গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে ডেটা সায়েন্স যে ভূমিকা রাখতে পারে

আজকের বিশ্ব ডেটা সায়েন্স বা উপাত্ত বিজ্ঞানের জয়জয়কার। প্রতিটি ক্ষেত্রে এর ব্যবহারের মাধ্যমে শ্রেয়তর নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে উৎপাদনশীলতা ও সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা বাড়ানো সম্ভব। এই লেখায়, বিশেষ করে জাতীয় ইস্যুগুলোয় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর জন্য গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে কীভাবে ডেটা সায়েন্স ব্যবহার করা যায়, শ্রেয়তর রাজনৈতিক পরিবেশ, পদ্ধতি তৈরি করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করব।

এক. নির্বাচন কমিশনের কাজ সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা, জনসংখ্যা অনুসারে নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণ, যোগ-বিয়োগ করা, যাতে নির্বাচনী এলাকাগুলোয় ভোটার সংখ্যার যথাসাধ্য সমতাবিধান করা যায়। কমিশনের বাইরে থেকে এ বিষয়ে কমিশনের তৎপরতা মোটেই দৃশ্যমান নয়। অথচ এখানে কম্পিউটারবিজ্ঞানের অনেক অ্যালগরিদম ব্যবহার করে এর সমতা বিধানের চেষ্টা করা যেতে পারে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাতে ভোটার সংখ্যার অনুপাতে ৫০টি অঙ্গরাজ্যে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ ভাগ করে দেওয়া যায়, তার জন্য তারা নিরন্তর গবেষণা করে যাচ্ছে।

আমাদের অঙ্গরাজ্য নেই, তবে নির্বাচনী এলাকা রয়েছে। কোনো এক নির্বাচনী এলাকায় চার লাখ ভোটারের প্রতিনিধি আর অন্য কোনো একটির এক লাখ ভোটারের প্রতিনিধি সংসদে সমান গুরুত্ব পান এবং প্রত্যেকেরই যদি এক ভোট হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অন্তত আংশিক পরাজয় হয়। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেমন প্রতিবছর অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটার সংখ্যার অনুপাতে প্রতিনিধির সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। গণতন্ত্রের এই সূক্ষ্ম বিষয় এখনো আমাদের বিবেচনায় আসেনি। এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের গণতন্ত্র চর্চার গভীরতা বাড়ানো উচিত। আমাদের নির্বাচনী এলাকাগুলোয় যাতে ভোটার সংখ্যার সমতাবিধান করা যায়, তার একটি সহজ পদ্ধতির কথা বলি।

আমরা প্রতি নির্বাচনী এলাকার গড় ভোটারের সংখ্যা বের করি। এই গড় থেকে ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য ব্যবধানের মধ্যে থাকলে সেখানে নির্বাচনী এলাকায় পরিবর্তন আনার প্রয়োজন নেই। তার বেশি ব্যবধান থাকলে ভোটার সংখ্যা বেশি হলে সেই নির্বাচনী এলাকা ভোটার জোগানদাতা (তৈরি গ্রাফের সোর্স) হিসেবে কাজ করবে, আর যদি ভোটার সংখ্যা কম থাকে, তাহলে ওই এলাকা সিংক হিসেবে কাজ করবে। এলাকার যেসব একক নির্বাচনী এলাকা অন্য যেসব নির্বাচনী এলাকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে, তাদের মধ্যে লিংক স্থাপন করি। সোর্স এবং সিংক একক এলাকাগুলোকে যথাযথ নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে দিকনির্দেশিত রেখা দিয়ে যুক্ত করে যে গ্রাফ হয়, সেই গ্রাফে ট্রান্সপোর্টেশন সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে সারা দেশের সব নির্বাচনী এলাকার জন্য একটি সমন্বিত সমাধান পাওয়া যাবে।

দুই. বর্তমান নির্বাচনের পদ্ধতিতে অনেক সময়ই একটি দল দেশব্যাপী তার প্রাপ্ত ভোটের গ্রহণযোগ্য অনুপাতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব পায় না। এ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের সংখ্যা দিয়ে একটি দলের গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা যায় না। এ বিষয়ে আমাদের গত দিনগুলোয় অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের পরিসংখ্যানের দিকে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। প্রতিটি সেলে প্রাপ্ত ভোট (লাখ), শতকরা এবং আসনসংখ্যা দেওয়া আছে।

২০১৪ ও ২০১৮–এর নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। ২০১৮–এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপির ছয় গুণ ভোট পেয়েছে কিন্তু আসন পেয়েছে প্রায় ৪৩ গুণ। একইভাবে জাতীয় পার্টি বিএনপির তিন ভাগের একভাগ ভোট পেলেও আসন পেয়েছে তিনগুণ বেশি। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৫ গুণ ভোট পেলেও আসন পেয়েছে ১৫ গুণ বেশি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ বিএনপির দেড় গুণ ভোট পেয়েছে কিন্তু আসন পেয়েছে আট গুণ। ২০০১ সালে বিএনপি আওয়ামী লীগের থেকে শতকরা দুই ভাগ ভোট বেশি পেয়েছে কিন্তু আসন পেয়েছে মাত্র তিনগুণ বেশি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রায় সমান ভোট পেয়েছে কিন্তু বিএনপি আসন পেয়েছে দেড় গুণ বেশি।

ওপরের পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে যে প্রাপ্ত ভোটের সঙ্গে সংসদে প্রতিনিধির সংখ্যার মধ্যে বিশাল ব্যবধান। বিজয়ী দল যখন বলে দেশের জনগণ বিরোধী দলকে প্রত্যাখ্যান করেছে কথাটি মোটেই সত্য নয়। আমরা ধরতে পারি না সাধারণ মানুষ দলকে ভোট দিচ্ছে কিন্তু দলের প্রার্থীকে একই সঙ্গে বর্জন করছে। ওপরের পরিসংখ্যান থেকে মনে হচ্ছে গণতন্ত্রের চর্চায় আমাদের বড় একটি গলদ রয়েছে। দল যে ভোট পাচ্ছে তার প্রতিফলন সংসদেও থাকা উচিত। এ বিষয়ে না বিজিত দলগুলো, না রাজনীতি বিশারদেরা কোনোরকম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

একটি প্রস্তাব হলো প্রতিটি দলের সর্বমোট প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে কিছু আসন বণ্টন করা। যেমন আসনের সংখ্যা ৩০০ থেকে ৬০০–তে বৃদ্ধি করা যেতে পারে (সংখ্যাগুলো প্রতীকী যোগ্য কর্তৃপক্ষ ঠিক করবে)। এর ৩০০টি আসন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভাগ হবে দেশব্যাপী তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে আর ৩০০টি আসন বিজয়ী প্রার্থীদের জন্য। নির্বাচনী এলাকার সংখ্যা ৩০০। প্রতিটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগেই দলের প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী দলীয় কোটায় যাঁরা সংসদ সদস্য হবেন, তাঁদের ক্রমানুযায়ী একটি তালিকা সরবরাহ করবে। কেউ যদি সংসদীয় আসনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন, তাহলে তিনি সেই আসনের সংসদ সদস্য হবেন এবং দলীয় তালিকা থেকে পরবর্তী নাম বিবেচনা করা হবে। আদর্শিকভাবে একজন সংসদ সদস্যের আইন প্রণয়নই মুখ্য কাজ, আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়া নয় এবং স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গেও জড়িত থাকার কথা নয় যদিও আমাদের দেশে আগ্রহ ঠিক তার বিপরীত। এই পদ্ধতিতে দলের মনোনীত সদস্যরা আইন প্রণয়নের কাজে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হবেন এবং এই কাজে তাঁরা প্রশংসনীয়ভাবে অবদান রাখবেন।

তিন. আমাদের জাতীয় জীবনে দীর্ঘদিন যাবৎ শক্তিশালী দুটি দলের মধ্যে সমঝোতা হচ্ছে না। একটি দল যত অগ্রহণযোগ্যই হোক না কেন তারা যদি সাধারণ মানুষের ভোট পায় তাদের তুচ্ছাতিতুচ্ছ করার সুযোগ নেই। আমরা লক্ষ করেছি বিরোধী দলের গুণের জন্য নয় বরং সরকারি দলের স্বেচ্ছাচারিতা ও মাত্রাতিরিক্ত অন্যায় ও অনিয়মের জন্যই বারবার ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই পালাবদল একদিক থেকে স্বাস্থ্যকর, যাতে সরকারি দল জানতে পারে নির্বাচন এলেই তাদের হিসাব হবে, সব অন্যায়ের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, এমনকি তাদের গদিচ্যুতও হতে হবে।

অন্তত এই কারণের জন্য হলেও নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হওয়া প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে নির্বাচনকে অসংশোধনযোগ্য সংবিধান অনুযায়ী করতে হলে যুগ যুগ পর হলেও কোনো একটি বিরোধীদল ক্ষমতায় আসবে। তারা তখন সংবিধানকে অসংশোধনযোগ্য রেখেই নির্বাচন পরিচালনা করবে, তাকে প্রভাবিত করবে এবং সরকারি দলের আবার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বাড়বে, সঙ্গে সঙ্গে সরকারি দলের লাগামহীন দৌরাত্ম্যও সাধারণ মানুষ ও বিরোধী দলের জীবনকে বিষিয়ে তুলবে। এ জন্য যেকোনো ইস্যুতে দলগুলোর সমঝোতা যদি শ্রেয়তর রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হয়, তাহলে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

গত দিনগুলোয় আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা দেখেছি। কীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তৈরি হয়েছে, তা সম্পর্কে সাধারণ জনগণ একেবারেই ওয়াকিবহাল ছিল না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনোত্তরকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে অন্তত বিজিত দল নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। তাই জাতীয় যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকারি ও বিরোধীদলের মধ্যে যদি কোনো সমঝোতার প্রয়োজন হয়, তা সারা দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত স্বচ্ছ হতে হবে।

একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। মনে করি উভয় দলের জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন তৈরি করতে হবে। প্রথমে এই কাজের জন্য যোগ্য কর্তৃপক্ষ, যেমন জাতীয় সংসদ, যোগ্যতা নির্ণয় করবে। সেই যোগ্যতা অনুযায়ী উভয় দল পছন্দের ক্রমানুসারে তালিকা তৈরি করবে। এই উভয় তালিকায় বিদ্যমান নামগুলো থেকে বাছাই করা হবে। স্বভাবতই কোনো দলই সেই দলের অন্ধ কোনো সমর্থকের নাম তালিকায় দেবে না, কারণ, উভয় তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরাই শুধু নির্বাচিত হবেন। একটি ছুটির দিনে সরকারি ও বিরোধীদলের প্রতিনিধিরা টেলিভিশন স্টুডিওতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের যথেষ্ট বড় তালিকা নিয়ে উপস্থিত হবেন। একজন সঞ্চালক সাধারণ মানুষের জ্ঞাতার্থে পুরো প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করবেন।

তারপর একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে তালিকার প্রথম মিলটি দর্শকদের জানিয়ে দেবেন। অবশ্য প্রথম দশে মিল আছে কি না, প্রথম বিশে কিংবা চল্লিশে কিংবা আশিতে তা জানিয়ে দর্শকদের গোটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করতে পারেন। মিল থাকলে কিংবা না থাকলে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েও অনুষ্ঠানকে হৃদয়গ্রাহী করতে পারেন। এভাবে যতগুলো নাম প্রয়োজন, ততগুলো নাম বাছাই না করা পর্যন্ত দলগুলোকে নাম সরবরাহ করতে হবে। এ রকম একটি পদ্ধতিতে যদি আপামর জনসাধারণের সম্মুখে প্রার্থীদের বাছাই করা হয়, তখন আর কোনো দল বাছাইয়ের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না। সংসদীয় কমিটিগুলোয় বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টিও রীতিমতো অ্যালগরিদম ব্যবহার করে সর্বোত্তম গ্রহণযোগ্য সমাধান পাওয়া যেতে পারে। যে ক্ষেত্রেই সমঝোতার প্রশ্ন, সে ক্ষেত্রেই অনুরূপ একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।

চার. নির্বাচনে যেসব প্রার্থী দাঁড়াবেন, তাঁদের যেসব তথ্য ভোটারদের জানা উচিত, তা সুন্দর ছকাকারে জানিয়ে ভোটারদের তথ্যসমৃদ্ধ করা সম্ভব, যাতে তাঁরা যোগ্যতম প্রার্থীকেই বেছে নিতে পারেন। শুধু তাই নয়, প্রার্থীদের অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও ভোটারদের ওয়াকিবহাল করা যেতে পারে। তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, সমাজ ও দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলির বিকাশসহ নানা দিকের বিশ্লেষণ করে তাঁদের নেতৃত্বের গুণাবলিতে শ্রেয়তর হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা যেতে পারে। আমরা প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সময়ের সঙ্গে বাড়ছে না কমছে, তা–ও যদি জনসমক্ষে প্রকাশ করি, তাহলে সম্ভাব্য জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের জীবনবৃত্তান্তকে সমৃদ্ধ করার জন্য তৎপর হতে পারেন।

বলাবাহুল্য যে একটি দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে আইন ও নীতিমালা প্রণয়নের জন্য নীতিপ্রণেতাদের অবশ্যই জ্ঞানী ও শিক্ষিত হতে হবে। গত ৫০ বছরের তথ্য যদি বলি সময়ের সঙ্গে আমাদের জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা দক্ষতা হ্রাস পাচ্ছে, নিশ্চয়ই আমাদের জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে ভাববেন। আপাতত তথ্যাভাবে কিংবা তার বিশ্লেষণের অভাবের কারণে যে পানি ঘোলা রয়েছে, তাতে সবারই মাছশিকার করার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। রাজনীতিবিদদের কিংবা জনপ্রতিনিধিদের যেসব তথ্য দেশবাসীর জানার কথা তা বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে আমরাও তাঁদের শ্রেয়তর গুণাবলি অর্জন করে দেশ ও দশকে কার্যকরভাবে নেতৃত্ব দিতে উৎসাহিত করতে পারি।

আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহর-দেশ সিঙ্গাপুর একসময় টিকে থাকার জন্য মালয়েশিয়ার অধিভুক্তও হতে চেয়েছিল। সেই একসময়ের জেলেদের-গ্রাম সিঙ্গাপুরের আধুনিক সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের পেছনে তাদের অত্যন্ত শিক্ষিত জনপ্রতিনিধিদের নিশ্চয়ই একটি ভূমিকা রয়েছে। সিঙ্গাপুরের ৩৪ জন মন্ত্রীর ২৪ জনই এসেছে বিশেষ তিনটি নামকরা স্কুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ১৩ জন পড়েছেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর, হার্ভার্ড অথবা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমাদের জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে শিক্ষার মানের ট্রেন্ড কী রকম, তা থেকে আমরা ফিডব্যাক নিতে পারি।

প্রতি ১০ বছর পরপর আমরা যে জনশুমারি করি, তাকে আরও তথ্যসমৃদ্ধ করে আমরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমাদের সমাজের নানা সূচক ও তথ্য থেকে আমরা জ্ঞান আহরণ করে সমাজকে সমৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করতে পারি। জনপ্রতিনিধিদের প্রার্থিতার জন্য পূরণকৃত আবেদনপত্র নানারকম তথ্যে সমৃদ্ধ করে তাতে আমরা ডেটা সায়েন্সের কলাকৌশল, পদ্ধতি, অ্যালগরিদম ব্যবহার করে তাদেরও শ্রেয়তর গুণাবলিতে সমৃদ্ধ হতে উৎসাহিত করতে পারি। আমাদের সামাজিক ও জাতীয় জীবনের প্রতিটি বিষয়ে, যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সরকারি সেবা প্রদানের পারফরমেন্স বিশ্লেষণ করে অধিকতর দক্ষ হতে উদ্বুদ্ধ করতে পারি।

পাবলিক পরীক্ষাগুলোর আবেদনপত্রগুলোকেও তথ্যসমৃদ্ধ করে ফলাফলের সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের আর্থসামাজিক সূচকের মানের সম্পর্ক আবিষ্কার করতে পারি। বিশেষ করে সীমিত সম্পদের দেশ হিসেবে আমাদের বিনিয়োগগুলো যাতে যথাযথ হয়, তার থেকে যাতে করে ভালো রিটার্ন জাতি পেতে পারে, তার জন্য ডেটা সায়েন্সের টেকনিক ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগ দেশকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

  • মোহাম্মদ কায়কোবাদ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক ও বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের ফেলো