয়ার জন্য প্রকৃতপক্ষে উপযুক্ত ব্যক্তি মাস্ক? সম্ভবত। দক্ষিণ আফ্রিকার একজন অভিবাসী হিসেবে সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়ে তাঁর সরাসরি অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাঁর ভাই কিমবাল প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে তাঁর ভাই মাস্ক প্রথম যখন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা খুলতে চেষ্টা করেছিলেন, তাঁর ভাইয়ের ঠিকঠাকমতো কাজের নথি ছিল না। ২০১৩ সালে এক সম্মেলনে কিমবাল মজার ছলে বলেছিলেন, ‘আমরা ছিলাম অবৈধ অভিবাসী।’

ইলন মাস্ক খুব লাজুকভাবে প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, এ ঘটনায় ঠিক দায়টা কার ছিল, সেটা কিন্তু পরিষ্কার নয়। কিন্তু তাঁর ভাই খুব জোর দিয়েই বলেছিলেন, ‘আমাদের কাজ শুরুর করার অনুমোদন ছিল না।’ দুই ভাইয়ের এই কথাবার্তা শুনে শ্রোতাদের অনেকে খুব জোরে হেসে উঠেছিলেন। অবৈধ থাকাকালে কেউ কাজ করেছেন, এটা শুনে তাঁদের মধ্যেই হাসি আসতে পারে, যদি তাঁরা ধনী ও শ্বেতাঙ্গ হন। কিন্তু এই দুয়ের বাইরে হলে এ ক্ষেত্রে নির্বাসন ও অপমানের শিকার হতে হবে। ইলন মাস্ক ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ দোষারোপ করার জন্য প্রসিদ্ধ। তিনি নিজেই একবার বলেছিলেন, অভিবাসন হলো ‘বাইরে থেকে কোনো দেশে আক্রমণের মতো ব্যাপার’।

ইলন মাস্কের মধ্যে সীমানা নিয়ে যে ভণ্ডামি, সেটা নিশ্চয়ই ট্রাম্পের কাছে বিষয় নয়। অভিবাসীদের নিয়ে কট্টর অবস্থান নেওয়া সত্ত্বেও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়ার ব্যাপারে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে তিনি মাথা ঘামানোর প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি। সংবাদমাধ্যমটির অনুসন্ধানে উঠে আসে, মেলানিয়া বৈধভাবে কাজ করার নথি পাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রে মডেল হিসেবে কাজ করেছিলেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় মাস্ক বলেছিলেন, ট্রাম্পকে তাঁর রাজনীতি থেকে অবসরে পাঠানো হোক, যাতে তিনি শান্তিতে জীবন পার করতে পারেন। মাস্ক বলেন যে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিকালটা ছিল ‘অনেক বেশি নাটকে ভরা। আমরা কি সত্যি সত্যি প্রতিদিনই বুল-ইন-আ-চায়না-শপের মতো একটা উন্মত্ত বা বেপরোয়া পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চাই?

মেলানিয়া তাঁর স্লোভানিয়ান বাবা-মাকে এমন এক প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, যেটাকে ট্রাম্প প্রশাসন অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখেছিল এবং খুব আগ্রাসীভাবে ‘চেইন মাইগ্রেশন’ নামের সেই প্রক্রিয়া অবসানের চেষ্টা করেছিল। এখন মাস্ক ও ট্রাম্প এই চুক্তিতে আসতে পারেন যে ‘আইনকানুন অন্যদের জন্য, আমাদের জন্য নয়।’

অর্থনীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্পকে মাস্ক কোন পরামর্শটা দিতে পারেন? ইলন মাস্কের কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কাছ থেকে আরও বেশি ভর্তুকি আদায় করে নিতে পারে। এরই মধ্যে সরকারের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি পেয়েছে ইলনের কোম্পানিগুলো। হতে পারে সরকারের সঙ্গে অভিবাসীদের মঙ্গলে পাঠানোর একটা চুক্তি তিনি করে ফেলতে পারেন। অথবা এর আগে মজার ছলে মাস্ক যেটা বলেছিলেন, সে রকম করে ইউক্রেনে ‘লেজারসহ স্পেস ড্রাগন’ পাঠাতে পারেন।
যা-ই হোক, ভবিষ্যতে মাস্ক ট্রাম্পকে যে পরামর্শই দিন না কেন, সেটা হবে যতটা নীতি, তার থেকে অনেক বেশি হবে চটকদার প্রচারণার কৌশল।

কিন্তু এত আগে সবটা কল্পনা করা ঠিক হবে না। ট্রাম্প এখনো প্রেসিডেন্ট হননি। আর ইভাঙ্কা ট্রাম্পের আগের সেই পদের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ নেই বলে ইলন মাস্ক দাবি করেছেন। গত বৃহস্পতিবার মাস্ক টুইট করে জানান, ‘ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি।’

আরও পড়ুন

এখন পর্যন্ত ইলন মাস্কের দিক থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়নি। এই সম্পর্ক অবশ্যই উল্লেখ করার মতো একটা পরিবর্তন। ট্রাম্প ও মাস্ক—দুজনের ব্যক্তিত্বের মধ্যেই কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে থাকার একটা বাতিক আছে। দুজনের বিশাল যে আত্ম-অহম সেটাই অতীতে দুজনের মধ্যে ঝামেলা বাধানোর কারণ।

দৃষ্টান্ত হিসেবে ২০২২ সালের ঘটনাটির কথা বলা যাক। ট্রাম্প ইলন মাস্ককে একজন ‘বুলসিট আর্টিস্ট’ (অতিরঞ্জিত ব্যক্তি) হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কারণ, ইলন মাস্ক বলেছিলেন, তিনি কখনো রিপাবলিকানদের ভোট দেননি।

এর প্রতিক্রিয়ায় মাস্ক বলেছিলেন, ট্রাম্পকে তাঁর রাজনীতি থেকে অবসরে পাঠানো হোক, যাতে তিনি শান্তিতে জীবন পার করতে পারেন। মাস্ক বলেন যে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিকালটা ছিল ‘অনেক বেশি নাটকে ভরা। আমরা কি সত্যি সত্যি প্রতিদিনই বুল-ইন-আ-চায়না-শপের মতো একটা উন্মত্ত বা বেপরোয়া পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চাই?

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, শতকোটিপতিদের একটি দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ‘হ্যাঁ, আমরা সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চাই। মাস্কই একমাত্র অতি ধনী নন, যিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছেন।’ দুঃখজনকভাবে গত সপ্তাহেই সম্পদশালী দাতাদের একটা অংশ সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন।

শুক্রবার ইলন মাস্ক নিশ্চিত করেছেন ট্রাম্পকে নিয়ে এক্সে (সাবেক টুইটার) টাউন হল স্টাইলে একটা লাইভস্ট্রিম করবেন।

  • আরওয়া মাদালি, গার্ডিয়ানের কলাম লেখক
    ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত, গার্ডিয়ান থেকে অনূদিত